| |

নীল অ্যাডকক

৮ মার্চ, ১৯৩১ তারিখে কেপ প্রদেশের সী পয়েন্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

দীর্ঘদেহী আক্রমণাত্মক ফাস্ট বোলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। মাইক প্রোক্টর, পোলক পরিবার কিংবা অ্যালান ডোনাল্ড বৈশ্বিক ক্রিকেট থেকে সহায়তা পেলেও তিনি এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন। নিজের উচ্চতাকে ব্যবহার করে বলকে অফের দিকে নিয়ে যেতে পারতেন।

পিটার হেইনের সাথে জুটি গড়ে অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। পিটার হেইনের ছয় ফুট চার ইঞ্চির তুলনায় মাত্র ইঞ্চি কম উচ্চতাসম্পন্ন ছিলেন এবং ঝরঝরে চুলে ও সুদর্শন ছিলেন। পরবর্তীকালে পিটার পোলককে নিয়ে নতুন বলের জুটি গড়েন। গুড লেন্থের চেয়ে অল্প কম দূরত্বে বল ফেলতেন। এরফলে, ব্যাটসম্যানের মাথা বরাবর সরাসরি বাউন্স হতো। মারে চ্যাপেল, ম্যাট পুর, লরি মিলার ও সর্বোপরি বার্ট সাটক্লিফকে নিজস্ব দ্বিতীয় টেস্টে নাকানি-চুবানিতে ফেলেন।

পিতামহ ডব্লিউ. অ্যাডকক ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে ইস্টার্ন প্রভিন্সের পক্ষে খেলেছিলেন। লেডিস্মিথের কাছাকাছি খামার এলাকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। পিতার হস্তক্ষেপে এ দায়িত্ব থেকে সড়ে আসেন। স্থানীয় তরুণদের সাথে ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতেন। শুরুরদিকে অবশ্য তেমন দক্ষতার প্রতিচিত্র দেখা যায়নি। তাঁর ভাষায়, মারিৎজবার্গে সেন্ট চার্লস, পোর্ট এলিজাবেথের গ্রে হাই ও জোহানেসবার্গের জেপ হাইয়ে অধ্যয়নকালীন ক্রিকেটে তেমন সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। তন্মধ্যে, শেষের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় একাদশে মিডিয়াম পেসার হিসেবে অংশ নেন।

জেপ ওল্ড বয়েজের পক্ষে খেলাকালীন বামহাতি স্পিনার সিরিল ভিনসেন্টের নজর কাড়েন ও ছত্রচ্ছায়ায় নিয়ে আসেন এবং গতি বৃদ্ধির তাগিদ দেন। ট্রান্সভালের সুপরিচিত ব্যাটসম্যান এরিক রোয়ানের নেতৃত্বাধীন ক্লাবের খেলায় অংশগ্রহণকালীন গতিপথ সামনের দিকে চলে যায়। টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়া এরিক রোয়ানের বিপক্ষে দূর্দান্ত গতি নিয়ে বোলিং করে সকলের নজর কাড়েন। ১৯৫২-৫৩ মৌসুম থেকে ১৯৬২-৬৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে নাটাল ও ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৫২ সালের শেষদিকে ট্রান্সভালের পক্ষে প্রথমবারের মতো খেলার সুযোগ পান।

কিম্বার্লীতে অনুষ্ঠিত নিজস্ব চতুর্থ খেলায় গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্টের বিপক্ষে ৬/৬৬ ও ৪/৩৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। রোডেশিয়ার বিপক্ষে আট উইকেট দখল করে ঐ মৌসুম শেষ করেন। সবমিলিয়ে ১৪.৯০ গড়ে ৩১ উইকেট দখল করেছিলেন।

১৯৫৩ থেকে ১৯৬২ সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ২৬ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। টেস্টগুলো থেকে মাত্র ২১.১০ গড়ে ১০৪ উইকেট দখল করেছিলেন তিনি। ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমের গ্রীষ্মকালে নিজ দেশে জিওফ রাবোনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। দুই দলের মধ্যকার প্রথম টেস্ট সিরিজে অংশ নেন। ১১ ডিসেম্বর, ১৯৫৩ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। বল হাতে নিয়ে ০/৫২ ও ৩/৩৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ইনিংস ও ৫৮ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে যায়।

