২৪ জানুয়ারি, ১৯৭০ তারিখে সলসবারিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং শৈলী প্রদর্শন করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। পাশাপাশি, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণ কর্মেও অগ্রসর হতেন।
পিতা হাউইকভিত্তিক ফার্মিং কনসালটেন্ট হিসেবে নাটালে নিয়োগ পেলে ১০ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান। হাউইক হাই স্কুলে অধ্যয়নের পর পোর্ট এলিজাবেথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কিংসউড কলেজে পড়াশুনো করেছেন। অনেকটা যাযাবর প্রকৃতির ক্রিকেটার ছিলেন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুম থেকে ২০০৪-০৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে মাতাবেলেল্যান্ড; দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ইস্টার্ন প্রভিন্স, নাটাল, ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স ও ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স বোল্যান্ড এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার ও লিচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তন্মধ্যে, ২০০১ সালে হ্যাম্পশায়ারের পক্ষে খেলেন। এছাড়াও, আয়ারল্যান্ডের পক্ষে খেলেছেন।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নাটালের পক্ষে চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করলে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলে যুক্ত হন। কাকতালীয়ভাবে কয়েকটি খেলা নিজ জন্মভূমিতে খেলেছিলেন। কিন্তু শক্তিধর দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ঠাঁই পেতে বেশ হিমশিম খেতে থাকেন। সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮ সালে জিম্বাবুয়েতে ফিরে আসেন ও সাময়িকভাবে বসবাসের অনুমতি পান।
১৯৯৮ থেকে ২০০০ সময়কালে জিম্বাবুয়ের পক্ষে সব মিলিয়ে ১৩ টেস্ট ও ৪৮টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবন সংক্ষিপ্ত হলেও বেশ প্রভাব রেখেছিলেন। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতের মুখোমুখি হন। ৭ অক্টোবর, ১৯৯৮ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় ব্যাট হাতে তেমন সফল হননি। তবে, বল হাতে নিয়ে উভয় ইনিংসেই বিখ্যাত ক্রিকেট তারকা শচীন তেন্ডুলকরকে বিদেয় করে দলের ৬১ রানের বিজয়ে কিঞ্চিৎ ভূমিকা রাখেন। প্রথম ইনিংসে অ্যালেস্টার ক্যাম্পবেল ও দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেটের পিছনে দণ্ডায়মান অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের কটে বিদেয় করেছিলেন। এরফলে, একমাত্র বোলার হিসেবে শচীন তেন্ডুলকরকে তাঁর টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের উভয় ইনিংসে বিদেয় করার কৃতিত্বের অধিকারী হন। খেলায় তাঁর দল ৬১ রানে জয়লাভ করেছিল।
ঐ বছরের শেষদিকে ২৪ অক্টোবর, ১৯৯৮ তারিখে অনুষ্ঠিত ঢাকায় অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিযোগিতায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। শেষের ওভারগুলোয় ক্রিস হারিসের কোপানলে পড়লে শেষ বলে জিম্বাবুয়ে দল পরাজিত হয়।
১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে অ্যালাস্টেয়ার ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ২৭ নভেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে পেশাওয়ারে অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১০৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এটিই তাঁর প্রথম টেস্ট শতক ছিল। এছাড়াও, ১/৭৬ ও ০/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, একটি রান-আউটের সাথে নিজেকে জড়িয়েছিলেন। তাঁর অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৮ খেলায় অংশ নিয়ে ৫২.৪২ গড়ে ৩৬৭ রান সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি, ১২ উইকেট দখল করে প্রতিযোগিতার অন্যতম শীর্ষ অল-রাউন্ডার হিসেবে আবির্ভূত হন। উভয়ক্ষেত্রেই দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন। ঐ প্রতিযোগিতায় জিম্বাবুয়ে দল সুপার-সিক্স পর্বে খেলার সুযোগ পায়। ওডিআইয়ে সব মিলিয়ে ৩৬ ঊর্ধ্ব গড়ে চার শতক সহযোগে ১৬৪১ রান তুলেন। তবে, দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় তেমন সুবিধে করতে পারেননি। তাসত্ত্বেও পেশাওয়ারে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি শতক হাঁকিয়েছিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। চেমসফোর্ডে প্রোটীয়দের বিপক্ষে ৭৬ রান সংগ্রহ করেন ও বল হাতে নিয়ে ৩/২৭ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে ৪৮ রানে দলের বিজয়ে বিরাট অবদান রাখেন। গ্যারি কার্স্টেন, জ্যাক ক্যালিস ও হান্সি ক্রোনিয়ে তাঁর শিকারে পরিণত হন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওডিআইয়ে ১৪৪ বল মোকাবেলা নিজস্ব সেরা ১৩২ রান তুলেন। শেন ওয়ার্নের এক ওভার থেকে চারটি বাউন্ডারি হাঁকান। এরপর, ৮ ওভারে ২/৪৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়লেও প্রতিপক্ষ ৪৪ রানে জয় তুলে নেয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে জিম্বাবুয়ের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার ছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবন স্বল্পকালীন হলেও দূর্দান্ত খেলে সকলের নজর কেড়েছিলেন। বিশেষতঃ ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় তিনবার ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। বামহাতে আক্রমণাত্মক স্ট্রোকপ্লে খেলতে অভ্যস্ত। একদিনের খেলায় ব্যাটিং উদ্বোধনে নামলেও টেস্টে মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান ছিলেন। পাশাপাশি আক্রমণধর্মী সিম বোলিং করতেন। ডানহাতি ব্যাটসম্যানদেরকে লক্ষ্য করে বলকে ঘুরাতে পারতেন। তবে, বেশ রান খরচ করে ফেলতেন।
১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে আলিস্টার ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৯ অক্টোবর, ১৯৯৯ তারিখে ব্লোমফন্তেইনের গুডইয়ার পার্কে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬ ও ২৩ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, জ্যাক ক্যালিসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩ রানে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০০০ সালে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১ জুন, ২০০০ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও স্বাগতিক দল দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয় তুলে নেয়। খেলায় তিনি ১/৬৩ ও ২/৪১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৫১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
জিম্বাবুয়ের সাবেক কোচ ডেভ হটনের সুনজরে ছিলেন না। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট ইউনিয়ন থেকে কম বেতনের প্রস্তাবনা পান। জনসনের পত্নী কোনমতেই হারারেতে অবস্থান করতে আগ্রহী ছিলেন না। কিশোর অবস্থাতেই পিতা-মাতার সাথে দক্ষিণ আফ্রিকায় অভিবাসিত হয়েছিলেন। ২০০০ সালে ইংল্যান্ড সফর শেষে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান। ২০১০ সালে টিম ইন্ডিয়ার কিশোর খেলোয়াড়দের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বিসিসিআই থেকে প্রশিক্ষক হিসেবে মনোনীত হন।
