| |

মোহসিন খান

১৫ মার্চ, ১৯৫৫ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

১৯৭০-৭১ মৌসুম থেকে ১৯৮৫-৮৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, করাচী, পাকিস্তান রেলওয়ে ও সিন্ধুর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় দলের পক্ষে খেলেছেন।

চিত্র জগৎ ও ক্রিকেটে ব্যাটিং – উভয় বিষয়েই নান্দনিকতার ছাঁপ তুলে ধরেছিলেন। তবে, অস্ট্রেলীয় বাউন্সি উপযোগী পিচে বেশ প্রভূত্ব দেখিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংস উদ্বোধনে নেমে সমসাময়িক ব্যাটসম্যানদের তুলনায় নিজেকে বেশ এগিয়ে রেখেছিলেন। মুদাসসর নজরের সাথে দীর্ঘদিনের উদ্বোধনী সহচর ছিলেন। উইকেটের অপর প্রান্তে অবস্থান করে মুদাসসর নজরের অপরিসীম ধৈর্য্য পর্যবেক্ষণ করতেন ও কিছু চমকপ্রদ স্ট্রোক খেলা উপহার দিতেন। এছাড়াও, ভিন্ন পরিবেশে পেস ও বাউন্সারের বিপক্ষেও নিজেকে মেলে ধরেছেন।

১৯৭৭ থেকে ১৯৮৬ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৪৮ টেস্ট ও ৭৫টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৬ মার্চ, ১৯৭৭ তারিখে অ্যালবিওনে অনুষ্ঠিত স্বাগতকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূচনা ঘটান। ১৯৭৭-৭৮ মৌসুম নিজ দেশে জিওফ বয়কটের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৮ জানুয়ারি, ১৯৭৮ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। দলের একমাত্র ইনিংসে ৪৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ফিল এডমন্ডসের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা খেলাটিকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যেতে সমর্থ হয় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৮১-৮২ মৌসুমে নিজ দেশে বান্দুলা বর্ণাপুরা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২২ মার্চ, ১৯৮২ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১০৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তবে, ইমরান খানের তোপে শ্রীলঙ্কা দল গুড়িয়ে যায়। ইমরান খানের খেলায় ১৪ উইকেট লাভে ইনিংস ও ১০২ রানে জয় পেয়ে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

১৯৮২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। লর্ডসে ২০০ রান তুলে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে জয় এনে দেন। ক্রিকেটের স্বর্গভূমিতে ৩৮৬ বল মোকাবেলান্তে ২৩টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের ভিত্তি স্থাপনে সচেষ্ট হন। ৭৬ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে জাভেদ মিয়াঁদাদকে সাথে নিয়ে ১৩.১ ওভারে সহজ বিজয় এনে দেন। বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, দূর্দান্ত শতকের কল্যাণে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে যুক্ত করেন।

১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। উপর্যুপরী টেস্টে শতরানের ইনিংস খেলেন। অ্যাডিলেডে ১৪৯ ও মেলবোর্নে ১৫৩ রান তুলেছিলেন। এরপূর্বে প্রথম পাকিস্তানী হিসেবে লর্ডসের মাঠে দ্বি-শতক হাঁকানোর কৃতিত্বের অধিকারী হন।

২৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৩ তারিখে মেলবোর্নে বক্সিং ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৫২ ও ৩ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ডেনিস লিলি’র শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। গ্রাহাম ইয়ালপের অসাধারণ দ্বি-শতক সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

একই মৌসুমে নিজে দেশে বব উইলিসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ৫৪ ও ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, ৩১ টেস্ট শেষে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, আব্দুল কাদিরের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে পাকিস্তান দল নাটকীয়ভাবে তিন উইকেটে জয়লাভ করেছিল। এরফলে, নিজ দেশে তেরোবার প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৮৬-৮৭ মৌসুম নিজ দেশে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২০ নভেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা ইমরান খানের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়েছিল।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রীনা রায়কে বিয়ে করেন ও বোম্বে চলে যান। সেখানে চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রের পর্দায় নিজেকে উপস্থাপন না করলে হয়তোবা ক্রিজের তারকা হতেন। এভাবে অকালে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে মার্চ, ২০১০ সালে পাকিস্তান দলের প্রধান দল নির্বাচক হিসেবে মনোনীত হন। এছাড়াও, লাহোরভিত্তিক ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে পিসিবি’র ফাস্ট-ট্র্যাক কোচিং প্রোগ্রামে যুক্ত হয়েছিলেন। এ পর্যায়ে ব্যাটসম্যানদেরকে প্রশিক্ষণ দিতেন। ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ে সফর শেষে পাকিস্তানের কোচের দায়িত্ব থেকে ওয়াকার ইউনুসকে বরখাস্ত করা হলে দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দ্বৈত দায়িত্বও তাঁকে পালন করতে হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তান দলকে পরিচালনা করেন ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ বিজয়ে অংশ নেন।

Similar Posts

  • |

    উমেশ কুলকার্নি

    ৭ মার্চ, ১৯৪২ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের আলীবাগে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৬০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। খুব স্বল্পসংখ্যক খেলোয়াড়কেই তাঁর ন্যায় তরতর করে উপরের দিকে চলে যেতে দেখা যায়। তবে, কোন দিক দিয়ে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন সুখকর…

  • |

    উইলিয়াম ব্রুস

    ২২ মে, ১৮৬৪ তারিখে ভিক্টোরিয়ার সাউথ ইয়ারা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বামহাতে কার্যকর মিডিয়াম বোলিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। সাউথ ইয়ারা এলাকায় জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবকাল ক্রোমওয়েল স্ট্রিটে অতিবাহিত করেছেন। স্কচ কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। ১৮৮০ ও ১৮৮১ সালে বিদ্যালয়ের প্রথম একাদশের সদস্য ছিলেন। আকর্ষণীয় বামহাতি…

  • |

    ধ্রুব জুরেল

    ২১ জানুয়ারি, ২০০১ তারিখে উত্তরপ্রদেশের আগ্রা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিংয়ে পারদর্শী। ভারতের পক্ষে টেস্ট ও টি২০আই ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ২০২১-২২ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে উত্তরপ্রদেশ ও বহিঃভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, রাজস্থান রয়্যালস ও ভারত ‘এ’ অনূর্ধ্ব-১৯…

  • |

    এস শ্রীশান্ত

    ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে কেরালার কথামঙ্গলমে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ‘গপু’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ২০০২-০৩ মৌসুম থেকে ২০১২-১৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের…

  • | |

    শুজাউদ্দীন

    ১০ এপ্রিল, ১৯৩০ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুম থেকে ১৯৬৯-৭০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে নর্দার্ন পাঞ্জাব, সার্ভিসেস, বাহাওয়ালপুর,…

  • |

    অসি ডসন

    ১ সেপ্টেম্বর, ১৯১৯ তারিখে নাটালের রসবার্গ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৪০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। দৌঁড়ুতে বেশ পটু ছিলেন। ১৯৩৮-৩৯ মৌসুম থেকে ১৯৬১-৬২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…