মার্ক ক্রেগ
২৩ মার্চ, ১৯৮৭ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করে থাকেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে বামহাতে ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত তিনি। ২০১০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
২০১১ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ওতাগো এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্লুচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ তারিখে নেপিয়ারে অনুষ্ঠিত ওতাগো বনাম সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টসের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। শুরুতে ওতাগোর পক্ষে টি২০ ক্রিকেটে অংশ নিতেন। ২০০৮-০৯ মৌসুমের শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে আঘাতের কবলে পড়লে স্বাভাবিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। তবে, ঘরোয়া পর্যায়ের নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ওতাগোর সদস্যরূপে দারুণ খেলা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড দলে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ঐ মৌসুমে প্লাঙ্কেট শীল্ডে ৩৯.৭২ গড়ে ২২ উইকেট লাভের পাশাপাশি নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
২০১৪ থেকে ২০১৬ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ১৫ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০১৪ সালে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে ইশ সোধি’র বিকল্প হিসেবে তাঁকে দলে ঠাঁই দেয়া হয়েছিল। এছাড়াও, এ সফরে যেতে অনীহা প্রকাশকারী জিতেন প্যাটেল ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষে খেলাকে প্রাধান্য দিলে তিনি এ সুযোগ পান। ৮ জুন, ২০১৪ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অভিষেক ঘটা ঐ টেস্টে তিনি ১৮৮ রান খরচায় আট উইকেট পান। ৪/৯১ ও ৪/৯৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭* রান তুলেছিলেন। এরফলে, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে নিউজিল্যান্ড দল দ্বিতীয়বারের মতো জয়লাভে সমর্থ হয়। স্বাগতিকরা ১৮৬ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। এছাড়াও, স্টিফেন ফ্লেমিং ও ম্যাথু সিনক্লেয়ারের পর তৃতীয় নিউজিল্যান্ডীয় খেলোয়াড় হিসেবে নিজের প্রথম টেস্টে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভের অধিকারী হন।
কয়েক মাস পর ২০১৪-১৫ মৌসুমে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। ২৬ নভেম্বর, ২০১৪ তারিখে শারজায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেন সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে মোহাম্মদ তালহাকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৪/৯১। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। ১০ উইকেট দখল করে দলের বিজয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন। ৭/৯৪ ও ৩/১০৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ৬৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীতে নিউজিল্যান্ড দল ইনিংস ও ৮০ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২১ মে, ২০১৫ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৭৭ ও ১/৯৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। বেন স্টোকসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে সফরকারীরা ১২৪ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
প্রথম আট টেস্ট থেকে ৩১ উইকেট পেয়েছিলেন। পরবর্তী কয়েক বছরে তাঁর ব্যাটিংয়েও যথেষ্ট উত্তরণ ঘটে ও তাঁকে প্রকৃত মানসম্পন্ন অল-রাউন্ডারে পরিণত করে তুলে। তবে, মিচেল স্যান্টনারের উত্থানের পাশাপাশি ইশ সোধি’র লেগ-স্পিনকে প্রাধান্য দেয়া হলে প্রথম একাদশে তাঁকে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে হয়।
২০১৫-১৬ মৌসুমে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৭ নভেম্বর, ২০১৫ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের এটিই প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট ছিল। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১১ ও ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৫৩ ও ০/২২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। জশ হজলউডের চমৎকার বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। ২০১৬-১৭ মৌসুমে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো ভারত সফরে যান। ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে বিরাট কোহলি’র উইকেট লাভের মাধ্যমে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১/৫৯ ও ১/৮০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। রবীন্দ্র জাদেজা’র অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৯৭ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।