|

রবিন সিং

১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩ তারিখে ত্রিনিদাদের প্রিন্সেস টাউন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে অল-রাউন্ডার হিসেবে ভারত দলে খেলেছেন। ১৯৯০-এর দশকে ওডিআইয়ে একাধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। সচরাচর মাঝারিসারিতে ব্যাট হাতে মাঠে নামতেন ও শেষদিকের ওভারগুলোয় কুচিকাটা ব্যাটিং করতেন। ব্যাট ও বল হাতে সাফল্য লাভের পাশাপাশি অত্যন্ত ভালোমানের ফিল্ডার হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। ত্রিনিদাদে জন্মগ্রহণ করলেও খুব ছোটবলায় ভারতে চলে আসেন। পরবর্তীতে ভারতের দক্ষিণাঞ্চল তামিলনাড়ুর অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেন। নিজের সময়ের চেয়েও নিজেকে এগিয়ে রেখেছিলেন।

১৯৮২-৮৩ মৌসুম থেকে ২০০১-০২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে তামিলনাড়ু এবং ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে সাউথ ত্রিনিদাদ ও ত্রিনিদাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮১-৮২ মৌসুমে তামিলনাড়ুর সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তাঁর। এমন এক যুগে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন যখন ফিল্ডিংয়ের গুণাবলীকে গুরুত্ব দেয়া হতো না এবং ক্রিকেটারেরা হয় ব্যাটসম্যান, নয়তো বোলার হিসেবে খেলেছিলেন। তবে, তিনি মাঠে গতিশীলতা আনতে সচেষ্ট ছিলেন ও খুব শীঘ্রই সেরা ভারতীয় ফিল্ডার হিসেবে বিবেচিত হন। তাঁর অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী দলে ভারসাম্য আনয়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মনপ্রাণ উজার করে খেলায় অংশ নিতেন। উপযোগী ও কার্যকর ক্রিকেটার হিসেবে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার পূর্বেই নিজের গুরুত্বতা তুলে ধরেন।

১৯৮৯ থেকে ২০০১ সময়কালে ভারতের পক্ষে একটিমাত্র টেস্ট ও ১৩৬টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১১ মার্চ, ১৯৮৯ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন। তবে, দল থেকে বাদ পড়েন। সাত বছর পর ১৯৯৬ সালে টাইটান কাপে অংশ নেয়ার জন্যে তাঁকে পুণরায় ভারত দলের সদস্যরূপে মনোনীত করা হয়।

কপিল দেবের ন্যায় অল-রাউন্ডারের সমকক্ষ না হলেও ১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে ভারত দলের নিত্য অনুসঙ্গ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। ব্যাটিংয়ে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নির্ভিকচিত্তে মারকুটে ভঙ্গীমায় ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। এছাড়াও, শান্ত চিত্তে বোলিং করতেন। কভার পয়েন্ট অঞ্চলে অবস্থান করে বলের গতি রোধ করতে বিরাট ভূমিকা রাখতেন।

সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিপক্ক করে তুলেন ও নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট ছিলেন। এরপর থেকেই দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা পান। ১৯৯৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ব্যক্তিগত একমাত্র ওডিআই শতক হাঁকানোর পাশাপাশি চার ওভার ৩ উইকেট লাভ করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই অধিক সফল ছিলেন। ওডিআইয়ে দুইবার পাঁচ-উইকেট লাভ করে এ দলের বিপক্ষে।

এছাড়াও, ১৯৯৮ সালে ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৩ বলে ৮২ রান তুলে দলকে স্মরণীয় জয় এনে দেন। ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের তৃতীয় চূড়ান্ত খেলায় ৩১৫ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে তিন নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নামেন। এ পর্যায়ে সৌরভ গাঙ্গুলী’র সাথে ১৭৯ রানের গুরুত্ব ইনিংস খেলেছিলেন।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ৭ অক্টোবর, ১৯৯৮ তারিখে হারারে স্পোর্টস ক্লাবে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। অজিত আগরকরের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। হেনরি ওলোঙ্গা’র সুন্দর বোলিংশৈলীর কারণে স্বাগতিক দল ৬১ রানে জয় পায়। পাঁচটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। বল হাতে নিয়ে উভয় ইনিংসে ০/১৬ করে বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ১৫ ও ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

