Skip to content

৩০ এপ্রিল, ১৯৮৭ তারিখে মহারাষ্ট্রের নাগপুরের বানসোদ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করে থাকেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। পূর্ণিমা শর্মা ও গুরুনাথ শর্মা দম্পতির সন্তান। পিতা পরিবহণ প্রতিষ্ঠানের দেখাশোনার কাজ করতেন। আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না থাকায় পরিবার থেকে সহায়তা পাননি। ফলশ্রুতিতে, বরিভালিতে দাদা ও কাকাদের সান্নিধ্যে শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। ছুটির দিনগুলোয় ডোম্বিভলিতে তাঁর পরিবার বসবাস করেন। বিশাল শর্মা নামীয় কনিষ্ঠ ভ্রাতা রয়েছে।

আক্রমণধর্মী ব্যাটিংয়ের কারণে বিশ্বের সর্বত্র জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ও বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে পছন্দ করেন। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের ফলে ‘হিটম্যান’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। ঘরোয়া আসরের ভারতীয় প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে পশ্চিমাঞ্চল ও মুম্বই দলের পক্ষে খেলছেন। এছাড়াও, এয়ার ইন্ডিয়া, ডেকান চার্জার্স ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পক্ষে খেলেছেন।

মার্চ, ২০০৪ সালে দেওধর ট্রফিতে পশ্চিমাঞ্চলের সদস্যরূপে মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে লিস্ট-এ ক্রিকেটে প্রথম অংশ নেন। একই প্রতিযোগিতায় উদয়পুরে অনুষ্ঠিত খেলায় উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে ১২৩ বলে ১৪২ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন। এরফলে, আবুধাবিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার জন্যে ভারত ‘এ’ দলের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ এনে দেয়। এছাড়াও, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকল্পে ৩০-সদস্যের প্রাথমিক তালিকায় তাঁকে রাখা হলেও চূড়ান্ত দলে রাখা হয়নি।

২০০৬ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঐ বছর আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। জুলাই, ২০০৬ সালে ১৯ বছর বয়সে ভারত ‘এ’ দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১১ জুলাই, ২০০৬ তারিখে ডারউইনে অনুষ্ঠিত নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দল বনাম ভারত ‘এ’ দলের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে প্রবেশ করেন।

কয়েকমাস পর ২০০৬-০৭ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় মুম্বইয়ের পক্ষে প্রথম খেলেন। ঐ আসরের শিরোপা বিজয়ী দলটির সদস্য ছিলেন। অজিত আগরকরের অবসর গ্রহণের পর ২০১৩-১৪ মৌসুমে মুম্বইয়ের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন। মুম্বইয়ের ময়দান থেকে ব্যাটসম্যানরূপে খেলার জগতের সাথে যুক্ত হন। সফলতম অভিষেক মৌসুম অতিবাহনের পর ২০০৭ সালে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড গমনার্থে ভারত দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত হন।

প্রতিভাবান ক্রিকেটার হলেও এক দশকের অধিক সময় পর জাতীয় পর্যায়ে নিয়মিত সদস্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে ভারতের সহঃঅধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে তেমন মেলে ধরতে না পারলেও ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর যোগ্যতা ও সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। সুনীল গাভাস্কার ও শচীন তেন্ডুলকরের পর মুম্বইয়ের ব্যাটিং তারকার মর্যাদা পেয়েছেন। কিশোর অবস্থাতেই মুম্বইয়ের পক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্ট্রোক-প্লে মারতেন। রঞ্জী ট্রফিতে অপরাজিত ত্রি-শতক হাঁকানোর সুবাদে জাতীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওডিআইয়ের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনটি দ্বি-শতক হাঁকিয়েছেন। তন্মধ্যে, ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে ২৬৪ রান তুলে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। খেলার শুরুটা বেশ ভালোভাবে হলেও সবকিছু দৃশ্যতঃ নিয়ন্ত্রণে রেখে বাজে শট খেলে উইকেট খোঁয়ানোর প্রবণতা রয়েছে।

