Skip to content

মুত্তিয়া মুরালিধরন

1 min read

১২ এপ্রিল, ১৯৭২ তারিখে ক্যান্ডিতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশ নিয়েছেন।

৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ১৯৮৯-৯০ মৌসুম থেকে ২০১০ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে কন্দুরাতা এবং তামিল ইউনিয়ন ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিক ক্লাব; ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্লুচেস্টারশায়ার, কেন্ট ও ল্যাঙ্কাশায়ার এবং নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ওয়েলিংটনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এশিয়া একাদশ, আইসিসি বিশ্ব একাদশ, চেন্নাই সুপার কিংস, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, কোচি তুস্কার্স কেরালা, জ্যামাইকা তল্লাজ ও মেলবোর্ন রেনেগাডেসের পক্ষে খেলেছেন।

দ্বীপের সাংস্কৃতিক রাজধানী ক্যান্ডিতে জন্ম ও শৈশবকাল অতিবাহিত করেছেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হয়েছেন। ক্যান্ডিভিত্তিক মিষ্টি খাবার বিক্রয়কারী পরিবারের সন্তান। সমর্থকদের অভিমত, স্পিন বোলিং সর্বশ্রেষ্ঠ আসন দখল করে আছেন। অন্যদিকে, বিরোধীদের মতে, খেলার সেরা রেকর্ডগুলো অযাচিতভাবে ধারন করে আছেন, বল নিক্ষেপকে বৈধতা আনয়ণে আইনের ধারা পরিবর্তন করিয়েছেন। তবে, অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, যে-কোন ধরনের মাঠে বলকে ক্ষীপ্রতার সাথে ঘুরাতে পারতেন।

আঠারো বছর ধরে খানিক বিরতি নিয়ে একাধারে বোলিং করে গেছেন। অবসর নেয়ার পর আরো পাঁচ মৌসুম ক্রিকেটের সাথে যুক্ত ছিলেন। নিজ দেশের পিচগুলোয় তাঁকে রুখা বেশ কঠিন ছিল। দক্ষতা, অবিশ্বাস্য উপমা স্থাপন ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধতা শব্দগুলো তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে স্পষ্টতঃই বহমান ছিল। বিদেশ সফরে অর্ধ-ডজন অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলেছেন, তবে নিজেকে তিনি এ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে পারেননি।

কাঁধের শক্তিমত্তা, বাহু ও কব্জির দ্রুত সঞ্চালনের পাশাপাশি কনুঁইয়ে কিঞ্চিৎ বক্রময়তার সমন্বয়ে তাঁর বোলিং ভঙ্গীমা প্রদর্শিত হতো। ডানহাতে অফ-স্পিনের সাথে অপ্রচলিত বোলিংয়ের সংমিশ্রণ নিয়ে বোলিং ভঙ্গীমা অগ্রসর হন। দ্রুততার সাথে ২০ বছর বয়সে জাতীয় দলের পক্ষে প্রথম টেস্ট খেলায় সুযোগ পান। যে-কোন ধরনের পিচে বলকে বাঁক খাওয়ানোয় দক্ষতা প্রদর্শনের ফলে ও ক্রমাগত এ খেলায় ব্যাপক সফলতা লাভ করায় ‘স্মাইলিং অ্যাসাসিন’ ডাকনামে পরিচিতি পান। ক্যান্ডিভিত্তিক সেন্ট অ্যান্থনিজ কলেজে অধ্যয়ন করেছেন।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম ও একমাত্র তামিল হিসেবে শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন। বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। পরবর্তীতে, ১৪ বছর বয়সে অফ-স্পিন বোলিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন। অনবদ্য ভূমিকা গ্রহণের ফলাফলস্বরূপ সেন্ট অ্যান্থনিজ কলেজের প্রথম একাদশে একাধারে চার বছর খেলেছিলেন। তন্মধ্যে বিদ্যালয় জীবনের শেষ দুই বছর নম্বরের সাথে খেলেছিলেন। উভয় বর্ষেই নিজ নামের পার্শ্বে শতাধিক উইকেট লিখিয়েছিলেন। মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান ও স্পিন বোলিংয়ের কারণে অল-রাউন্ড অবদান রাখেন। ফলশ্রুতিতে, ১৯৯০-৯১ মৌসুমে বাটা বর্ষসেরা বিদ্যালয় ক্রিকেটারের মর্যাদা এনে দেয়।

