১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৪ তারিখে জ্যামাইকার হাফ ওয়ে ট্রি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিং করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
‘হুইস্পারিং ডেথ’ ডাকনামে পরিচিত মাইকেল হোল্ডিং ছয় ফুট সাড়ে তিন ইঞ্চি (১.৯২ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। রাল্ফ হোল্ডিং ও এনিড হোল্ডিং দম্পতির সন্তান ছিলেন।
ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে জ্যামাইকা, নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি, ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ার ও ল্যাঙ্কাশায়ার এবং অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে তাসমানিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৭২-৭৩ মৌসুম থেকে ১৯৮৯ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। তন্মধ্যে, ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে তাসমানিয়ার পক্ষে খেলেন।
১৯৭৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ৬০ টেস্ট ও ১০২টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। টেস্টগুলো থেকে ২৪৯ উইকেট ও ওডিআইয়ে ১৪২ উইকেট দখল করেন। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৮ নভেম্বর, ১৯৭৫ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৩৪ ও ১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৮১ ও ০/৪৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, গ্রেগ চ্যাপেলের জোড়া শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৭০-এর দশকে জোয়েল গার্নার, অ্যান্ডি রবার্টস, কলিন ক্রফ্ট ও ম্যালকম মার্শালকে সাথে নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে দুই দশক ভীতিদায়ক ফাস্ট বোলিংয়ের রাজত্ব কায়েমে অগ্রসর হয়েছিলেন। টেস্টে ১৪৯ রান খরচায় ১৪ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নতুন রেকর্ড দাঁড় করান। ১৯৮১ সালে জিওফ বয়কটের বিপক্ষে বেশ খেলেছিলেন। অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই টেস্টের ইতিহাসের সেরা ওভার হিসেবে চিত্রিত করেছিলেন।
১৯৭৬ সালে নিজ দেশে বিষেন বেদী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ৭ এপ্রিল, ১৯৭৬ তারিখে নিজ শহর পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১ ও ১৭* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৬/৬৫ ও ০/৮২ পেয়েছিলেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ছয় উইকেটে পরাজয়বরণ করলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে।
একই বছর ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৮ জুলাই, ১৯৭৬ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫/১৭ ও ২/২৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে মাত্র ৩ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলায় সফরকারীরা ৪২৫ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৭৯-৮০ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪ ও ৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৫০ ও ৩/২৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ১ উইকেটে নাটকীয়ভাবে পরাভূত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৯৮১-৮২ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২ জানুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৫/৬৪ ও ০/৩১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৯ ও ৫ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ব্রুস ইয়ার্ডলি’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখলেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৯ নভেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৬/২১ ও ১/৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১ রান সংগ্রহসহ সমসংখ্যক ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অনবদ্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১১২ রানে জয়লাভ করে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
পেশীতে টান ও পিঠের আঘাতের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অনেকাংশেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও দূরে সড়ে যেতে হয়। ১৯৮৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০/৩৪ ও ০/৬৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ইয়ান চ্যাটফিল্ডের বলে শূন্য রানে বিদেয় নেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। জন রাইটের অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
১৯৭৭ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০০৯ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমের শুরুরদিকের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কিংস্টনে মাইকেল হোল্ডিংস সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর, ধারাভাষ্যকর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন। নাসের হুসাইন ও মাইকেল অ্যাথার্টনের সাথে ধারাভাষ্যকার দলের সদস্য হন। ৭ নভেম্বর, ২০২০ তারিখে এমসিসি ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। লরি অ্যান হোল্ডিং নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির রায়ান মার্ক হোল্ডিং নামীয় সন্তান রয়েছে।
