২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৬২ তারিখে অকল্যান্ডের হেন্ডারসনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মাঝারিসারিতে ধ্রুপদীশৈলীর ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৮০-এর দশকের শেষার্ধ্ব থেকে শুরু করে ১৯৯০-এর দশকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যান ছিলেন। এছাড়াও, ১৯৮০-এর দশকে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের বিরাট সাফল্যে অসাধারণ ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর ভ্রাতা জেফ ক্রো টেস্টে দারুণ ব্যাটিং করতেন। ভ্রাতার ন্যায় তিনিও দলের নেতৃত্বে ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। তরুণ অবস্থায় চমৎকার মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন, অসাধারণ ফিল্ডার ছিলেন।
টেস্ট ক্রিকেট থেকে ১৯৯৫ সালে অবসর গ্রহণকালীন ব্ল্যাক ক্যাপসের পক্ষে সর্বাধিক ৫৪৪৪ রান, সর্বাধিক ১৭ শতক, সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ২৯৯ রান ও কমপক্ষে ২০ খেলায় অংশগ্রহণকারী নিউজিল্যান্ডীয় খেলোয়াড় হিসেবে ৪৫.৩৬ গড়ে রান সংগ্রহের অধিকারী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ৪০ বছরের মধ্যে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক পঞ্জিকাবর্ষে চার সহস্রাধিক রানের সন্ধান পেয়েছেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলকে প্রায় একাকী শিরোপা বিজয়ের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্বকাপে দলের নেতৃত্বে থেকে উদ্ভাবনীশৈলী খেলার দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন।
ক্রিকেটপ্রিয় পরিবারের সন্তান ছিলেন। পিতা ডেভ ক্রো ক্যান্টারবারি ও ওয়েলিংটনের পক্ষে খেলেছেন। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা জেফ ক্রো নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ৩৯ টেস্ট ও ৭৫টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন এবং কিউই দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালনসহ আইসিসি ম্যাচ রেফারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। প্রায় দুই দশকব্যাপী ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে চারটি দলের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৭৯-৮০ মৌসুম থেকে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ড, সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টস ও ওয়েলিংটন এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৭১টি শতরানের সহায়তায় প্রায় বিশ হাজার রান তুলেছেন। ৫৬.০২ গড়ে রান তুলে ৫০ ইনিংসের অধিক খেলায় অংশগ্রহণকারী যে-কোন নিউজিল্যান্ডীয় ব্যাটসম্যানের তুলনায় নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। ১৯৮৭ সালে চল্লিশ বছরের মধ্যে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক পঞ্জিকাবর্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে চার হাজার রান সংগ্রহের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
১৯ বছর বয়সে ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম শক্তিধর ও প্রাণোচ্ছ্বল ক্রিকেটার হিসেবে আবির্ভূত হন। ধ্রুপদী ভঙ্গীমা নিয়ে ক্রো পরিবারের কিংবদন্তী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সচেষ্ট হন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে অনেকগুলো রেকর্ড স্বীয় নামের পার্শ্বে চিত্রিত করেন। আঘাতের কবল না পড়লে হয়তোবা আরও নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন ও সমৃদ্ধ করতে পারতেন ক্রিকেট ইতিহাসকে। উরুর আঘাত, পিঠের সমস্যা, পায়ে টান পড়াসহ অনেকবার হাঁটুর সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে, খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি ঘটাতে হয়।
১৯৮২ থেকে ১৯৯৫ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৭৭ টেস্ট ও ১৪৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮১-৮২ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রেগ চ্যাপেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। বৃষ্টিবিঘ্নিত ঐ খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৯ রানে সংগ্রহ করে রান-আউটে বিদেয় নেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ব্রুস এডগারের অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