২০০৪ সালে সকল স্তরের ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। ২০০৪ সালে হংকং দলে কোচের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। দলকে এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতায় নিয়ে যান। দুই বছর পর ভারতের ‘এ’ দলের কোচ হিসেবে মনোনীত হন। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সময়কালে ভারতের ফিল্ডিং কোচ হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তবে, বোলিং কোচ বেঙ্কটেশ প্রসাদের সাথে তাঁকেও কোন কারণ ছাড়াই বাদ দেয়া হয়। এরপর, আইপিএলে তৃতীয় আসরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কোচ হিসেবে মনোনীত হন।

উত্তর আমেরিকা ক্রিকেট খেলা প্রসারণের স্বার্থে অরুণ কুমার লায়ামের সাথে নিউ জার্সিতে রবিন সিং ক্রিকেট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনূর্ধ্ব-১৯ দল ও মহিলা দলকে প্রশিক্ষণ দেন। এছাড়াও, রবিন অ্যাসোসিয়েটসের স্বত্ত্বাধিকারী তিনি।

Similar Posts

  • |

    হেমাঙ্গ বাদানি

    ১৪ নভেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে তামিলনাড়ুর মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ২০০০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। মাঝারীসারিতে পরিচ্ছন্ন ও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মাঠে সজীব ভূমিকায় অগ্রসর হতেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে বেশ কয়েকজন অল-রাউন্ডারের অন্যতম হিসেবে তাঁকে ভারত দলে…

  • | | |

    হিমু অধিকারী

    ৩১ জুলাই, ১৯১৯ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী এবং অত্যন্ত সম্মানীয় ভারতীয় ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। এছাড়াও, সেনাবাহিনীতে যুক্ত ছিলেন তিনি। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও লেগ-ব্রেক বোলিং করতেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যতিক্রমধর্মী ফিল্ডার হিসেবে তিনি ফিল্ডিংয়ের গুরুত্বতা সম্পর্কে সতীর্থদেরকে অবহিত করে গেছেন। সামরিক শৃঙ্খলাকে উপজীব্য করে ঐ সময়ের ভারতীয় ক্রিকেটে…

  • | |

    ফ্রান্সিস ম্যাককিনন

    ৯ এপ্রিল, ১৮৪৮ তারিখে লন্ডনের প্যাডিংটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন তিনি। ১৮৭০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। হ্যারোভিয়ান হিসেবে প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ পাননি। এক পর্যায়ে কেমব্রিজের অধীনে সেন্ট জোন্স কলেজে দারুণ খেলে ব্লু আদায় করে নিতে সক্ষম হন। ১৮৭০ সালে অক্সফোর্ডের…

  • |

    নীল জনসন

    ২৪ জানুয়ারি, ১৯৭০ তারিখে সলসবারিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং শৈলী প্রদর্শন করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। পাশাপাশি, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণ কর্মেও অগ্রসর হতেন। পিতা হাউইকভিত্তিক ফার্মিং কনসালটেন্ট হিসেবে নাটালে নিয়োগ পেলে ১০ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান। হাউইক হাই স্কুলে অধ্যয়নের পর পোর্ট এলিজাবেথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কিংসউড…

  • | |

    রাজিন সালেহ

    ২০ নভেম্বর, ১৯৮৩ তারিখে সিলেটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ২০০০-এর দশকে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সর্বদাই জেলা কিংবা বিভাগীয় দলের ব্যাটিং স্তম্ভ হিসেবে অলোক কাপালী’র স্ট্রোকপ্লের পাশাপাশি নিজেকে সমুজ্জ্বল রাখতে তৎপর ছিলেন। বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত…

  • | | |

    মার্ক টেলর

    ২৭ অক্টোবর, ১৯৬৪ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের লিটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেট অধিনায়ক হিসেবে চিত্রিত হয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ও কার্যকরী অধিনায়কের গুণাবলীর কারণে খেলোয়াড়ী জীবনে ‘টাবি’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ…