Skip to content

রাহুল দ্রাবিড়

1 min read

১১ জানুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ শীর্ষসারির ডানহাতি ব্যাটসম্যান খেলেছেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণ কর্মে অগ্রসর হয়ে থাকেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

সেন্ট যোসেফস বয়েজ হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। খুব সম্ভবতঃ ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সর্বশেষ ধ্রুপদী মানসম্পন্ন টেস্ট ব্যাটসম্যান। জাতীয় দলে তাঁর উত্তরণ বেশ নিশ্ছিদ্র ছিল ও তরতর করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। কেকি তারাপোরের কাছ থেকে পরিচিত ধাঁচ অবলম্বনে ব্যাটিং কৌশল শিখেন। একমূখী খেললেও মেজাজের উপর নির্ভর করে বলকে যে-কোন দিকে নিয়ে যেতে সক্ষমতা দেখিয়েছেন। শচীন তেন্ডুলকরের উপস্থিতি স্বত্ত্বেও তাঁর জোড়ালো ভূমিকা ছাড়া খুব কমই ভারত দল জয় পেয়েছিল। তবে, সর্বদাই ‘লিটল মাস্টারের’ সাফল্যের কারণে তাঁর বিশাল অবদান ঢাকা পড়ে যেতো। তাসত্ত্বেও, টেস্ট অভিষেকের পর থেকে তাঁকে দলের বাইরে রাখা হয়নি।

ভারতীয় ক্রিকেটের রক্ষাকবচ হিসেবে নিজেকে চিত্রিত করেছেন। দলের প্রত্যেক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সামলে নিতে অংশ নেন। অন্যান্য সদস্য যখন তা পারতো না তখন তিনি নিজেকে এগিয়ে আনেন। সাজঘরে অবস্থানকারী খেলোয়াড়দের স্বস্তিতে নিয়ে আসেন ও মাঝারিসারিতে রক্ষাকর্তা হিসেবে বিশুদ্ধতার প্রতীক চিত্রে পরিণত হয়েছেন। নিজেকে কখনো সহজাত প্রকৃতির অ্যাথলেটরূপে হাজির করতে পারেননি। তবে, তিনি প্রচণ্ড পরিশ্রমী ও মনোযোগ শক্তির অনেকাংশেই যোগভ্যাসের ন্যায়।

সুনীল গাভাস্কার ও শচীন তেন্ডুলকরের পর তৃতীয় ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ১০০০০-এর অধিক রান সংগ্রহ করেছেন। এক দশকের অধিক সময় তাঁর দেশের প্রধান ব্যাটিং চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন ‘দি ওয়াল’ ডাকনামে পরিচিত রাহুল দ্রাবিড়। তিন নম্বর অবস্থানে নেমে ডন ব্র্যাডম্যানের পর তাঁর গড় ৬০-এর কাছাকাছি।

১৯৯০-৯১ মৌসুম থেকে ২০১১-১২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে তাঁর প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে কর্ণাটক, নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তন্মধ্যে, ২০০০ সালে কেন্টের ক্যাপ লাভের অধিকারী হন। এছাড়াও, স্কটল্যান্ড, এশিয়া একাদশ, আইসিসি বিশ্ব একাদশ, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব, রাজস্থান রয়্যালস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৯১ থেকে মার্চ, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত নিজেকে গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত ছিলেন। মহারাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ৮২ রান তুলে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখেন। ১৯৯৬ সালের রঞ্জী ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় দ্বি-শতক ও সেমি-ফাইনালে ১৫৩ রান তুলে টেস্টে অংশগ্রহণের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হন।

১৯৯৬ থেকে ২০১২ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ১৬৪ টেস্ট, ৩৪৪টি ওডিআই ও একটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ৩ এপ্রিল, ১৯৯৬ তারিখে সিঙ্গাপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে বর্ণাঢ্যময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূচনা ঘটান। মাত্র ৩ রান সংগ্রহ করলেও ঐ খেলায় ভারত দল জয় পেয়েছিল।

তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে অংশ নেয়ার জন্যে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারত দলের সাথে ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন। প্রথম টেস্টে ভারত দল ৮ উইকেটে পরাজয়বরণের পর পুরোপুরি ব্যাটিংয়ের অবস্থান পরিবর্তন করা হয়। নয়ন মোঙ্গিয়াকে বিক্রম রাঠোরের সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে ও অজয় জাদেজাকে তাঁদের নিচে নিয়ে আসা হয়। ঐ খেলায় দুই তরুণ রাহুল দ্রাবিড় ও সৌরভ গাঙ্গুলীকে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলার সুযোগ দেয়া হয়।

২০ জুন, ১৯৯৬ তারিখে সৌরভ গাঙ্গুলী’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এ টেস্টেই বিখ্যাত আম্পায়ার ডিকি বার্ড তাঁর সর্বশেষ টেস্ট পরিচালনা করেছিলেন। লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৯৫ রান তুলেছিলেন। সঞ্জয় মাঞ্জরেকারের আঘাতের কারণে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেকের পাঁচ বছর পর এ সুযোগ পান। সৌরভ গাঙ্গুলী’র সাথে ৯৪ রানের জুটি গড়ে ক্রিকেট অঙ্গনে স্বীয় উপস্থিতির কথা তুলে ধরেন। সৌরভ গাঙ্গুলী শতক হাঁকিয়ে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখলেও তিনি মাত্র পাঁচ রানের জন্যে এ কৃতিত্ব অর্জন করা থেকে বঞ্চিত হন। সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি ঐ সাফল্য পেয়েছিলেন। যদি তিনি শতকের সন্ধান পেতেন তাহলে প্রথম ঘটনা হিসেবে টেস্টে ক্রিকেটের ইতিহাসের দুই অভিষেকধারীর শতরানের মর্যাদা পেতে পারতেন। পরবর্তীতে তিনি মন্তব্য করেন যে, ‘সন্দেহ নেই যে আমি কিছুটা আশাহত হয়েছি। তবে, এটিই শেষ নয়। অন্যভাবে দেখলে আমি ৯৫ রান তুলতে পেরে খুশী হয়েছি। বিষয়টিকে আমি কাপ অর্ধেক খালির পরিবর্তে অর্ধেক পূর্ণ অবস্থায় দেখতে পাই।’ প্রথম টেস্টে অপর অভিষেকধারী ভেঙ্কটেশ প্রসাদের সহায়তা নিয়ে এ সিরিজে চমৎকার খেলেন ও আকস্মিকভাবে ভারতকে ভিন্নতর দলে পরিবর্তন করতে অগ্রসর হন। এ টেস্টসহ পরবর্তী দুই টেস্ট ড্রয়ে পরিণত হয়।

১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে শচীন তেন্ডুলকরের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৬ জানুয়ারি, ১৯৯৭ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতকের সন্ধান পান। প্রথম দুই টেস্টে ভারত দল পরাজয়বরণের পর ওয়ান্ডারার্সে অনুষ্ঠিত পরের খেলায় ফিরে আসে। তিন নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নামেন। শুরুতে স্নায়বিক দূর্বলতা তাঁর মাঝে পরিলক্ষিত হলেও ধীরে ধীরে কাট, পুল ও ড্রাইভের ফুলঝুড়ি ছুঁটতে থাকে। ২১টি চারের সহায়তা নিয়ে ১৪৮ রান সংগ্রহের মাধ্যমে ভারতের ৪১০ রান তুলতে সহায়তা করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১১টি চার নিয়ে ৮১ রান করেন। ফলশ্রুতিতে, ভারত দল ইনিংস ঘোষণা করে। তবে, জবাগল শ্রীনাথের প্রাণান্তঃকর চেষ্টা, মন্দ আলোকে আট উইকেট হাতে রেখে খেলাকে ড্র করতে সক্ষম হয়। স্বাগতিক দল ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। ঐ খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। ২১ মে, ১৯৯৭ তারিখে নিজস্ব প্রথম ওডিআই শতক হাঁকালেও দল পরাজিত হয়।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ২৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সায়মন ডৌলের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৪ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে যায়।