২০০৭ সাল থেকে ভারতের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২৩ জুন, ২০০৭ তারিখে ২০ বছর বয়সে বেলফাস্টে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হন। সাত নম্বর অবস্থানে তাঁকে ব্যাটিংয়ের জন্যে রাখা হলেও ভারতের নয়-উইকেটের জয়ের কারণে ব্যাট হাতে মাঠে নামার সুযোগ পাননি। তবে, ধারাবাহিকতা না থাকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। এরপর থেকেই মাঝে-মধ্যে খেলার সুযোগ পাবার পর দলে স্থান পাকাপোক্ত করেন। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে সিবি সিরিজ ওডিআইয়ে শুরুরদিকের সফলতার সূত্রপাত ঘটান। ব্রেট লি ও স্টুয়ার্ট ক্লার্কের ন্যায় বোলারদের বিপক্ষে দারুণ খেলেন। কমনওয়েলথ ব্যাংক ত্রি-দেশীয় সিরিজের চূড়ান্ত খেলার প্রথমটিতে বিখ্যাত তারকা ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকরের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন। পরের খেলাতেই দলকে আরেকটি জয় এনে দেন।

এরপূর্বে ২০০৭ সালের বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ছন্দে থাকা যুবরাজ সিংয়ের আঘাতের কারণে শেষ মুহূর্তে জরুরীভিত্তিতে দলে ঠাঁই পান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে শন পোলক, মাখায়া এনটিনি ও মর্নে মরকেলের ন্যায় বোলারদের রুখে গুরুত্বপূর্ণ অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলে ভারতের জয়ে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। কিংসমিডে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে বোলারদের উপযোগী পিচে এটিই তাঁর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়েও পরিপক্কতার পরিচয় দেন। এমএস ধোনি’র অধিনায়কত্বে দলটি প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরে শিরোপা জয় করেছিল।

২০১২ সালে বর্ণহীন সময় অতিবাহিত করেন। ঐ বছর মাত্র ১৬৮ রান তুলতে পেরেছিলেন। ২ অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত টি২০আইয়ে সফররত দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে ১০৬ রান তুলে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিনটি স্তরেই শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। ৮ জুলাই, ২০১৮ তারিখে বিরাট কোহলি’র পর দ্বিতীয় ভারতীয় ব্যাটসম্যান ও বৈশ্বিকভাবে পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে টি২০ আন্তর্জাতিকে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।

২০১০ সালে ওডিআইয়ে অভিষেক ঘটে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় প্রাথমিক দলে ছিলেন। একই বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্যে মনোনীত হন। পাঁচ খেলার তিনটিতে অর্ধ-শতক লাভ করেন ও ২৫৭ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান। তবে, এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সিবি সিরিজ ও শ্রীলঙ্কা সফরে ৫ ইনিংস থেকে মাত্র ১৪ রান সংগ্রহ করতে সমর্থ হন। তন্মধ্যে, দুইবার শূন্য রানের সন্ধান পান। বিস্ময়করভাবে দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনেন। ওডিআইয়ে উদ্বোধনী অবস্থানে খেলোয়াড় সঙ্কটের ফলে ভারতীয় অধিনায়ক এমএস ধোনী তাঁকে দিয়ে ইনিংস উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত নেন।

সীমিত-ওভারের ক্রিকেটের ব্যাপক সাফল্য লাভ করলেও টেস্ট দলে ঠাঁই পেতে তাঁকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। দলে স্থান লাভে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়। দূর্ভাগ্যজনকভাবে ২০০৯ সালে নাগপুর টেস্টে অভিষেকের দ্বারপ্রান্তে থাকলেও শুরুরদিন সকালে ফুটবল অনুশীলনীতে আঘাত পেলে তাঁকে নিরাশ হতে হয়। ফলশ্রুতিতে, ঐ সিরিজের কোন খেলায় অংশ নিতে পারেননি। ঋদ্ধিমান সাহাকে তাঁর স্থানে নিয়ে আসা হয় ও নভেম্বর, ২০১৩ সালে শচীন তেন্ডুলকরের সর্বশেষ আন্তর্জাতিক সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার সুযোগের জন্যে চার বছর অপেক্ষা করতে হয়।

২০১৩-১৪ মৌসুমে নিজ দেশে ড্যারেন স্যামি’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে পুরো সিরিজে বেশ ভালো খেলেন। ৬ নভেম্বর, ২০১৩ তারিখে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। মোহাম্মদ শমী’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। শচীন তেন্ডুলকরের পরিবর্তে চার নম্বর অবস্থানে মাঠে নামেন। ১৭৭ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস খেলে বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। শিখর ধবনের ১৮৭ রানের পর এটিই ভারতের অভিষেকধারী টেস্ট ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা সংগ্রহ। ইনিংস ও ৫১ রানে জয় পেয়ে স্বাগতিকরা দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

