রিকি পন্টিং
১৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৪ তারিখে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। গ্রায়েম পন্টিং ও লরেইন পন্টিং দম্পতির সন্তান ছিলেন। খুব সহজেই ক্রিকেটের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছেন। প্রচলিত ধাঁচের অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড়ের যুৎসই উদাহরণ হিসেবে রয়েছেন। আক্রমণাত্মক, আত্মবিশ্বাসী মনোভাব নিয়ে খেলতেন। একাডেমির কোচ রড মার্শ একদা তাঁকে তাঁর দেখা সেরা কিশোর ব্যাটসম্যানরূপে চিত্রিত করেছেন।
১৭ বছর বয়সে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ‘পান্টার’ ডাকনামে পরিচিত রিকি পন্টিংয়ের অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।
১৯৯৫ থেকে ২০১২ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ১৬৮ টেস্ট, ৩৭৫টি ওডিআই ও ১৭টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৫ সালে ২০ বছর বয়সে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে ঠাঁই দেয়া হয়। ওডিআই খেলোয়াড়ী জীবনে চমৎকার সূচনার কারণে একই বছরে তাঁকে টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দূর্ভাগ্যজনকভাবে অল্পের জন্যে অভিষেক টেস্টে শতক হাঁকাতে পারেননি। তাসত্ত্বেও নিজেকে ক্রিকেট বিশ্বকে আবির্ভাবের কথা তুলে ধরতে কার্পণ্য করেননি।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। স্টুয়ার্ট ল’য়ের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৯৬ রান তুলে চামিণ্ডা ভাসের বলে এলবিডব্লিউতে বিদেয় নেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মাইকেল স্ল্যাটারের অনবদ্য দ্বি-শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৩৬ রানে পরাভূত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। প্রসঙ্গতঃ, এটিই উভয় দলের মধ্যকার উদ্বোধনী টেস্ট ছিল। ১৪ অক্টোবর, ১৯৯৯ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র-টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৩১ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/০ ও ০/০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। দলীয় অধিনায়কের অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয়লাভ করে।
২০০১-০২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০২ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৩৯ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩৬০ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুর দিনগুলোয় মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। পরবর্তীতে তিন নম্বর অবস্থানে স্থায়ী আসন গড়েন। শুরুতে শৃঙ্খলার ধার ধারতেন না। তবে, বয়সের পাশাপাশি তা করায়ত্ত্ব করেন। ২০০২ সাল থেকে দলের নেতৃত্বের দিকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওডিআইয়ে অধিনায়কের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়। এরপর থেকে তাঁর মাঝে কিছুটা অতিমানবীয় ধাঁচ লক্ষ্য করা যায়। জানুয়ারি, ২০০২ সাল থেকে ডিসেম্বর, ২০০৩ সাল পর্যন্ত মাত্র ৯২ ইনিংসে ১৮টি আন্তর্জাতিক শতক হাঁকান। দলের নেতৃত্বের বিষয়টি বেশ উপভোগ করতে থাকেন ও নেতৃত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে টেস্ট দলের নেতৃত্ব তাঁর কাঁধে চলে আসে।
২০০৪-০৫ মৌসুমে অজি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৬ মার্চ, ২০০৫ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণত্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ব্যাট হাতে নিয়ে ১০৫ ও ৮৬* রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীকরণে অগ্রসর হন। এছাড়াও, ০/১০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৫ সালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে ওডিআইয়ে একমাত্র শতকের সন্ধান পেয়েছিলেন। সিরিজের দ্বিতীয় ওডিআইয়ে ব্রেট লি’র পাঁচ-উইকেটে প্রতিপক্ষ ২২৩/৮ তুললে ১১১ রান সংগ্রহ করেন। ৩৪ বল বাকী থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যে সাত উইকেটের ব্যবধানে জয় তুলে নেয় তাঁর দল। ড্যারেন গফের বোলিংয়ে কেভিন পিটারসনের তালুবন্দীতে পরিণত হবার পূর্বে ১১৫ বল মোকাবেলান্তে চৌদ্দটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান। মনোমুগ্ধকর শতরানের কল্যাণে লর্ডসের সীমিত-ওভারের অনার্স বোর্ডে ঠাঁই পান।
অস্ট্রেলিয়া দলকে প্রভাববিস্তারকারী দলে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হন ও দলের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে নিজেকে পরিণত করেন। তিন বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ে অংশ নেন।
২০০৯-১০ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৪ জানুয়ারি, ২০১০ তারিখে হোবার্টে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ঐ টেস্টে ২০৯ ও ৮৯ রান তুলেন। তাঁর দূর্দান্ত ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৩১ রানে জয় পেয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১২-১৩ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৩০ নভেম্বর, ২০১২ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪ ও ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। হাশিম আমলা’র অনবদ্য ব্যাটিং সাফল্যে স্বাগতিকরা ৩০৯ রানে পরাজিত হলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ক্রিকইনফো প্রণীত ২০০০ থেকে ২০০৯ সময়কালে দশকের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হন। ২০০৩ সালে উইজডেন কর্তৃক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড় ও ২০০৬ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে আইসিসি বর্ষসেরা খেলোয়াড়, ২০০৭ সালে আইসিসি বর্ষসেরা অধিনায়ক, ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৬ সালে আইসিসি বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হন।
২১ অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে স্পোর্ট অস্ট্রেলিয়া হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া পদকে ভূষিত হন। ২০০৪, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা খেলোয়াড় হিসেবে অ্যালান বর্ডার পদক লাভ করেন। ২০১৭ সালে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া হল অব ফেম ও ডিসেম্বর, ২০১৮ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। রায়ানা জেনিফার ক্যান্টর নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।