২২ নভেম্বর, ১৯৭০ তারিখে কালুতারায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশ নিয়েছেন। শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
গলের মহিন্দ্র কলেজে অধ্যয়নকালীন জিডব্লিউএস ডি সিলভা’র কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে, কলম্বোর আনন্দ কলেজে পড়াশুনোকালে পিডব্লিউ পেরেরা তাঁকে প্রশিক্ষণ দেন। খেলোয়াড়ী জীবনের এক পর্যায়ে বেশ হিমশিম খেতে থাকেন ও খেলায় ছন্দ ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এরফলে, তিনি তাঁর সমর্থকদের নিরাশ করেন। পরবর্তীতে অবশ্য পুণরায় ধুমধারাক্কা মেজাজে ব্যাটিংয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন।
১৯৮৮-৮৯ মৌসুম থেকে ২০০৭-০৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এশিয়া একাদশ, আইসিএল বিশ্ব একাদশ ও দিল্লি জায়ান্টসের পক্ষে খেলেছেন।
১৯৯০ থেকে ২০০৭ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ৯০ টেস্ট, ২৬৮টি ওডিআই ও দুইটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯০-৯১ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে ভারত গমন করেন। ২৩ নভেম্বর, ১৯৯০ তারিখে চণ্ডীগড়ে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তবে বেঙ্কটপতি রাজু’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৮ রানে জয়লাভ করে। একই সফরের ১ ডিসেম্বর, ১৯৯০ তারিখে নাগপুরে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।
সমগ্র টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে ছয়টি দ্বি-শতরানের ইনিংস খেলেছেন। প্রায় সাত বছর নিজেকে দলের নিয়মিত খেলোয়াড়ে পরিণত করেন। পাশাপাশি, ১৯৯০-এর দশকে ব্যাটিং গড়ও উপরের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। দৃষ্টিনন্দন খেলা উপস্থাপন করতেন। কনুঁই উঁচু করার মাধ্যমে তাঁর কভার ড্রাইভ বেশ আকর্ষণীয় ছিল।
টেস্ট অভিষেকের প্রায় সাত বছর পর ১৯৯৭ সালে মোহালীতে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে মনোমুগ্ধকর শতক হাঁকান। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে ভারত গমন করেন। ১৯ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে মোহালীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ১০৮ ও ৩১ রান সংগ্রহ করেন। তবে, অরবিন্দ ডি সিলভা’র অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
ফলশ্রুতিতে সন্দেহাতীতভাবে ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখার আভাষ দেন ও আশার আলো জাগান। ঐ দশক শেষেও শ্রীলঙ্কা দলের প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন। ১৯৯৮ সালের শেষদিকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বি-শতক হাঁকান। এরপর, পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বি-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। এছাড়াও, লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৫ রান তুলেছিলেন।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের মুখোমুখি হন। ৭ জানুয়ারি, ১৯৯৮ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২২৩ রান সংগ্রহ করেন। এরপূর্বে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে মোহালিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ১০৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, অ্যাসগিরিয়া মাঠে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান তুলেন। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান ডিডব্লিউ হুকস ১৪৩ রান তুলেছিলেন। পরবর্তীতে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৬* রান সংগ্রহ করেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ১৯ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের দ্বিতীয় দিন অরবিন্দ ডি সিলভা’র সাথে ১২৯ রানের জুটি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩য় উইকেটসহ যে-কোন উইকেটে নতুন রেকর্ড গড়েন। এরফলে, ১৯৩৮-৩৯ মৌসুমে নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের পিএ গিব ও ডব্লিউআর হ্যামন্ডের তৃতীয় উইকেটে সংগৃহীত ১০৯ রানের রেকর্ড ম্লান হয়ে পড়ে। খেলায় তিনি ৬০ ও ৭১ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে পল অ্যাডামসের শিকারে পরিণত হন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। শন পোলকের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৭০ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ২৭ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্ট অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের তৃতীয় দিন শূন্য রানে ব্যাট হাতে জীবন ফিরে পান। সেকেন্ড-স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান এইচডি অ্যাকারম্যানের মুঠো থেকে বল ফস্কে পড়ে যায়। খেলায় তিনি ১২ ও ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অ্যালান ডোনাল্ডের অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে সনথ জয়সুরিয়া’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ১৮ নভেম্বর, ১৯৯৯ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হয়েছিলেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ২১৬* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর ব্যাটিং দৃঢ়তা স্বত্ত্বেও স্বাগতিকরা ড্র করতে সক্ষম হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০১ সালে নিজ দেশে নাইমুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০১ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় খেলায় অংশ নেন। মাহেলা জয়াবর্ধনকে নিয়ে অনন্য রেকর্ডের সাথে সম্পৃক্ত হন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ১৫৬১তম টেস্টে প্রথম দল হিসেবে শ্রীলঙ্কার সদস্যরূপে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। শ্রীলঙ্কার সংগৃহীত ৫৫৫/৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণাকালে মারভান আতাপাত্তু ২০১ ও মাহেলা জয়াবর্ধনে ১৫০ রান তুলেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালীধরনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩৭ রানে জয় পায়।
একই বছর নিজ দেশে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৯ আগস্ট, ২০০১ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১০৮ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীসহ দুইটি রান-আউটের সাথে নিজেকে জড়ান। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ৭৭ রানে পরাজিত হলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০০২ সালে দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৯৫ রান তুলে ক্রিকেটের স্বর্গভূমিতে টেস্টে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রান সংগ্রহে ভূমিকা রাখেন। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের এটি প্রথম টেস্ট ছিল। ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে মাহেলা জয়াবর্ধনের সাথে তৃতীয় উইকেটে ২০৬ রানের জুটি গড়েন। মাহেলা জয়াবর্ধনে ১০৭ রানে বিদেয় নিলেও প্রথম দিনে ১৩৩ রান তুলে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয় দিন সকালে ম্যাথু হগার্ডের প্রথম বলে আলতো মেরে চার রান তুলেন। স্কয়ার-লেগ ও এক্সট্রা-কভার এলাকায় দারুণ খেলে ১৮৫ রান তুলে বিদেয় নেন। চতুর্থ উইকেটে অরবিন্দ ডি সিলভা’র সাথে ১৪৬ রানের জুটি গড়েন।
শ্রীলঙ্কা দল ৫৫৫/৮ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। স্বাগতিক ইংল্যান্ড দল ২৭৫ রানে গুটিয়ে গেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে খেলায় ফিরে আসে ও ড্র করতে সমর্থ হয়। এ শতকের কল্যাণে লর্ডস অনার্স বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত হন।
অধিনায়ক সনথ জয়সুরিয়া’র সহকারী হিসেবে তিন বছর ছিলেন। এরপর, এপ্রিল, ২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কার একদিনের আন্তর্জাতিক দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি, টেস্ট দলের দায়িত্ব নিয়েও যথাযথভাবে সামাল দেন। কিন্তু, এ দায়িত্ব পালনে হাসান তিলকরত্নেকে দল নির্বাচকমণ্ডলী মনোনয়ন দেয়। ঐ বছরের শেষদিকে আরেকটি উদ্ভট ঘটনার মুখোমুখি হন। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ড সফরে হোটেল কক্ষে বিশাল অঙ্কের অর্থপ্রাপ্তির অনুসন্ধানের সাথে পাতানো খেলার বিষয়ে তাঁর শয়ন কক্ষেও অর্থ পাওয়া যায়। আইসিসি পরবর্তীতে তাঁকে রহস্যময় ঘটনার বিষয়ে যথোচিত ব্যাখ্যা প্রদানে সন্তুষ্ট হয় ও অব্যাহতি দেয়।
২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৪ মার্চ, ২০০৪ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১১৮ ও ১৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ড্যারেন লেহমানের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে সফরকারীরা ১২১ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।
২০০৪ সালের শুরুতে হাসান তিলকরত্নে’র নেতৃত্বে দলের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়তে শুরু করলে অবশেষে দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁকে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দলের জড়তা কাটান ও নিজেকে শক্তিধর দলনায়কের ভূমিকায় উপস্থাপন করতে সচেষ্ট হন। শান্ত ও সাব্যস্ত প্রকৃতির অধিকারী। বাইরে থেকে খুব সহজে তাঁর অধিনায়কত্বের গুণাবলী চোখে পড়বে না। তবে, সাজকক্ষে সোজা-সাপ্টা কথাবার্তা ও ইতিবাচক মনোবৃত্তি নিয়ে খেলোয়াড়দের সাথে মত বিনিময় করেন এবং খেলায় আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। ২০০৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে দলের পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটতে থাকে। এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা দল শিরোপা জয় করে ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধবল ধোলাই করে। আইসিসি চ্যাম্পিয়নশীপে তুলনামূলকভাবে খারাপ ফলাফল করলেও অক্টোবর, ২০০৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদেরকে মেলে ধরে।