পরবর্তীতে ১৪ নভেম্বর, ২০১৩ তারিখে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১১১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ওয়াংখেড়েতে শচীন তেন্ডুলকরের বিদায়ী টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখেন। প্রথম দুই ইনিংসে শতক হাঁকান ও ভারতের দুই টেস্টে ইনিংস বিজয়ে অবদান রাখেন। প্রজ্ঞান ওঝা’র স্মরণীয় বোলিংয়ের সহায়তা নিয়ে খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ১২৬ রানে জয়লাভ করে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। সিরিজে ২৮৮ রান সংগ্রহ করে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

তবে, এরপর থেকে নিয়মিতভাবে রান সংগ্রহে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেননি। তাসত্ত্বেও, ২০১৮-১৯ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমনার্থে তাঁকে ভারত দলে রাখা হয়। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের প্রথম টেস্ট সিরিজ বিজয়ী ভারত দলের সদস্য ছিলেন।

ধারাবাহিকভাবে খেলতে না পারা ও উইকেট বিলিয়ে দেয়ার প্রবণতায় দলে স্থান লাভে হিমশিম খান। ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা একই বলে বহুমূখী শট খেলতে পারা ও শট নির্বাচনে তাঁর দক্ষতার আঁচ করেন। অপরদিকে, কিছু ক্রিকেট সমালোচক শর্ট বলের বিপক্ষে তাঁর দূর্বলতার কথা তুলে ধরেন। একাধারে কয়েকটি খেলার রান না পেলে গড় ২২-এ এসে দাঁড়ায়। ফলশ্রুতিতে, ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা থেকে তাঁকে দলের বাইরে রাখা হয়। প্রায় পাঁচ বছর দলে আসা-যাওয়ার পালায় থাকার পর অবশেষে ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতর সংস্করণে ব্যাট হাতে নিয়ে ইনিংস উদ্বোধনের ফলে শুধু যে তাঁর জন্যেই ভালো হয়েছে তা নয়; বরঞ্চ ভারতের জন্যেও বিস্ময়কর প্রভাব ফেলতে শুরু করে।

প্রথম ছয় বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাদামাটা খেলা প্রদর্শনের পর ২০১৩ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দূর্দান্ত খেলেন ও দলের শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। উদ্বোধনে নেমে দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকার সুযোগ থাকায় শিখর ধবনের সাথে উদ্বোধনী জুটি গড়ে বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। পরীক্ষামূলকভাবে তাঁদের এ জুটি বিরাট প্রভাব ফেলে। সৌরভ গাঙ্গুলী ও শচীন তেন্ডুলকরের পর ভারতের দ্বিতীয় সফলতম উদ্বোধনী জুটির মর্যাদা পায়। বীরেন্দ্র শেওয়াগ ও গৌতম গম্ভীর জুটির পর নতুন জুটি হিসেবে তাঁদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এছাড়াও, তিন নম্বর ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি’র সাথেও বেশ ভালো খেলেন। তাঁর সাথে জুটি গড়ে ৬৫-এর অধিক গড়ে রান তুলেছেন।

এরপর থেকেই তাঁর ব্যাট থেকে রানের ফুলঝুড়ি ছুঁটতে থাকে। একই বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওডিআই সিরিজে বড় ধরনের রানের খেলায় বেশ ভালো করেন। মাত্র ৬ খেলা থেকে ৪৯১ রান তুলেন। তন্মধ্যে, নিজস্ব প্রথম দ্বি-শতক ছিল। ২৬ বছর বয়সে বেঙ্গালুরুতে ১৫৮ বল মোকাবেলান্তে ১৬টি ছক্কা সহযোগে ২০৯ রান তুলে শচীন তেন্ডুলকর ও বীরেন্দ্র শেওয়াগের পর ওডিআইয়ে দুইশত রান সংগ্রহকারীর তালিকায় নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করেন।

