২ মে, ১৯৬০ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
১৯৮০-৮১ মৌসুম থেকে ১৯৮৯-৯০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
ব্যাট ও বল হাতে নিয়ে প্রকৃত মানসম্পন্ন অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। প্রাণবন্তঃ পেস সহযোগে উপযোগী পরিবেশে বলকে বাঁক খাওয়ানোয় পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। বল হাতে দক্ষতা প্রদর্শনের পাশাপাশি নিচেরসারিতে বামহাতে কার্যকর ব্যাটিংয়ে সক্ষম ছিলেন।
খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে ব্যাট হাতে নামতেন। ফলশ্রুতিতে, টেস্ট পর্যায়েও ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমেছিলেন ও সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে প্রতিযোগিতায় দলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাষ সৃষ্টি করলেও তৎকালীন শ্রীলঙ্কা দলে এর প্রভাব খুব কমই প্রবাহিত হয়েছিল।
১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ২২ টেস্ট ও ৭৮টি ওডিআইয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৮১-৮২ মৌসুমে বান্দুলা বর্ণাপুরা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে পাকস্তান গমন করেন। ২১ বছর বয়সে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। মূলতঃ বোলার হিসেবেই শ্রীলঙ্কা দলে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৫ মার্চ, ১৯৮২ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১/৪৯ ও ০/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২৪ ও ০ রান সংগ্রহ করেছেন। ২০৪ রানে জয় পেয়ে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
পাকিস্তানের মাটিতে নিস্তেজ উইকেটে চার উইকেট দখল করলেও তাঁকে বেশ রান খরচ করতে হয় ও দশ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামানো হয়। শুরুতে উইকেট লাভ ও রান সংগ্রহে হিমশিম খেলেও দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর উপর আস্থা রাখেন। একই সফরের ১২ মার্চ, ১৯৮২ তারিখে করাচীতে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।
১৯৮২-৮৩ মৌসুমে সোমাচন্দ্র ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১১ মার্চ, ১৯৮৩ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২৪ রান অতিক্রম করেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ২৯* ও ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৩৬ ও ১/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ৬ উইকেটে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। প্রসঙ্গতঃ এটিই নিউজিল্যান্ডের প্রথমবারের মতো উপর্যুপরী দুই টেস্ট জয় ছিল।
১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে নিজ দেশে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৬ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে কলম্বো এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। নিজেকে মেলে ধরেন। ৫/৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে ০/১৭ পান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২২ ও ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায়।
পাকিস্তানের বিপক্ষে উপর্যুপরী সিরিজেও এ ধারা অব্যাহত রাখেন। ফলশ্রুতিতে, দলে স্থান পাকাপোক্ত করেন। বল হাতে সফলতা লাভের পাশাপাশি নিচেরসারিতেও কার্যকর রান সংগ্রহ করতে থাকেন।
শিয়ালকোটে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে বিধ্বংসী বোলিং উপহার দেন। ৮/৮৩ লাভ করে নিজেকে শ্রীলঙ্কান বোলারদের সেরাদের কাতারে নিয়ে যান। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে ভারত সফরেও দলের বোলিং উদ্বোধনে নিজেকে তুলে ধরেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্বও কাঁধে নেন। নতুন বল মোকাবেলায় ৯৩ রানের স্মরণীয় ইনিংস খেলেন। সিদাথ ওয়েতিমুনি’র সাথে ১৫৯ রানের জুটি গড়েন। এরপর, বল হাতে নিয়ে ৪ উইকেট পান। দ্বিতীয় টেস্টে ৫৪ রান তুলে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। কটকে অনুষ্ঠিত সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টেও ৫/৮৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন।
১৯৮৪ সালে শারজায় রথম্যান্স এশিয়া কাপে অংশ নিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও তাঁর এ ধরনের ক্রীড়াশৈলী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাষ লক্ষ্য করা যায়। ১৯৮৮ সালে দূর্দান্ত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দূর্দান্ত খেলেন। ৪০ ওভার মিতব্যয়ী বোলিং করে ৪/৯৮ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ব্যাট হাতে নিয়ে ২৮ ও ৩৪ রান তুললেও বাদ-বাকীদের মধ্য বিবর্ণতা ভাব লক্ষ্যণীয় ছিল। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেও খেলোয়াড়ী জীবনের পীড়াদায়ক খেলা উপহার দেন। উভয় ইনিংসেই অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু, শ্রীলঙ্কা দলকে রক্ষা করার মতো আর কাউকে খেলতে দেখা যায়নি।
একই বছর রঞ্জন মাদুগালে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফর যান। ২৫ আগস্ট, ১৯৮৮ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৫৯* ও ৩২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/১০৭ ও ০/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন স্বত্ত্বেও স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পায়। ফিল নিউপোর্টের সাথে যৌথভাবে খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
১৯৮৯-৯০ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে হোবার্টে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১/৩৯ ও ০/৮৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৯ ও ৭৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, অরবিন্দ ডি সিলভা’র প্রাণান্তঃকর ব্যাটিং স্বত্ত্বেও স্বাগতিকরা ১৭৩ রানে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
