২ জানুয়ারি, ১৯৬০ তারিখে উত্তর প্রদেশের মীরাটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
১৯৭৮-৭৯ মৌসুম থেকে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আয়ারল্যান্ড ও আবাহনীর পক্ষে খেলেছেন। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তাঁর। শুরুরদিকে অগোছালোভাব পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ শতরানই দূর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পেয়েছেন। তবে, ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে তাঁকে ভারত দলে রাখা হলে অনেকের কাছেই বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঐ সময়ে তিনি কিছুটা আক্রমণাত্মক খেললেও তা টেস্ট ক্রিকেটের উপযোগী ছিল না। এ সফরে তাঁকে কোন টেস্টে খেলানো হয়নি।
১৯৮৬ থেকে ১৯৮৯ সময়কালে ভারতের পক্ষে চারটিমাত্র টেস্ট ও ৩২টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে নিজ দেশে অজি দলের মুখোমুখি হন। ৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে জয়পুরে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। মনোমুগ্ধকর অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলে সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। ব্যাট হাতে তাঁর জন্যে আরও চমক অপেক্ষা করছিল। দিল্লিতে মিনিটে মিনিটে রান সংগ্রহ করে ৭৪ তুলেন। এ খেলায় প্রতিপক্ষের বোলারদেরকে হতবিহ্বল করে মাঠের চতুর্পার্শ্বে খেলতে থাকেন।
রাজকোটে শতক হাঁকিয়ে ঐ সিরিজটি শেষ করেছিলেন। সিরিজের একটি খেলায় ক্রেগ ম্যাকডারমটকে এক হাত নেন। এক ওভার থেকে ছয়টি ছক্কা হাঁকান। ঘটনাটি সমর্থক ও ক্রিকেট বিশ্লেষকদের কাছে অদ্যপি স্মরণীয় হয়ে আছে। তবে, এরপর থেকেই তিনি খেঁই হারিয়ে ফেলেন ও এক পর্যায়ে ওডিআই দল থেকে তাঁকে বাদ দেয়া হয়।
১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে নিজ দেশে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ভরত অরুণের সাথে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ২৪ রান সংগ্রহ করে রান-আউটে বিদেয় নেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে নিজ দেশে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৫ নভেম্বর, ১৯৮৭ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ১ ও ০ রান সংগ্রহ করলেও খেলায় চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা পাঁচ উইকেটে জয় পায় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
১২১টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৩১টি প্রথম-শ্রেণীর শতরান করেছিলেন ও ৫০ ঊর্ধ্ব গড়ে রান পেয়েছিলেন। দূর্দান্ত স্ট্রোক-প্লে ও ধারাবাহিকভাবে ঘরোয়া ক্রিকেটে রান সংগ্রহের কারণে ব্যাপক পরিচিতি পান। তবে, দুঃখজনকভাবে তাঁর জীবন অকালে ঝড়ে পড়ে। দূর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। শর্ট লেগ অঞ্চলে হেলমেটবিহীন অবস্থায় ফিল্ডিংকালে বল তাঁর কপালে সপাটে আঘাত হানে। বলটি এতোটাই জোরে ছিল যে, কপালে আঘাত হেনে উইকেট-রক্ষকের গ্লাভসে তা ফেরৎ চলে আসে।
২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮ তারিখে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে আবাহনী ক্রীড়াচক্রের সদস্যরূপে খেলাকালীন মেহরাব হোসেনের ব্যাটিংকালে অনাকাঙ্খিত এ ঘটনা ঘটে। দলীয় অধিনায়ক ও উইকেট-রক্ষক খালেদ মাসুদ তাঁকে ঐ অবস্থানে দিনের শেষ তিন বলের জন্যে থাকতে বলেন। ঐ সময়ে তিনি কোন হেলমেট পরিধান করেননি।
এ ধরনের ভুলের কারণে তাঁকে বেশ চড়া মূল্য দিতে হয়। বল সরাসরি কপালে লাগে। তিনি মাঠ ত্যাগ করেন ও নিজে সুস্থ আছেন বলে দাবী করেন। তবে, সাজঘরে গিয়েই মেঝেতে পড়ে যান। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। অপারেশন করা হলেও তা কার্যকর হয়নি ও তিনদিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন। মাত্র ৩৮ বছর ৫১ দিন বয়সে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। তাঁর মৃত্যুতে ক্রিকেট বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে। ডিডিসিএ সাজঘরের নাম তাঁর নামানুসারে রাখে।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ১৯৯০ সালে কিম ক্রদার্স নাম্নী এক আইরিশ তরুণীকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে, ১৯৯৮ সালে কিম লাম্বা নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ সংসারে দুই সন্তান রয়েছে।
