Skip to content

রঙ্গনা হেরাথ

1 min read

১৯ মার্চ, ১৯৭৮ তারিখে কুরুনেগালায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণসহ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে কুরুনেগালা ইয়ুথ ক্রিকেট ক্লাব, মুরস স্পোর্টস ক্লাব, তামিল ইউনিয়ন ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিক ক্লাব এবং ওয়েয়াম্বা এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারে ও হ্যাম্পশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, কন্দুরাতা ম্যারুন্সের পক্ষে খেলেছেন।

২০ বছর বয়সে কুরুনেগালা ইয়ুথ ক্রিকেট ক্লাব ও মুরস স্পোর্টস ক্লাবের পক্ষে খেলতে শুরু করেন। ইংল্যান্ড সফরে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের সদস্যরূপে বেশ ভালোমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৯৯ সালে নিজ দেশে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার জন্যে শ্রীলঙ্কা দলে রাখা হয়।

১৯৯৯ থেকে ২০১৮ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ৯৩ টেস্ট, ৭১টি ওডিআই ও ১৭টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করতে সমর্থ হন। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ঐ টেস্টে মুত্তিয়া মুরালিধরনের সাথে একত্রে খেলেন। তাঁরা অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংস্তম্ভে বেশ ফাটল ধরান। খেলায় তিনি ৪/৯৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। মাইকেল স্ল্যাটারের অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

এরপর থেকে দলে আসা-যাবার পালায় ছিলেন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত মাত্র দুই টেস্ট খেলার জন্যে আমন্ত্রণ পান। এ সময়ে অবশ্য শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের পক্ষে অনেকগুলো খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ১৪ টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবার পরও মুত্তিয়া মুরালিধরনের পর শ্রীলঙ্কার সর্বাপেক্ষা সফলতম বোলার ছিলেন। অজন্তা মেন্ডিস দূর্ভাগ্যের কবলে পড়লে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো টেস্ট জগতে ফিরে আসেন। দু’হাত ভরে উইকেট পেতে থাকেন।

২৫ এপ্রিল, ২০০৪ তারিখে হারারেতে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। এরপর থেকে আবারও দলে আসা-যাবার পালায় অবস্থান করতে থাকেন। বলকে তেমন বড় ধরনের বাঁক খাওয়াতে পারতেন না। তবে, বলকে শূন্যে ভাসিয়ে ও পেসে পরিবর্তন এনে ব্যাটসম্যানকে বেশ ধোঁকা দিতেন।

খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুরদিকের দিনগুলোয় মুত্তিয়া মুরালিধরনকে সহযোগিতাকল্পে তাঁকে দলে রাখা হতো। অধিকাংশ সময়ই রান আটকানো ও ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ প্রয়োগে অগ্রসর হতেন এবং অপরপ্রান্তে মুরালি’র যাদুকর্ম অব্যাহত থাকতো। ২০০৪-০৫ মৌসুমে কলম্বোয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পুণরায় টেস্ট দলে ফিরিয়ে আনা হয়। বেশ ভালোমানের বোলিং পরিসংখ্যান গড়লেও দল নির্বাচকমণ্ডলীর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেননি। আবারও তাঁকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দলের বাইরে রাখা হয়।

২০০৯ সালে দূর্দান্ত মৌসুম অতিবাহিত করেন। দলে ফিরে ২৩ উইকেট পান। ঐ বছর ইউনুস খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় মুহূর্ত অতিবাহিত করেছিলেন। ৪ জুলাই, ২০০৯ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ১৬৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ধাবমান পাকিস্তান দলের ইনিংসে ৪/১৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে অবিশ্বাস্য জয় উপহার দেন ও প্রথমবারের মতো নিজের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ১/৫২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছিলেন। পাশাপাশি, ২০ ও ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসামান্য অল-রাউন্ড নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৫০ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ২০ জুলাই, ২০০৯ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ০/৭৬ ও ৫/১৫৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, কুমার সাঙ্গাকারা’র ব্যাটিং সাফল্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয় পায়।