১৯৯১ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। তবে, পাঁচটি খেলায় অংশ নিয়েও তিনি কোন উইকেট লাভে সক্ষম হননি। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে সফররত অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলায় সর্বপ্রথম সকলের নজরে পড়েন। ১৯৯২ সালের শেষদিকে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় অ্যালান বর্ডার ব্যতীত দলের সকল খেলোয়াড়ের বিপক্ষে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। বোলিং ভঙ্গীমায় বিস্ময়ের সৃষ্টি করেন বা অদ্ভূত ধরনের ছিল। কনুঁইয়ের গড়ন স্বাভাবিক না থাকায় নতুন গল্পের সৃষ্টি করে। ব্যতিক্রমী পন্থায় কব্জী বাঁকাতেন ও কাঁধের বাঁকানো ঐ সময়ে ফাস্ট বোলারদের চেয়েও বেশী ছিল। এরফলে, বলকে অধিকাংশ অর্থোডক্স ফিঙ্গার-স্পিনারদের তুলনায় অধিকভাবে বলকে বাঁকাতে পারতেন। দুসরায়ও প্রভূত্ব করেন। একই সময়ে শেন ওয়ার্নের উইকেট সংগ্রহে প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেন। ফলশ্রুতিতে, টেস্ট দলে খেলার জন্যে তাঁকে মনোনীত করা হয়।

১৯৯২ থেকে ২০১১ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ১৩৩ টেস্ট, ১৬২টি ওডিআই ও ১২টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২০ বছর বয়সে ২৮ আগস্ট, ১৯৯২ তারিখে কলম্বোর আরপিএসে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দিলীপ লিয়ানাগে’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ঐ টেস্টে ৩/১৪১ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ক্রেগ ম্যাকডারমটকে বিদয়ে করে প্রথম উইকেট লাভ করেন। এছাড়াও, মার্ক ওয়াহ ও টম মুডি তাঁর শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। তবে, ডিন জোন্সের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। অবশ্য, নিজস্ব তৃতীয় টেস্টে সাত ও পরের টেস্টে পাঁচ উইকেটের সন্ধান পান।

১৯৯৩ সালে নিজ দেশে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৮ আগস্ট, ১৯৯৩ তারিখে মোরাতুয়ায় অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে পিএল সিমকক্সকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। এ উইকেটগুলোর মধ্যে কেপলার ওয়েসেলস, হ্যান্সি ক্রোনিয়ে ও জন্টি রোডস ছিলেন। ৫/১০৪ ও ১/৪৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, দলীয় অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র বীরোচিত ভূমিকায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।

একই সফরের ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৫/১০১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ০ ও ১৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ব্রেট শ্যুলজের বোলিংশৈলীর কল্যাণের সফরকারীরা ইনিংস ও ২০৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১১ মার্চ, ১৯৯৫ তারিখে নেপিয়ারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বতন সেরা ছিল ৫/১০১। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৬৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। তবে, চামিণ্ডা ভাসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে সফরকারীরা ২৪১ রানে জয় তুলে নেয় ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। এ জয়টি বিদেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার প্রথম জয় ছিল ও পরবর্তীতে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে।

১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৫/৬৮ ও ২/৮৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অনবদ্য বোলিংশৈলীতে স্বাগতিকরা ৪২ রানে পরাভূত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

তাঁর ক্রিকেট জীবনের পুরোটাই গোলাপময় ছিল না। বেশ কয়েকবার সন্দেহজনক বোলিংয়ের অভিযোগে প্রশ্নের মুখোমুখি হন। বিতর্ক সর্বদাই তাঁর নিত্য সঙ্গী ছিল। তবে, সর্বদাই বৃহৎ চোখে হাসি ছিল ও ব্যাটিং দলকে হিমশিম খাইয়েছেন। ১৯৯৫ সালে বক্সিং ডে টেস্টে ড্যারেল হেয়ার ও তিন বছর পর রস এমারসন বল নিক্ষেপের কারণে নো-বল ডাকেন। ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে ড্যারেল হেয়ারের সাথে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। নিজস্ব বাইশতম টেস্টে সন্দেহজনক বোলিং ভঙ্গীমার কারণে এমসিজি’র বক্সিং ডে টেস্টের দ্বিতীয় দিন ড্যারেল হেয়ার সাতবার নো-বল ডাকেন। ৫ জানুয়ারি, ১৯৯৬ তারিখে রস এমারসন, ড্যারেল হেয়ারের সিদ্ধান্তের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন। প্রথমবারের মতো খেলা পরিচালনায় নেমে রস এমারসন ব্রিসবেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে নো-বল ডাকেন। লেগ-স্পিন বোলিংয়ে আবারও তিনি নো-বল ডাকেন। তবে, আইসিসি বিষয়টি তদন্ত করে ও বোলিং ভঙ্গীমা থেকে মুত্তিয়া মুরালিধরনকে নিষ্কৃতি দেয়।

