|

রবিউল ইসলাম

২০ অক্টোবর, ১৯৮৬ তারিখে উপকূলীয় শহর সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

২০০০-এর দশকের পরবর্তী সময়ে স্বল্পসংখ্যক বাংলাদেশী পেস বোলারদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে তাঁর একনিষ্ঠ সুইং বলগুলো অগোচরে ছিল। শুধুমাত্র গণমাধ্যমে কিংবা ক্রিকেট সমর্থকদের মাঝেই যে তা গোচরীভূত হয়নি তা নয়; বরঞ্চ লর্ডসে টেস্ট অভিষেকের পূর্বেও এ ধারা অব্যাহত ছিল। কেবলমাত্র টেস্ট অভিষেকের পরই বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাণসঞ্চারে ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা তুলে ধরতে সমর্থ হন।

শৈশবকাল থেকেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি নেন। মাঝে-মধ্যেই তিনি ‘শিপলু’ ডাকনামে ভূষিত হতেন। ২০০৫-০৬ মৌসুম থেকে ২০১৮-১৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রেখেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে খুলনা বিভাগ ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অঞ্চলভিত্তিক লীগ প্রবর্তনের ফলে খেলার সুযোগ পান। ঢাকা লীগের খেলায় অংশগ্রহণকালে খুব দ্রুত জাতীয় ক্রিকেট লীগের প্রথম-শ্রেণীর খুলনা বিভাগীয় দলের সাথে যুক্ত হন।

২৭ নভেম্বর, ২০০৫ তারিখে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত রাজশাহী বিভাগ বনাম খুলনা বিভাগের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক হয়। শুরুটা বেশ ভালোভাবে সম্পন্ন করেন। নিজস্ব দ্বিতীয় খেলায় পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। ২০০৫-০৬ মৌসুমে ১৩ উইকেট পেয়েছিলেন। পরের দুই মৌসুমে তেমন ভালো খেলা উপহার দিতে পারেননি। তবে, পরবর্তী দুই মৌসুমে পুণরায় নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হন। ৭১ উইকেট পান ও বড়দের দলে খেলার সুযোগ লাভ করেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ ‘এ’ দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

২০১০ থেকে ২০১৪ সময়কালে বাংলাদেশের পক্ষে নয়টিমাত্র টেস্ট, তিনটিমাত্র ওডিআই ও একটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভূক্ত হন। ২৭ মে, ২০১০ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। টেস্ট অভিষেক পর্বটি তেমন সুখকর হয়নি। ২৩ ওভার বোলিং করলেও উইকেটবিহীন অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করেন। এ পর্যায়ে দৌঁড়ের সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। এরপর উভয় ক্ষেত্রেই বেশ পরিশ্রম করতে থাকেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ৮ উইকেটে পরাজয়বরণ করে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

এক বছর পর টেস্ট দলে পুণরায় অন্তর্ভুক্ত হন। হারারে টেস্টে অনেক সময় ধরে বোলিং করেন। দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ দলকে খেলায় ফিরিয়ে আনতে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। এরপর থেকেই দলের নিয়মিত সদস্য হন। খেলায় তিনি ১৫৪ রান খরচায় তিন উইকেট দখল করেন।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দূর্বল ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের পর তাঁকে দলে রাখা হলেও তেমন খেলানো হয়নি। তবে, সাতটি প্রথম-শ্রেণীর খেলা থেকে ২৯ উইকেট পেলে পরিবর্তনের হাওয়া আসে। টেস্ট দলে ফিরিয়ে আনা হয়। ষোলো মাস পর ২০১৩ সালে হারারেতে সিরিজের প্রথম টেস্টে নয় উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের প্রথম ছয় উইকেটই নিজের করে নিয়েছিলেন। দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজ থেকে ১৫ উইকেট দখল করেন। ঐ সময়ে যে-কোন সিরিজে বাংলাদেশী সিমারের এটিই সর্বাধিক উইকেট লাভ করা ছিল। উপর্যুপরী দুইবার পাঁচ-উইকেট লাভ করেন ও প্লেয়ার অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

অমায়িক চরিত্রের অধিকারী হিসেবে দলীয় সঙ্গীদের কাছে পরিচিতি লাভ করেন। সাগরের প্রতি ভালোবাসা সবিশেষ লক্ষ্যণীয়। শ্রীলঙ্কায় দলীয় ব্যবস্থাপকের অনুমতিক্রমে আরও দুইজন সতীর্থকে ভারত মহাসাগরের তীরে পৌঁছেন।

তবে, নিজ দেশে নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছন্দহীনতার কবলে পড়েন। দুই-খেলা নিয়ে গড়া সিরিজের কোনটিতেই কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। ২০১৩-১৪ মৌসুমে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৯ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/২৩ ও ০/৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সোহাগ গাজী’র অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ১২ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনে সোহাগ গাজী’র সাথে ১০৫ রানের জুটি গড়েন।

ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের পর তাঁকে দলের বাইরে রাখা হয়। অতঃপর, ৩২ বছর বয়সে সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্বে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ গমন করেন। ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ তারিখে গ্রোস আইলেটে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২/৬৩ ও ০/৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঐ টেস্টে সফরকারীরা ২৯৬ রানে পরাজয়বরণ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে পরাজিত হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

Similar Posts

  • |

    চার্লি স্মিথ

    ২৫ ডিসেম্বর, ১৮৭২ তারিখে কেপ কলোনির গ্যামটুস রিভার এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, কার্যকর বোলিং করতেন। ১৯০০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮৯৩-৯৪ মৌসুম থেকে ১৯০৪-০৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন…

  • | |

    ক্রিস হ্যারিস

    ২০ নভেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। বামহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘লাগস’ ডাকনামে পরিচিতি পান। কিউই তারকা ব্যাটসম্যানের খ্যাতি অর্জন করেন। প্রথম নিউজিল্যান্ডীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওডিআইয়ে দুই সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন ও প্রথম…

  • |

    স্যামি কার্টার

    ১৫ মার্চ, ১৮৭৮ তারিখে ইয়র্কশায়ারের নর্থোরাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষণের সাথে যুক্ত ছিলেন। উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসিত হন। ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন উইকেট-রক্ষক ছিলেন। তবে, সমসাময়িক অনেকে স্ট্যাম্পের কাছে থাকলেও তিনি তা করতেন না। ব্যাটিংকালে কাঁধের উপর দিয়ে স্কুপ করতেন। ব্যাটিংয়ে…

  • |

    সিস পার্কিন

    ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮৬ তারিখে কো ডারহামের ঈগলসক্লিফ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯২০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পিতা রেলওয়েতে চাকুরী করতেন। নর্টন থেকে টিসাইডে তাঁর পরিবারের সাথে চলে যান। এ পর্যায়ে পার্কিন সিনিয়র স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করতেন। বারো…

  • | |

    ব্রায়ান লারা

    ২ মে, ১৯৬৯ তারিখে ত্রিনিদাদের কান্টারো এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। আধুনিক যুগে বিশ্বের অন্যতম সেরা বামহাতি ব্যাটসম্যান। বীর, যাদুকর, বিনোদনকারী, খেলা বিজয়ী, নেতা প্রভূতঃ অভিধায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। ব্যাট…

  • |

    ডেনিস ডায়ার

    ২ মে, ১৯১৪ তারিখে নাটালের বেরিয়া এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। ১৯৪০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। দীর্ঘাকায় গড়ন ও সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। অসম্ভব ধৈর্য্যশক্তির অধিকারী হিসেবে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। তবে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পাল্টা…