আঙ্গুলের আঘাতের কারণে ক্রিকেট খেলা থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হন। তবে, দলে ফিরে এসেই স্বরূপ ধারন করেন। ১৩ নভেম্বর, ২০১৪ তারিখে ২৭ বছর বয়সে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজস্ব দ্বিতীয় দ্বি-শতক হাঁকান। ১৭৩ বলে সংগৃহীত ২৬৪ রানের ইনিংসটি অদ্যাবধি ওডিআইয়ের ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মর্যাদা পেয়ে আসছে। এ সংগ্রহটি শ্রীলঙ্কার ইনিংসের চেয়েও ১৩ রান বেশী ছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ৩৩০ রান তুলে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। তন্মধ্যে, কোয়ার্টার-ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে শতরানের ইনিংসসহ দুইটি অর্ধ-শতক করেছিলেন।

২০১৬ সালের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া সফরে সীমিত-ওভারের খেলায় উপর্যুপরী শতক হাঁকান ও ঐ সিরিজে ৯৯ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন। অবশেষে দল নির্বাচকমণ্ডলীসহ অধিনায়কের আস্থা কুড়াতে সক্ষম হন। একদিনের ক্রিকেটে অতিকায় মানব হিসেবে আবির্ভুত হন। ইনিংসের শুরুতে ধীরলয়ে ও স্থিরচিত্তে অগ্রসর হন। এরপর থেকে যে-কোন ধরনের বোলিং আক্রমণকে তুচ্ছরূপে সামলে দেদারসে রান তুলতে তৎপরতা দেখাতে থাকেন।

২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজ দেশে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯ রানে পৌঁছানোকালে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৩৫ ও ৮৮ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রবীন্দ্র জাদেজা’র অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৯৭ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

টেস্ট দলে থিতু হবার প্রাক্কালে আরও একবার আঙ্গুলে আঘাত পান। ফলশ্রুতিতে, নিজ দেশে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে মাঠের বাইরে অবস্থান করতে হয়। ২০১৬ সালে নিজ দেশে ভারতের সফলতম মৌসুমেও অধিকাংশ সময় দলের বাইরে ছিলেন। আরও একবার দলে প্রত্যাবর্তন করে মুম্বইভিত্তিক বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দলের নেতৃত্ব দেন। ৬ বছরের মধ্যে ইন্ডিয়ান টি২০ লীগে তৃতীয় শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। ৩০ বছর বয়সে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ওডিআইয়ে নিজস্ব তৃতীয় দ্বি-শতক অপরাজিত ২০৮ রান করেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐ খেলায় দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। নিজ বিবাহবার্ষিকীতে স্টেডিয়ামে উপস্থিত স্ত্রীকে ইনিংসটি উৎসর্গ করেন। একই মাসে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আবারও সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ২২ ডিসেম্বর টি২০ খেলায় মাত্র ৩৫ বলে শতক হাঁকিয়ে যৌথভাবে বিশ্বরেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখেন। ২০১৭ সালে ছয় শতক সহযোগে ১২৯৩ রান তুলেছিলেন।

এমএস ধোনি’র পরিবর্তে বিরাট কোহলিকে অধিনায়কের দায়িত্বভার অর্পণ করা হলে সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে ভারতের সহঃঅধিনায়ক হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হয়। ডিসেম্বর, ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিরাট কোহলি’র বিশ্রামজনিত কারণে ভারতের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন ও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ বিজয়ে ভূমিকা রাখেন।

২০১৮ সালে দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে টি২০আইয়ে ২০০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছেন। এছাড়াও, প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চারটি টি২০আইয়ে শতক হাঁকান। এশিয়া কাপ ও নিদাহাস ট্রফিতে ভারতের সফলতম অগ্রযাত্রায় অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। তন্মধ্যে, নিদাহাস ট্রফির শিরোপা জয়ে করেছিল ভারত দল। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখ পর্যন্ত টি২০আইয়ে ভারতের সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বিরাট কোহলি (৩৫৮৪) ও কেএল রাহুলকে (১৯৬৩) পাশ কাটিয়ে ৩৬২০ রান তুলে নিজেকে শীর্ষে নিয়ে যান।

২০১৯ সালে মুম্বই দলকে নেতৃত্ব দিয়ে রেকর্ডসংখ্যক চতুর্থ শিরোপা কুক্ষিগত করেন। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ব্যাট হাতে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন। এ প্রতিযোগিতায় ৯ ইনিংস থেকে পাঁচ শতক সহযোগে ৬৪৮ রান তুলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। এ অর্জনটি পূর্বে আর কেউ করতে পারেননি। ২০১৯ সালে ৩২ বছর বয়সে তৃতীয় ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আইসিসি গোল্ডেন ব্যাট লাভ করেন। বিশ্বকাপ শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমনার্থে ভারতের টেস্ট দলে তাঁকে যুক্ত করা হয়। ইনিংস উদ্বোধনে নেমে মৈয়াঙ্ক আগরওয়ালের সাথে দূর্দান্ত জুটি গড়েন।