একই বছর নিজ দেশে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ২৬ আগস্ট, ২০০৯ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে জীতেন প্যাটেলের বলে শূন্য রানে বিদেয় নেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৭০ ও ৫/১৩৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মাহেলা জয়াবর্ধনে’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৯৬ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

২০১০ সালে বিখ্যাত ক্রিকেট তারকা মুত্তিয়া মুরালিধরনের অবসর গ্রহণের পর ধীরে ধীরে নিজেকে দলের প্রধান স্পিনার হিসেবে পরিচিতি ঘটাতে সচেষ্ট হন। একাগ্রচিত্তে নিখুঁতভাব বজায় রেখে পেস ও শূন্যে বলকে ভাসানোর ন্যায় বৈচিত্র্যময় বোলিং করেন। পাশাপাশি ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে দ্রুতগতিসম্পন্ন ও তীক্ষ্ণ রহস্যময় বল করতেন। দেশের সীমানা অতিক্রম করে বিদেশের মাটিতেও ব্যাটিং উপযোগী পিচেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা পান। এ পর্যায়ে টেস্ট ক্রিকেট অঙ্গনে শ্রীলঙ্কার মূল বোলার হিসেবে নিজেকে পরিচিতি ঘটাতে সচেষ্ট হন।

২০১১ সালে এসএসসিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর অসম্ভব দমের বিষয়টি ধরা পড়ে। ৫২ ওভার বোলিং করে সাত-উইকেট লাভ করেন। পরের বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে উপর্যুপরী তিনবার ছয়-উইকেট পান ও তার পরের বছর তিনবার উপর্যুপরী পাঁচ-উইকেট পেয়েছিলেন।

২০১১-১২ মৌসুমে তিলকরত্নে দিলশানের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত খেলেন। ৩০ ও ৮* রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ৪/৪৯ ও ৫/৭৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দলকে প্রথম টেস্ট জয়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীতে সফরকারীরা ২০৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

এরপর থেকে উত্তরোত্তর তাঁর খেলার ধারা উঁচুতে চলে আসতে থাকে। ২০১২ সালে ২৩.৬১ গড়ে ৬০ উইকেট নিয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন। এরফলে, মুরালি’র প্রতিচ্ছবির পরিচিতি ভেঙ্গে ফেলতে সমর্থ হন ও মাঠে সেরা বামহাতি স্পিনারদের অন্যতম হিসেবে পরিগণিত হন। পরের বছরগুলোয়ও একই ধারা অব্যাহত রাখেন। মূলতঃ নিজ দেশেই অধিক সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। পরের মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। এ সফরেও দীর্ঘ সময় ধরে বোলিং করে গেছেন, উইকেট পেয়েছেন ও রানের চাকা সচল রেখেছেন। ফাস্ট বোলারদের হিমশিম অবস্থা থেকে মুক্ত করতে নিজেকে মেলে ধরেছেন।

২০১২-১৩ মৌসুমে নিজ দেশে রস টেলরের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ১৭ নভেম্বর, ২০১২ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হয়েছিলেন। ৫/৬৫ ও ৬/৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পেয়ে ১১ রানে অপরাজিত ছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

এরপর, একই সফরের ২৫ নভেম্বর, ২০১২ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৬/১০৩ ও ৩/৬৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৫ ও ৬* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় সফরকারীরা ১৬৭ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। এ সিরিজে ২২ রান সংগ্রহসহ ২০ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

একই মৌসুমে নিজ দেশে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ১৬ মার্চ, ২০১৩ তারিখে কলম্বোর আরপিএসে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ খেলেন। ৫/৬৬ ও ৭/৮৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর বোলিং দাপটে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

২০১৩-১৪ মৌসুমে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। ১৬ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে উভয় ইনিংসে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। এছাড়াও, ৫/১২৫ ও ০/১০০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, আজহার আলী’র অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় পাকিস্তান দল ৫ উইকেটে জয় পেলে ১-১ ব্যবধানে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

