১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯১ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলেন। ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করে থাকেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘হেন্নাজ’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। মারিস্ট হেয়ারউড ক্লাবে খেলেছেন। ২০১১ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড় জীবন চলমান রেখেছেন। ঘরোয়া পর্যায়ের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, চেন্নাই সুপার কিংস, লখনউ সুপার জায়ান্টস, কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব, স্যান ফ্রান্সিসকো, ওয়েলস ফায়ার, ক্যান্টারবারি অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পক্ষে খেলেছেন। প্রতিভাবান তরুণ হিসেবে ক্যান্টারবারির পক্ষে ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৪ মার্চ, ২০১১ তারিখে র্যাঙ্গিওরায় অনুষ্ঠিত ক্যান্টারবারি বনাম ওয়েলিংটনের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। দ্রুততার সাথে ও দ্রুতগতিতে ক্রমাগত বোলিংয়ে অভ্যস্ত। ২০১২ সালে জাতীয় দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন। তবে, পিঠের আঘাতের কারণে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
২০১৪ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ৩১ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। হামিশ বেনেটের আঘাতের কারণে এ সুযোগ পান। সুযোগকে কাজে লাগাতে তৎপর হন। ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় ৪/৩৮ বোলিং করে অভিষেকে নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। অক্টোবর, ২০১৪ সালে হ্যামিল্টনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজস্ব দ্বিতীয় ওডিআইয়ে ২/৪০ পান।
২০১৪-১৫ মৌসুমে ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে দারুণ খেলার সূত্র ধরে ইংল্যান্ড গমনার্থে তাঁকে দলের সদস্যরূপে মনোনীত করা হয়। শুরুতে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্যে তাঁকে দলে রাখা হয়নি। তবে, অ্যাডাম মিলেনের আঘাতের কারণে পরবর্তীতে তাঁকে নিউজিল্যান্ড দলে যুক্ত করা হয়।
২০১৫ সালে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২১ মে, ২০১৫ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৪/৯৩ ও ২/১০৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১০ ও ১০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। বেন স্টোকসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে সফরকারীরা ১২৪ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ২৯ মে, ২০১৫ তারিখে লিডসের হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১০ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ২৭ ও ১২* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৯২ ও ১/৪৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। বিজে ওয়াটলিংয়ের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১৯৯ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজ দেশে ফাফ ডু প্লিসি’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৫ মার্চ, ২০১৭ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। বল হাতে নিয়ে ৪/৯৩ ও ১/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। দলীয় অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
২০২১-২২ মৌসুমে নিজ দেশে ডিন এলগারের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে কে ভেরিনকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৪/৯৩। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৭/২৩ ও ২/৩২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ৫৮* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৭৬ রানে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২৩-২৪ মৌসুমে নিজ দেশে প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ওয়েলিংটন টেস্টে ব্যাট ও বল হাতে বেশ ভালো খেলেন। ৪২ ও ১৪ রান তুলেন। এছাড়াও, ৫/৭০ ও ৩/৩৬ লাভ করেন।
এরপর, একই সফরের ৮ মার্চ, ২০২৪ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। এ টেস্টে আবারও ভালো করেন। ৭/৬৭ ও ২/৯৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২৯ ও ১৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, উভয় টেস্টেই তাঁর দল ২-০ ব্যবধানে পরাজয়বরণ করে। অ্যালেক্স ক্যারি’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে জয় পায়। সবমিলিয়ে এ সিরিজে ১০১ রান সংগ্রহসহ ১৭ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২৪-২৫ মৌসুমে টম ল্যাথামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। ভারতের প্রথম ইনিংসে কেদার যাদবকে বিদেয় করে নিজস্ব পঞ্চম উইকেটের সন্ধান পান। একই সাথে টেস্টে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। বল হাতে নিয়ে ৫/১৫ ও ৩/১০২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রচিন রবীন্দ্র’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ১ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে ওয়াংখেড়েতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে ০ ও ১০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/২৬ ও ১/১০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, এজাজ প্যাটেলের স্মরণীয় বোলিং সাফল্যে স্বাগতিকরা মাত্র ২৫ রানে পরাভূত হলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে বেন স্টোকসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৮ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/৪৮ ও ২/৬২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। মিচেল স্যান্টনারের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৪২৩ রানের বিরাট ব্যবধানে জয়লাভ করলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০২৫ সালে মিচেল স্যান্টনারের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ৭ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিং করার সুযোগ না পেলেও বল হাতে নিয়ে ৫/৪০ ও ২/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছিলেন। ডেভন কনওয়ে’র অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৩৫৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ১৬ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