২০০০ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রানের সন্ধান পেয়ে আসছেন। ২০০১ সালে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। কলকাতা টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফলো-অনের কবলে নিপতিত হলেও ভিভিএস লক্ষ্মণের দূর্দান্ত ২৮১ রানের সাথে যোগ্য সঙ্গ দেন। ১৮০ রান তুলে ভারতের জয়লাভে বিরাট ভূমিকা রাখেন। ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে মাত্র ১৫ টেস্ট থেকে চারটি দ্বি-শতক হাঁকান। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বাধিক শতরানের জুটির সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। স্বল্পসংখ্যক ভারতীয় খেলোয়াড়দের অন্যতম হিসেবে নিজ দেশের চেয়ে বিদেশের মাটিতে ও স্পিন উপযোগী পিচে অধিক গড়ে রান তুলেছেন।

ওডিআইয়েও দূর্দান্ত খেলেছেন। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক রান সংগ্রহের কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর। ২৬ মে, ১৯৯৯ তারিখে নিজেকে রেকর্ড বহিতে ঠাঁই করে নেন। টানটনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সৌরভ গাঙ্গুলী’র সাথে ৪৫ ওভারে ৩১৮ রান তুলেন। ব্যক্তিগতভাবে করেন ১৪৫ রান। পরবর্তীতে এটিই তাঁর ওডিআইয়ে সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল। উপর্যুপরী দ্বিতীয় এ শতক হাঁকানোকালে প্রায় বল প্রতি রান সংগ্রহ করে চলেছিলেন। একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন শতাধিক রান সংগ্রহের দুইটি জুটি গড়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। নভেম্বর, ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শচীন তেন্ডুলকরের সাথে ৩৩১ রান তুলেন। ওডিআইয়ে বিশ্বরেকর্ড জুটি হিসেবে অদ্যাবধি টিকে আছে। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলায় গুরুত্বপূর্ণ রান তুলে দলে সমতা আনয়ণে বিরাট ভূমিকা রাখেন। উচ্চ মানসম্পন্ন ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পেলেও ২০১১ সালের বিশ্বকাপের শিরোপা বিজয়ী ভারত দলের সদস্য ছিলেন না। কিন্তু, টেস্ট দলে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলেন।

২০০২ সালে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। পুরো সিরিজে অসাধারণ খেলেন। ৫ সেপ্টেম্বর, ২০০২ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ২১৭ রানের দ্বি-শতক হাঁকান। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কারণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে শেষ হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, ৬০২ রান সংগ্রহ করে মাইকেল ভনের সাথে যৌথভাবে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

২০০২-০৩ মৌসুমে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১২ ডিসেম্বর, ২০০২ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৭৬ ও ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মার্ক রিচার্ডসনের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১০ উইকেটে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৮ অক্টোবর, ২০০৩ তারিখে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ২২২ ও ৭৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর প্রাণান্তঃকর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ড দল খেলাটিকে ড্রয়ে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিল ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ০-০ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

একই মৌসুমে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী উপহার দেন। ১২ ডিসেম্বর, ২০০৩ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন ও অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ২৩৩ ও ৭২* রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা তাঁর অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে ৪ উইকেটে জয় পায় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ২ জানুয়ারি, ২০০৪ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৩৮ ও ৯১* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তবে, শচীন তেন্ডুলকরের অসামান্য ব্যাটিংশৈলীতে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে শেষ হয়। পুরো সিরিজে ৬১৯ রান সংগ্রহ করে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

ঐ মৌসুমে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ১৩ এপ্রিল, ২০০৪ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। ২৭০ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস উপহার দেন। তাঁর অসামান্য ক্রীড়াশৈলীর কারণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১৩১ রানে জয় তুলে নেয় এবং তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

খেলা গড়াপেটা বিতর্কের পর নিয়মিত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী’র সহকারী হিসেবে মনোনীত হন। এরফলে, আরও ধারাবাহিকতার সাথে খেলার পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব যুক্ত হয়। সৌরভ গাঙ্গুলী’র অধিনায়কত্ব প্রত্যাহার করে নেয়ার পর দুই বছর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এ দায়িত্বে থেকে তুলনামূলকভাবে কম সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ২০০৪ সালের মধ্যে প্রত্যেক টেস্টভূক্ত দেশের বিপক্ষে শতরানের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের ফলে খেলায় তেমন সুবিধে করতে পারেননি। এছাড়াও, ওডিআইয়েও বিরূপ প্রভাব ফেলে।

২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে ইনজামাম-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৬ মার্চ, ২০০৫ তারিখে কলকাতায় স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ১১০ ও ১৩৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর জোড়া শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৯৬ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৫ সালের শেষদিকে ভারতের টেস্ট ও ওডিআই দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন। দল পরিচালনার সুযোগ পেয়ে প্রথম সিরিজেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে দলটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের সন্ধান পায়। পাশাপাশি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে ভারত দল জয়লাভ করে। এরপর তাঁকে এ দায়িত্বের বাইরে রাখা হয়।

২০০৬ সালে দলের নেতৃত্বে থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ঐ সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। ৩০ জুন, ২০০৬ তারিখে কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৮১ ও ৬৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলায় তাঁর দল ৪৯ রানে জয়লাভ করে ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয় পায়। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভসহ ৪৯৬ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরাজিত হবার পর ভারতীয় ক্রিকেট বেশ নড়বড়ে হয়ে পড়ে। ১৭ মার্চ, ২০০৭ তারিখে বাংলাদেশের বিপক্ষে নাস্তানুবাদের শিকার হয় ভারত দল। তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের অন্যতম শোচনীয় পরাজয় ছিল। পাঁচ-উইকেটে পরাজিত হয় তাঁর দল। এক সপ্তাহ পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেললেও আরও একটি পরাজয়ের মুখোমুখি হয় ও বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে ভারত দল।

গ্রেগ চ্যাপেলকে কোচের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হলে রবি শাস্ত্রীকে দলের অন্তর্বর্তীকালীন ক্রিকেট ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সফরে পাঠানো হয়। দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের প্রথমটি চট্টগ্রামে ড্রয়ে পরিণত হবার পর হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টের মুখোমুখি হয় ভারত দল। প্রথম দিন শেষে টসে হেরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে মুরালি কার্তিক ও ওয়াসিম জাফর দলকে ৩২৬ রানে নিয়ে যান এবং উভয়েই রিটায়ার হার্ট হন। শচীন তেন্ডুলকর ও রাহুল দ্রাবিড় জুটি গড়েন। ১৭৬ বল মোকাবেলা করে ১২৯ রান তুলেন। ৪০৮ রানে প্রথম উইকেট পতনের ফলে মাত্র পাঁচ রানের জন্যে পঙ্কজ রায় ও বিনু মানকড়ের রেকর্ডের সাথে নিজেদের যুক্ত করতে পারেননি। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা হিসেবে শীর্ষ চার ব্যাটসম্যানই এক ইনিংসে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। তবে, জহির খান খেলায় সাত উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। ১১৮ রানে বাংলাদেশ দল প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেলে মোহাম্মদ আশরাফুল ৪১ বলে ৬৭ রানের দ্বিতীয় দ্রুততম টেস্ট অর্ধ-শতক হাঁকালে ২৫৩ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিক দল। ইনিংস ও ২৩৯ রানে জয় পেয়ে ভারত দল তাদের ২৫তম টেস্ট ও বিদেশের মাটিতে ৫ম জয় করে ইনিংসের ব্যবধানে। তাঁর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলটি প্রথম ইনিংসে তাদের সর্বোচ্চ ব্যবধান ৪৯২ গড়ে। এছাড়াও, ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে কলকাতায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংস ও ২১৯ রানের জয়কে পাশ কাটিয়ে ভারত দল সর্বোচ্চ জয়ের রেকর্ড গড়ে।