১৯৯৬ সালে নিজ দেশে অ্যালিস্টেয়ার ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। ৪/৪০ ও ৩/৯৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ১ রানে অপরাজিত ছিলেন। তবে, হাসান তিলকরত্নে’র অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ১৪ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ৭ মার্চ, ১৯৯৭ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ০/১৩৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলায় তিনি ০ ও ২৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেন। এর পূর্বে ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে কলম্বোর পিএসএসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ব্রায়ান ইয়ংয়ের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩৬ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

এরপর, একই সফরের ১৪ মার্চ, ১৯৯৭ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৩/৪৩ ও ৩/৬২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ১৬ মার্চ, ১৯৯৭ তারিখে শ্রীলঙ্কার প্রথম শততম টেস্ট উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিংকে (৫৯) বোল্ড করে এ সাফল্য পান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৫ ও ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১২০ রানে জয় পেয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে নেয়।

জানুয়ারি, ১৯৯৮ সালে টেস্টে প্রথমবারের মতো দশ-উইকেট লাভ করেন। ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে স্বাগতিক দল আট উইকেটে জয় পায়। ঐ টেস্টে ১১৭ রান খরচ করে ১২ উইকেট দখল করেন। এ পর্যায়ে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যে-কোন শ্রীলঙ্কান বোলারের সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ছিল। মার্চ, ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। দুই-টেস্ট নিয়ে গঠিত সিরিজে শ্রীলঙ্কা দল ২-০ ব্যবধানে পরাভূত হলেও ব্যক্তিগতভাবে তিনি সফল ছিলেন। ১৬ উইকেট দখল করেছিলেন তিনি।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৭ জানুয়ারি, ১৯৯৮ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। ৫/২৩ ও ৭/৯৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলায় তিনি ১১৭ রান খরচায় ১২ উইকেট দখল করে টেস্টের ইতিহাসে শ্রীলঙ্কার যে-কোন বোলারের সেরা সাফল্যের মর্যাদা লাভ করেন। তাঁর অসাধারণ বোলিং সাফল্যে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ১৪ জানুয়ারি, ১৯৯৮ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ২/৭২ ও ২/৭৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, অরবিন্দ ডি সিলভা’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ২৮ রান সংগ্রহসহ ১৭ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজে পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ১৯ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টে চামিণ্ডা ভাসের সাথে ৩০ রানের জুটি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নতুন রেকর্ড গড়েন। পরবর্তীতে, খেলার চতুর্থ দিন প্রমোদ্যা বিক্রমাসিংহের সাথে ৯ম উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নতুন রেকর্ড গড়েন। খেলায় তিনি ১৫* ও ১০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, খেলার চতুর্থ দিন ২৬৪ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা দল তাদের সর্বনিম্ন রানের নজির গড়ে। বল হাতে নিয়ে ৪/১৩৫ ও ৪/১০৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। শন পোলকের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৭০ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ২৭ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি ৫/৬৩ ও ৩/৯৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১১ ও ১৫ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, অ্যালান ডোনাল্ডের অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা ৬ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

১৫ এপ্রিল, ১৯৯৮ তারিখে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। বেনোনিতে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫/২৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়লে ১১৫ রানের জয় তুলে নেয়।

১৯৯৮ সালে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ২৭ মে, ১৯৯৮ তারিখে কলম্বোর আরপিএসে সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৫/৯০ ও ৪/১৩৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০* ও ৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ ব্যাটিং কৃতিত্বে স্বাগতিকরা ১৬৭ রানে পরাভূত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে, টেস্টের ইতিহাসে নিউজিল্যান্ড দল প্রথমবারের মতো উপর্যুপরী তিন টেস্ট জয় করতে সমর্থ হয়। এরপূর্বে দলটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্ট জয় করেছিল। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা দল নিজ দেশে একাধারে আট টেস্ট অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়ে প্রথম পরাজয়বরণ করে।

