Skip to content

মোহাম্মদ আমির

1 min read

১৩ এপ্রিল, ১৯৯২ তারিখে পাঞ্জাবের গুজার খান এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে থাকেন। পাকিস্তানের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

ওয়াসিম আকরামকে নিজের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রেখেছেন। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তুলনামূলকভাবে বেশ তরুণ অবস্থায় সম্ভাবনাময় পেসার হিসেবে আবির্ভূত হন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমনের পূর্বে মে, ২০০৭ সালে লাহোরে পরিচালিত ওয়াসিম আকরামের বিশেষ প্রতিভা অন্বেষণে পেসারদের প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার সুযোগ পান। ২০১০ সালের মধ্যেই দূর্দান্ত পেসার হিসেবে বৈশ্বিক পরিচিতি পান। কিন্তু, খেলোয়াড়ী জীবন শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই পাতানো খেলার দায়ে অভিযুক্ত হন।

২০০৯ সালে ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে উৎসাহব্যঞ্জক ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন পেস ও সুইংয়ে ভরপুর তাঁর বোলিং। অভিষেক মৌসুমেই পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষে ৫৫ উইকেট দখল করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় পাকিস্তান দলের পক্ষে খেলার সুযোগ পান। নিজেকে মেলে ধরতে বেশ তৎপর হন। ক্রমশঃ নেতিয়ে পড়া সোহেল তানভীরের স্থান দখল করে নেন। তাঁর বোলিংয়ে পেস, নিখুঁত ভাব বজায় রাখা ও সাহসী ভঙ্গীমা লক্ষ্য করা যায়।

২০০৯ সাল থেকে পাকিস্তানের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। গড়ে ৮০ মাইল গতিবেগে বোলিং করাসহ মাঝে-মধ্যে ৯০-এর কোটাও স্পর্শ করেন। পাকিস্তানের শিরোপা বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বেশ কয়েকবার শেষের ওভারগুলোয় শ্বাসরুদ্ধকর ভূমিকায় অগ্রসর হয়েছেন। একবার বোলিং উদ্বোধনে বিরাট সফলতা পান। চূড়ান্ত খেলায় প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিলকরত্নে দিলশানকে পাঁচ বলে শূন্য রানে বিদেয় করেন। এ পর্যায়ে দ্রুততম বোলিংসহ শর্ট বল করেন। ওডিআইয়েও একই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখেন। আগস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪/২৮ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে দলকে জয় এনে দেন। পরবর্তীতে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ধারাবাহিক ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন।

২০০৯ সালে ইউনুস খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ৪ জুলাই, ২০০৯ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। আব্দুর রউফ ও সাঈদ আজমলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ঐ টেস্টে ছয় উইকেট দখল করেন। ৩/৭৪ ও ৩/৩৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ৪ ও ৬ রান তুলেন। তবে, রঙ্গনা হেরাথের অসামান্য অল-রাউন্ড নৈপুণ্যে তাঁর দল ৫০ রানে পরাজয়বরণ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

এরপর, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড গমনার্থে শ্রীলঙ্কা দলের সদস্য হন। বেশ দক্ষ হয়ে উঠেন, নতুন বল ও রিভার্স সুইংসহ পেসের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন। ২০১০ সালে সালমান বাটের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। সফরকারীরা ৩-১ ব্যবধানে সিরিজে পরাজিত হলেও ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। ১৮ আগস্ট, ২০১০ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেন। চমৎকার বোলিং করে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের ভিত নড়বড়ে করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৫২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। এ ছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ১/৪৯ লাভ করেন। ঐ ইনিংসে অভিষেক ঘটা ওয়াহাব রিয়াজের পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্বের ফলে পাকিস্তান দল খেলায় ৪ উইকেটে জয় পায় ও সিরিজে ব্যবধান কমিয়ে ২-১ এ নিয়ে আসে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ২৬ আগস্ট, ২০১০ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ১৮ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে টেস্টে ৫০ উইকেট দখল করেন। ৬/৮৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নিজেকে ঠাঁই করে নেন। অ্যালাস্টেয়ার কুক, কেভিন পিটারসন, ইয়ন মর্গ্যান, ম্যাট প্রায়র ও গ্রায়েম সোয়ানকে বিদেয় করলেও স্বাগতিক ইংল্যান্ড দল ৪৪৬ রান তুলতে সমর্থ হয়। এর জবাবে পাকিস্তান দল মাত্র ৭৪ রানে গুটিয়ে গেলে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৭ রান তুললে ইনিংস ও ২২৫ রানে পরাজিত হয়। স্টুয়ার্ট ব্রডের অসামান্য অল-রাউন্ড নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২২৫ রানে জয় পায়। এ সিরিজে ৬৭ রান সংগ্রহসহ ১৯ উইকেট দখল করে জোনাথন ট্রটের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

