৩০ নভেম্বর, ১৯৯১ তারিখে রংপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলছেন। মাঝারিসারিতে নিচেরদিকে ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। নিজের সেরা দিনগুলোয় বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এছাড়াও, দলের পঞ্চম বোলার হিসেবে ব্যবহৃত হন। ২০০৮-০৯ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে বরিশাল বিভাগ, উত্তর অঞ্চল, রাজশাহী বিভাগ ও রংপুর বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ ক্রিকেট একাডেমি, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, রংপুর রাইডার্স ও সিলেট সিক্সার্সের পক্ষে খেলেছেন। ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সালে বিসিবির পরিচালনায় ছয়-দল নিয়ে গড়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ টি২০ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরে অংশ নেন। $২,০০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। ঐ বছরের এপ্রিল মাসে বিসিবি কর্তৃক প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় চলে আসেন।
বাংলাদেশের অন্যতম তরুণ অল-রাউন্ডার হিসেবে ক্রিকেট জগতে প্রবেশ করেন। সঠিকভাবে পরিচালনার মাধ্যমে জাতীয় দলের পক্ষে সকল স্তরের ক্রিকেটে দীর্ঘস্থায়িত্বের প্রতীক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। নিচেরদিকে মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলের অবস্থার উপর ভিত্তি করে ব্যাটিং করার ক্ষমতা রাখেন। বলে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিখুঁতভাব বজায় রেখে চলতে পারেন। এছাড়াও, দৃষ্টিনন্দন ফিল্ডিংয়ে সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হয়েছেন।
১৩ বছর বয়সে ২০০৪ সালে বাংলাদেশের একমাত্র ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে যোগ দেন। কয়েক বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের লীগ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নিজেকে নিয়ে যান। প্রিমিয়ার লীগে দলের উত্তরণে প্রধান ভূমিকা রাখেন। একই সময়ে ১৬ বছর বয়সে ২০০৮ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। ২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতায় ভারতের বিপক্ষে ৬১ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন। পাকিস্তানী তারকা মোহাম্মদ ইউসুফের একনিষ্ঠ ভক্ত।
এরপর, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ক্লাব আবাহনীতে যুক্ত হন। কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে দল স্থানান্তর করলেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় শান্ত মেজাজে খেলেন এবং দ্রুত দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা পান। শুরুরদিকের খেলাগুলোর মধ্যে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের তারকা খেলোয়াড় সনথ জয়সুরিয়া’র বিপক্ষে বোলিং করে স্বীয় প্রতিশ্রুতিশীলতা চিহ্নিত করেন।
নভেম্বরের শেষদিকে ২০১০ সালের এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের ১৩-সদস্যবিশিষ্ট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। চূড়ান্ত খেলায় আফগানিস্তানকে পরাজিত করে এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের প্রথম স্বর্ণপদক বিজয়ে অংশ নেন।
রাজশাহী দলের পক্ষে খুব কমই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দলটিতে অবস্থান করে একটিমাত্র শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। ২০১১-১২ মৌসুমে নিজ জেলা রংপুরের সাথে যুক্ত হন। ৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখে পাঁচ-উইকেট নিয়ে চট্টগ্রামকে গুটিয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখেন। ২০১৭-১৮ মৌসুমের জাতীয় ক্রিকেট লীগে রংপুর বিভাগের সদস্যরূপে বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
২০১১ সাল ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বমোট ১৯ টেস্ট, ৬৫টি ওডিআই ও ৩১টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৪ আগস্ট, ২০১১ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত একদিনের আন্তর্জাতিকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। প্রথম খেলাতেই অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। দলীয় সংগ্রহ ৫৮/৬ থাকাকালীন মাঠে নামেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঐ খেলায় ৯২ বল মোকাবেলায় ৬৩ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস উপহার দেন ও দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। এ সংখ্যাটি ওডিআই অভিষেকে যে-কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে, ঐ খেলায় তাঁর দল সাত উইকেট পরাজিত হয়। পাঁচ-খেলা নিয়ে গড়া সিরিজের চূড়ান্ত খেলায় কিগান মেথের বলে আঘাত পান ও তিনটি দাঁত হারান।
২০১১-১২ মৌসুমে নিজ দেশে ড্যারেন স্যামি’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। বিংশতিতম জন্মদিনের পূর্বে ২১ অক্টোবর, ২০১১ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁকে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ এনে দেয়। ইলিয়াস সানি’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। একমাত্র ইনিংসে ৩৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন ও বল হাতে নিয়ে ১৯ রান সংগ্রহ করলেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। একই সফরের ১১ অক্টোবর, ২০১১ তারিখে ঢাকায় প্রথমবারের মতো টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন।
১১ মার্চ, ২০১৩ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতরানের ইনিংস খেলেন। একই সফরের প্রথম ওডিআইয়ে ৫৯ বলে ৭৩ রান তুলেন। অক্টোবরে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনটি ওডিআই নিয়ে গড়া সিরিজের দ্বিতীয় ওডিআইয়ে নিজস্ব দ্বিতীয় অর্ধ-শতক হাঁকান। ৫৪ বল থেকে ৫০ রান আদায় করে নেন। চূড়ান্ত খেলায় নিজস্ব প্রথম উইকেটের সন্ধান পান। নভেম্বরের শুরুতে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো শতরান করেন। ১৩৪ বলে তিন অঙ্কের রান সংগ্রহের স্বীকৃতিস্বরূপ ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। তবে, ঐ খেলায় তাঁর দল পরাজয়বরণ করেছিল।
২০১৪ সালের বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সুপার-টেন পর্বে দল খেললেও নক-আউট পর্বে দলকে নিয়ে যেতে পারেননি। খেলায় ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে না পারায় দলে আসা-যাবার পালায় ছিলেন। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে তেমন সুবিধে করতে পারেননি ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলার জন্যে তাঁকে দলে রাখা হয়নি। তবে, বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ১৫-সদস্যের বাংলাদেশ দলে যুক্ত ছিলেন। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের সর্বাধিক সফলতায় সবিশেষ ভূমিকা রাখেন।
১২ জুলাই, ২০১৫ তারিখে মিরপুরে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওডিয়াইয়ে অংশ নেন। ৩/২৬ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসেন ও সৌম্য সরকারের ব্যাটিং নৈপুণ্যে স্বাগতিক দল জয় পায়। তিনটি-ওডিআইয়ে গড়া সিরিজে প্রোটীয়দের বিপক্ষে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।
২০১৭-১৮ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ঐ টেস্টে সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয় ও ১-১ ব্যবধানে সিরিজটি ড্র করতে সমর্থ হয়। ৪৫ ও ৫ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২৪ রান খরচ করলেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