একই সফরের ১০ জুন, ১৯৯৮ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২/৬০ ও ৫/৩০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১ ও ২৬* রান সংগ্রহ করেছিলেন। রমেশ কালুবিতরানা’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১৬৪ রানে পরাজিত হলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। এ সিরিজে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন। প্রসঙ্গতঃ টেস্টের ইতিহাসে পঞ্চম ঘটনা হিসেবে কোন দল প্রথম টেস্টে পরাজিত হলেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজ জয় করে নেয়। পূর্ববর্তী চার মৌসুমে এটি চতুর্থ ঘটনা ছিল ও প্রথম দল হিসেবে শ্রীলঙ্কা দুইবার এ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ড প্রথম দল হিসেবে প্রথম টেস্ট জয়ের পর তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে দুইবার পরাজয়বরণ করে।

লর্ডসে তিনি কখনো টেস্টে পাঁচ-উইকেটে সন্ধান পাননি। তবে, ১৯৯৮ সালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে ৫/৩৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে লর্ডসের লিমিটেড-ওভার্স অনার্স বোর্ডসে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করেন। এমিরেটস ট্রায়াঙ্গুলার টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত খেলায় নির্ধারিত দশ ওভারে এ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। নিক নাইট, মাইকেল অ্যাথার্টন, অ্যালেক স্টুয়ার্ট ও নাসের হুসাইন তাঁর শিকারে পরিণত হলে ইংল্যান্ড দল টসে জয়লাভ করে ২৫৬/৮ তুলতে সক্ষম হয়। জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে শ্রীলঙ্কা দল মারভান আতাপাত্তু’র অপরাজিত শতকের কল্যাণে ৪৭.১ ওভারে খেলা জয়সহ সিরিজ বিজয় নিশ্চিত করে। বল হাতে নিয়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখার কারণে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৮ সালে ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ঐ বছর অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৭ আগস্ট, ১৯৯৮ তারিখে ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্টে অংশ নেন। ষোল উইকেট দখল করে খেলায় ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ৭/১৫৫ ও ৯/৬৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে খেলায় ১৬ উইকেট দখল করেছিলেন। ২২০ রান খরচায় ১৬ উইকেট লাভের ঘটনাটি ঐ সময়ে টেস্টে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে চলে আসে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে এ সাফল্য পান। প্রথম ইনিংসে ৭/১৫৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়লেও স্বাগতিক দল ৪৪৫ রান সংগ্রহ করেছিল। তবে, সনথ জয়সুরিয়া’র দ্বি-শতক ও অরবিন্দ ডি সিলভা’র ১৫২ রানের কল্যাণে সফরকারীরা ১৪৬ রানে এগিয়ে যায়। চতুর্থ দিন স্ট্যাম্প ফেলার পূর্বে দুই উইকেট পান ও খেলাটি কার্যতঃ ড্রয়ের দিকে গড়ায়।

এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ৯/৬৫ বোলিং পরিসংখ্যানটি সর্বকালের সেরাদের তালিকায় সপ্তম স্থান অধিকার করে। কিন্তু, মুরালি দুর্নিবার ছিলেন ও একের পর এক ইংরেজ ব্যাটসম্যান তাঁর বোলিংয়ে আত্মসমর্পণ করতে থাকে। কেবলমাত্র অ্যালেক স্টুয়ার্টের রান-আউটের কারণেই ইনিংসের সবকটি উইকেট করায়ত্ত্ব করতে পারেননি। বেন হলিউককে বিদেয় করে ব্যক্তিগত ২০০তম টেস্ট উইকেট লাভ করেন। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পেয়ে ৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ৩৬ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে শেষ ঘণ্টায় পাঁচ ওভার খেলেই জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে পরাজয়বরণ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এরফলে, ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টেস্ট বিজয়ের সাথে শ্রীলঙ্কা দল নিজেদের জড়িত করে। ঐ সময়ে শ্রীলঙ্কা দলটি কেবলমাত্র একটি খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিল।

