১ আগস্ট, ১৯১০ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৩০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯২৮-২৯ মৌসুম থেকে ১৯৫৩-৫৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে পাতিয়ালার মহারাজা একাদশ, মুসলিম, রেলওয়েজ, সাউদার্ন পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
ভারতের প্রথম পেস বোলার ছিলেন। অদ্যাবধি তাঁকে ভারতের অন্যতম দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলার হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়ে থাকে। টেস্টগুলোয় ২৮.২৮ গড়ে ২৫ উইকেট দখল করেছিলেন। বোলিং গড়ে তেমন আহামড়ি দেখাতে না পারলেও তাঁর দ্রুতগতির পেস ব্যাটসম্যানদের আতঙ্কে পরিণত করেছিল।
১৯৩২ থেকে ১৯৩৬ সময়কালে ভারতের পক্ষে ছয়টিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ভারতের সর্বপ্রথম টেস্টে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৩২ সালে সি.কে. নায়ড়ু’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৫ জুন, ১৯৩২ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। দলের অন্য সকলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে প্রথম বল করার গৌরব অর্জন করেন। ইন-সুইং ইয়র্কারে হার্বার্ট সাটক্লিফকে ও অল্প কিছু সময় বাদেই পার্সি হোমসের অফ-স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেন। স্বাগতিক ইংরেজ দলের বিপক্ষে তাঁর এ সাফল্যে প্রতিপক্ষের সংগ্রহ ১১/২ হয়ে পড়ে। অথচ, ইয়র্কশায়ারের এ দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মাত্র ১০ দিন পূর্বে সাসেক্সের বিপক্ষে ৫৫৫ রান তুলেছিলেন।
ঐ দিন ৯৩ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট দখল করেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ১/৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, সীমিত অভিজ্ঞতা ও ব্যাটিংয়ের কারণে দূর্দান্ত সূচনা করেও পুরো মৌসুমে অংশ নেয়া ইংরেজদের বিপক্ষে জয় নিয়ে আসতে পারেননি। ঐ টেস্টে স্বাগতিকরা ১৫৮ রানে জয়লাভ করেছিল। তাসত্ত্বেও, অমর সিংয়ের সাথে ফাস্ট বোলিংয়ে জুটি গড়েন। ঐ সফরে সুইং ও বলে কাট আনয়ণে ভীতিদায়ক পেসে ১৮ গড়ে ৭১ উইকেট দখল করেছিলেন।
পরের বছর ইংরেজ দল ভারত সফরে আসলে ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে তিনি আরও পাঁচ উইকেট পান। কিন্তু, নিজ দেশে অনুষ্ঠিত টেস্টে পূর্বের ন্যায় বল হাতে নিয়ে বীরোচিত ভূমিকার পুণরাবৃত্তি ঘটাতে পারেননি। এরপর, জ্যাক রাইডারের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে পুণরায় ছন্দ ফিরে পান। ১৯৩৫ সালে চারটি অনানুষ্ঠানিক টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩২ উইকেট দখল করেন।
১৯৩৬ সালে বিজিয়ানাগ্রামের মহারাজার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৫ আগস্ট, ১৯৩৬ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। নিজস্ব সর্বশেষ টেস্টে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষ সাফল্য পান। ওয়ালি হ্যামন্ডের দ্বি-শতক ও স্ট্যান ওর্থিংটনের শতকের কল্যাণে ইংল্যান্ড দল ৪২২/৩ তুললে বোলিংয়ে ফিরে আসেন। পাঁচ ওভার থেকে চার উইকেট পান। এ পর্যায়ে ওয়ালি হ্যামন্ড, স্ট্যান ওর্থিংটন, গাবি অ্যালেন ও হ্যাডলি ভ্যারিটিকে ফেরৎ পাঠান। ঐ ইনিংসে তিনি ৫/১২০ পান। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ১/৩৬ লাভ করেন। ব্যাট হাতে ১৪ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিক দল ৯ উইকেটে জয় তুলে নেয় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়ী হয়।
প্রাপ্ত ২৫টি টেস্ট উইকেটের ১৩টিই তিনি বোল্ড কিংবা লেগ বিফোর উইকেটের মাধ্যমে লাভ করেন। এভাবেই তিনি ব্যাটসম্যানদের কাছে তাঁর পেস বোলিংয়ের কারণে সমীহের পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট চলমান রাখেন। ১৯৩৮-৩৯ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফিতে সাউদার্ন পাঞ্জাবকে চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান। পরের বছর তাঁর বোলিং সঙ্গী অমর সিং মাত্র ২৯ বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে জীবনাবসান ঘটে। পাশাপাশি, তাঁর খেলায়ও ভাটা পড়ে। ১১ মার্চ, ১৯৬৩ তারিখে লাহোরে ৫২ বছর ২২২ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
