রবি শাস্ত্রী
২৭ মে, ১৯৬২ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ভারত দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
যেখানে ক্রিকেট ও ক্রিকেটবিষয়ক আলোচনা রয়েছে সেখানেই তাঁর নিত্য অবস্থান। টেলিভিশনের পর্দায় তাঁর চেহারা ও কণ্ঠস্বরকে ঘিরে গণমাধ্যমে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে বোম্বের অনেক খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে ভারত দলে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। বিদ্যালয় জীবনের শেষ বর্ষে অবস্থান করে হারিস-শীল্ডের শিরোপা বিজয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন। খেলোয়াড় অনুসন্ধানে যুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা চিহ্নিত হন। দ্রুতলয়ে তাঁর উত্থান ঘটে।
১৯৭৯-৮০ মৌসুম থেকে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বোম্বে ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্ল্যামারগনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৭ বছর বয়সে রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় বোম্বে দলের তৎকালীন সর্বকনিষ্ঠ সদস্যরূপে ঠাঁই পান। এর এক বছর পরই ভারতের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হন।
প্রচলিত ও রক্ষণাত্মক ধাঁচে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন অগ্রসর হয়েছিল। দলের নিয়মিত উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের আঘাতজনিত কারণে প্রায়শঃই ব্যাটিং উদ্বোধন করার আমন্ত্রণ পেতেন। বিদেশের মাটিতে অতি-রক্ষণাত্মক ধাঁচে ব্যাটিং করতেন অনেকাংশে খেলোয়াড়ী জীবনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে। তাসত্ত্বেও শক্তিধর দলের বিপক্ষে ব্যাট হাতে নিয়ে রান পেতেন, বড় ধরনের ইনিংস খেলতেন। ঐ দশকে অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে ৭৭.৭৫ গড়ে রান সংগ্রহ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
লিকলিকে গড়নের ছয় ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে তরুণীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। ক্রিকেটে জনপ্রিয়তা বাড়ার পাশাপাশি তাঁর শারীরিক আবেদনও উত্তরোত্তর তুঙ্গে পৌঁছে। এক পর্যায়ে অভিনেত্রী অমৃতা সিংয়ের সাথে তাঁর উপচেপড়া প্রেম সংবাদ শিরোনামে চলে আসে। দর্শনীয় চেহারা, অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পাশাপাশি অনবরত ইংরেজীতে কথাবার্তাসহ অভিজাত পরিবারের সন্তান হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তায় যুক্ত হয়।
১৯৮১ থেকে ১৯৯২ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৮০ টেস্ট ও ১৫০টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮০-৮১ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। যোগরাজ সিং ও সন্দীপ পাতিলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। কিন্তু, তেমন সফলতার সন্ধান পাননি। ৩/৫৪ ও ৩/৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৩* ও ১৯ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, সন্দীপ পাতিলের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন স্বত্ত্বেও স্বাগতিক দল ৬২ রানে জয়লাভ করে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
এরপর, ১৩ মার্চ, ১৯৮১ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে জন ব্রেসওয়েলের উইকেট লাভ করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বতন সেরা বোলিং ছিল ৩/৯। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। বল হাতে নিয়ে ৫/১২৫ ও ২/২৪ লাভ করেন। এছাড়াও, ৫ ও ৯ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ঐ টেস্টটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি জন রাইটের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
কিশোর অবস্থাতেই তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। অস্ট্রেলিয়ায় চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়ন্স হবার সুবাদে অডি গাড়ী পুরস্কার পেলে দেশের সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বীবিত তরুণের মর্যাদা এনে দেয়।
১৯৯০ সালে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৬ জুলাই, ১৯৯০ তারিখে লর্ডসে শুরু হওয়া সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। শতক হাঁকিয়ে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে ঠাঁই করে নেন। ১২১ রান তুললেও স্বাগতিক দলের বিপক্ষে দলের পরাজয় রোধ করতে পারেননি তিনি। তবে, খেলার প্রথম ইনিংসে গ্রাহাম গুচের ৩৩৩ রানের স্মরণীয় কীর্তির কারণে তাঁর এ সাফল্য ঢাকা পড়ে যায়। প্রতিপক্ষের পর্বতসম ৬৫৩/৪ ইনিংস ঘোষণার পর প্রবল চাপের মুখে পড়ে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। ১৮৪ বলে ১০০ রান তুলে একবার আউটের সুযোগ দিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে গ্রাহাম গুচ আবারও ১২৩ রানের শতরান ইনিংস খেললে তাঁর দল ২৪৭ রানে পরাজিত হয়।
একই সফরের ২৩ আগস্ট, ১৯৯০ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১৮৭ রান সংগ্রহসহ ১/২৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯১-৯২ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বে ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২ জানুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন ও অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ০/৩৭ ও ৪/৪৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২০৬ রানের মনোরম দ্বি-শতক হাঁকান। পরবর্তীতে, এটিই টেস্টে তাঁর সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানে পরিণত হয়। তাঁর অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন স্বত্ত্বেও অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। মার্চ, ১৯৭০ সালের পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটি প্রথম টেস্ট খেলা ছিল। ৩০ বছর বয়সে ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১২ রানে থাকাকালে পরবর্তী ৮৬ মিনিট কোন রান সংগ্রহ করতে পারেননি। পরের খেলায়ও ঘণ্টাকাল কোন রান তুলতে ব্যর্থ হন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অবশ্য, বল হাতে নিয়ে ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে বিএম ম্যাকমিলানকে বিদেয় করে ১৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ২/৩৮ ও ০/২২ পান। প্রবীণ আম্রে’র অসাধারণ শতকে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
এ সফরে ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ তারিখে পোর্ট এলিজাবেথে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১০ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, অ্যালান ডোনাল্ডের অসামান্য বোলিং বিশ্লেষণে স্বাগতিক দল ৯ উইকেটে জয় পেয়ে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ১৯৯০ সালে ঋতু সিং নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। ৪৬ বছর বয়সে থাকা অবস্থায় আলেকা নাম্নী এক কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে।