১৮ অক্টোবর, ১৯৫২ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, রেফারি ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

১৯৭৪-৭৫ মৌসুম থেকে ১৯৯১-৯২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে কলম্বো ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৭ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ২০ টেস্ট ও ৫৮টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় আসরে অংশগ্রহণ করেন। ৯ জুন, ১৯৭৯ তারিখে নটিংহামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ভারতের বিপক্ষে বিস্ময়কর জয়ে ধৈর্য্যশীল অর্ধ-শতক হাঁকিয়ে বীরবনে যান।

১৯৮১-৮২ মৌসুমে নিজ দেশে কিথ ফ্লেচারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। একই সফরের ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। কলম্বোর পিএসএসে অন্য সকলের সাথে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরফলে, শ্রীলঙ্কার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন। কলম্বোর সারাবানামুত্তু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে বব উইলিসের বলে জিওফ কুকের তালুবন্দী হলে তাঁকে বিদেয় নিতে হয়। তিন নম্বর অবস্থানে নেমে শূন্য রানে আউট হন।

মাত্র ৫ রানে পিছিয়ে থেকে শ্রীলঙ্কা দলের পক্ষে পুণরায় ব্যাটিংয়ে নেমে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। ডেরেক আন্ডারউড ও জন এম্বুরি’র বল মোকাবেলা বেশ দূর্বোধ্য হয়ে পড়ে। তাসত্ত্বেও স্বপ্নের মতো ব্যাটিংয়ে অগ্রসর হন ও শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ব্যতিক্রমী প্রভাব ফেলেন। প্রচণ্ড চাপের মুখে থেকেও ৭৭ রান তুলেছিলেন। তবে, জন এম্বুরি’র অসাধারণ বোলিংয়ের কল্যাণে সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয়।

পরবর্তী কয়েক বছর একই ধারার খেলা বহমান রাখেন। তবে, শ্রীলঙ্কা দলের তেমন উত্তরণ ঘটেনি। উদ্বোধনী টেস্টের পর ১৯৮১-৮২ মৌসুমে বান্দুলা বর্ণাপুরা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে পাকিস্তান গমন করেন। করাচীতে ৫৩, ফয়সালাবাদে ৯৮ রানের ইনিংস খেলেন। তন্মধ্যে, ২২ মার্চ, ১৯৮২ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অসাধারণ খেলেন। ইমরান খানের তোপে পড়ে শ্রীলঙ্কা দল স্বল্প রানে গুড়িয়ে যায়। তাসত্ত্বেও তিনি ১০৯ ও ৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ইনিংস ও ১০২ রানে জয় পেয়ে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে নিজ দেশে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৬ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে কলম্বো এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১৬ ও ১০৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায়।

এরপর, ভারত সফরে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে ৬০ ও ৯৭ রান তুলেন। ওডিআইয়ে দুইটি শতক হাঁকান। এ পর্যায়ে ৫ টেস্ট খেলে প্রত্যেকটিতেই অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। ৫২.৯০ গড়ে ৫২৯ রান সংগ্রহ করেন। অফ-সাইডে ড্রাইভগুলো অনেকাংশেই জহির আব্বাসদিলীপ বেঙ্গসরকারের অনুরূপ ছিল। দিলীপ মেন্ডিসের সাথে শ্রীলঙ্কার শুরুরদিকে দলের ভিত আনয়ণে সচেষ্ট ছিলেন। পরবর্তীতে সফরকারী নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজে খেললেও শতরানের সন্ধান পাননি। তবে, রিচার্ড হ্যাডলি’র বল রুখে দিয়ে দ্বিতীয় টেস্টকে ড্রয়ের মাধ্যমে রক্ষা করেন।

১৯৮৫ সালে ভারতের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজে নিজের স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেছিলেন। কলম্বোয় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৯৫ রান তুলে দলের প্রথম টেস্ট জয়ের ভিত গড়েন। দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাচ্ছন্দ্যে ৬০ রান সংগ্রহ করেন। ক্যান্ডিতে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে ২৪/৩ থাকা অবস্থায় দিলীপ মেন্ডিস তাঁর সাথে জুটি গড়েন। এ পর্যায়ে ২১৬ রান তুলে তাঁরা দলের প্রাথমিক বিপর্যয় রুখে দিতে সমর্থ হন। পাঁচ ঘণ্টারও অধিক সময় নিয়ে ১০৬ রান তুলে রান আউটের শিকার হন। তাসত্ত্বেও টেস্টটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। ফলশ্রুতিতে, প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কা দল সিরিজ জয় করে। এ ইনিংস খেলাকালীন শ্রীলঙ্কার প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ১২ টেস্ট থেকে ৪৬-এর অধিক গড়ে রান পেয়েছিলেন।

এরপর থেকে খেলোয়াড়ী জীবনের শেষ অংশ অতিবাহিত করেন। নিজ দেশে পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে দল পরাজিত হয়। ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি তাঁর সেরা খেলা প্রদর্শন করতে পারেননি। শেষ আট টেস্ট থেকে মাত্র একটি অর্ধ-শতক সহযোগে ২৬৫ রান পেয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে নিজ দেশে জেফ ক্রো’র নেতৃত্বধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে তিন-টেস্টের সিরিজ আয়োজনের কথা থাকলেও ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে এক টেস্ট পরই সিরিজ বাতিল ঘোষিত হলে তাঁরও টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে বিঘ্ন ঘটায়। ১৬ এপ্রিল, ১৯৮৭ তারিখে কলম্বোর সিসিসিতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ২৫ রান সংগ্রহসহ ০/১৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ছয় মাস পর ১৯৮৭ সালের রিলায়েন্স বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক খেলায় ৮০ রান পেয়েছিলেন। তাসত্ত্বেও ঐ খেলায় তাঁর দল পরাজয়বরণ করে।

সব মিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে বেশ ভালোমানের ৩৬.৭১ গড়ে ১২৮৫ রান সংগ্রহ করেছেন। এ সময়ে জবুথবু দলটিতে খেলে বেশ সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দ্বীপপুঞ্জের সেরা ধ্রুপদীশৈলীর অধিকারী ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। নড়বড়ে ব্যাটিং নির্ভর দলের অন্যতম পরিচালনা শক্তি হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। প্রথম শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে নিজের পরিচিতি ঘটাতে সচেষ্ট ছিলেন। সহজাত প্রতিভার অধিকারী হিসেবে বলকে সঠিক সময়ে মোকাবেলা করে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। সচরাচর কভার অঞ্চলে খেলতেই অধিক পছন্দ করতেন। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। কিছুকাল শ্রীলঙ্কা দলের প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। জুলাই, ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ হিসেবে মনোনীত হন। সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন।

Similar Posts