৫ অক্টোবর, ১৯৮৩ তারিখে নড়াইলে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
৬ ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৭ মিটার) উচ্চতার অধিকারী মাশরাফি মর্তুজা ‘কৌশিক’ ডাকনামে পরিচিত। বাংলাদেশের অন্যতম সফলতম ডানহাতি সিমার হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে দেশের উত্তরণে প্রভূতঃ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে পূর্ণ গতিবেগে পর্দায় ভেসে আসেন। ২০০১-০২ মৌসুম থেকে ২০১৭-১৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে খুলনা বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, ঢাকা প্লাটুন ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের পক্ষে খেলেছেন।
২০০১ সালের অনূর্ধ্ব-১৭ দলের আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় খেলাকালীন প্রথমবারের মতো সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হন। ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে ছক্কা ও ডাইভের ফুলঝুঁড়িতে সমগ্র বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ নামে সবিশেষ খ্যাতি লাভ করেছেন।
২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের যুক্ত হবার পর প্রকৃত মানসম্পন্ন ফাস্ট বোলার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা ক্রিকেটার ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ অ্যান্ডি রবার্টসের সুনজরে পড়েন ও তাঁর বদান্যতায় টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্ত হন। এরফলে, বিশ্বের ৩১তম ও ১৯৯৯ সালের পর থেকে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট অভিষেকের মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে।
২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ে দলের মুখোমুখি হন। ১৭ বছর বয়সে ৮ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় প্রথম অংশ নেন। খালেদ মাহমুদের সাথে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর একযোগে অভিষেক ঘটে। ৪/১০৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।
অ্যান্ডি রবার্টসের পরিচালনায় প্রশিক্ষণে শিবিরে প্রেরিত হন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা তুলে ধরেন। কয়েক মাসের মধ্যে নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হন। ঐ বছরের শুরুরদিকে ভারতে বাংলাদেশের ‘এ’ দলের সদস্যরূপে চারটি খেলায় অংশ নেন ও সংবাদ শিরোনামে পরিণত হন। দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর মাঝে অপার সম্ভাবনা খুঁজে পান ও নতুন বল নিয়ে জিম্বাবুয়ে দলের বিপক্ষে বোলিং আক্রমণে যুক্ত করেন। গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারকে বিদেয় করে নিজস্ব প্রথম উইকেটের সন্ধান পান। ঐ টেস্টে চার উইকেট দখল করেছিলেন। কাকতালীয়ভাবে একই বছর ও একই দলের বিপক্ষে ওডিআই অভিষেকের মাধ্যমে তাঁর লিস্ট-এ ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল। ২৩ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এ খেলায় দুইটি উইকেটের সন্ধান পান।
দূর্বলমানের বোলিং ভঙ্গীমাও অনেকের চোখে পড়ে। পা ও হাত ভুলভাবে বাঁকানো অবস্থায় ঝুঁকে পড়ে। ফলশ্রুতিতে, দ্রুত আঘাতের কবলে পড়তে থাকেন। এ বিষয়গুলো খেলোয়াড়ী জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকে। ২০০১ সালে অভিষেকের পর থেকে অনেকগুলো খেলায় অনুপস্থিত থাকেন। পা, হাঁটু ও গোঁড়ালীতে সাতবার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। দলনায়কদের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় ও দূর্বলমানের বোলিং কৌশল অবলম্বন করার পরামর্শসহ খামখেয়ালীপূর্ণ দূর্ঘটনাগুলো অস্ত্রোপচারের দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করে। বেশকিছু খেলায় এ ধরনের ঘটনার পর ২০০৪ সালে খ্যাতির তুঙ্গে পৌঁছে যান। প্রথমবারের মতো ভারত দলকে পরাজিত করতে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। বীরেন্দ্র শেহবাগ ও এমএস ধোনি’র উইকেট লাভসহ নিচেরসারিতে ৩১ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন। এমনকি অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে চেপে ধরা খেলায়ও তাঁর সপ্রতিভ উপস্থিতি লক্ষ্যণীয় ছিল। কিন্তু, রিকি পন্টিংয়ের ক্যাচ তালুবন্দী করতে না পারার খেসারত গুণতে হয় দলকে ও স্বাগতিক দল জয় পায়।
২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ৪/৬০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের অধিকাংশ সময়ই আঘাত নিত্য অনুসঙ্গরূপে জড়িয়ে ছিল। হাঁটুর আঘাতের কারণে এক বছর খেলার জগৎ থেকে দূরে থাকতে হয়। ২০০৪ সালের শেষদিকে ইংল্যান্ড গমনার্থে পুণরায় দলে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে আবারও পিঠের আঘাতের কবলে পড়েন। পুরো সিরিজেই মাঠের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হন।
