রয় গিলক্রিস্ট
২৮ জুন, ১৯৩৪ তারিখে জ্যামাইকার সীফোর্থ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ১৯৫০-এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
‘জিলি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যতম দ্রুত গতিসম্পন্ন বোলারের মর্যাদা পেয়েছেন। বল হাতে নিয়ে বেশ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুম থেকে ১৯৬২-৬৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে জ্যামাইকা এবং ভারতীয় ক্রিকেটে হায়দ্রাবাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। প্রথম মৌসুমে চার খেলা থেকে ৪২.৬৪ গড়ে ১৪ উইকেট দখল করেছিলেন। তবে, নরফোক ডিউক একাদশের বিপক্ষে ৫/১১০ লাভের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ঠাঁই দেয়া হয়।
১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে ১৩ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। মাত্র চারটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেয়ার পরপরই টেস্ট খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন। টেস্টগুলো থেকে ২৬.৬৮ গড়ে ৫৭ উইকেট দখল করেছিলেন। ১৯৫৭ সালে জন গডার্ডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৩ বছর বয়সে ৩০ মে, ১৯৫৭ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। রোহন কানহাইয়ের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ২/৭৪ ও ১/৬৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে শূন্য রানে রান-আউটে বিদেয় নেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে জেরি আলেকজান্ডারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ভারত সফরে যান। ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৯ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩/৯০ ও ৩/৬২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। বড় ধরনের রানের খেলায় দলের একমাত্র ইনিংসে তাঁকে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে হয়নি। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
শৈশবে অপুষ্টিতে ভোগেন ও চরম দারিদ্র্যতার মাঝে বড় হন। এরফলে, মানসিক বিকাশে বাঁধাপ্রাপ্ত হন। তবে, শত প্রতিকূলতা জয় করে আক্রমণাত্মক ফাস্ট বোলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত চরিত্রে পরিণত হয়েছিলেন। অতিমাত্রিক আগ্রাসী মনোভাবে খেলার ফলে অনেক সময় দলীয় সঙ্গীদের কাছেও বিপজ্জ্বনক হিসেবে বিবেচিত হন। দলীয় অধিনায়ক জেরি আলেকজান্ডার পাকিস্তান সফরকালে তাঁকে দেশে ফেরৎ পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হন। কর্তৃপক্ষের রক্তচক্ষুর শিকারে পরিণত হলে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন থমকে যায়।
২৯ বছর বয়সেই তাঁর প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন শেষ হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে ৪২টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুম থেকে ১৯৬১-৬২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে জ্যামাইকার পক্ষে পাঁচটি খেলায় অংশ নেন। এছাড়াও, ১৯৬২-৬৩ মৌসুমে ভারতীয় ক্রিকেটে ছয়টি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে ইংল্যান্ডে চলে যান। লোয়ারহাউজ ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে ১৯৬৪ সময়কালে খেলেছিলেন।
১৮ জুলাই, ২০০১ তারিখে জ্যামাইকার পোর্টমোর এলাকায় ৬৭ বছর ২০ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। গ্যারি সোবার্স মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘ওহ! গিলক্রিস্ট! আমার সাথে খেলা সর্বাপেক্ষা বিপজ্জ্বনক ক্রিকেটার ছিলেন।’