|

মার্টিন ডনেলি

১৭ অক্টোবর, ১৯১৭ তারিখে ওয়াইকাতোর নারুয়াহিয়া এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পাচ্ছেন। বিশ্বের সেরা বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সাহসিকতার অপূর্ব প্রয়াস চালিয়ে ক্রিকেট জগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বছরগুলোয় ক্রিকেটবোদ্ধাদের কাছে ডেনিস কম্পটনের পরই তাঁর অবস্থান ছিল।

১৯৩৬-৩৭ মৌসুম থেকে ১৯৬০-৬১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি ও ওয়েলিংটন এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্স ও ওয়ারউইকশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খেলেছেন। তবে, ১৩১টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিলেও নিজ দেশে মাত্র ১৩টি খেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও, মাত্র সাত টেস্টে অংশ নিয়ে দেশের ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করেছেন ও নিজেকে দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেট বীরে পরিণত করতে পেরেছিলেন।

১৯ বছর বয়সে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অক্সফোর্ডে অধ্যয়ন করেন। এ সময়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট ছিলেন। লর্ডসে ভিক্টরি টেস্টের খেলায় ডোমিনিয়ন্সের সদস্যরূপে ইংরেজ একাদশের বিপক্ষে ১৩৩ রানের মনোরম ইনিংস খেলেন। দুই বছর পর একই মাঠে জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে ১৬৩ রান তুলেন।

১৯৩৭ থেকে ১৯৪৯ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সাতটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে কার্লি পেজের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ২৬ জুন, ১৯৩৭ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। মার্ভ ওয়ালেস, সনি মলোনি, এরিক টিন্ডিল, জ্যাক কাউয়ি ও ওয়াল্টার হ্যাডলি’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ০ ও ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

এরপর, ২৪ জুলাই, ১৯৩৭ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ২২ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। ৪ ও ৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ১৩০ রানে জয় পেলে সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ১৪ আগস্ট, ১৯৩৭ তারিখে লন্ডনের কেনসিংটন ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। প্রথম ইনিংসে ৩৮ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। ৫৮ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। এ সফরে ১৪১৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

১৯৪৯ সালে ওয়াল্টার হ্যাডলি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেছিলেন। এ সফরেই তিনি তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেছিলেন। পাঁচ শতক সহযোগে ২২৮৭ রান তুলে ব্যাটিংয়ের শীর্ষে অবস্থান করেন। টেস্টগুলোয় ৪৬২ রান সংগ্রহ করেন। ছয় ইনিংসের পাঁচটিতে অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছিলেন। লর্ডসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে ২০৬ রান তুলে তৎকালীন যে-কোন নিউজিল্যান্ডীয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন।

১১ জুন, ১৯৪৯ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৫৯ রানে পৌঁছানোকালে পূর্বেকার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানকে ছাঁপিয়ে যান। একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৬৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

এরপর, ২৩ জুলাই, ১৯৪৯ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭৫ ও ৮০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।

একই সফরের ১৩ আগস্ট, ১৯৪৯ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২৭ ও ১০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ক্রিকেটের পাশাপাশি রাগবি খেলায় দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। ফার্স্ট ফাইভ-এইটথ কিংবা সেন্টার অবস্থানে খেলতেন। ১৯৪৭ সালে ইংল্যান্ডের সদস্যরূপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন। ১৯৪৮ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। ১৯৯০ সালে নিউজিল্যান্ড স্পোর্টস হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করা হয় যে, টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি তাঁর ভঙ্গীমা, নান্দনিকতা, আত্মবিশ্বাস, প্রতিজ্ঞবদ্ধতা, সফলতা ও শিষ্টাচারিতার যাবতীয় গুণাবলীতে ভাস্বর ছিলেন। যুদ্ধসহ ঐ সময়ে দেশের ক্রিকেটের তলানীতে অবস্থান ও খেলায় আর্থিক নিরাপত্তার কারণে তাঁর ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবন ব্যাহত হয়। সি. বি. ফ্রাই বলেছিলেন যে, ক্লেম হিল ও ফ্রাঙ্ক ওলি’র সাথে তিনি তাঁর দেখা সেরা বামহাতি ব্যাটসম্যান। অবসর গ্রহণের পর সিডনিতে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ২২ অক্টোবর, ১৯৯৯ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনিতে ৮২ বছর ৫ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • |

    অমর সিং

    ৪ ডিসেম্বর, ১৯১০ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের গুজরাতের রাজকোটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৩০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। আলফ্রেড হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৩১-৩২ মৌসুম থেকে ১৯৩৯-৪০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…

  • | |

    তেম্বা বাভুমা

    ১৭ মে, ১৯৯০ তারিখে কেপ প্রভিন্সের কেপটাউনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করছেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করে থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছোটখাটো ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। তাসত্ত্বেও, অপূর্ব ধৈর্য্যশীলতার স্বাক্ষর রেখে খেলায় অংশ নিচ্ছেন।…

  • | |

    ডেভিড ওয়ার্নার

    ২৭ অক্টোবর, ১৯৮৬ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্যাডিংটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে লেগ-ব্রেক কিংবা ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। অসাধারণ ফিল্ডিং করে থাকেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিধ্বংসী ও ক্ষীপ্রতা সহকারে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হয়ে থাকেন। হাওয়ার্ড ওয়ার্নার…

  • | |

    এমএস ধোনি

    ৭ জুলাই, ১৯৮১ তারিখে বিহারের রাঁচিতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারত দলের পক্ষে সকল স্তরের ক্রিকেট খেলেছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী এমএস ধোনি ‘এমএস’, ‘মাহি’, ‘এমএসডি’, ‘থালা’, ‘ক্যাপ্টেন কুল’ প্রভূতঃ ডাকনামে ভূষিত…

  • |

    বিল প্লেল

    ১ ডিসেম্বর, ১৯৩৮ তারিখে মানাওয়াতুর পালমারস্টোন নর্থ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুম থেকে ১৯৬৭-৬৮ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ড ও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে অকল্যান্ড…

  • |

    বোয়েতা ডিপেনার

    ১৪ জুন, ১৯৭৭ তারিখে কেপ প্রভিন্সের কিম্বার্লিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বল বরাবর ব্যাটকে নিয়ে খেলতেই অধিক পছন্দ করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ঈগলস ও ফ্রি স্টেট এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে লিচেস্টারশায়ারের…