Skip to content

সৈয়দ মুশতাক আলী

1 min read

১৭ ডিসেম্বর, ১৯১৪ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী ও পরিপাটি অবস্থায় খেলতে নামতেন। ভারতের শুরুরদিকের ক্রিকেটারদের অন্যতম ছিলেন। অনেকাংশেই তিনি বলিউডের নায়কের ন্যায় ছিলেন। ক্রিজে তাঁর আগ্রাসী ভূমিকা পরবর্তী যুগে সন্দীপ পাতিলের ন্যায় তারকা ক্রিকেটারদের মাঝে প্রবাহিত হয়েছিল। সত্তুর বছর বয়সেও চিরসবুজতা ধরে রেখেছিলেন। জনৈক পুলিশ ইন্সপেক্টরের পুত্র ছিলেন। খুব দ্রুত নিজেকে তেজস্বী ব্যাটসম্যানে পরিণত করলেও খুব কমই বোলারদের সমীহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।

১৯৩০-৩১ মৌসুম থেকে ১৯৬৩-৬৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মধ্য ভারত, গুজরাত, হোলকার, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মুসলিম ও উত্তরপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৩৪ থেকে ১৯৫২ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ১১ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে নিজ দেশে ডগলাস জার্ডিনের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ৫ জানুয়ারি, ১৯৩৪ তারিখে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সি.এস. নায়ড়ু, দিলাবর হোসেন ও মোরাপ্পাতাম গোপালনের সাথে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুটায় বামহাতি স্পিনার হিসেবে সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন। তবে, উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান দিলাবর হোসেনের আঘাতের কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে উদ্বোধনে নেমেছিলেন। অভিষেক টেস্টে তেমন সুবিধে করতে না পারলেও প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিনের উইকেট লাভ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও সফরকারীরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

তিন বছর পর নিজস্ব সেরা খেলা উপহার দেন। বিদেশের মাটিতে প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে শতক হাঁকানোর কৃতিত্বের অধিকারী হন। ১৯৩৬ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ১১২ রান তুলেছিলেন। এক অধিবেশন সম্পন্ন হবার পূর্বেই শতকটি হাঁকান। তাঁর এ শতকটি উইজডেন এশিয়া ক্রিকেট পরিচালিত ক্রিকেটার ও ক্রিকেট লেখকদের ভোটে সর্বকালের সেরা শতকের তালিকায় অষ্টাদশ অবস্থানে চলে আসে। বিজয় মার্চেন্ট ১১৪ রান তুলে বিদেশে দ্বিতীয় ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শতরান করেন। তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরন অনেকাংশে দায়সারা গোছের ছিল ও তিনি কখনো পায়ের ব্যবহারে ভীত হতেন না। ওল্ড ট্রাফোর্ডে খেলাকালীন তিনি পুণঃপুণ দ্রুতগামী বোলারদের বিপক্ষে চড়াও হন ও তাঁদের ছন্দপতন ঘটান। এর পূর্বে মুশতাক আলী ও বিজয় মার্চেন্ট একত্রে পাঁচ টেস্টে ছয়বার উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন।

প্রথম ইনিংসে ১৩ রান করে আল্ফ গোভারের বলে বিজয় মার্চেন্টের ব্যাট স্পর্শে মিড-অনে চলে গেলে আর্থার ফাগ স্ট্যাম্প ভেঙ্গে ফেললে দূর্ভাগ্যজনক রান-আউটের শিকার হন। দ্বিতীয় দিনের শেষ অধিবেশনে গাবি অ্যালেন, আল্ফ গোভার, ওয়াল্টার হ্যামন্ড ও হ্যাডলি ভেরিটি’র ন্যায় তারকা বোলারদের আক্রমণ প্রতিহত করে বিজয় মার্চেন্টের সাথে বিনা উইকেটে ১৯০ রান তুলেন। পরদিন সকালে তৎকালীন ৩২৩ রানের বিশ্বরেকর্ডের দিকে দৃষ্টিপাত করলেও ২০৩ রানে তাঁদের মধ্যকার জুটি ভেঙ্গে যায়।