২০০৬ সালে আরোগ্য লাভের পর অস্ট্রেলিয়া ও কেনিয়ার বিপক্ষে সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। দলে প্রত্যাবর্তন করে আফতাব আহমেদের জাতীয় রেকর্ড ভেঙ্গে নিজের করে নেন। কেনিয়ার বিপক্ষে ওডিআইয়ে ব্যক্তিগত সেরা ৬/২৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। ঐ বছর ওডিআইয়ে ৪৯ উইকেট নিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন। এছাড়াও, বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে এ সংখ্যাটি সর্বোচ্চ ছিল। টেস্ট ক্রিকেট ও একদিনের আন্তর্জাতিকে প্রথম জয়ের জন্যে বাংলাদেশ দলকে দীর্ঘদিন অপেক্ষার প্রহর গুণতে হলেও টি২০আইয়ে এর ব্যতিক্রম ঘটে। ২৮ নভেম্বর, ২০০৬ তারিখে খুলনায় টি২০আইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন ও সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলের বিজয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন। শেষদিকে এসে ৩৫ রানের ইনিংস খেলে ১৯.৫ ওভারে দলকে ১৬৬ রানে নিয়ে যান। সুনিয়ন্ত্রিত পন্থায় বোলিং করেন ও আব্দুর রাজ্জাকের চার ওভারে ৩/১৭ লাভ প্রতিপক্ষকে ১২৩/৯ সংগ্রহ দাঁড় করান।
২০০৭-০৮ মৌসুমে মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১২ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১৫ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/১০০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩৭ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পক্ষে দুই খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। ২০০৭ সালের ঐ প্রতিযোগিতায় নিজেকে সত্যিকার অর্থে মেলে ধরেছিলেন। নয়টি খেলায় অংশ নেন। তন্মধ্যে, পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে ৪/৩৮ নিয়ে পুণরায় দলের বিজয়ে ভূমিকা পালন করেন। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। সবগুলো খেলায় অংশ নিয়ে দলকে দ্বিতীয় রাউন্ডে নিয়ে যান।
খেলার শুরুতে সর্বদাই বাংলাদেশের সফলতার বার্তা এনে দিয়েছেন। অক্টোবর, ২০০৮ সালে সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪/৪৪ পান। এরফলে, তাঁর দল ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো কিউইদের বিপক্ষে জয় পায়। ২০০৯ সালের ত্রি-দেশীয় সিরিজের চূড়ান্ত খেলায় নাজমুল হোসেনকে নিয়ে বোলিং জুটি গড়ে ছয় রানে পাঁচ উইকেটের পতন ঘটান। বাংলাদেশ ঐ খেলায় পরাজিত হলেও নির্ধারিত দশ ওভারে বিস্ময়কর বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করিয়েছিলেন। ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তেমন ভালোমানের খেলা উপহার দিতে পারেননি। কিন্তু, জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে নিজের পরিচিতি তুলে ধরেন।
নিচেরসারির কার্যকরী ব্য্যাটসম্যান হিসেবে দলে বিরাট প্রভাব ফেলতেন। ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাথে $৬০০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ করে। তবে, অভিষেক পর্বটি মোটেই সুখকর হয়নি। শেষ ওভারে ২১ রানের প্রায় অসম্ভব বিজয়ে রোহিত শর্মা ২৬ রান তুলে নেন। ঐ মৌসুমে এটিই একমাত্র খেলায় অংশ নেন ও বাদ-বাকী সময়ে মাঠের বাইরে অবস্থান করতে হয়।
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে টি২০ বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা শেষে ২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে অধিনায়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে সফরে প্রথমবারের মতো দলের নেতৃত্ব ছিলেন। তবে, অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্টেই হাঁটুর আঘাতে পড়েন ও বাধ্য হয়ে সাকিব আল হাসানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হয়। ৯ জুলাই, ২০০৯ তারিখে কিংসটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ৩৯ ও ০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ৬.৩ ওভার বোলিং করে ২৬ রান খরচ করলেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
পরের বছর ২০১০ সালের গ্রীষ্মে দলে ফিরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। তবে, নিজ দেশে অধিনায়ক হিসেবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম খেলায় আবারও আঘাতের কবলে পড়েন। এরপর, আবারও হাঁটুর আঘাতে পড়লে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নিতে পারেননি। যথাসময়ে আরোগ্য লাভ করলেও বিশ্বকাপ দলে সদস্য হতে পারেননি। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাংলাদেশে প্রতিবাদ সভা হয় ও একটি স্থানে অর্ধ-দিবস হরতাল পালিত হয়।
২০১২ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক টি২০ প্রতিযোগিতা হিসেবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের প্রচলন ঘটে। ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতাকে ঘিরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স $৪৫,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ করে। তবে, প্রতিযোগিতা শুরুর পূর্বে পাতানো খেলায় সম্পৃক্ততার সাথে জড়িত হবার কথা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়। বিপিএলের উদ্বোধনী আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের শিরোপা বিজয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। এগারো খেলায় অংশ নিয়ে দশ উইকেট লাভ করেছিলেন।