এরপর, ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৫৩ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে এলএসএম মিলারকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৩/৩৮। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেটের সন্ধান পান। খেলায় তিনি ৩/৪৪ ও ৫/৪৩ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ১৩২ রানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ২৯ জানুয়ারি, ১৯৫৪ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/২৭ ও ৫/৪৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে বব ব্লেয়ারের বলে শূন্য রানে বিদেয় নেন। সফরকারীরা ৯ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

ডারবানে অনুষ্ঠিত টেস্টে নিউজিল্যান্ডীয় ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে তেমন সফলতা পাননি। দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট পেলেও মূলতঃ হিউ টেফিল্ডের ধ্বংসাত্মক বোলিংয়ের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা দল জয়লাভ করেছিল।

সদর্পে নিজের পরিচিতি ঘটান। ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিপজ্জ্বনক বোলিং উদ্বোধনের সূচনা করেন। জোহানেসবার্গের এলিস পার্কে অনুষ্ঠিত টেস্টের প্রথম ওভারেই জিওফ রাবোন ও মারে চ্যাপেলকে গুড লেন্থ বলে পরাস্ত করেন। নবম বলে বুক বরাবর বোলিংয়ে বোল্ড করেন। বার্ট সাটক্লিফ দুই বল মোকাবেলা করেন। মাথা লক্ষ্য করে আসা পরের বলে হুক মারার চেষ্টা চালালেও ব্যাটের সাথে সংস্পর্শ হয়নি। কানে আঘাত পান। রক্তমাখা অবস্থায় হাসপাতালে নীত হন ও দুবার অজ্ঞান হয়ে যান।

পরবর্তী ব্যাটসম্যান জন রিডকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পাঁচবার শরীরে বল ফেলেন। দলীয় সংগ্রহ ২৪/৩ থাকা অবস্থায় লরি মিলারও বুকে আঘাত পান ও রিটায়ার হার্ট হন। পরে বার্ট সাটক্লিফের ন্যায় তাঁকেও হাসপাতালে প্রেরণ করতে হয়েছিল। ১৫ রান সংগ্রহকারী ম্যাট পুরকে বিদেয় করেন। তাঁর পা স্পর্শ করে স্ট্যাম্পে বল আঘাত হানে। ৮১/৬ থাকা অবস্থায় ব্যান্ডেজ নিয়ে বার্ট সাটক্লিফ মাঠে ফিরে আসেন ও স্মরণীয় খেলা উপহার দেন। তাঁর তৃতীয় বল থেকে ছক্কা হাঁকান ও ৮০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। নিউজিল্যান্ড দল ফলো-অন থেকে রক্ষা পায় ও দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে স্বল্প রানে গুটিয়ে দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৪৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। টেস্ট সিরিজ শেষে ২০.২০ গড়ে ২৪ উইকেট দখল করেন। এ সিরিজের মাঝখানে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত খেলায় অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের বিপক্ষে ৫/২৬ ও ৮/৩৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।

১৯৫৫ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর জ্যাক চিদামের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। এ সফরে পিটার হেইনের সাথে জুটি গড়েন। প্রথম দুই টেস্টে স্বাগতিক দল জয় পেলেও ম্যানচেস্টারে তাঁরা ১৪ উইকেট দখল করেছিলেন। লিডসে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে হিউ টেফিল্ড, পিটার হেইন ও ট্রেভর গডার্ডের বোলিংয়ের কল্যাণে জয় পায়; তবে, ১১ স্টোন ওজনের অধিকারী হিসেবে তাঁদেরকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি। পায়ের হাঁড় ভেঙ্গে গেলে খেলায় তিনি মাত্র ৪ ওভার বোলিং করতে সক্ষম হয়েছিলেন। টেস্টগুলো থেকে ১০ উইকেট পেয়েছিলেন। এ সফরে তাঁর সংগৃহীত ৩৪ উইকেটের বিপরীতে পিটার হেইনের সংগ্রহ ছিল ৭৪ উইকেট।