২৩ জানুয়ারি, ১৯৯৯ তারিখে রস এমারসন আবারও সন্দেহজনক বোলিংয়ের কারণে তাঁর প্রতিকূলে নো-বল ঘোষণা করেন। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে এ ঘটনার ফলে অর্জুনা রানাতুঙ্গা দল নিয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যান। চৌদ্দ মিনিট পর পুণরায় খেলা শুরু হয়।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে সনথ জয়সুরিয়া’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান সফরে যান। পুরো সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৫ মার্চ, ২০০০ তারিখে পেশাওয়ারে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ২২ রান সংগ্রহসহ ৪/৭৭ ও ৬/৭১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তন্মধ্যে, পঞ্চম দিনে আরশাদ খানকে বিদেয় করে হ্যাট্রিক পূর্ণ করেন। তাঁর অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীতে সফরকারীরা ৫৭ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ১২ মার্চ, ২০০০ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১৪ ও ৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। ৪/৮৯ ও ৪/১০৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ইনজামাম-উল-হকের অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২২২ রানে জয় পেলেও শ্রীলঙ্কা দল ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। ৫০ রান সংগ্রহসহ ২৬ উইকেট দখল করে ওয়াকার ইউনুসের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

২০০০ সালে নিজ দেশে মঈন খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৪ জুন, ২০০০ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ১৮ ও ৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৫/১১৫ ও ৩/৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ওয়াসিম আকরামের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৫ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

২০০৪ সালে দুসরা বোলিংয়ে শুদ্ধতা আনয়ণে পরীক্ষার মুখোমুখি হন। স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ ডিগ্রি বেশী নিয়ে বোলিং করতেন। বিস্তৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে তাঁকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। তবে, বিরুদ্ধবাদীরা তাঁর অর্জনকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করা অব্যাহত রাখেন। এক পর্যায়ে টেলিভিশনেও সন্দেহবাদীদেরকে পুরো বিষয়টি তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছিলেন। ২৮ মার্চ, ২০০৪ তারিখে তাঁর বোলিং ভঙ্গীমার পুণরায় যাচাই করা হয়। ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড সন্দেহজনক বোলিংয়ের প্রতিবেদন পেশ করেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তাঁর দুসরা যথাযথ ছিল না বলে ক্রিস ব্রড অভিমত প্রকাশ করেন।

এপ্রিল, ২০০৪ সালে আর দুসরা প্রয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নেন। পার্থভিত্তিক ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বোলিং ভঙ্গীমা পরীক্ষা করা হয়। আইসিসি কার্যতঃ তাঁর দুসরাকে নিয়ম বহির্ভূত হিসেবে মতামত দেয়। স্পিন বোলারদের চেয়ে তিনি পাঁচ ডিগ্রী কনুঁই বাঁকিয়ে বল করতেন। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুসরা বোলিং না করার জন্যে তাঁকে নির্দেশনা দেয়। আইসিসি এ সিদ্ধান্তকে স্বাগতঃ জানায়।

অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী শ্রীলঙ্কা দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১১ বছর পর পুণরায় দলকে ঐ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায়ও বল হাতে নিয়ে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। গ্রুপ পর্বের গুরুত্বপূর্ণ খেলায় ভারতের বিপক্ষে ৩/৪১ লাভ করেন। ত্রিনিদাদে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় এ বোলিং পরিসংখ্যান তেমন না হলেও বিশ্বকাপে বেশ মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। ২৫৪ রানে জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে ৪৪/৩ থাকাকালীন বীরেন্দ্র শেওয়াগ বেশ লড়াকু ভঙ্গীমায় খেলেন। তবে, তিনি লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে দুসরা প্রয়োগ করতে থাকেন। স্লিপ অঞ্চলে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে শেওয়াগ ধরা পড়েন ও প্যাডে আঘাত লেগে এমএস ধোনিকে বিদেয় নিতে হয়। এভাবেই খেলাটি হাতছাড়া করে ভারত দল। এছাড়াও, দেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সফলতায় নিজেকে যুক্ত রেখেছেন।

ফেব্রুয়ারি, ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ২৬ উইকেট দখল করেন। ১৯.৮৪ গড়ে উইকেট সংগ্রহ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে জয় পায়। এরপর, আগস্ট, ২০০০ সালে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও এ মহান ক্রিকেটার স্বীয় প্রতিভা বিকাশে সোচ্চার ছিলেন। গলেতে অনুষ্ঠিত টেস্টে ৬/৮৭ ও ৭/৮৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে দুই ইনিংসে এগারো ব্যাটসম্যানের প্রত্যেকেই কমপক্ষে একবার মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। তিন টেস্ট নিয়ে গড়া এ সিরিজেও তিনি ১৮.৪৬ গড়ে আরও একবার ২৬ উইকেট দখল করেন। ভারত ও অস্ট্রেলিয়া ছাড়া প্রত্যেক দেশের বিপক্ষে টেস্টে প্রতি ৩০ বলেরও কমে উইকেট পেয়েছেন। ভারত, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শতাধিক টেস্ট উইকেট লাভ করেছেন।

