২৩ আগস্ট, ১৯৭২ তারিখে সারের ক্রয়ডন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘বুচ’ কিংবা ‘ব্যাজ’ ডাকনামে পরিচিত মার্ক বুচার ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ক্রয়ডনভিত্তিক ট্রিনিটি স্কুল ও আর্চবিশপ টেনিসন্সে অধ্যয়ন করেছেন। মাতা এলেন জ্যামাইকীয় ও পিতা অ্যালান বুচার ইংরেজ ছিলেন। ক্রিকেটপ্রিয় পরিবারে তাঁর জন্ম। ১৯৯২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৯৭ থেকে ২০০৪ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৭১ টেস্টে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৭ সালে নিজ দেশে মার্ক টেলরের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৫ জুন, ১৯৯৭ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৮ ও ১৪ রান সংগ্রহ করে উভয় ক্ষেত্রে মাইকেল কাসপ্রোভিচের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, নাসের হুসাইনের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পেলে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৯৮ সালে নিজ দেশে হান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৩ জুলাই, ১৯৯৮ তারিখে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৩৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭৫ ও ২২ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ০/১২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। অ্যাঙ্গাস ফ্রেজারের অপূর্ব বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে।
২০০১ সালে নিজ দেশে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ২৩ আগস্ট, ২০০১ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২৫ ও ১৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। শেন ওয়ার্নের অসাধারণ বোলিংয়ের সুবাদে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৫ রানে পরাভূত হলে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। এ সিরিজে ৪ উইকেট লাভসহ ৪৫৬ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০১-০২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলতে যান। এ মৌসুমে নাসের হুসাইনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে খেলেন। ১৩ মার্চ, ২০০২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ৩৪ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। গ্রাহাম থর্পের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯৮ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০০২ সালে নিজ দেশে সনথ জয়সুরিয়া’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০৫ রান তোলার পর উপর্যুপরী দুই গ্রীষ্মে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করার কৃতিত্বের অধিকারী হন। ১৩ জুন, ২০০২ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ১২৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অ্যালেক্স টিউডরের বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। এ সিরিজে ৩৩৯ রান সংগ্রহ করে মাহেলা জয়াবর্ধনে’র সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৩ সালের গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডে সফররত হিথ স্ট্রিকের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের মুখোমুখি হন। লর্ডসে সিরিজের প্রথম টেস্টে সফরকারীদের বিপক্ষে ইনিংস ও ২৩৩ রানের ব্যবধানে দলের সহজ বিজয়ে অংশ নেন। ১৩৭ রান তুলে জয়ের ভিত রচনা করেন। টসে পরাজয়ের পর প্রথম দিনে ইংল্যান্ড দলের সংগ্রহ ১৮৪/৩ দাঁড় করান। দ্বিতীয় উইকেটে মার্কাস ট্রেসকোথিকের সাথে ৭৬ রানের জুটি গড়েন। দ্বিতীয় দিনে তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শ করেন। তাঁর সংগৃহীত ১৩৭ রান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যে-কোন ইংরেজ ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। ছয় ঘণ্টার অধিক সময় নিয়ে দলের সংগ্রহকে ৪৭২ রানে নিয়ে যান। নিজস্ব সপ্তম টেস্টে তিনি এ শতকের সন্ধান পান। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ১/৮ ও ৪/৬০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৯২ রানে পরাভূত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৩ সালে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২১ আগস্ট, ২০০৩ তারিখে লিডসের হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭৭ ও ৬১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। গ্যারি কার্স্টেনের অনবদ্য ব্যাটিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ১৯১ রানে পরাভূত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
২০০৪-০৫ মৌসুমে মাইকেল ভনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ২০০৪ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫ ও ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, জ্যাক ক্যালিসের অসাধারণ ব্যাটিং সাফল্যসহ মন্দালোকের কারণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
টুইটারে নিজেকে ‘সঙ্গীতজ্ঞ, গীতিকার, পণ্ডিত, সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, গল্ফে আসক্ত, মদের গুণগ্রাহী, গ্রাহাম গ্রীনের সমর্থক, সূর্যকিরণ বিচ্ছুরক’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। দলীয় সঙ্গী অ্যালেক স্টুয়ার্টের ভগ্নী জুডির সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তবে, এক সন্তানের জনক হবার পর তাঁদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলাকালীন একবার তিনি বুচারকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন যে, ‘তিনি আমাকে পরিত্যাগ করলেও আমি জুডির বিয়ের বিষয়ে সতর্ক করেছিলাম। তিনি দারুণ শ্রোতা ও দ্রুত এতে সাড়া দেন।’