এশিয়া কাপকে ঘিরে ১৫-সদস্যের বাংলাদেশ দলে পাঁচজন নতুন খেলোয়াড়ের সাথে অন্তর্ভুক্ত হন। আরোগ্য লাভের পর ২০১২ সালের এশিয়া কাপে অংশ নিয়েছিলেন। দলে আসা-যাবার পালায় থাকলেও মার্চ, ২০১২ সালে বিসিবি’র কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় শীর্ষ পর্যায়ের খেলোয়াড় হিসেবে বহাল থাকেন। দ্বিতীয়বারের মতো কোন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দল চূড়ান্ত খেলায় অংশ নেয় ও পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তবে, আঘাতের কারণে ওডিআইয়ে দশ ওভারের নির্ধারিত কোটা শেষ করতে বেশ হিমশিম খান। তাসত্ত্বেও ঐ প্রতিযোগিতায় চার খেলায় ছয় উইকেট লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশের শীর্ষ সিম বোলারে পরিণত হয়েছিলেন।
মূলতঃ ক্ষুদ্র সংস্করণের বোলার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার পর থেকে আর কোন টেস্টে অংশ নেননি। ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে খেলাকালীন পুণরায় আঘাতের কবলে পড়েন। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০আইয়ে সর্বাধিক রান খরচের সাথে যৌথভাবে নিজেকে যুক্ত করেন। নভেম্বর-ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন। এ সিরিজের পর প্রথমবারের মতো ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খেলার জন্যে পৃথক অধিনায়ক নির্ধারণ করা হলে অধিনায়কত্ব লাভ করেন। ওডিআইয়ে অধিনায়কত্ব লাভের ফলে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পান। দূর্দান্ত খেলে বাংলাদেশ দলকে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার-ফাইনালে নিয়ে যান।
প্রোটীয়দের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ জয়ের পর অধিনায়ক হিসেবে মন্তব্য করেন যে, ‘আমরা বড় দলগুলোর বিপক্ষে পরাজিত হবার স্বপ্ন দেখতাম। আমরা এখন তাদেরকে পরাজিত করতে শুরু করেছি।’ এশিয়া কাপে রানার্স-আপ হবার পর ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব টি২০ খেলায় দলকে নিয়ে যান। সংবাদ সম্মেলনে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানি’র অবৈধ বোলিংয়ের কারণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ দলে তাঁদের অনুপস্থিতির প্রভাবের কথাও তুলে ধরেন। সুপার-টেন পর্বের কোন খেলায়ই দলকে জয় এনে দিতে পারেননি।
শ্রীলঙ্কায় ওডিআই সিরিজ ড্রয়ের পর দুইটি টি২০আই নিয়ে গড়া সিরিজের প্রথমটিতে টসের পর ৪ এপ্রিল, ২০১৭ তারিখে ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতর সংস্করণ থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। দলীয় সঙ্গীরা চূড়ান্ত টি২০আইয়ে দলকে বিজয় লাভসহ সমতা আনয়ণের মাধ্যমে বিদায় দেয়।
মে, ২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজের চূড়ান্ত খেলায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিজয়ী হয়। শ্রীলঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ দল আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে ষষ্ঠ স্থানে চলে আসে। এরফলে, ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ৮-জাতির চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। আত্মবিশ্বাসী অবস্থায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পুণরায় নিউজিল্যান্ড দলকে পরাভূত করে ও প্রতিযোগিতার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেমি-ফাইনালে অবতীর্ণ হয়। ভারতের কাছে পরাজিত হয়ে দেশে ফিরে আসলে বীরোচিত সংবর্ধনা লাভ করেন।
২০১৮ সালে নড়াইল-২ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরূপে নির্বাচিত হন। ৬ মার্চ, ২০২০ তারিখে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওডিআইয়ে অধিনায়ক হিসেবে সর্বশেষ খেলায় অংশ নেন। হাবিবুল বাশার সতীর্থ খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে সর্বকালের সেরা বাংলাদেশী টেস্ট একাদশ গঠন করেন। তন্মধ্যে, তাঁকেও এ তালিকায় ঠাঁই দিয়েছেন। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
ধীর লয়ে যাত্রা শুরুর পর বাংলাদেশ দলের উত্থানে বিশেষতঃ ক্ষুদ্রতর সংস্করণের খেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজেকে সংশ্লিষ্ট রেখেছেন। গোলাম মর্তুজা ও হামিদা মর্তুজা দম্পতির সন্তান। ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলা পছন্দ করেন। তবে, বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন পড়াশুনোর বাইরে চিত্রা নদীতে কখনো কখনো সাঁতার কাটতেন। এছাড়াও, তরুণ বয়সে ক্রিকেট খেলায় ব্যাটিংয়ের দিকেই অধিক মনোযোগী ছিলেন। নিজ শহরে ভীষণ জনপ্রিয় ও ‘হৃদয়ের রাজপুত্র’ নামে পরিচিতি লাভ করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। নড়াইলের সরকারী ভিক্টোরিয়া কলেজে সুমনা হক সুমী নাম্নী রমণীর সাথে পরিচিতি ঘটে ও ২০০৬ সালে পাণিগ্রহণ করেন। হুমাইরা মর্তুজা নাম্নী এ দম্পতির সন্তান রয়েছে।