২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে শোয়েব মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২২ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩৮ ও ৩৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে অনিল কুম্বলে’র বলে সালমান বাটকে কটে বিদেয় করে ক্যাচের মাধ্যমে তাঁকে তাঁর ৫০তম উইকেট লাভে সহায়তা করেন। এরফলে, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে কমপক্ষে ৫০টি ডিসমিসালে তৃতীয় ফিল্ডার-বোলার হিসেবে এ সাফল্যের সাথে নিজেদেরকে যুক্ত রাখেন। তবে, অনিল কুম্বলে’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে ৬ উইকেটে জয়লাভ করে।

২০১০-১১ মৌসুমে নিজ দেশে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৪ নভেম্বর, ২০১০ তারিখে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ১০৪ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, হরভজন সিংয়ের অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ২০ নভেম্বর, ২০১০ তারিখে নাগপুরে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১৯১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৯৮ রানে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০১১ সালে এমএস ধোনি’র অধিনায়কত্বে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ গমন করেন। ২০ জুন, ২০১১ তারিখে কিংস্টনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। ঐ টেস্টে দারুণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ৪০ ও ১১২ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ের ভিত রচনা করেন। তাঁর অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে ভারত দল তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

দৃশ্যতঃ স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করলেও ২০১১ সালের গ্রীষ্মে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারত দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে নিজের প্রতিভা বিকাশে সোচ্চার হন। জুলাই, ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ঐ সিরিজে ভারত দল পুরোপুরি বিপর্যস্ত ছিল। ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। তবে, পুরো সিরিজে ঠিকই স্ব-মহিমায় ভাস্বর করে রেখেছিলেন। কোন ব্যাটসম্যানই টেস্টগুলো থেকে ২৭৫ রানের অধিক তুলতে না পারলেও বিস্ময়করভাবে ৪৬২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। চার টেস্ট থেকে তিনটি শতরানের সন্ধান পান। এ সিরিজে অন্য কোন ভারতীয় ব্যাটসম্যান একটি শতকও হাঁকাতে পারেননি। তন্মধ্যে, উচ্চমানসম্পন্ন পেস আক্রমণ সামলে নিয়ে ইনিংস উদ্বোধন করে দুইটি শতক হাঁকিয়েছিলেন।

ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত লর্ডসে দারুণ শতক হাঁকিয়ে অনার্স বোর্ডে ঠাঁই করে নেন। প্রথম ইনিংসে ১০৩ রান তুলেন। এরফলে, অষ্টম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে যুক্ত করেন। ক্রিকেটের স্বর্গরাজ্যে এটি তাঁর চতুর্থবার টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। তিনি জানতেন যে, হয়তোবা এখানে এটি তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ। ইংল্যান্ড দল ৪৭৪/৮ তুলে ইনিংস ঘোষণা করলে ভারত দলের সংগ্রহ ৬৩/১ থাকা অবস্থায় তিনি মাঠে নামেন। ইংরেজ বোলারদের দূর্দান্ত আক্রমণ ঠেঁকিয়ে দৃঢ় হস্তে ব্যাটিং কর্মে প্রভূত্ব দেখাতে অগ্রসর হন। উইজডেনে এ বিষয়ে মন্তব্য করা হয় যে, ‘শান্ত ও স্থিরচিত্তে মোকাবেলা করে ড্রাইভ মারেন। পদযুগল প্রায় সবসময়ই সঠিক অবস্থানে ছিল। সম্মুখের হাঁটু কোচিং নির্দেশিকার ন্যায় বাঁকানো থাকতো, কব্জির মোচরে রান সংগ্রহে তৎপর থাকতেন।’ ক্রিস ট্রেমলেটের বলে লেগ-সাইডে ফেলে নিজস্ব ৩৩তম শতক পূর্ণ করেন। পুরো মাঠ জুড়েই আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। লর্ডসে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারের সাফল্যে মহিমান্বিত হয়ে পড়ে। দূর্ভাগ্যজনকভাবে ভারত দল ইংল্যান্ডের থাবা থেকে রক্ষা পায়নি। পঞ্চমদিনের শেষদিকে ১৯৬ রানে পরাজিত হয়।