এরপূর্বে, একই সফরের ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে অকল্যান্ডে একদিনের আন্তর্জাতিকে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছিলেন। তবে, ঐ খেলাগুলোতে তেমন সফলতার সন্ধান পাননি। টেস্ট অভিষেকে ৯ রান ও ওডিআইয়ে ব্যাট হাতে নেয়ার সুযোগ না পেলেও সামনের দিনগুলোয় নিজেকে বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম সেরা তরুণ ব্যাটসম্যানের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন।
১৯৮৩ সালে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১১ আগস্ট, ১৯৮৩ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৩৭ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৪৬ ও ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৩৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ডেভিড গাওয়ারের অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় স্বাগতিকরা ১২৭ রানে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ১৬ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ০ ও ১৯* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, প্রথম ইনিংসে স্লিপ অঞ্চলে ক্যাচ তালুবন্দীকালীন আঙ্গুলে চোট পান। এরপর, দ্বিতীয় ইনিংসে পেটের পীড়ায় ভুগেন। এ পর্যায়ে ২১০ মিনিট সময় ব্যয় করে দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করলে টেস্ট রেকর্ড গড়েন। এছাড়াও, ১/২১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায়।
কিংবদন্তীতুল্য অল-রাউন্ডার স্যার রিচার্ড হ্যাডলি’র ছত্রচ্ছায়ায় থেকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন ও নিজ দেশের গৌরব ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সংবাদপত্রে শিরোনামে চলে আসলেও নিবেদিতপ্রাণ ক্রিকেটার হিসেবে ছাঁই থেকে রূপকথার ন্যায় উত্থান ঘটান ও নিউজিল্যান্ডের পক্ষে অমূল্য রান সংগ্রহ করতে থাকেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩৮০ রান সংগ্রহকে তাঁর সেরা অবদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে, দূর্ভাগ্যবশতঃ ক্রিকেট বিশ্বে তিনি নিজেকে সঠিকভাবে ফুঁটিয়ে তুলতে পারেননি ও ক্রিকেট থেকে বিদেয় নেয়ার সময়ও এ ধারা অব্যাহত ছিল।
নান্দনিক খেলা উপহার দিতে সচেষ্ট থাকতেন। সঠিক সময়ে বলকে সপাটে মারতেন। তিনি তাঁর সময়ের চেয়েও নিজেকে এগিয়ে রেখেছিলেন। ওডিআইয়ে ফিল্ডিংয়ের সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে আক্রমণাত্মক ধাঁচের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে তৎপর ছিলেন। টি২০ ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতর সংস্করণের ন্যায় ‘ক্রিকেট ম্যাক্স’ নিউজিল্যান্ডে প্রবর্তন করেন। সকল ধরনের উত্থান-পতনের সাথে ক্রিকেট জীবন অতিবাহিত করলেও ক্রীড়াসুলভ মনোভাবে সকল সীমানা ছাড়িয়ে নিজের পরিচিত ঘটান। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে খেলাকালীন অধিকাংশ সময়ই নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের কাছে আদর্শ মানদণ্ড হিসেবে মূল্যায়িত হতেন। দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ের কারণে কিছু সময়ের জন্যে বিশ্বে সেরা তরুণ ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে পরিচিতি ঘটান। তেরো বছরের টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবন শেষে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও সর্বাধিক শতরান সংগ্রহ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দশ সহস্রাধিক রান সংগ্রহ, দলীয় অধিনায়ক হিসেবে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডকে সেমি-ফাইনালে নিয়ে যাওয়াসহ আশির দশকে দলের নিষ্প্রভতাকে পিছনে ফেলে সম্মুখের দিকে এগিয়ে চলায় অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। শতরানের সংখ্যার দিক দিয়ে ৪৫ ঊর্ধ্ব গড়ে জন রাইটের চেয়ে পাঁচটি বেশী করেছেন।
অপর দুই ভ্রাতার তুলনায় ছোট ছিলেন। তবে, শেষাবধি নিউজিল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯ বছর বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এ পর্যায়ে বিশ্বের অন্যতম তরুণ ব্যাটসম্যানের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলে উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় না থাকলেও রিচার্ড হ্যাডলি বিরাট ভূমিকা নিয়ে সামনের দিকে নিয়ে যান। তিনিও খুব দূরে ছিলেন না। নিখুঁত কৌশল অবলম্বনসহ স্ট্রোকপ্লের ফুলঝুঁড়ি ছোটান। উইকেটে অবস্থানকালে যে-কোন ধরনের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে রুখে দাঁড়াতেন। ধ্রুপদী মানসম্পন্ন খেলা প্রদর্শনে তেমন সময় নিতেন না ও প্রতিটি স্ট্রোকই সময় উপযোগী ছিল। এছাড়াও, কার্যকর মিডিয়াম-পেস বোলার হিসেবে মাঝে-মধ্যে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। এছাড়াও, ১৯৮৭ সালের রিলায়েন্স বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ডেভিড হটনের ক্যাচ দূর্দান্তভাবে তালুবন্দী করেছিলেন।