২৭ অক্টোবর, ২০০০ তারিখে ওডিআইয়ে বিশ্বের সেরা বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। শারজায় ভারতের বিপক্ষে ৭/৩০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে তৎকালীন সেরা বোলিং বিশ্লেষণ করেন। পরবর্তীকালে ওডিআইয়ে এটিই তাঁর ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান হিসেবে চিত্রিত হয়ে যায়। ৩০ ডিসেম্বর, ২০০০ তারিখে বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় তারকা বোলার ডেনিস লিলি’র পর দ্বিতীয় স্থানে নিজেকে দাঁড় করান। কিংসমিডে নিজস্ব ৫৮তম টেস্ট ও সিরিজের প্রথম টেস্টে শন পোলককে বিদেয় করে এ সাফল্য পান। কেবলমাত্র ডেনিস লিলি ৫৫ টেস্টে অংশ নিয়ে ৩০০ উইকেট লাভের মাইলফলকে তাঁর চেয়ে শীর্ষে ছিলেন।

২০০১ সালে নিজ দেশে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২২ আগস্ট, ২০০১ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেন। ৫ ও ৬৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, নিজস্ব ৬৭তম টেস্টে প্রথমবারের মতো অর্ধ-শতকের সন্ধান পান। এরফলে, ১৯৯০-৯১ মৌসুমে অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নয় নম্বর অবস্থানে থেকে গ্রায়েম লেব্রয়ের সংগৃহীত ৭০* রানের শ্রীলঙ্কান রেকর্ডের পর নিজেকে দ্বিতীয় স্থানে নিয়ে যান। এ অবস্থানে থেকেই ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে কলম্বোর এসএসসিতে পূর্বেকার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩৯ রান ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন।

এ পর্যায়ে দ্বিতীয় ইনিংসে রুচিরা পেরেরা’র সাথে দশম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি গড়ে ভারতের বিপক্ষে সেরা জুটির রেকর্ড গড়েন। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে নাগপুরে অশোকা ডি সিলভা ও রুমেশ রত্নায়েকে’র গড়া পূর্বেকার ৪৪ রানের রেকর্ড ম্লান করে দেন। তবে, ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে হাসান তিলকরত্নে ও সজীবা ডি সিলভা’র গড়া ৭৩ রানের জাতীয় রেকর্ড অল্পের জন্যে ভাঙ্গতে পারেননি। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৬২ ও ২/৯৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, প্রতিপক্ষীয় দলনায়কের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ২৯ আগস্ট, ২০০১ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্ট খেলেন। ৮/৮৭ ও ৩/১০৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর এ বোলিং সাফল্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ৭৭ রানে পরাজিত হলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। এছাড়াও, এ সিরিজে ৮০ রান সংগ্রহসহ ২৩ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

একই বছর নিজ দেশে নাঈমুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০১ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় খেলায় অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৫/১৩ ও ৫/৯৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩৭ রানে জয় পায়। মোহাম্মদ আশরাফুলের সাথে যৌথভাবে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে কার্ল হুপারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৩ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৬/১২৬ ও ৫/৪৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

৪ জানুয়ারি, ২০০২ তারিখে চামিণ্ডা ভাসের কারণে দূর্লভ অর্জন করা থেকে বঞ্চিত হন। ক্যান্ডি টেস্টে সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দিনে নয় উইকেট লাভ করেন। তবে, হেনরি ওলোঙ্গাকে দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে চামিণ্ডা ভাস বিদেয় করলে ইনিংসের সবকটি উইকেট লাভ করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে ৯/৫১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪/৬৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এরফলে, ১৫ টেস্ট কম খেলে রিচার্ড হ্যাডলি’র রেকর্ডসংখ্যক দশবার খেলায় দশ উইকেট দখলের সমকক্ষ হন। ১৫ জানুয়ারি, ২০০২ তারিখে নিজস্ব ৭২তম টেস্টে অংশ নিয়ে ৪০০ উইকেট লাভের দ্রুততম মাইলফলক স্পর্শ করেন। গলেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে হেনরি ওলোঙ্গাকে বিদেয় করে এ সাফল্য পান।

