২২ নভেম্বর, ১৯৪৩ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের গুজরাতের জুনাগড় এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও রেফারি। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
পাকিস্তানের সেরা অধিনায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুম থেকে ১৯৭৯-৮০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে করাচী ও পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নর্দাম্পটনশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, শ্রপশায়ারের পক্ষে খেলেছেন। ওয়াজির মোহাম্মদ, রইস মোহাম্মদ, হানিফ মোহাম্মদ, সাদিক মোহাম্মদ ও মুশতাক মোহাম্মদ – এ পঞ্চ মোহাম্মদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রতিভাবান ছিলেন না তিনি। তাঁরা ভারতের পশ্চিমাংশ থেকে করাচীতে অভিবাসিত হন। তবে, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বাধিক শতক হাঁকিয়েছেন। এমনকি হানিফ মোহাম্মদের চেয়েও বেশী করেছেন। মূলতঃ কাউন্টি ক্রিকেটে নর্দাম্পটনশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগের ফলে তা সম্ভবপর হয়েছিল।
এছাড়াও, হানিফ মোহাম্মদের কাছ থেকে শেখা স্ট্রোক রিভার্স-সুইপ খেলার অধিকারীদের অন্যতম ছিলেন। বোলার হিসেবে তিনি লেগ-ব্রেক, গুগলি ও ফ্লিপার ছুঁড়তেন। এছাড়াও, ভ্রাতৃসকলের চেয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট দখল করেছিলেন। ১৯৬৮ সালে তাৎক্ষণিক নিবন্ধন ব্যবস্থা প্রবর্তনের পূর্বে নর্দান্টস কর্তৃপক্ষ তাঁকে দলে খেলার জন্যে দুই বছর অর্থ দিতে চেয়েছিল। তবে, তাঁর বয়স ও সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট শতকের দাবীদার হওয়ায় ক্ষতির শিকার হন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মোহাম্মদ আশরাফুল তাঁর এ রেকর্ড ভঙ্গ করে নিজের করে নেন। এছাড়াও, অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্নের কারণে দুই বছর নষ্ট হয়ে যায়।
১৯৫৯ থেকে ১৯৭৯ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সব মিলিয়ে ৫৭ টেস্ট থেকে ৩৯ গড়ে ৩৬৪৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, কার্যকর লেগ-স্পিন বোলিং করে ২৯ গড়ে ৭৯ উইকেট দখল করেছিলেন। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে নিজ দেশে জেরি আলেকজান্ডারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৬ মার্চ, ১৯৫৯ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ০/৩৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৪ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ইনিংস ও ১৫৬ রানে জয় পেলেও স্বাগতিকরা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
১৯৭২-৭৩ মৌসুমে ইন্তিখাব আলমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১৪৭ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৭৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ডেভিড ও’সালিভানের উইকেট লাভ করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা সাফল্য ছিল ৪/৮০। এছাড়াও, প্রথমবারের মতো পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি ২/১৫ ও ৫/৪৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ইনিংস ও ১৬৬ রানের ব্যবধানে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে নিজ দেশে গ্লেন টার্নারের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৩ অক্টোবর, ১৯৭৬ তারিখে হায়দ্রাবাদের নিয়াজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে প্রথম ইনিংসে ১০১ রানে রান-আউটে বিদেয় নেন। একই টেস্টে স্বীয় ভ্রাতা সাদিক মোহাম্মদের ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললে ইয়ান চ্যাপেল ও গ্রেগ চ্যাপেলের পর দ্বিতীয় ভ্রাতৃদ্বয় হিসেবে একই ইনিংসে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। এছাড়াও, ০/১৯ ও ১/১৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। এরফলে, ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমের পর নিজ দেশে প্রথম সিরিজ জয় করে পাকিস্তান দল।
১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে পাকিস্তানী দলকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গমন করেছিলেন। ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় ১০ ও ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৪/৬০ ও ৫/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ১২৮ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২৪ মার্চ, ১৯৭৯ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ২৩ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পেলে অমিমাংসিত অবস্থায় সিরিজটি শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্ট ছিল।
দুই দশকব্যাপী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। কয়েকটি দূর্ভাগ্যজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার পূর্বে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পরও পাকিস্তানী ক্রিকেটের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলকে চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান।
‘মুশতাক মোহাম্মদ – ইনসাইড আউট’ শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক অ্যালান বর্ডার ১৯৯৩ সালে তাঁকে অ্যাশেজ টেস্টের ফলাফল আনয়ণে ভূমিকা রাখতে বলেছিলেন। এরপর অবশ্য মে, ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের বিপক্ষে দলের পরাজয়ে সন্দেহের কবলে পড়ে।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর বর্তমানে তিনি বার্মিংহামে বসবাস করছেন। তাঁর ভ্রাতৃষ্পুত্র শোয়েব মোহাম্মদ পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছে। ১৯৬৩ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার সম্মাননায় ভূষিত হন।