২৮ জুন, ১৯৭০ তারিখে পাঞ্জাবের শাহিওয়াল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। পাকিস্তানের পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন।
বুদবুদপূর্ণ, গোলকার গড়নের লেগ-স্পিনার। গুগলিতে দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। আবদুল কাদিরকে স্বীয় পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রেখেন। বোলিংয়ের ধরন অনেকাংশেই তাঁর অনুরূপ। দলে আবদুল কাদিরের পরিবর্তে তাঁর অন্তর্ভুক্তি ঘটে। লেগ-স্পিনে পুর্ণ শক্তিমত্তা সহযোগে বৈচিত্র্যতা এনে দলের বিজয়ে ভূমিকা রাখতেন। নিজের সেরা সময়ে শেন ওয়ার্নের চেয়ে কোন অংশেই কম ছিলেন না। তবে, খেলার গতিধারা ও উইকেটে ব্যাটসম্যানের সমীহ আদায়ে শেন ওয়ার্নের তুলনায় নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন মূলতঃ খাঁটো আকৃতির বাহুর কারণে। ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ছিলেন।
‘মুশি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুম থেকে ২০০৮ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে ইসলামাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, লাহোর, লাহোর বাদশাজ, মুলতান, পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংক, পেশাওয়ার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, রেডকো পাকিস্তান লিমিটেড ও ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেড এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেট, সারে ও সাসেক্স দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জানুয়ারি, ১৯৮৭ সালে মুলতানের পক্ষে তাঁর প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনা ঘটে। সুক্কুরের বিপক্ষে ঐ খেলার দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেট পেয়েছিলেন।
১৯৮৯ থেকে ২০০৩ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৫২ টেস্ট ও ১৪৪টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২৩ মার্চ, ১৯৮৯ তারিখে শারজায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূত্রপাত ঘটান। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১৯ জানুয়ারি, ১৯৯০ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তেমন সুবিধে করতে পারেননি। ০ ও ৪ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৬৯ ও ১/৭২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাসত্ত্বেও, পরবর্তীকালে বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। তবে, ওয়াসিম আকরামের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কারণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায়।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২ জানুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩/৮৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২ ও ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ওয়াসিম আকরামের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩৩ রানে পরাজিত হয়।
২ অক্টোবর, ১৯৯৪ তারিখে ইনজামাম-উল-হকের সাথে জুটি গড়ে পাকিস্তান দলকে নাটকীয় জয় এনে দেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁরা দশম উইকেটে ৫৭ রানের নিরবচ্ছিন্ন জুটি গড়ে এ কীর্তিগাঁথা রচনা করেন। এ পর্যায়ে দলের সংগ্রহ ২৫৮/৯ ছিল। চতুর্থ ইনিংসে তাঁদের জুটি তৎকালীন রেকর্ড ছিল। পরবর্তীকালে ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বেন স্টোকস – জ্যাক লিচ জুটি ৭৬* ও একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কুশল পেরেরা – বিশ্ব ফার্নান্দো এ অবস্থানে ৭৮* রানের জুটি গড়ে রেকর্ড গড়েন।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৩/১১৫ ও ৭/৫৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৫ ও ২৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলে সফরকারীরা ১৬১ রানে জয় তুলে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৬ সালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে দারুণ খেলেন। লর্ডসে অনুষ্ঠিত খেলায় তিনি ৫/৫৭ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান ও দলের বিজয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন। ৪০৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ইংল্যান্ড দল ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুসসমৃদ্ধ পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হয়। তবে, তিনি বিশাল দায়িত্ব নিয়ে দলের কাঙ্খিত বিজয় এনে দেন। মাইকেল অ্যাথারটন, অ্যালেক স্টুয়ার্ট, গ্রায়েম থর্প, মার্ক ইলহাম ও অ্যালান মুলালি’র গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে নিজ দেশে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৮ নভেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২৭ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৪২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে বিএ ইয়ংয়ের প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। বল হাতে নিয়ে ৬/৮৭ ও ২/৫২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, মোহাম্মদ জাহিদের অনবদ্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে কোর্টনি ওয়ালশের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৭ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে পেশাওয়ারে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ৫/৩৫ ও ৫/৭১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৯ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই মৌসুমে আমির সোহেলের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৩/৭১ ও ৬/৭৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২ ও ২০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসামান্য বোলিং নৈপুণ্যে ঐ খেলায় তাঁর দল ২৯ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো জয়লাভ করে ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
পাকিস্তান ক্রিকেটের খামখেয়ালীপণায় উপেক্ষার শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। তাসত্ত্বেও, তাঁর খেলার প্রতি অনুরাগ বেশ গুরুত্বতা বহন করেন। কিন্তু, ২০০০-০১ মৌসুমে খেলায় ছন্দ হারালে এক পর্যায়ে তাঁকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল।
২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৪ অক্টোবর, ২০০৩ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/৪৮ ও ০/৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৬ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা সিরিজে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
নিজ দেশের চেয়ে বিদেশের মাটিতেই সেরা নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছিলেন। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অধিক সফল ছিলেন। ইমরান খানের অধিনায়কত্বে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা বিজয়ে অন্যতম ভূমিকা রেখেছিলেন। গ্রায়েম হিককে গুগলিতে বিদেয় করেন।
২০০৩ সালে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম বোলার হিসেবে এক ইংরেজ মৌসুমে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরফলে, সাসেক্সের ইতিহাসের প্রথম চ্যাম্পিয়নশীপ শিরোপা বিজয়ে স্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। এরপর, ২০০৬ ও পরের মৌসুমেও একই সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তাসত্ত্বেও, কাউন্টি দলের সাথেই নিজেকে জড়িয়ে রাখেন ও ২০০৮ সালে অনুমোদনবিহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে অংশ নেয়ার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।
১৯৯৭ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। এছাড়াও, ২০০৩ সালে পিসিএ কর্তৃক বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান।
ক্রমাগত হাঁটুর আঘাতের কারণে ২০০৮ সালের শেষদিকে অনেকটা জোরপূর্বক প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য হন। এর পরপরই ইসিবি কর্তৃক ইংল্যান্ডের স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। ২০১২ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে সারে ক্লাবের বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৪ সালে পাকিস্তান দলের নতুন কোচ ওয়াকার ইউনুসের অধীনে বোলিং পরামর্শক হিসেবে মনোনীত হন।