দশ বছর পর ইংল্যান্ডের মাটিতে বিজয় মার্চেন্টের সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমেছিলেন। এ জুটি ওল্ড ট্রাফোর্ডে ১২৪ ও ওভালে ৯৪ রান তুলেছিল। তাঁদের মধ্যকার জুটি মাত্র পরবর্তী চার টেস্ট পর্যন্ত টিকেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে-পিছে সাত ইনিংস থেকে তাঁরা ৮৩.৪৩ গড়ে রান সংগ্রহ করেছিলেন।

তবে, ক্রিকেট প্রশাসকদের সহযোগিতা পাননি। তিনি হয়তোবা আরও টেস্ট খেলতে পারতেন। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিমাতাসূলভ আচরণ পান। কলকাতায় দর্শকেরা ‘মুশতাক না, টেস্ট না’ বলে আওয়াজ তুলে। যুদ্ধের অব্যবহিত পর অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস দলের বিপক্ষে প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় তাঁকে রাখা হয়নি।

১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে ডন ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়ার অজি দলের বিপক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। সহ-অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে অস্ট্রেলিয়া গমনের পূর্বে স্বীয় ভ্রাতার দেহাবসানের পর নিজেকে এ সফর থেকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। শোকানুষ্ঠান পালনের পর তিনি অস্ট্রেলিয়া যাবার প্রস্তুতি নেন। হোলকারের মহারাজা ভ্রমণের ব্যয়ভার বহনের প্রস্তাব দিলেও বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাতে সায় দেয়নি। পরবর্তী ১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে দূর্দান্ত খেলেন। ইডেন গার্ডেন্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৪ ও ১০৬ রান তুলেন।

এরপর, ১৯৫১-৫২ মৌসুমে নিজ দেশে ডোনাল্ড কারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের বিপক্ষে আর একটিমাত্র টেস্টে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রায় ২০ বছর ধরে টেস্টে অংশ নেন ও ভারতের প্রথম টেস্ট বিজয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। ৩৭ বছর বয়সেও নিজের কার্যকারীতা প্রকাশ করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। তাঁর দল ইনিংস ও ৮ রানের ব্যবধানে বিজয়ী হয়। ঐ সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে শেষ হয়। নিজস্ব একাদশ ও সর্বশেষ টেস্টে ২২ রান তুললেও উদ্বোধনী জুটিতে পঙ্কজ রায়ের সাথে কার্যকর ৫৩ রান সংগ্রহ করেন।

১৯৫২-৫৩ মৌসুমে ইংল্যান্ডে ভারতের শোচনীয় ফলাফলের সিরিজের জন্যে তাঁকে মনোনীত করা হয়নি। দীর্ঘকালীন খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৬৩-৬৪ মৌসুম পর্যন্ত ৪৮ বছর বয়সেও খেলোয়াড়ী জীবন অব্যাহত রাখেন। ডিফেন্স ফান্ডের খেলায় কয়েকজন টেস্ট বোলারকে মোকাবেলা করে ৪১ রান তুলেন। রঞ্জী ট্রফিতে অনেকগুলো খেলায় হোলকারের পক্ষে খেললেও মাত্র ১১ টেস্টে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। ২২৬টি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়ে ৩৫.৯০ গড়ে ১৩২১৩ রান এবং বামহাতে স্পিন বোলিং করে ২৯.৩৪ গড়ে ১৬২ উইকেট দখল করেছিলেন।

শেষদিকে, শীর্ণকায়, দর্শনীয়, বক্তা হিসেবে ভারতের ক্রিকেট মৌসুমগুলো অনেকগুলো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা যেতো। ১৯৬৪ সালে ক্রিকেটে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। দুই পুত্র ও দুই কন্যাকে রেখে যান। তন্মধ্যে, গুলরেজ আলী ও আব্বাস আলী – পুত্রদ্বয় এবং নাতি – আব্বাস আলী প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৮ জুন, ২০০৫ তারিখে ৯০ বছর ১৮৩ দিন বয়সে ইন্দোরে সকালে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁর দেহাবসান ঘটে। এরফলে, ভারতের স্বাধীনতা লাভের পূর্বে ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী সর্বশেষ খেলোয়াড় ছিলেন। মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত তিনি ভারতের বয়োজ্যেষ্ঠ জীবিত ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।