৯ জুন, ১৯৫৫ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১* ও ৬ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৭৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, সফরকারীরা ইনিংস ও ৫ রানে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে নিজ দেশে পিটার মে’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। সিরিজের সবগুলো টেস্টেই বোলিং করেছিলেন। প্রাণান্তঃকর প্রয়াস চালানো সত্ত্বেও জোহানেসবার্গ ও কেপটাউনে জয় পেয়ে ইংল্যান্ড দল ২-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে যায়। ডারবান টেস্ট ড্রয়ে পরিণত হয়। পিটার হেইনকে নিয়ে ব্যাটসম্যানদের উপর প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট হন। উপর্যুপরী দুই টেস্ট জয়ে হিউ টেফিল্ডও সহায়তায় এগিয়ে আসেন। এ সিরিজে স্বাগতিক দল ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে ২-২ ব্যবধানে সিরিজে সমতা আনয়ণে সমর্থ হয়। গোটা সিরিজে ১৪.৯০ গড়ে ২১ উইকেট দখল করে বোলিং গড়ে শীর্ষ স্থানে ছিলেন; হিউ টেফিল্ড ৩৭ উইকেট পান এবং পিটার হেইন ২৮.৭২ গড়ে ১৮ উইকেট দখল করেন।

১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের দ্বিতীয় উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ২/৫২ ও ০/২২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৬ ও ১* রান সংগ্রহ করেন। স্বাগতিকরা ১৭ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে তরুণ অধিনায়ক ইয়ান ক্রেগের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৩-০ ব্যবধানে স্বাগতিক দলের পরাজয়বরণকালে কেবলমাত্র ডারবানে সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে সফলতা পেয়েছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে এলএফ ক্লাইনকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/৪৩। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৫৮ তারিখে অনুষ্ঠিত টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬/৪৩ লাভ করেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ১/৩৪ পান। তবে, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে রিচি বেনো’র বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিয়ে গড়ালে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

তন্মধ্যে, জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দল মামুলী ৬৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নামলে পিটার হেইনকে নিয়ে ভীতিকর বোলিং আক্রমণ কার্য পরিচালনায় অগ্রসর হন। শর্ট বলগুলোয় জিম বার্ক ও রিচি বেনো যথাযথ মোকাবেলায় ব্যর্থ হন। ইয়ান ক্রেগকে এক্স-রে করার জন্যে হাসপাতালে প্রেরণ করতে হয়েছিল। গালি অঞ্চলে ফিল্ডিংরত ট্রেভর গডার্ড এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন যে, স্বাভাবিকের তুলনায় দুই কদম পিছিয়ে দণ্ডায়মান ছিলাম। প্রথম বলের পর আরও দুই ধাঁপ পিছিয়ে যাই। মাথা বরাবর তিনটি বাউন্সার থেকে কলিন ম্যাকডোনাল্ড এড়াতে সক্ষম হন। অধিনায়ক ফন রাইনেভেল্ড স্বাভাবিক বোলিংয়ের দিকে মনোযোগী হবার কথা বলেন। আরও একটি বাউন্সারে কলিন ম্যাকডোনাল্ডকে স্লিপে কটের মাধ্যমে বিদেয় করেন। কলিন ম্যাকডোনাল্ডকে চার রানে বিদেয় করার পর গডার্ডকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন যে বাজে লোকটিকে বলে দিও যে বাড়ীতে আমারও পরিবার রয়েছে। ম্যাকডোনাল্ড পরবর্তীতে তাঁর বোলিংয়ের ধরনকে দৃশ্যতঃ বডিলাইনের অনুরূপ ছিল হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। ১৮.৮৮ গড়ে পিটার হেইন ১৭ উইকেট দখল করলেও তিনি ১৪ উইকেট লাভে ২৯.২৮ গড়ে রান খরচ করেন।

১৯৬০ সালে জ্যাকি ম্যাকগ্লিউ’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে সর্বশেষ ইংল্যান্ড গমন করেন। অপ্রতিদ্বন্দ্বীরূপে নিজেকে দাঁড় করান। পাঁচ মাসের অধিক সময় নিয়ে দূর্দমনীয় ভঙ্গীমায় খেলেন। এ সময়ে তিনি তাঁর সময়ের চেয়েও এগিয়েছিলেন। তরুণ জিওফ গ্রিফিনের সাথে নতুন বলের জুটি গড়লেও লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টে বল ছোড়ার কারণে নিষিদ্ধ হন। হিউ টেফিল্ডের বোলিং অকার্যকর হলে দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র বোলার হিসেবে কেবলমাত্র তিনিই শেষ ভরসা ছিলেন। তিনি চমৎকার খেলেন। সুইং সহযোগে ফাস্ট বোলিংয়ে অগ্রসর হন ও পুরো সফরেই শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন। স্কারবোরায় শেষ প্রস্তুতিমূলক খেলা শেষে সব মিলিয়ে এ সফরে ৭৩৭ ওভার বোলিং করেছিলেন। কেবলমাত্র তিনবার পোশাক বদলের জন্যে মাঠ ত্যাগ করেছিলেন। অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই ঐ সময়ে ফ্রেড ট্রুম্যান, ব্রায়ান স্ট্যাদাম, ওয়েস হল ও চার্লি গ্রিফিথের সাথে তাঁকে দ্রুততম বোলার হিসেবে চিত্রিত করেছিলেন।

ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রস্তুতিমূলক খেলায় ৭৪ রান খরচায় ১০ উইকেট দখল করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাননি। ৯ জুন, ১৯৬০ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। এজবাস্টনে সিরিজের প্রথম টেস্টে ১১৯ রান খরচায় আট উইকেট পান। খেলায় তিনি ৫/৬২ ও ৩/৫৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১* ও ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ১০০ রানে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

নটিংহামে বেশ রান খরচ করেন। তবে, ওল্ড ট্রাফোর্ডের চতুর্থ টেস্টে সাত উইকেট ও ওভালের চুড়ান্ত টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬/৬৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে ইংল্যান্ডকে ১৫৫ রানে গুটিয়ে দেন। শেষ টেস্টে তাঁর বোলিং থেকে পাঁচটি ক্যাচ আসে।

সব মিলিয়ে পাঁচ টেস্টে ২২.৫৭ গড়ে ২৬ উইকেট পান। এরফলে, ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে হিউ টেফিল্ডের রেকর্ডের সমকক্ষ হন। তাসত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে পরাজয়বরণ করেছিল। ঐ সফরে ১৪.০৩ গড়ে ১০৮ উইকেট দখল করেছিলেন। তুলনান্তে, ১৯৫৫ সালের সফরে মাত্র ৩৪ উইকেট পেয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে, ১৯৬১ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেছিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে আরও মেলে ধরেন। নাটালের সাথে যুক্ত হন ও ১১.৬৫ গড়ে ৩৫ উইকেট নিয়ে কারি কাপের শিরোপা বিজয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। তবে, এ পর্যায়ে তাঁকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। এরপর আর মাত্র দুই টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন।

১৯৬১-৬২ মৌসুমে নিজ দেশে জন রিডের নেতৃত্বাধীন সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন। জোহানেসবার্গে পিটার হেইনের সাথে সর্বশেষ বোলিং জুটি হিসেবে অগ্রসর হন। দ্বিতীয় ইনিংসে ডিক মৎজকে লেগ বিফোর উইকেটে বিদেয় করে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান বোলার হিসেবে টেস্টে ১০০ উইকেট লাভের মর্যাদার অধিকারী হন।

একই সফরের ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬২ তারিখ থেকে শুরু হওয়া পোর্ট এলিজাবেথের জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৭ রান অতিক্রম করেন। ৫ ও ২৪ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, নিজস্ব শেষ টেস্টে ৩/৬০ ও ১/২৫ লাভ করেন। এ পর্যায়ে তরুণ পিটার পোলকের সাথে বোলিং উদ্বোধনে নেমেছিলেন। সফরকারীরা ৪০ রানে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্ট ছিল।

১৯৬২-৬৩ মৌসুমে স্বল্পসংখ্যক উইকেট লাভ করেন ও নাটালকে আরও একবার শিরোপা বিজয়ে সহায়তা করেন। এরপর, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জগৎকে বিদেয় জানান।

২৬ টেস্ট থেকে ২১.১০ চমৎকার গড়ে ১০৪ উইকেট পান। তন্মধ্যে, পাঁচবার পাঁচ-উইকেট লাভ করেছেন। তবে, রান সংগ্রহের দিক দিয়ে বেশ নিচেরদিকে ছিলেন। কেবলমাত্র শেষ দুই টেস্টে রান সংগ্রহের মাধ্যমে সংগৃহীত উইকেট সংখ্যাকে অতিক্রম করেছিলেন। ৫.৪০ গড়ে ১৪৬ রান তুলেন; ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ করেন ২৪ রান।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটেও ব্যাট-বলে একইমানের ছিলেন। ৯৯ খেলায় ১৭.১৭ গড়ে ৪০০ উইকেট পান। ৫.৫০ গড়ে ৪৫১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। কোন অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেননি। সর্বোচ্চ করেছিলেন ৪১ রান।

খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকেই মূলতঃ গতির দিকে নজর দিয়েছিলেন। দৌঁড়ানোর ভঙ্গীমা সোজা ও স্বাভাবিক ধরনের ছিল। উঁচু বাহু থেকে বলকে অবমুক্ত করতেন ও শরীরকে সামনের দিকে ঠেলে দিতেন।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর পিটারমারিৎজবার্গভিত্তিক ট্রাভেল এজেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর, বেতারে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। কয়েক বছর অস্ট্রেলিয়ায় অতিবাহিত করেন। সেখানে নিউ সাউথ ওয়েলসের কোচের দায়িত্বে ছিলেন। রিচি বেনো মন্তব্য করেন যে, ‘মাঠের বাইরে তিনি বেশ আমুদে প্রকৃতির অধিকারী ছিলেন। কিন্তু, মাঠে ফ্রেড ট্রুম্যান ও ব্রায়ান স্ট্যাদামের চেয়েও দ্রুতগতিসম্পন্ন ছিলেন, তবে, ফ্রাঙ্ক টাইসনের চেয়ে দ্রুততর ছিলেন না। হয়তোবা, কারোর সমমানের ছিলেন না।’

নিজ দেশে তিনি অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করেন। আলী বাখের মন্তব্য করেন যে, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা ফাস্ট বোলারদের মধ্যে তিনি শীর্ষ পর্যায়ের ছিলেন। তাঁর সময় থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ফাস্ট বোলারদের নতুন যুগের সূচনা ঘটে।’ ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। মৌরিন নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। তিনি নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। এছাড়াও, দীর্ঘ সময় ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। অতঃপর, ৬ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখে ৮১ বছর ৩০৪ দিন বয়সে কোয়াজুলু-নাটালের হোউইকে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী জ্যাক ফল মন্তব্য করেন যে, ‘ফাস্ট বোলিংয়ের স্বর্ণযুগে নীল অ্যাডকক অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার ছিলেন। ঐ সময়ে ইংল্যান্ডে ফ্রেড ট্রুম্যান, ব্রায়ান স্ট্যাদাম ও মাইক টাইসন; অস্ট্রেলিয়ায় রে লিন্ডওয়াল, কিথ মিলার ও অ্যালান ডেভিডসন এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়েস হল ও রয় গিলক্রিস্ট ছিলেন; তবে, নীল অ্যাডকক সকলের চেয়ে সেরা ছিলেন। সিএসএ পরিবার ও দেশের সমর্থকদের পক্ষ থেকে তাঁর স্ত্রী মৌরিন, পরিবার ও বন্ধুদের কাছে আমাদের সমবেদনাজ্ঞাপন করছি।’

Similar Posts

  • |

    রবি রত্নায়েকে

    ২ মে, ১৯৬০ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮০-৮১ মৌসুম থেকে ১৯৮৯-৯০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ব্যাট ও বল…

  • | | |

    রাহুল দ্রাবিড়

    ১১ জানুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ শীর্ষসারির ডানহাতি ব্যাটসম্যান খেলেছেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণ কর্মে অগ্রসর হয়ে থাকেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেন্ট যোসেফস বয়েজ হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। খুব সম্ভবতঃ অন্যতম সর্বশেষ ধ্রুপদী মানসম্পন্ন…

  • | |

    মোহসিন খান

    ১৫ মার্চ, ১৯৫৫ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭০-৭১ মৌসুম থেকে ১৯৮৫-৮৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, করাচী,…

  • | |

    এমএস ধোনি

    ৭ জুলাই, ১৯৮১ তারিখে বিহারের রাঁচিতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারত দলের পক্ষে সকল স্তরের ক্রিকেট খেলেছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী এমএস ধোনি ‘এমএস’, ‘মাহি’, ‘এমএসডি’, ‘থালা’, ‘ক্যাপ্টেন কুল’ প্রভূতঃ ডাকনামে ভূষিত…

  • | |

    সুরেশ রায়না

    ২৭ নভেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে উত্তরপ্রদেশের মুর্দানগরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদশী। ভারত দলের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘সানু’ ডাকনামে ভূষিত সুরেশ রায়না ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ২০০০ সালে ক্রিকেট খেলতে সিদ্ধান্ত নেন।…

  • | |

    জর্জ হ্যাডলি

    ৩০ মে, ১৯০৯ তারিখে পানামার কোলনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। পানামার ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ে তাঁর জন্ম। ১৯১৯ সালে মাতা তাঁর জন্মস্থান জ্যামাইকায় তাঁকে প্রেরণ করেন। তাঁকে ইংরেজী ভাষী বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর হয়। সেখানেই…