২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কান দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ৬ মে, ২০০৪ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ১৭০ রান সংগ্রহ করেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ২৪০ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। পরের টেস্টে ২৪৯ রানের দ্বি-শতক হাঁকান।
শ্রীলঙ্কার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে জোড়া শূন্য রানের সন্ধান পান। ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কান দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৯ জুলাই, ২০০৪ তারিখে কেয়ার্নসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১৩৩ ও ৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ম্যাথু হেইডেনের জোড়া শতক স্বত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও স্বাগতিকরা সিরিজে বিজয়ী হয়।
নতুন সরকার দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে অশান্ত ডিমেলের নিযুক্তিতে তাঁর সক্ষমতায় অপ্রত্যাশিতভাবে ছেদ ঘটায়। ২০০৪-০৫ মৌসুমে পাকটেল কাপের পূর্বে দলের ব্যবস্থাপনায় নাক গলায়। নতুন খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তিতে বাঁধাপ্রাপ্ত হবার বিষয়ে অভিযোগ আনেন। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ের ব্যাখ্যা দেন। তাসত্ত্বেও, দল নির্বাচকমণ্ডলীর সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।
২০০৬ সালের শুরুতে পিঠের আঘাতের কারণে খেলোয়াড়ী জীবনে বিঘ্ন ঘটায়। ফলশ্রুতিতে, মাহেলা জয়াবর্ধনেকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়। খুব ধীরে একদিনের দলে নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হন। তবে, দল নির্বাচকমণ্ডলীর সাথে স্নায়ুযুদ্ধ চলতে থাকে। মন্ত্রী পরিষদের হস্তক্ষেপে অস্ট্রেলিয়া সফরের শেষদিকে তাঁকে দলে যুক্ত করা হয়। সিরিজের মাঝামাঝি সময়ে আবারও দল নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতি তাঁর অঙ্গুলী হেলন ও ‘ভাঁড়ের নেতৃত্বে এক দল পুতুলের পরিচালনার’ কথা ব্যক্ত করেন। এ সিরিজে দুইটি অর্ধ-শতক হাঁকান। তন্মধ্যে, হোবার্টে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৮০ রান সংগ্রহ করেন।
শেষ দিনে ২০ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। ২০০৭-০৮ মৌসুমে মাহেলা জয়াবর্ধনে’র অধিনায়কত্বে শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১৬ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে হোবার্টে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ২৫ ও ৮০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ব্রেট লি’র অসাধারণ বোলিংশৈলী কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯৬ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্ট খেলেন।
প্রায় ২০ বছর টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। টেস্টগুলো থেকে ৩৯.০২ গড়ে ৫৫০২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৬টি শতকের ছয়টিই দ্বি-শতক ছিল। তৎকালীন টেস্টভুক্ত সকল দেশের বিপক্ষেই শতক পেয়েছিলেন। এছাড়াও, ওডিআইয়ে ৩৫.৫৭ গড়ে ৮৫২৯ রান তুলেন।
অবসর নেয়ার পর অনুমোদনবিহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে দিল্লি জায়ান্টস ও আইসিএল বিশ্ব একাদশের পক্ষে খেলেন। ফলশ্রুতিতে, অপর চারজন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারের সাথে তাঁকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সালে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে আসার পথ সুগম হয়।
ইনিংসের সূচনা দূর্দান্তভাবে করতেন। ব্যাটিং উপযোগী পিচে দলে বিরাট ভূমিকা রাখতেন। সনথ জয়সুরিয়া’র ঝুঁকি গ্রহণে কার্যকর উপস্থাপনা গ্রহণে সচেষ্ট হতেন। টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের অধিকাংশ সময়ই তাঁর সাথে উদ্বোধনী জুটিতে অংশ নিয়েছেন। ডানহাতে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে সহজাত প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এছাড়াও, ডানহাতে লেগ-স্পিন বোলিং করতেন।
সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর কৌশলগতভাবে দক্ষ ও কঠোর পরিশ্রমী ব্যাটিং কোচ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের সাথে কাজ করতে থাকেন। ২০১১ সাল থেকে জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। এরপর, মার্চ, ২০১৩ সালে সহকারী কোচ হিসেবে পদোন্নতি পান। তবে, এক বছর পর প্রধান কোচের দায়িত্ব থেকে পল ফারব্রেসের আকস্মিক পদত্যাগের ফলে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ হিসেবে ইংল্যান্ড সফর ও জুলাইয়ে নিজ দেশে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দলকে পরিচালনা করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। নেলুনী আতাপাত্তু নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির নেথমা আতাপাত্তু নাম্নী কন্যা রয়েছে।