২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৯১ তারিখে কক্সবাজারে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। আকর্ষণীয় ভঙ্গীমায় বামহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে কার্যকর বামহাতি স্পিনার হিসেবে আবির্ভূত হন। বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
খর্বাকায় ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ‘সৌরভ’ ডাকনামে পরিচিত মমিনুল হক, মুমিনুল সৌরভ নামেও পরিচিতি পেয়েছেন। ২০০৮-০৯ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রেখেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে চট্টগ্রাম বিভাগ, ঢাকা বিভাগ ও পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব, ঢাকা প্লাটুন, গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম, রাজশাহী কিংস, সিলেট রয়্যালস, বরিশাল বুলস ও সিলেট সুপার স্টার্সের পক্ষে খেলেছেন।
বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আকস্মিকভাবে তাঁর উত্থান ঘটে। তাঁর খেলার ধরন অনেকাংশেই পাঁচ-দিনের ক্রিকেটের উপযোগী। বয়সের সাথে সাথে নিজেকে সীমিত-ওভারের খেলায় মানিয়ে নেন। এরপর থেকে ক্রিকেটের সকল স্তরে খেলছেন। তবে, দুই বছরের অধিক সময়ে খেলার মান মাঝারিমানে পরিণত করেন। বিপিএলে প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে জন্ম ও উপকূলীয় শহরের স্বল্পসংখ্যক ক্রিকেটারদের অন্যতম। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ক্রিকেট বিষয়ে পড়াশুনো করেছেন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নির্ভরযোগ্য বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেন। ১৯ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে ঢাকা বিভাগের সদস্যরূপে চট্টগ্রাম বিভাগের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। পরের বছর অর্থাৎ ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে শীর্ষ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন।
২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার জন্যে মনোনীত হন। ঐ বছরের শেষদিকে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে যুক্ত হন। ২০১১ সালে ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমি থেকে স্নাতকধারী হন। ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যাপক রানের ফল্গুধারা প্রবাহিত রাখেন। ফলশ্রুতিতে, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ গমনার্থে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সদস্যরূপে মনোনয়ন লাভ করেন। ঐ সফরের প্রথম খেলায় ১৫০ রান তুলেন। প্রথম-শ্রেণীর খেলায় পরপর শতক হাঁকানোর স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় দলে খেলার আমন্ত্রণ পান। এরফলে, পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত করা হয়। তবে, খেলার সুযোগ পাননি।
২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। নভেম্বর, ২০১২ সালে সাকিব আল হাসান আঘাতের কবলে পড়লে দল নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক আহুত হন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজকে ঘিরে প্রথম দুইটি খেলায় অংশ নেন।
২০১২-১৩ মৌসুমে মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্বে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ৮ মার্চ, ২০১৩ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে এনামুল হকের সাথে একযোগে অভিষেক ঘটে তাঁর। দলনায়কের অসামান্য দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়। প্রথম ইনিংসে ৫৫ রানের অর্ধ-শতক হাঁকান। তিন ইনিংস থেকে ৫২ গড়ে ১৫৬ রান তুলে অভিষেক টেস্ট সিরিজ শেষ করেন।
২০১৩-১৪ মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৯ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৬৪ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে ঠিক ১০০ বলে টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেন। ১৮১ ও ২২* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/১০ ও ০/১০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, সোহাগ গাজী’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে আরও একটি শতক হাঁকান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও সুন্দর ক্রীড়াশৈলী অব্যাহত রাখেন। প্রথমটিতে ৫০ ও দ্বিতীয়টিতে শতরান করেন। তবে, ক্রিকেটে ক্ষুদ্রতর সংস্করণে তেমন সফলতা না পেলেও প্রথম একাদশে স্থায়ী আসন বজায় রাখেন।
নভেম্বর, ২০১৪ সালে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইনিংস খেলার দিক থেকে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০ রান সংগ্রহ করেন। এরজন্যে ২১ ইনিংস খেলেন। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। প্রথম দুই খেলায় অংশ নেন ও তেমন সুবিধে করতে না পারায় বাদ পড়েন। তবে, হিথ স্ট্রিকের অভিমত, তিনি ভবিষ্যতে দলকে নেতৃত্ব দিবেন।
২০১৭-১৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ তারিখে পচেফস্ট্রুমে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে টি বাভুমাকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ১/১০। খেলায় তিনি ০/১৫ ও ৩/২৭ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৭৭ ও ০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ডিন এলগারের অনবদ্য ব্যাটিং কৃতিত্বে সফরকারীরা ৩৩৩ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০২১-২২ মৌসুমে বাংলাদেশী দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১১ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ০ ও ৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৩৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রতিপক্ষীয় দলনেতা টম ল্যাথামের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১১৭ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
২০২৩-২৪ মৌসুমে নিজ দেশে ধনঞ্জয় ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কা দলের মুখোমুখি হন। নাজমুল হোসেন শান্ত’র অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ দলের সদস্যরূপে দুই টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে অংশ নেন। ২২ মার্চ, ২০২৪ তারিখে সিলেটে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৫ ও ৮৭* রান সংগ্রহ করেন। এ টেস্টে তাঁর দল ৩২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাভূত হয়। এরপর, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত টেস্টে ৩৩ ও ৫০ রানের ইনিংস খেললেও দলের পরাজয় রোধ করতে পারেননি। ঐ টেস্টে ১৯২ রানে পরাজিত হওয়াসহ ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায় তাঁর দল। তবে, এ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সাফল্য অর্জন করেন। ২৫ রানে পৌঁছানো অবস্থায় টেস্টে ৪০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
২০২৫ সালে নাজমুল হোসেন শান্তর’র অধিনায়কত্বে বাংলাদেশী দলের অন্যতম সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ২৫ জুন, ২০২৫ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২১ ও ১৫ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক ধনঞ্জয় ডি সিলভা’র শিকারে পরিণত হন। এছাড়াও, ০/৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, পথুম নিশাঙ্কা’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৭৮ রানে পরাজিত হলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।