| |

নবজ্যোৎ সিং সিঁধু

২০ অক্টোবর, ১৯৬৩ তারিখে পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

শেন ওয়ার্ন ও মুত্তিয়া মুরালিধরনের বিপক্ষে সমানে লড়াইকারী হিসেবে এবং সুনীল গাভাস্কার ও বীরেন্দ্র শেহবাগের মাঝামাঝি সময়কালে ভারতের সেরা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিলেন। কেবলমাত্র ব্যাটিং উদ্বোধন কিংবা পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নেমে সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৮১-৮২ মৌসুম থেকে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে পাঞ্জাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৮৩ থেকে ১৯৯৯ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৫১ টেস্ট ও ১৩৬টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে নিজ দেশে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১২ নভেম্বর, ১৯৮৩ তারিখে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। সফরকারীরা ১৩৮ রানে জয় পেলে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ১৫ ও ৪ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এ সিরিজের তিন ইনিংস থেকে মাত্র ৩৯ রান তুলতে সমর্থ হয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে, পরবর্তী চার বছর তাঁকে দলের বাইরে থাকতে হয়।

রাজন বালা মন্তব্য করেছেন যে, ‘স্ট্রোকবিহীন বিস্ময়কারী’ হিসেবে। তবে, তিনি কঠোর অনুশীলন কর্ম চালিয়ে যেতে থাকেন। এ চার বছরে অনুশীলন কর্মে দিনে ৩০০ ছক্কা হাঁকাতেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সদর্পে ফিরে আসেন। একই লেখক তাঁকে তাল গাছের উঁচুতে মারা ব্যাটসম্যানরূপে বর্ণিত করেন। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় প্রথম চার ইনিংসেই অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। তন্মধ্যে, প্রথম দুই খেলায় নয়টি বিশালাকার ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন।

সেরা স্পিনারদের যুগে ছক্কার অপূর্ব প্রদর্শন করেছিলেন। ১৯৯৭ সালে কুইন্স পার্ক ওভালে ১১ ঘণ্টায় ২০১ রান তুলেছিলেন। পরের মৌসুমে সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেন ওয়ার্নের বিপক্ষে এক চোট নেন। এর চার বছর পূর্বে তাঁর বোলিং থেকে এক ইনিংসে আট ছক্কা হাঁকিয়ে ১২৪ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলেন।

১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে নিজ দেশে জন রাইটের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১২ নভেম্বর, ১৯৮৮ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ২০ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতক হাঁকান। ১১৬ ও ৪৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৭২ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৮৯-৯০ মৌসুমে কৃষ শ্রীকান্তের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে পাকিস্তান গমন করেন। ৯ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে শিয়ালকোটে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে দূর্দান্ত খেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় শেষ হয়। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

টেস্টে ৪২ ও ওডিআইয়ে ৩৭ গড়ে রান পেয়েছেন। দূর্ভাগ্যবশতঃ বিদেশের মাটিতে যথাক্রমে ৩৪ ও ৩৩ গড়ে রান সংগ্রহ করেছিলেন। পেস ও বাউন্সের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলেও স্পিনের বিপক্ষে দূর্দান্ত খেলতেন। ফিল্ডারদের আদর্শ ছিলেন না। তবে, পুত্রের উদ্দীপনায় খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে বেশ সফল হয়েছিলেন। ধারাভাষ্যকারদের কাছ থেকে অবজ্ঞাসূচক ‘জন্টি সিং’ নাম পান।

১৯৯২-৯৩ মৌসুম থেকে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুম পর্যন্ত ভারতের অপরাজিত থাকার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা রাখেন। ৬০ গড়ে ১৪৮৯ রান পেয়ে কেবলমাত্র শচীন তেন্ডুলকরের ৬১ গড়ে ২৫০২ রানের চেয়ে পিছিয়েছিলেন। ওডিআইয়ে ১০০০, ২০০০, ৩০০০ ও ৪০০০ রান দ্রুততম গড়েন। অবশ্য পরবর্তীকালে তা ভেঙ্গে যায়।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে গোয়ালিয়রে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে সেরা ইনিংস খেলেন। ইনিংস উদ্বোধনে নেমে ১৩৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও ২৫৭ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় সফরকারীরা ৭ উইকেটে বিজয়ী হয়। তিন মৌসুম পর বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার-ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৩ রান তুলে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৯ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে মোহালীতে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ভারতের একমাত্র ইনিংসে ১৩১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অরবিন্দ ডি সিলভা’র অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২ জানুয়ারি, ১৯৯৯ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের একটি টেস্ট পরিত্যক্ত হলে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে জয় পায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ধারাভাষ্যকর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

Similar Posts

  • | |

    শুজাউদ্দীন

    ১০ এপ্রিল, ১৯৩০ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুম থেকে ১৯৬৯-৭০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে নর্দার্ন পাঞ্জাব, সার্ভিসেস, বাহাওয়ালপুর,…

  • | |

    কলিন ক্রফ্ট

    ১৫ মার্চ, ১৯৫৩ তারিখে ব্রিটিশ গায়ানার ল্যাঙ্কাস্টার ভিলেজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘ক্রফ্টি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ৬ ফুট ৫ ইঞ্চির লিকলিকে গড়নের অধিকারী ছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে গায়ানা এবং ইংরেজ…

  • | |

    টাটেন্ডা তাইবু

    ২৪ মে, ১৯৮৩ তারিখে হারারেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি (১.৬৫ মিটার) উচ্চতার বাঁধা ডিঙ্গানো ‘টিবলি’ ডাকনামে পরিচিত টাটেন্ডা তাইবু হাল্কা-পাতলা…

  • | |

    টিই শ্রীনিবাসন

    ২৬ অক্টোবর, ১৯৫০ তারিখে মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও আম্পায়ার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। আয়ানগর পরিবারে তাঁর জন্ম। নাঙ্গামবাক্কাম কর্পোরেশন স্কুলে পড়াশুনো করেছেন। সেখানকার কংক্রিটের পিচে অনুশীলন করতেন। বিদ্যালয়ের পেস বোলারদের বিপক্ষে দারুণ খেলতেন। এক পর্যায়ে তাদেরকে…

  • |

    কাগিসো রাবাদা

    ২৫ মে, ১৯৯৫ তারিখে জোহানেসবার্গে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করেন। এছাড়াও, বামহাতে ব্যাটিংয়ে নেমে থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পিতা এমফো রাবাদা ও মাতা ফ্লোরেন্স আইনজীবি। অ্যাটলগং রাবাদা নামীয় ভ্রাতা রয়েছে। ক্ষীপ্রগতি ও ভীতিদায়ক বাউন্স প্রদানে পরিচিতি লাভ করেছেন। ২০১৪ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৮…

  • |

    সেলিম দুরানি

    ১১ ডিসেম্বর, ১৯৩৪ তারিখে আফগানিস্তানের কাবুলে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, কার্যকর স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। কাবুলে জন্মগ্রহণ করলেও ভারতে শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। ক্রিকেট বিশ্বে তিনি ‘প্রিন্স সেলিম’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আফগানিস্তানী পাঠান হিসেবে চমৎকার চেহারার লম্বাটে গড়নের অধিকারী…