২০০২ সালে নিজ দেশে খালেদ মাসুদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ২১ জুলাই, ২০০২ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৫/৩৯ ও ৫/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ বোলিং দাপটে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৯৬ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

১৯৯০-এর শেষদিকে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র ছত্রচ্ছায়ায় নিজেকে মেলে ধরতে প্রয়াস চালান। এক সময়ে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেটের চেয়ে বেশী শিকারে তিন টেস্টের প্রয়োজন পড়তো। বয়সের সাথে সাথে কিছুটা আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকতে ও বিশ্বব্যাপী শুভাকাঙ্খীদের মন জয়ে সচেষ্ট হন। ২০০৪ সালে সুনামীর কবলে পড়ে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কান উপকূলের পুণর্গঠনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। বিপর্যয়ের কবলে পড়া এলাকায় প্রথম স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দেন। গৃহহীনদের জন্যে ১০২৪টি বাড়ী নির্মাণ করেন, ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তাকল্পে অগ্রসর হন। ঐ সময়ে জাতিগত দাঙ্গায় একমাত্র তামিল হিসেবে দেশের যে-কোন প্রান্তে একমুখী শক্তিতে পরিণত করেন। দলীয় সঙ্গীদের সহায়তায় নিজেকে সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত করেন। এভাবেই বল হাতে নিয়ে গল্পের অপর অংশে বীর হিসেবে ভূমিকা রাখেন। উইজডেন কর্তৃক ১৯৯৯ সালে বর্ষসেরা ক্রিকেটার ও ২০০৬ সালে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন।

২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে মাইকেল ভনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২ ডিসেম্বর, ২০০৩ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৩৮ ও ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৭/৪৬ ও ৪/৪৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর প্রাণান্তঃকর প্রয়াস চালানো স্বত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই মৌসুমে নিজ দেশে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১৬ মার্চ, ২০০৪ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৪/৪৮ ও ৫/১৭৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৪৩ ও ৪* রান সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তবে, শেন ওয়ার্নের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে সফরকারীরা ২৭ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ২৪ মার্চ, ২০০৪ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৫/১২৩ ও ৩/৯৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৮ ও ০* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ড্যারেন লেহমানের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে সফরকারীরা ১২১ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।

২০০৫ সালে নিজ দেশে শিবনারায়ণ চন্দরপলের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৩ জুলাই, ২০০৫ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ১/৫৬ ও ৬/৩৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৩৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, চামিণ্ডা ভাসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কারণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ২২ জুলাই, ২০০৫ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১৮* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/৩৭ ও ৮/৪৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, কুমার সাঙ্গাকারা’র অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৪০ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

২০০৫-০৬ মৌসুমে মারভান আতাপাত্তু’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ১০ ডিসেম্বর, ২০০৫ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৭/১০০ ও ১/১১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৯ ও ২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অনিল কুম্বলে’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৮৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

একই মৌসুমে নিজ দেশে ইনজামাম-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৩ এপ্রিল, ২০০৬ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১* ও ০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ৫/৩৯ ও ০/৪৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছিলেন। তবে, মোহাম্মদ আসিফের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

২০০৭ সালে নিজ দেশে মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হয়েছিলেন। ১১ জুলাই, ২০০৭ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। এ টেস্টে দারুণ খেলেন। ৬/২৮ ও ৬/৫৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ বোলিংয়ে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৯৩ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, এ সিরিজে ২৬ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

একই মৌসুমে নিজ দেশে মাইকেল ভনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১ ডিসেম্বর, ২০০৭ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৬/৫৬ ও ৩/৮৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, কুমার সাঙ্গাকারা’র অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় স্বাগতিকরা ৮৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

২০০৮-০৯ মৌসুমে মাহেলা জয়াবর্ধনে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে বাংলাদেশ গমন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০০৮ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৬/৪৯ ও ৪/১৪১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, সাকিব আল হাসানের প্রাণান্তঃকর প্রয়াস চালানো সত্ত্বেও সফরকারীরা ১০৭ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

২০১০ সালে গলেতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট শেষে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ১৮ জুলাই, ২০১০ তারিখে ঐ টেস্ট শুরুর পূর্বে তিনি ৭৯২ উইকেট সংগ্রহ করে শীর্ষ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন। অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা মন্তব্য করেন যে, যদি মুরালি ৮ উইকেট লাভ করতে পারেন, তাহলে শ্রীলঙ্কা দল জয়ী হবে। স্বাগতিক দলের ৫২০/৮ ইনিংস ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় দিন বৃষ্টির কারণে মাঠে গড়ায়নি। তৃতীয় দিনের শেষ অধিবেশনে ভারত মাঠে নামে। চতুর্থ দিন তিনি নিজস্ব ৬৭তম ও সর্বশেষ পাঁচ-উইকেটের সন্ধান পান। ২৭৬ রানে প্রতিপক্ষের ইনিংস গুটিয়ে গেলে ফলো-অনের কবলে পড়ে। এ পর্যায়ে ১৮১/৫ হয়।