তবে, এর পরপরই পাতানো খেলার কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে পড়েন। টেস্টে পূর্বপরিকল্পনামাফিক নো-বল ছুঁড়ে পাতানো খেলায় অংশগ্রহণের অভিযোগ আসে। ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সালে আইসিসি’র শুনানীতে তদন্ত শেষে পাঁচ-বছরের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন। তিনি অভিযোগ স্বীকার করেন ও সাউদওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে ছয় মাসের কারাভোগ করেন।

মুক্তিলাভের পর ঐ ঘটনায় সম্পৃক্ততার ক্ষমা চান ও আইসিসিকে দূর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে সহায়তার কথা ঘোষণা করেন। সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সালে সকল স্তরের ক্রিকেটে অংশ নেয়ার সবুজ সঙ্কেত পান। পরের বছর জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড গমনার্থে পাকিস্তানের সীমিত-ওভারের দলের সদস্য হন। এরপর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২০-ওভারের এশিয়া কাপে অংশ নেন। তিনি আরও একবার নিজেকে মেলে ধরেন। পেস বোলিংয়ে ভারতের শীর্ষসারির তিন উইকেট পান। ঐ বছরের শেষদিকে ইংল্যান্ড গমনার্থে টেস্ট দলে যুক্ত হবার মাধ্যমে তাঁর সকল স্তরের ক্রিকেটে সম্পৃক্ততা পূর্ণ হয়। ছয় বছর পূর্বেকার পাতানো খেলার দায়ে অভিযুক্ত লর্ডস মাঠেই পুণরায় খেলতে নামেন।

টেস্ট ক্রিকেটে যাদুকরী গতিতে বোলিংয়ের উপযোগী ছিলেন। বেশ নিরাশ করেন। নতুন বলে তেমন সুবিধে করতে পারেননি। তিনটি দেশের পরিবেশের সাথে বেশ মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। ২০১৬ সালে বল হাতে নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪২.৪১ গড়ে, একই বছরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮.৮৩ গড়ে এবং পরের বছর অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাকিস্তানের ধবল ধোলাইকালীন ৬১.৬০ গড়ে উইকেট পেয়েছিলেন।

কলা আকৃতির সুইং বল বামহাতে কৌণিকভাবে ছুঁড়তেন। বেশ সুন্দর দৃষ্টিনন্দন বোলিং ভঙ্গীমা প্রদর্শন করলেও কৈশোরের ন্যায় সম্ভাব্যতার কাছাকাছি বা নিয়মিতভাবে নিজেকে মেলে ধরতে আর পারেননি। কিভাবে তিনি নিজেকে স্মরণীয় করে রাখবেন তা একান্তই তাঁর উপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল। খেলোয়াড়ী জীবনে সেরা মুহূর্তের জন্যে অপেক্ষা করতে থাকেন। ভারতের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় বোলিং উদ্বোধন করে প্রতিপক্ষকে খেলা থেকে দূরে সড়িয়ে দেন। ৩৩৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে ভারতীয় তারকা রোহিত শর্মাকে প্রথম ওভারেই ফাঁদে ফেলেন। পরপর দুইবার ব্যাটের কিনারা স্পর্শ থেকে বেঁচে যাবার পর বিরাট কোহলি বেঁচে যান। প্রথমটি স্লিপ থেকে ফসকে যায়। শিখর ধবনকে বিদেয় করেন। এক পর্যায়ে ৬-২-১৬-৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ও পাকিস্তান দল ১৮০ রানে জয় পায়। ২০১৮-১৯ মৌসুমে সরফরাজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ১১ জানুয়ারি, ২০১৯ তারিখে জোহানেসবার্গে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ২/৩৬ ও ২/৫৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১০ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, কুইন্টন ডি ককের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০৭ রানে জয় পেয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।