১৮ আগস্ট, ২০১১ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। তৃতীয় ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেন। দলের ৩০০ রানের মধ্যে তিনি ১৪৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৮ রানে জয় পায়। এ সিরিজে তিনি স্টুয়ার্ট ব্রডের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজ পুরস্কার পান। সিরিজে দূর্দান্ত খেলার স্বীকৃতিস্বরূপ ওডিআই দলে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয়। পাশাপাশি টি২০আইয়ে প্রথমবারের মতো খেলেন। ব্যক্তিগত একমাত্র টি২০আইয়ে অভিষেকের পূর্বেই এ স্তরের ক্রিকেটকে বিদেয় জানানোর কথা ঘোষণা করেন।

বেশ দুঃখজনকভাবে তাঁর ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি হয়। তিনটি সিরিজে বিরাটভাবে সফলতার স্বাক্ষর রাখলেও ২০১১-১২ মৌসুমে বীরেন্দ্র শেহবাগের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। এ সিরিজে দূর্বলতর খেলা প্রদর্শন করেন ও বেশ ব্যর্থতার পরিচয় দেন। আট ইনিংস থেকে ২৪.২৫ গড়ে মাত্র ১৯৪ রান যুক্ত করতে পেরেছিলেন। পুরো জীবন মর্যাদার সাথে খেলা সত্ত্বেও এ সিরিজে কেবল তাঁর দিকেই অঙ্গুলী নির্দেশ করা হয়।

২৪ জানুয়ারি, ২০১২ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। সফরকারীরা ২৯৮ রানে পরাজিত হলে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। ১ ও ২৫ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে অংশগ্রহণে পরিণত হয়।

৯ মার্চ, ২০১২ তারিখে সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে তিনি তাঁর অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন ও আধুনিক যুগে প্রত্যাশিত বিদায়ী অনুষ্ঠান ছাড়াই তিনি মাঠ ছেড়ে চলে আসেন। অবসর গ্রহণের পরও তিনি অবিসংবাদিত বীর হিসেবে রয়ে গেছেন। ১৬ বছরের অধিক সময় নিয়ে টেস্ট ও ওডিআইয়ে সম্মিলিতভাবে ৫০৮ খেলায় অংশ নিয়েছেন। ৪৮ শতক সহযোগে ২৪১৭৭ রান ও ৩৯৬ ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন। সন্দেহাতীতভাবে শচীন তেন্ডুলকরের পর ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরন কোচিং নির্দেশিকায় উল্লেখ করার মতো ছিল। ওডিআইয়ে ১০০০০ রান তুললেও প্রচলিত পদ্ধতিতে ব্যাটিংয়ের উপর তাঁর পূর্ণাঙ্গ আস্থা ও বিশ্বাস ছিল না।

সন্ন্যাসীর ন্যায় ব্যাটিংয়ে তাঁর ধৈর্য্যশীলতা লক্ষ্য করা যায়। ২০০৩ সালে অ্যাডিলেড টেস্টে ভারতের জয়ে ৮৩৫ মিনিট ব্যয় করে ২৩৩ ও ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দলে প্রথম টেস্ট জয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। চার মাস বাদে রাওয়ালপিন্ডিতে ৭৪০ মিনিট ব্যাটিং করে ২৭০ রান তুলে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের সিরিজ বিজয় নিশ্চিত করেছিলেন।

শুরুতে তাঁর মাঝে একদিনের ক্রিকেটে গুরুভার নেয়ার দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। পরবর্তী বছরগুলোয় অবশ্য মাঝারিসারিতে নেমে খেলা শেষ করার দিকেই অধিক মনোযোগী হন। সুইপ শটগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে না আসলেও ২০০৮ সালের শুরুরদিকে দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁকে দলে নিয়মিতভাবে অংশ নেয়ার সুযোগ দেন। এরপর থেকেই ৫০-ওভারের খেলায় অংশ নিয়ে দশ সহস্রাধিক রান সংগ্রহ করেছিলেন।

ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান থেকেও ব্যাপক সাফল্য পান। ২০০৯ সালে টেস্ট ক্রিকেটে ফিল্ডার হিসেবে মার্ক ওয়াহ’র সর্বাধিক ক্যাচ মুঠোয় বন্দী করার রেকর্ড ভঙ্গ করেন। ১৯৯৭ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। পরের বছর ১৯৯৮ সালে অর্জুন পদক ও ২০০৪ সালে পদ্মশ্রী পদক লাভ করেন। ২০০০ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০০৪ সালে আইসিসি বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড় ও একই বছর আইসিসি বর্ষসেরা খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হন। ২০১৩ সালে উইজডেন ইন্ডিয়া কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন।

পুরো খেলোয়াড়ী জীবনেই দলীয় সঙ্গীদের সাফল্যের কাছে অনেকগুলো ঘটনায় ম্লান হয়ে পড়েন। ১৯৯৬ সালে লর্ডসে সৌরভ গাঙ্গুলী’র সাথে একযোগে অভিষেক ঘটে। ৯৫ রান সংগ্রহ করলেও সৌরভ গাঙ্গুলী ১৩১ রান করলে তাঁর সাফল্য ঢাকা পড়ে যায়। পরের টেস্টে ৮৪ রান তুলেন। তবে, এবারও শচীন তেন্ডুলকর ও সৌরভ গাঙ্গুলী’র শতকের কল্যাণে তাঁর সাফল্য অনেকাংশেই ম্লান হয়ে পড়ে। ১৯৯৭ সালে ওডিআইয়ে নিজস্ব প্রথম ওডিআই শতক করলেও পাকিস্তানের বিখ্যাত ব্যাটসম্যান সাঈদ আনোয়ার ১৮৭ রানের তৎকালীন বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ২০০১ সালের মহিমান্বিত কলকাতা টেস্টে অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারত দল ফলো-অন পরবর্তী ২৭৪ রানের ঘাটতি নিয়ে জয় পায়। এ পর্যায়ে ভিভিএস লক্ষ্মণের অবিশ্বাস্য ২৮১ রানের বিপরীতে তিনি ১৮০ রান তুলেছিলেন। পরবর্তী অর্ধ-দশক ব্যাট হাতে নিয়ে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। কেবলমাত্র ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সফরেই রান পেয়েছেন ছয় শতাধিক।

২০০০ সালের গ্রীষ্মে কাউন্টি ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হন। কেন্টের কোচ জন রাইটের আমন্ত্রণে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন। তাঁর অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে জন রাইট মন্তব্য করেন যে, ‘রাহুল দ্রাবিড়ের অন্তর্ভুক্তিতে দলের ভিত্তি আরও মজবুত হবে। আনন্দদায়ক সংবাদ হচ্ছে দলে দ্রাবিড়ের ন্যায় ব্যাটসম্যান রয়েছে।’ ৪৯.৪৮ গড়ে ১০৩৯ রান তুলে কেন্ট দলে গড়ের দিক দিয়ে শীর্ষস্থান দখল করেন।

আইপিএলে স্বীয় অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে তৎপর হন। প্রথম আসরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের অধিনায়কত্ব পান। ২০১১ সালে রাজস্থান রয়্যালসের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। ২০১২ সালে আইপিএলের পঞ্চম আসরকে ঘিরে রয়্যালসের অধিনায়ক-কোচ-মেন্টর হিসেবে মনোনীত হন।

খেলোয়াড় হিসেবে এমসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট কমিটির একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে ব্যাঙ্গালোর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের পক্ষে খেলেছেন। ২০০৩ সালে ভারতে ইউনিসেফের ‘বোল আউট পোলিও’ প্রচারণায় অংশ নেন। এছাড়াও, এইডসে আক্রান্ত শিশুদের সহায়তায় বৈশ্বিক প্রচারণায় অর্থ সংগ্রহের সাথে কাজ করছেন।

বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ও সম্মানিত দূত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। স্যার ব্র্যাডম্যান ওরেশন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন। স্বীয় বক্তৃতায় মস্তিষ্কের এক পার্শ্বের সমস্যা আত্মবিশ্বাসের সাথে মোকাবেলার কথা জানান। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ১৩ নভেম্বর, ২০২০ তারিখে অলিম্পিকে ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তিতে তাঁর দৃঢ় সমর্থনের কথা জানান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।