পিতা প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন। অকল্যান্ডের শহরতলীতে জন্মগ্রহণ করে তারকা ক্রিকেটারে পরিণত হন। কিশোর বয়সেই পূর্ণাঙ্গ ব্যাটসম্যানের যাবতীয় গুণাবলী বিদ্যমান ছিল। ব্যাটিং কৌশল অনেকাংশেই আক্রমণাত্মক ও রক্ষণাত্মক-উভয় ধাঁচের গড়া। প্রতিযোগীতাধর্মী মানসিক গড়নে সহজাত ক্রীড়াসুলভ নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। নিজের স্বর্ণালী সময়ে স্ট্রোক মারার জন্যে ন্যানোসেকেন্ডের অধিক সময় নিতেন না। মানসিক স্থিরতা অবলম্বনপূর্বক ব্যাট হাতে দাঁড়াতেন ও ভারসাম্য বজায় রেখে বল অনুযায়ী মোকাবেলা করতেন। দীর্ঘদেহ নিয়ে সামনের পায়ে ভর রেখে ধ্রুপদীশৈলীতে দর্শনীয় স্ট্রোক মারতেন। মাঠের সর্বত্রই শট মারায় দক্ষ ছিলেন। অপ্রতিরোধ্য অবস্থায় তাঁকে থামানো বেশ কঠিন ব্যাপার ছিল।
২১ বছর বয়সে ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটের সাথে পরিচিত হন। ভিভ রিচার্ডসের পরিবর্তে সমারসেট দলে তাঁর এ অংশগ্রহণে গুণাবলীর বিচ্ছুরণ ঘটান। পিটার রোবাক উল্লেখ করেছেন যে, ক্রিজে মার্টিন ক্রোকে অনেকাংশেই ‘ঈগলের ন্যায় অনেক উঁচু অবস্থানে বল প্রেরণের’ অধিকারী ছিলেন।
দলের জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়দের সাথে নিয়ে ও বোলিংয়ে রিচার্ড হ্যাডলি’র নেতৃত্বে এক পর্যায়ে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা দলের অন্যতম চালিকাশক্তি ছিলেন। অংশগ্রহণকৃত টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাটিং করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। টেস্টে ১৭ শতক সহযোগে ৪৫.৩৬ গড়ে ৫৪৪৪ রান সংগ্রহ করে কেবলমাত্র নিউজিল্যান্ডীয় অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিং ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের পর তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছেন। এ সময়ে তিনি নিউজিল্যান্ডের সর্বাধিকসংখ্যক শতরানের রেকর্ড গড়েছিলেন। ওডিআইয়ে ৩৮.৫৫ গড়ে ৪৭০৪ রান তুলেছেন।
আশির দশক থেকে বিশ্ব সেরা পেস ও স্পিন বোলারদের বিপক্ষে দেশে-বিদেশে মোকাবেলা করে সফল হন। বছরের পর বছর দলের ব্যাটিং চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। রিচার্ড হ্যাডলি’র অবসর গ্রহণের পর দলে বিশ্বমানসম্পন্ন একমাত্র খেলোয়াড় ছিলেন। তবে, এক সময় আঘাতের কবলে পড়েন। পা ও পিঠে আঘাতপ্রাপ্তি, পেশীতে টান পড়ার পর হাঁটুতে আঘাত পান।
১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ১৬ নভেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৫৫ ও ৩৩ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/২১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ইকবাল কাশিমের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ৬ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
ঐ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট খেলেন। জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ২৯ মার্চ, ১৯৮৫ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩ ও ২ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
এরপর, একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ৮ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৮৮ রানের সমকক্ষ হন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে খেলায় তিনি ০/১৪ ও ০/১৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রিচার্ড হ্যাডলি’র অনবদ্য অল-রাউন্ড সাফল্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ৪১ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই মৌসুমে ফিরতি সফরে নিজ দেশে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৫৯ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরপূর্বে ৫১ রানে দলের সংগ্রহ ১১৭/৪ থাকাকালে রিটায়ার্ড হার্ট হন। তবে, ১৯০/৬ থাকাকালে পুণরায় মাঠে ফিরে আসেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে তিনি ০/৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের জোড়া শতক সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৮৬ সালের গ্রীষ্মে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৪ জুলাই, ১৯৮৬ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। লর্ডসে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৬ রান তুলেন। এরফলে লর্ডস অনার্স বোর্ডে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের সংগৃহীত ৩০৭ রানের জবাবে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৫/২ হলে তিনি মাঠে নামেন। দূর্দান্ত শতক হাঁকিয়ে ফিল এডমন্ডসের বলে বিদেয় নেন। এ পর্যায়ে তিনি ৩৪৩ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে ২৪৩ বল মোকাবেলায় ১১টি চারের মার মেরেছিলেন। তবে, গ্রাহাম গুচের অনবদ্য শতকের কল্যাণে ইংল্যান্ড দল খেলাটিকে ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে নিজ দেশে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩ ও ১১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয় উইকেটে জন রাইটের (১৩৮) সাথে ২৪১ রানের জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডীয় রেকর্ড গড়েন। এছাড়াও, ০/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। জন রাইটের অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে নিজ দেশে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯ তারিখে অকল্যান্ডে সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৫২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭৮ ও ৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, জাভেদ মিয়াঁদাদের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় শেষ হয়।
১৯৯০-৯১ মৌসুমে কিউই দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে পাকিস্তান সফরে যান। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১৮ অক্টোবর, ১৯৯০ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২০ ও ১০৮* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ওয়াকার ইউনুসের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২৬ অক্টোবর, ১৯৯০ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৩১ ও ১০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীসহ ১/২২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ওয়াকার ইউনুসের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬৫ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ৩-০ ব্যবধানে বিজয়ী হয়। ২৪৪ রান সংগ্রহসহ ১ উইকেট লাভ করে ওয়াকার ইউনুস ও শোয়েব মোহাম্মদের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
একই মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ৩১ জানুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে দূর্দান্ত খেলেন। ৩০ ও ২৯৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ সালে অ্যান্ড্রু জোন্সকে সাথে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪৬৭ রান তুলেন। ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে সফরকারী দলের বিপক্ষে এটিই টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তৎকালীন যে-কোন উইকেটে সর্বকালের সেরা জুটি হিসেবে চিত্রিত ছিল। পরবর্তীতে, ২০০৬ সালে কলম্বোয় সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় উইকেট জুটিতে কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে ৬২৪ রান তুলে রেকর্ডটি নিজেদের অনুকূলে নিয়ে যান।
১৯৯১-৯২ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রাহাম গুচের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১৮ জানুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৭ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২০ ও ৪৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ফিল টাফনেলের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে ঐ টেস্টে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৪ রানে পরাজয়বরণ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট খেলেন। এ পর্যায়ে কিউই দলের নেতৃত্বে ছিলেন। ১ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৪২ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১৫ বোলিং বিশ্লেষণসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। স্মর্তব্য যে, জিম্বাবুয়ে-নিউজিল্যান্ডের মধ্যে এটিই ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্ট ছিল।
একই মৌসুমে কিউই দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ০ ও ১০৭ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, হাসান তিলকরত্নে’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।
১৯৯৪ সালে কেন রাদারফোর্ডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ক্রিকেটের স্বর্গভূমিতে আরও একবার নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৪২ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। সফরকারীরা টসে জয়লাভ করে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৭৬ রান তুলে। দলের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তিনিই কেবলমাত্র তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শ করতে পেরেছিলেন। দলের সংগ্রহ ৬৭/৩ থাকাকালে ২৫৫ বল মোকাবেলায় বিশটি চার ও তিনটি ছক্কায় এ সংগ্রহ করেন। তবে, ইংল্যান্ডের শেষ দুই উইকেট পতন করতে না পারায় নিশ্চিত জয় থেকে নিরাশ হতে হয়।
