১৮ এপ্রিল, ১৯৬৩ তারিখে ত্রিনিদাদের অ্যারিমা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা প্রদর্শন করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। কৈশোরে সকল ধরনের খেলায় পারদর্শী ছিলেন। তবে, পরবর্তীতে ক্রিকেটের দিকেই অধিক ঝুঁকে পড়েন। গর্ডন গ্রীনিজকে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রেখেছিলেন। বিনোদনধর্মী ব্যাটিং করলেও তাঁর ন্যায় ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করতে পারেননি।
ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে বর্ডার ও ইস্টার্নস এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডারহাম ও লিচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ওয়েলস মাইনর কাউন্টিজের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৮২-৮৩ মৌসুম থেকে ২০০০-০১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেকের প্রায় ছয় বছর পর টেস্ট খেলার জন্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত হন।
ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে অল-রাউন্ড দক্ষতা প্রদর্শনে অগ্রসর হন। লিচেস্টারশায়ার দলকে তাদের ইতিহাসের দ্বিতীয় শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। ঐ মৌসুমে দলের পক্ষে ১২৪৪ রান সংগ্রহসহ ৫৬ উইকেট ও ৩৫টি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন।
১৯৮৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ২৬ টেস্ট ও ১৪৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৬ অক্টোবর, ১৯৮৭ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ভারত গমন করেন। ১১ জানুয়ারি, ১৯৮৮ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৮ ও ১৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ২৫৫ রানে জয় পেয়ে স্বাগতিকরা ১-১ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করতে সমর্থ হয়।
আঘাতের কারণে ১৯৯১ সালে ইংল্যান্ড সফরে স্বাভাবিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করতে পারেননি। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। তন্মধ্যে, ১৯৯২ সালে মেলবোর্নের বক্সিং ডে টেস্টে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১০ রানের মনোজ্ঞ শতক হাঁকান। পরবর্তীতে এটিই তাঁর একমাত্র শতকে পরিণত হয়।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে নিজ দেশে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৭ এপ্রিল, ১৯৯৬ তারিখে সেন্ট জোন্সে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৫৯ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দীসহ ১/১২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে কোর্টনি ওয়ালশের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে পাকিস্তান সফরে যান। ১৭ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে পেশাওয়ারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি উভয় ইনিংসে ১ রান করে সংগ্রহ করে উভয়ক্ষেত্রে মুশতাক আহমেদের শিকারে পরিণত হন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। মুশতাক আহমেদের চমৎকার বোলিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ১৯ রানে পরাভূত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
টেস্টের তুলনায় ওডিআইয়ে অধিক কার্যকর ভূমিকা রাখেন। পাঁচটি শতরানের ইনিংস খেলেছেন। তবে, বল হাতে নিয়েই অধিক স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০-৮-৩-৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান ও প্রতিপক্ষকে স্বল্প রান সংগ্রহে বাধ্য করান। দুই দশক তাঁর এ মিতব্যয়ী বোলিং টিকে রয়েছে স্ব-মহিমায়। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এ প্রতিযোগিতায় ৩০ মে, ১৯৯৯ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদেয় জানান।
১৯৮৮ সালে ব্রিস্টলে আলোকস্বল্পতায় ডেভিড লরেন্সের বলে মারাত্মকভাবে আহত হলে জরুরী চিকিৎসা করতে হয়। ২০০২ সালে সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৯৭ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। শুরুতে টালমাটাল হয়ে পড়া জিম্বাবুয়ে দলের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পান। এরপর, আয়ারল্যান্ড দলের দায়িত্ব নিয়ে দলকে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিয়ে যান। জানুয়ারি, ২০২১ সালে বাংলাদেশ সফরে কোচের দায়িত্ব নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে পরিচালনা করেন।
তাঁর ভ্রাতৃষ্পুত্র লেন্ডল সিমন্স ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে খেলেছে।
