২৩ নভেম্বর, ১৯৬১ তারিখে ভিক্টোরিয়ার ইউরোয়া এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘ম্যাড মার্ভ’, ‘সুমো’ কিংবা ‘ফ্রুটফ্লাই’ ডাকনামে ভূষিত মার্ভ হিউজ ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। খুব ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে ডিস্ট্রিক্ট পর্যায়ের ক্রিকেটে অংশ নিতে থাকেন। ১৯৮১-৮২ মৌসুম থেকে ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে সরব ছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়া এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এসিটি’র পক্ষে খেলেছেন। ১৯৮১-৮২ মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার সদস্যরূপে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। খুব দ্রুত দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। তাঁকে জাতীয় দলের সদস্য করা হয়।
১৯৮৫ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৫৩ টেস্ট ও ৩৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে নিজ দেশে কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্রুস রিড ও জিওফ মার্শের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ১২৩ রান খরচায় দিলীপ বেঙ্গসরকারের একমাত্র উইকেটের সন্ধান পান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পেয়ে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের বলে শূন্য রানে দিলীপ বেঙ্গসরকারের হাতে ধরা পড়েন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। ফলশ্রুতিতে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের পরের দুই টেস্ট থেকে বাদ পড়েন।
১৯৮৬-৮৭ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে তাঁকে পুণরায় যুক্ত করা হয়। চার খেলা থেকে ১০ উইকেট দখল করেছিলেন। তবে, ডিসেম্বর, ১৯৮৮ সালে পার্থের ওয়াকায় সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্মরণীয় সাফল্য পান। ১৮৭ রান খরচায় আট উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, প্রথম ইনিংসে ৫/১৩০ লাভ করেন। এ পর্যায়ে তিনটি ভিন্ন ওভারে দুই দিন সময় নিয়ে (কার্টলি অ্যামব্রোস – ৩৫.৬, প্যাট্রিক প্যাটারসন – ৩৭.১ ও গর্ডন গ্রীনিজ – ০.১) উপর্যুপরী তিন উইকেট লাভ করে হ্যাট্রিক করেন। ঐ খেলায় ১২৭ রান খরচায় ১৩ উইকেট দখল করেন।
১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে নিজ দেশে জেফ ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৪ ডিসেম্বর, ১৯৮৭ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বতন সেরা ছিল ৩/১৩৪। বল হাতে নিয়ে ৩/৪০ ও ২/৫৭ লাভ করেন। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ডেভিড বুনের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় সফরকারীরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই মৌসুমে নিজ দেশে রঞ্জন মাদুগালে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টটিতে অংশ নেন। ০/৬১ ও ৫/৬৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ডিন জোন্সের অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১০৮ রানের ব্যবধানে সফরকারীদের শোচনীয় পরাজয় ঘটেছিল।
১৯৮৯-৯০ মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে হোবার্টে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ২৭ ও ৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৩/৬৮ ও ৫/৮৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, অরবিন্দ ডি সিলভা’র প্রাণান্তঃকর ব্যাটিং স্বত্ত্বেও স্বাগতিকরা ১৭৩ রানে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে অ্যাডিলেড টেস্টে উদ্বোধনী দিনে ৫/৬৪ পান।
খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকের শুরুতে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিলেন। ১৯৯৩ সালের অ্যাশেজ সিরিজে হাঁটুতে আঘাত নিয়েও খেলে যান ও অস্ত্রোপচার করতে অস্বীকৃতি জানান। আঘাতের কবলে পড়লে দ্বিতীয়বারের মতো হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করতে হয়। ফলশ্রুতিতে, ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমের প্রথমার্ধ্বে খেলার জগৎ থেকে দূরে থাকেন। তাসত্ত্বেও, ১৯৯৪ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ১৭ মার্চ, ১৯৯৪ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০/৮০ ও ০/১২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ক্রেগ ম্যাথুজের বলে শূন্য রানে বিদেয় নেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। স্টিভ ওয়াহ’র অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে সফরকারীরা ৯ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সমতায় ফেরে।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুম শেষে টেস্টে ২৮.৩৮ গড়ে ২১২ উইকেট দখল করেছিলেন। সাতবার পাঁচ-উইকেট ও একবার দশ উইকেট লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি অর্ধ-শতক সহযোগে ১৬.৬৪ গড়ে ১০৩২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৯৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তবে, ১৯৯৭ সালে পুণরায় খেলার জগতে ফিরে আসেন। অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি’র পক্ষে খেলার পর ১৯৯৯ সালে ক্রিকেট জগৎকে বিদেয় জানান। সব মিলিয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২৯.৩৯ গড়ে ৫৯৩ উইকেট পেয়েছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে নিজের পরিচিতি ঘটিয়েছিলেন। এছাড়াও দৈত্যাকায় গোঁফের কারণেও সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করেন। প্রচলিত রয়েছে যে, এর জন্যে তিনি ২০০,০০০ পাউন্ড-স্টার্লিংয়ের বীমা করেছেন। তবে, পরবর্তীতে তিনি তা অস্বীকার করেন। সন্দেহাতীতভাবে ক্রিকেটে তিনি বিরাট প্রভাব ফেলেছিলেন বিশেষতঃ দর্শকদের সাথে। এমসিজি’র বে থারটিনে অনুশীলনীকালে শারীরিক কসরৎকালীন সমর্থকেরা তাঁকে অনুসরণ করেছিল। দাতব্য তহবিল গঠনকল্পে টি২০ খেলায় হ্যাট্রিক করেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ২০০৫ থেকে ২০১০ সময়কালে দল নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২০ সালে ৫৬তম ক্রিকেটার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।