শেষ দিন সকালে লাসিথ মালিঙ্গা রিভার্স সুইং ইয়র্কার সহযোগে এমএস ধোনিকে বোল্ড করলে দৃশ্যতঃ ৮০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। প্রজ্ঞান ওঝা’র ব্যাটের কিনারা স্পর্শ করে মাহেলা জয়াবর্ধনে’র বিশ্বস্ত হাতে তালুবন্দী হয়। এ পর্যায়ে ৭৭তমবারের মতো “কট জয়াবর্ধনে বোল্ড মুরালি” টেস্ট স্কোরশীটে লিখিত হয়ে যায়। রিচার্ড হ্যাডলি’র ন্যায় শেষ বলে উইকেট নিয়ে টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি ঘটান। ৮০০ উইকেট নিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেন। শেষ ইনিংসে শ্রীলঙ্কা দল মাত্র ১৪.১ ওভারে ৯৫ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে ও ১০ উইকেটে জয় পায়।

এরপর, ২০১১ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা শেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটের টি২০ লীগসহ বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট অঙ্গনে যুক্ত থাকেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের পঞ্চম আসরে ব্যাঙ্গালোরের সাথে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন ও সপ্তম আসরেও খেলেন। এরপূর্বে বিলুপ্ত দল কোচির সাথে খেলেছিলেন।

টেস্ট ও ওডিআইয়ে বিস্ময়সূচক অনেকগুলো রেকর্ডের সাথে স্বীয় নামকে যুক্ত রেখেছেন। সব মিলিয়ে টেস্টে ২২বার খেলায় দশ উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। খেলোয়াড়ী জীবনের সবসময়ই আম্পায়ার, সাবেক ক্রিকেটারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। এমনকি অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বোলিংকে অবৈধরূপে চিত্রিত করে গেছেন। এক যুগেরও অধিক সময় শ্রীলঙ্কার বিজয়ে নিজেকে জড়িয়েছিলেন।

টেস্টে মাত্র ২৩০ ইনিংসে ৮০০ উইকেট লাভের পাশাপাশি একদিনের আন্তর্জাতিকে ২৩.০৮ গড়ে ৫৩৪ উইকেট দখল করেছেন। টেস্টে ২২.৭২ গড়ে ও ৫৫ স্ট্রাইক রেটে উইকেট পেয়েছেন। খেলায় অংশগ্রহণের দিক দিয়ে দ্রুততম ৩৫০, ৪০০, ৪৫০, ৫০০, ৫৫০, ৬০০, ৬৫০ ও ৭০০ উইকেটসহ ৭৫০ ও ৮০০ উইকেট লাভ করেছেন।

খেলোয়াড়ী জীবনের শুরু থেকেই উইকেটের প্রসঙ্গে তাঁর নাম চলে আসে। প্রথম তিন বছরে ২৩ টেস্টে ৩৪ গড়ে ৮১ উইকেট পান। তবে, এরপর থেকেই বিস্ময়কর পরিবর্তন সাধিত হয়। প্রতি খেলা থেকে উইকেট সংগ্রহের হার ছয়ে দাঁড়ায় ও পরবর্তীতে ২০০০ সালে এ হার ছিল সাত। জানুয়ারি, ২০০০ থেকে ডিসেম্বর, ২০০৮ সাল পর্যন্ত তাঁর স্বর্ণালী সময় ছিল। মাত্র ৭৬ খেলায় ১৯.৭৬ গড়ে ৫৩৯ উইকেট পেয়েছিলেন। টেস্টে তাঁকে সেরা বোলার হিসেবে পরিচিতি ঘটানো হলেও কিছু কঠিন সময় অতিবাহিত করেছেন বিশেষতঃ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অন্যান্য দলের বিপক্ষে ২৪-এর কম গড়ে উইকেট পেলেও অস্ট্রেলীয়দের বিপক্ষে ৩২.৫৯ গড়ে উইকেট পেয়েছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।