৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। পাকিস্তানের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
বামহাতি ধ্রুপদীশৈলীর অধিকারী আগ্রাসী উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের অবস্থান সুদৃঢ়করণে দীর্ঘদিনের আশাবাদ পূরণে প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। সাঈদ আনোয়ার ও ম্যাথু হেইডেনকে পছন্দের তালিকার শীর্ষে রেখেছেন। ব্যাটিংয়ের ধরন অনেকাংশেই তাঁদের অনুরূপ ছিল। স্ট্রোকখেলায় সিদ্ধহস্তের অধিকারী ছিলেন।
ছেলেবেলা থেকে ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতে শুরু করেন। কৈশোর অবস্থাতেই তাঁর প্রতিভা ধরা পড়ে ও খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতেই সকলের নজর কাড়েন। এ সময়ে ক্রিকেট খেলাকে অনেকাংশেই পানিতে মাছ ফেলার শামিল ছিল। অন্যান্য ক্রিকেটারের ন্যায় তিনিও পাড়ার ক্রিকেট থেকে পরবর্তীতে ক্লাব ক্রিকেট ও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিতে পেরেছিলেন। এর সবগুলোই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সম্পন্ন করেন। লুধিয়ানা জিমখানার সাথে জড়িত ওয়াসিম আকরাম তাঁর প্রতিভা সম্পর্কে সর্বপ্রথম সম্যক অবগত হন।
২০০৫-০৬ মৌসুম থেকে ২০১৬-১৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, লাহোর লায়ন্স, লাহোর রিজিওন ব্লুজ এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগো রেড স্টিলের পক্ষে খেলেছেন। ১৫ বছর বয়সে পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ডিফেন্স হাউজিং অথরিটির বিপক্ষে ঐ খেলায় ৭৪ রানের দূর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন। সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে খেলার জন্যে পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। অভিষেক খেলায় ৪৪ ও ২০৪ রান তুলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হবার পূর্বে প্রথম ইনিংসে তাঁর দল ২৫৩ রানে এগিয়েছিল। তবে, ঐ মৌসুমের বাদ-বাকী সময়ে তিনি এ সাফল্যের পুণরাবৃত্তি ঘটাতে পারেননি। পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষে খেলার পাশাপাশি লাহোরের প্রতিনিধিত্ব করতে থাকেন। এছাড়াও, ২০০৬ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের পক্ষে খেলেন। ভারতের বিপক্ষে ৩৮ রানে জয় পেয়ে পাকিস্তান দল শিরোপা জয় করেছিল।
২০০৭-০৮ মৌসুমের কায়েদ-ই-আজম ট্রফিতে দূর্দান্ত খেলেন। ১০ খেলায় অংশ নিয়ে ৮০০ রান তুলেন। এ পর্যায়ে তিনটি শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ফলশ্রুতিতে, প্যাট্রন্স একাদশের সদস্যরূপে সফররত জিম্বাবুয়ীয় একাদশের বিপক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। ২৪০ বল মোকাবেলা করে ১৮২ রান তুলেন। এরফলে, ওডিআই সিরিজে সম্ভাব্য ১৫-সদস্যের দলে ঠাঁই পান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন।
২০০৮ থেকে ২০১৫ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে দুইটিমাত্র টেস্ট, ৪৮টি ওডিআই ও ১৮টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ২০০৮ সালের শুরুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো খেলেন। ২১ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআই অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূচনা ঘটে। ৪৮ বলে ৬১ রান তুলে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন। পরের খেলায় একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজেকে আরও মেলে ধরতে তৎপর হন। ৭৪ রান সংগ্রহ করেন। এরপর থেকে দলে নিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন। শুরুরদিকের খেলাগুলোয় তুলনামূলকভাবে ভালো খেলা উপহার দেন। কিন্তু, কয়েকটি খেলায় তেমন রান সংগ্রহ করতে না পারলে স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হন। ধারাবাহিকতা রক্ষার অভাবে আগস্ট, ২০০৯ সালে দল থেকে বাদ পড়েন। এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে উপেক্ষিত হতে থাকেন।
আড়াই বছর পর ২০১২ সালে পুণরায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসতে সক্ষম হন। ফিরে আসার পরপরই শুরুরদিকের প্রতিশ্রুতিশীলতা তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। এ বছরেই তিনি তাঁর স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে অংশ নেন। এরপর থেকে রান সংগ্রহ স্ফীততর হতে শুরু করে। এ প্রতিযোগিতায় ভারতের বিপক্ষে শতরানের ইনিংস খেলেন। কয়েকটি খেলার পর ভারত সফরেও শতক হাঁকিয়েছিলেন। ২০১২-১৩ মৌসুমের দ্বি-পক্ষীয় সিরিজে তিন খেলা থেকে ২৪১ রান পেয়েছিলেন। প্রথম চারটি খেলা থেকে ভারতের বিপক্ষে একটি অর্ধ-শতক ও তিনটি শতক হাঁকিয়েছিলেন। এরপর, পরের বছরের শুরুতে আরও একটি শতরানের ইনিংস খেলে শীর্ষসারিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়ে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হন। আগ্রাসী ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটের চতুষ্পার্শ্বে স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোঁটাতে সক্ষম। এছাড়াও, ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে শুরু থেকেই বড় ধরনের সংগ্রহের দিকে ধাবিত করার প্রবণতা রয়েছে।
ওডিআইয়ে সফলতা লাভের স্বীকৃতিস্বরূপ টেস্ট দলে তাঁকে ঠাঁই দেয়া হয়। দূর্ভাগ্যবশতঃ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। অংশগ্রহণকৃত সিরিজের দুই টেস্টে থেকে তেমন সুবিধে করতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেছিলেন। এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে দল থেকে বাদ পড়েন।
২০১২-১৩ মৌসুমে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেন। ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। রাহাত আলী’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ২ ও ৪৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ডেল স্টেইনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২১১ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৩ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, রবিন পিটারসনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কারণে স্বাগতিকরা ৪ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে অগ্রসর হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ২০১২ সালের বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতার পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০আইয়ে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ঐ প্রতিযোগিতায় দলে অনন্য ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। শীর্ষসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দূর্দান্ত অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। তবে, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁকে পাকিস্তান দলে রাখেনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে উপেক্ষিত হবার পর ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে মনোনিবেশ ঘটান। লাহোর লায়ন্সের পক্ষে খেলতে থাকেন। ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখে নিজস্ব প্রথম টি২০ শতক হাঁকান। রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত হায়ার মোবাইল টি-২০ কাপে করাচী রিজিওন হোয়াইটস বনাম রাওয়ালপিন্ডি রিজিওনের মধ্যকার গ্রুপ পর্বের খেলায় এ সফলতা পেয়েছিলেন। ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে পিএসএলে দূর্নীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে ও দোষী সাব্যস্ত হন। ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে তাঁকে ১৭ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