২০১৪ সালে নিজ দেশে হাশিম আমলা’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৪ জুলাই, ২০১৪ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ঐ টেস্টে ৭* ও ৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/৭১ ও ৫/৪০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, মাহেলা জয়াবর্ধনে’র অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

ঐ বছর অন্যতম স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। ঐ বছর নিজ দেশে ফিরতি সফরে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১৪ আগস্ট, ২০১৪ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। এসএসসিতে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৯/১২৭ পান। বামহাতি বোলারদের মধ্যে এ পরিসংখ্যানটি সেরা ছিল। এরপর, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৫৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ১৭ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর দূর্দান্ত বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০৫ রানে জয় পেয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। এছাড়াও, ২৩ রান ও ২৩ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

ঐ বছরের আইসিসি বিশ্ব টি২০ কাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫/৩ বোলিং করে দলকে সেমি-ফাইনালের পথে প্রায় একাকী নিয়ে যান। ৩.২-২-৩-৫ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কা দল ট্রফি জয় করে ও ২০১৯ সালে উইজডেন কর্তৃক দশকের সেরা টি২০আই স্পেলের স্বীকৃতি পায়। ২০১৪ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এরপূর্বে ২০১১ সালের প্রতিযোগিতায় চার খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।

২০১৫-১৬ মৌসুমে নিজ দেশে জেসন হোল্ডারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১৪ অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৬/৬৮ ও ৪/৭৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। দলের একমাত্র ইনিংসে দেবেন্দ্র বিশু’র বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। তাঁর দূর্দান্ত বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৬ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

এরপর, একই সফরের ২২ অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ২৬* ও ১৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৩৯ ও ৪/৫৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, মিলিন্ডা সিরিবর্ধনা’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের সুবাদে স্বাগতিকরা ৭২ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ৪৪ রান সংগ্রহসহ ১৫ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

বয়সের ভারে ন্যূহ অবস্থায় ২০১৬ সালের আইসিসি বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতা শেষে সীমিত-ওভারের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এরফলে, দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় অধিক মনোনিবেশের কথা জানান। তবে, গ্রুপ পর্ব থেকেই শ্রীলঙ্কা দল বিতাড়িত হয়। ফলশ্রুতিতে, ১৭ এপ্রিল, ২০১৬ তারিখে ওডিআই ও টি২০আই থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। তাসত্ত্বেও, দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় ঠিকই প্রভাববিস্তারের মাধ্যমে নিজের সক্ষমতার কথা তুলে ধরেন। একই বছর অস্ট্রেলিয়া দল শ্রীলঙ্কা সফরে আসলে তিনি স্বরূপ ধারন করেন। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজ থেকে ২৮ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেন। তন্মধ্যে, গলেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে হ্যাট্রিক করার গৌরব অর্জন করেন। প্রথম ইনিংসে অ্যাডাম ভোজেস, পিটার নেভিল ও মিচেল স্টার্ক তাঁর শিকারে পরিণত করেছিলেন।

এরপরও খেলোয়াড়ী জীবনে তাঁর সম্ভাবনার ধারা অব্যাহত রাখতে থাকেন। সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে শ্রীলঙ্কান দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে যান। ৬ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। সফরকারীরা ২৫৭ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। ২৭ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/৮৯ ও ৮/৬৩ লাভ করে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই বছরের নভেম্বরে আরও একটি রেকর্ডের সাথে স্বীয় নামকে যুক্ত করতে সমর্থ হন। সর্বসাকুল্যে তৃতীয় বোলার হিসেবে সকল টেস্টভূক্ত দেশের বিপক্ষে পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে এ সাফল্য পান। একই বছরে আইসিসি কর্তৃক প্রণীত বিশ্ব টেস্ট একাদশে তাঁকে রাখা হয়।

২০১৬ সালে নিজ দেশে স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৬ জুলাই, ২০১৬ তারিখে পাল্লেকেলেতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ৬ ও ৩৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৪/৪৯ ও ৫/৫৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, কুশল মেন্ডিসের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০৬ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