২০১৩ সালের পূর্ব পর্যন্ত ওডিআইয়ে ব্যাটিং গড় যেখানে মাত্র ৩০.৪৩ ছিল, সেখানে ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর থেকে এক পর্যায়ে ৬০-এ এসে দাঁড়িয়েছিল। এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বাধিকসংখ্যক ১০টি শতক হাঁকান ও ভারতীয় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বাধিক রান সংগ্রহ করে সবিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ২০১৭ সালের পর থেকে ওডিআইয়ে সর্বাধিক ১৯ শতক হাঁকিয়ে শচীন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহলি ও রিকি পন্টিংয়ের পর সর্বাধিক শতরানের ইনিংসের তালিকায় চতুর্থ স্থানে চলে আসেন। টেস্টভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালে ১৪ খেলায় ৩৯৬ রান তুলে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রাহক হন। সুরেশ রায়না’র পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে সকল স্তরের ক্রিকেটে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন।

২০১৯-২০ মৌসুমে নিজ দেশে ফাফ ডু প্লিসি’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পান। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ১৯ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখে রাঁচিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অসাধারণ খেলেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৯৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৭৭ রান অতিক্রম করেন। ২১২ রানের ইনিংস উপহার দেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তাঁর অনবদ্য দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২০২ রানে জয় পেয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভসহ সিরিজে ৫২৯ রান তুলে ম্যান অব দি সিরিজের পুরস্কার পান।

আইপিএলে অন্যতম সফলতম ও বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। প্রথম দুই বছরে আইপিএলে অসাধারণ খেলেন। উভয় বছরেই সাড়ে তিনশত রানের অধিক সংগ্রহ করেন। ২০০৮ সালে ২১ বছর বয়সে আইপিএলে প্রথম খেলেন। হায়দ্রাবাদভিত্তিক বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত ডেকান চার্জার্সের সাথে খেলার জন্যে $৭৫০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হন। ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁকে খেলানো হলেও বোলার হিসেবেও নিজের গুরুত্বতা তুলে ধরেন। অভিষেক করুণ নায়ার, হরভজন সিং ও জেপি ডুমিনিকে বিদেয় করে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করেন। ২০১০ সালের আইপিএলের আসরে দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে দল বদল করে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে চলে আসেন।

২৬ বছর বয়সে ২০১৩ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন। ঐ বছর ৫৩৮ রান তুলেছিলেন। তাঁর অধিনায়কত্বে দলটি ২০১৩, ২০১৫, ২০১৭ ও ২০১৯ সালে আইপিএলের শিরোপা জয় করে। এছাড়াও, ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ টি২০ প্রতিযোগিতায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে নেতৃত্ব দেন। সুরেশ রায়না ও বিরাট কোহলি’র পর আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকায় নিজেকে যুক্ত করেন। এমএস ধোনি’র পর আইপিএলের সফলতম অধিনায়ক হিসেবে চিত্রিত করেন। ডেভিড ওয়ার্নার ও গৌতম গম্ভীরের পর তৃতীয় সর্বাধিক অর্ধ-শতক হাঁকান।

২০২৩-২৪ মৌসুমে নিজ দেশে বেন স্টোকসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ৭ মার্চ, ২০২৪ তারিখে ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, কুলদীপ যাদবের অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে ঐ টেস্টে তাঁর দল ইনিংস ও ৬৪ রানে জয়লাভসহ ৪-১ ব্যবধানে সিরিজে জয় করে নেয়।

২০২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে টম ল্যাথামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে ওয়াংখেড়েতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যাট হাতে নিয়ে ১৮ ও ১১ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, এজাজ প্যাটেলের স্মরণীয় বোলিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা মাত্র ২৫ রানে জয়লাভ করলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

২০১৫ সালে অর্জুন পুরস্কারে সম্মানিত হন। ২০২০ সালে দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মাননা রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ২০১৫ সালে রিতিকা সাজদেহ নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। সামাইরা শর্মা নাম্নী এক কন্যা রয়েছে।