এ সফরের ৩০ জুন, ১৯৯৪ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১৯৫৮ সালের পর এ মাঠে সফরকারীদের প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাডাম প্যারোরে’র সাথে ৬ষ্ঠ উইকেটে ১৪১ রানের নতুন রেকর্ড গড়েন। ৭০ ও ১১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ফিল ডিফ্রিটাসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।
১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে কেন রাদারফোর্ডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৫ নভেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৮৩ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছি। সায়মন ডৌলের অল-রাউন্ড নৈপুণ্যে সফরকারীরা ১৩৭ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টে ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। খেলার চতুর্থ দিন ব্যক্তিগত ৪ রানে পৌঁছানোকালে জন রাইটের সংগৃহীত ৫৩৩৪ রান অতিক্রম করে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। খেলায় তিনি ১৮ ও ১০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্সের চমৎকার অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ভারত সফরে যান। ১৮ অক্টোবর, ১৯৯৫ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১১ ও ২৪ রান সংগ্রহ করেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ৮ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ৮ নভেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে কটকে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত এ খেলায় একমাত্র ইনিংসে ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায় তাঁর দল।
সব মিলিয়ে ১৬ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে তাঁর সংগৃহীত রানের গড় স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দশ রান বেশী ছিল। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত প্রথম খেলায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শতক হাঁকান। স্থানীয় পরিবেশে ৫০-ওভারের ক্রিকেটের পরিবর্তিত নিয়মের দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে নিউজিল্যান্ড দলকে সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে যেতে বলিষ্ঠ ভূমিকায় অগ্রসর হন। প্রায় বিপ্লবাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি। মারকুটে ব্যাটসম্যান মার্ক গ্রেটব্যাচকে ব্যাটিং উদ্বোধনে পাঠান ও অফ-স্পিনার দীপক প্যাটেলকে দিয়ে বোলিং আক্রমণ পরিচালনা করার সুযোগ দেন। পরবর্তীতে, অনেক দল বোলিং উদ্বোধনে স্পিনারদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। উদ্যমী কৌশল গ্রহণ করে নিউজিল্যান্ড দলকে সেমি-ফাইনালে নিয়ে যান।
আঘাতের কারণে সেমি-ফাইনালে খেলতে পারেননি ও পরবর্তীতে শিরোপা বিজয়ী পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর দল পরাজিত হয়। এটিই তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের বড় ধরনের আফসোসে পরিণত হয়। নয় খেলায় অংশ নিয়ে ১১৪ গড়ে ৪৫৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন ও প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। এ প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট পুরস্কার লাভ করেন।
এ সময়েই দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ লয়ে ও প্রভাব বিস্তারকল্পে অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ষোলটি টেস্ট বিজয়ের পাশাপাশি খেলোয়াড়ী জীবনে সংগৃহীত গড়ের চেয়ে দশ বেশী ৫৫.৫০ গড়ে রান পেয়েছেন। টেস্টের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ২৯৯ রান তুলেছেন। অবশ্য, স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ২৯৯ রানের একটি অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। শ্রীলঙ্কা বিপক্ষে এটিই তাঁর ব্যক্তিগত সেরা ইনিংস ও নিউজিল্যান্ডের তৎকালীন সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল। ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ৩০২ রান সংগ্রহের পূর্বে দুই দশকের অধিক সময় নিউজিল্যান্ডীয় হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহের রেকর্ড নিজের করে রেখেছিলেন। অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র অফ-স্ট্যাম্পের বল ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপ অঞ্চলে হাসান তিলকরত্নে’র মুঠোয় চলে গেলে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ত্রি-শতকধারী হবার গৌরব অর্জন থেকে বঞ্চিত হন।