২০১৭-১৮ মৌসুমে দিনেশ চণ্ডীমালের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কা দলের সদস্যরূপে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। সেখানে পাকিস্তানের মুখোমুখি হন। ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ তারিখে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৫/৯৩ ও ৬/৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৪ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে শ্রীলঙ্কানরা ২১ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে পুণঃপুণঃ আঘাতের কবলে পড়তে থাকেন। ফলশ্রুতিতে, আবারও তাঁকে বিশ্রামে থাকতে হয়। তবে, যখনই খেলার জগতে ফিরে আসেন, তখনই শ্রীলঙ্কা দলের অন্যতম বড় ধরনের অবদানকারীতে পরিণত হতেন। জুলাই, ২০১৮ সালে খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেন ও সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা শেষে খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণের কথা জানান।

২২ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে তাঁর প্রিয় মাঠ গলেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্ট শেষে অবসর নেয়ার কথা ঘোষণা করেন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে নিজ দেশে জো রুটের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ৬ নভেম্বর, ২০১৮ তারিখে শুরু হওয়া ঐ টেস্টে শ্রীলঙ্কা দল পরাজিত হলেও তিনি ঠিকই নিজেকে ইতিহাসের পর্দায় নিয়ে যান। গলেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে একটিমাত্র উইকেট পেলেও দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কান হিসেবে এক মাঠে ১০০ উইকেট লাভের কৃতিত্বের দাবীদার হন। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক জো রুট তাঁর শিকারে পরিণত হলে তিনি এ সাফল্য পান। ৯ নভেম্বর, ২০১৮ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন বিদায়ী ইনিংসে রান আউটের মাধ্যমে প্যাভিলিয়নমুখী হন। বেন ফোকসের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ২১১ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

ক্রিকেটের প্রকৃত বীরে পরিণত হয়েছিলেন ও অগণিত রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলে নিজের করে নিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার সদস্যরূপে তিনি তাঁর সময়কালে টেস্টে ক্রিকেটে সর্বাধিক সেরা বামহাতি স্পিনারের মর্যাদা লাভ করেন। পাঁচ শতাধিক আন্তর্জাতিক উইকেট স্বীয় নামের পার্শ্বে যুক্ত করেছেন। কিংবদন্তী বোলার মুত্তিয়া মুরালিধরনের যোগ্য উত্তরসূরী ছিলেন। উদীয়মান মুত্তিয়া মুরালিধরনের সাফল্যে ম্লান হয়ে পড়েন। তাসত্ত্বেও, ৪০ বছর বয়সী রঙ্গনা হেরাথ টেস্টগুলো থেকে ৪৩৩টি উইকেট দখল করেছিলেন। তন্মধ্যে, ৩০ বছর হবার পর থেকে পেয়েছেন ৩৯৮ উইকেট।

তিনটি গুণ নিয়ে সফলতা পেয়েছেন। বল হাতে নিয়ে ভয় পেতেন না ও ব্যাটসম্যানকে বল শূন্যে ভাসিয়ে পরাস্ত করতে অগ্রসর হতেন। কোনরূপ পরিবর্তন না ঘটিয়ে আকস্মিকভাবে বল ছুঁড়তেন। মুরালি’র ন্যায় তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়তেন না। অসাধারণ বামহাতি স্পিনার হিসেবে খেলেছেন। ৩০-এর বয়সে এসে খুব কমসংখ্যক বোলারই নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন। তন্মধ্যে, তিনি ঠিকই সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। প্রায় দুই দশকব্যাপী দর্শনীয় ও বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। দীর্ঘকাল জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর উপেক্ষার পাত্রে পরিণত হয়েছেন। এরপর দল থেকে বাদ পড়েন। তাসত্ত্বেও কখনো হাল ছেড়ে দেয়ার পাত্র ছিলেন না। দৃঢ় প্রত্যয়ী মনোভাব নিয়ে অধিক বয়সে এসে খেলোয়াড়ী জীবনে পূর্ণোদ্দম্যে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের ইতিহাস অন্যতম সেরা ও সফলতম খেলোয়াড়ে পরিণত হন। টেস্টভুক্ত সকল দেশের বিপক্ষে পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।