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে একমাত্র নিউজিল্যান্ডীয় খেলোয়াড় হিসেবে দশ সহস্রাধিক রান ও পঞ্চাশোর্ধ্ব গড়ে (৫৬.০২) রান তুলেছেন। ১৯৮৫ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৯৯২ সালে রাণীর জন্মদিনের সম্মাননায় ক্রিকেটে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ওবিই উপাধীতে ভূষিত হন। ২০০১ সালে নিউজিল্যান্ড স্পোর্টস হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর গণমাধ্যমে যুক্ত হন ও ক্রিকেট পণ্ডিত হিসেবে অংশ নেন। একসময় নিউজিল্যান্ডে স্কাই টেলিভিশনের ক্রিকেট সম্প্রচার দলের প্রধান ছিলেন। এছাড়াও, ২০০৮ সালে আইপিএলের শুরুরদিকের আসরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের সিইও হিসেবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে কাজ করেন। চিন্তাশীল লেখক ও ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের তরুণ প্রজন্মের ক্রিকেটারদের পরামর্শক ও দিক নির্দেশক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
১৯৮১ সালে লর্ডসে এমসিসি ইয়ং ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছিলেন। পঁচিশ বছর পর কাউড্রে লেকচারে পুণরায় ফিরে আসেন। ক্রিকেটে উজ্জ্বীবনী শক্তি আনয়ণে আত্মরক্ষা ও আম্পায়ারদের ভূমিকা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলকে পিচে বল ফেলা বা এলবিডব্লিউ আবেদনের বিষয়ে বল কোথায় যেতে পারতো তা না ভেবে হক-আই প্রযুক্তিকে সকল দেশে ব্যবহারের কথা তুলে ধরেন। ধীরগতিতে পুণরায় খেলার চেয়ে মাঠে অবস্থানরত আম্পায়ারদেরকে বল নিক্ষেপজনিত ঘটনা পর্যবেক্ষণসহ আম্পায়ারদের এলিট প্যানেল বিস্তৃতির কথা বলেছিলেন। প্রস্তাবিত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের বিশ্ব ক্রিকেট কমিটিতে প্রধান ভূমিকা রাখেন ও নভেম্বর, ২০০৯ সালে আইসিসিতে তুলে ধরা হয়।
মূলতঃ নিউজিল্যান্ডের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট দলগুলোকে নিয়ে সাংবার্ষিক প্রতিযোগিতা ও অধুনা বিলুপ্ত ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ ক্রিকেট ম্যাক্সের উদ্ভাবক ছিলেন। টি২০ ক্রিকেট প্রচলনের পূর্বে ১৯৯৬ সালে এ স্তরের ক্রিকেটের পথিকৃৎ ছিলেন। হলিউড তারকা রাসেল ক্রো তাঁর কাকাতো ভাই ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। স্ত্রী লরেইন ডোন্স সাবেক মিস ইউনিভার্স ও নিউজিল্যান্ডীয় টিভি অনুষ্ঠান ড্যান্সিং উইদ দ্য স্টার্সের ২০০৬ আসরের বিজয়ী ছিলেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি রাগবি খেলার সাথেও জড়িত ছিলেন। রাসেল ক্রো’র সাথে তিনি সাউথ সিডনি র্যাবিটোজ রাগবি লীগ কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়াও, রাগবি চ্যানেলে ফার্স্ট ফিফটিন রাগবি অন্তর্ভুক্ত করেন।
নভেম্বর, ১৯৯৫ সালে সর্বশেষ প্রতিযোগিতাধর্মী ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৫ বছর পর ২০১১ সালে ৪৯ বছর বয়সে এসে সাবেক দলীয় সঙ্গী অ্যাডাম প্যারোরে’র প্ররোচনায় অবিবেচনাপ্রসূত খেলার জগতে ফিরে আসার প্রয়াস চালান। এ সিদ্ধান্তে অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই আঘাতে জর্জরিত খেলোয়াড়ী জীবন শেষে পুণরায় এ বয়সে তাঁর ক্রিকেটে অংশ নেয়ার বিষয়কে স্বাগতঃ জানায়। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২০০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শে আরও ৩৯২ রান সংগ্রহে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অকল্যান্ডের ক্লাব ক্রিকেটে কর্নওয়ালের সদস্যরূপে পারনেলের বিপক্ষে খেলেন। কিন্তু, এক রান সংগ্রহের চেষ্টাকালে উরুতে টান পড়েন। প্রথম ইনিংসে মাত্র তিন বল খেলে রিটায়ার হার্ট হলে তাঁর এ স্বপ্ন শেষ হয় যায়। এ সময়ে বিশ্ববাসী তাঁর ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার কথা জানতে পারে।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলা দেখার কথা জানিয়েছিলেন। ১৫ অক্টোবর, ২০১২ তারিখে লিম্ফোমার কারণে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন ও মৃত্যু-পূর্ব এ ধারা বহমান থাকেন। ৫ জুন, ২০১৩ তারিখে ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকার ঘোষণা দেন। তবে, ২০১৪ সালে অবনতি ঘটে। আয়ুষ্কাল পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে আসে। অতঃপর, ৩ মার্চ, ২০১৬ তারিখে অকল্যান্ডে ৫৩ বছর ১৬৩ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।