১ মে, ২০০০ তারিখে ক্লার্কসডর্প এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলিংয়ের দিকেই অধিক জোর দিয়ে থাকেন। বামহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
লায়েরস্কুল গুডকপে অধ্যয়ন করেছেন। ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি (২.০৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে নয় মাসের মধ্যে অবিশ্বাস্যভাবে তাঁর উত্থান ঘটতে থাকে। তাঁর বোলিংয়ের ধরন অনেকাংশে মিচেল জনসন ও ডেল স্টেইনের সংমিশ্রণে গড়া। বামহাতে কৌণিকভাবে স্বীয় উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে পেস সহযোগে বোলিং কর্মে অগ্রসর হন। ঘণ্টায় ৮৩ থেকে ৯০ মাইল গতিবেগে বোলিং করেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর অংশগ্রহণের দুই মাস পর ১৫ মিনিটের বড় যমজ ভ্রাতা ডুয়ান খেলতে নামে। তাঁরা উভয়ে রাগবি, ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিক্সে দক্ষ। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ইস্টার্ন প্রভিন্স, নাইটস, নর্থ ওয়েস্ট ও ওয়ারিয়র্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, নাইটস, ডারবান হিট, ওয়ারিয়র্স, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের পক্ষে খেলেছেন। ১৮ বছর বয়সে ১১ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে জিকিবার্হায় নর্থ ওয়েস্টের সদস্যরূপে ইস্টার্ন প্রভিন্সের বিপক্ষে খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।
এপ্রিল, ২০১৮ সালে সিএসএ প্রভিন্সিয়াল ওয়ান-ডে চ্যালেঞ্জে নর্থ ওয়েস্ট ড্রাগন্সের পক্ষে লিস্ট-এ ক্রিকেটে প্রথম খেলেন। এপ্রিল, ২০১৯ সালে সিএসএ টি২০ চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় নাইটসের সদস্যরূপে টি২০ খেলায় প্রথমবারের মতো অংশ নেন। আইপিএলের ২০২১ সালের আসরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পক্ষে প্রথমবারের মতো খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। অতি উচ্চমানসম্পন্ন বোলার হিসেবে চিত্রিত হন ও আইপিএল নিলামে তাঁর ভিত্তিমূল্য ২০ লক্ষ ভারতীয় রূপী ধার্য্য করা হয়। আইপিএলের প্রথম মৌসুমে মাত্র দুই খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। এরপর সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদে চলে যান।
জানুয়ারি, ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দূর্দান্ত খেলে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টিগোচরীভূত হন।
২০২১ সাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০২১-২২ মৌসুমে নিজ দেশে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। বক্সিং ডে টেস্টে তিনি বিরাট কোহলি’র উইকেট পান। মৈয়াঙ্ক আগরওয়াল তাঁর দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। খেলায় তিনি ১/৬৯ ও ৪/৫৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১৯ ও ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। কেএল রাহুলের দূর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ১১৩ রানে পরাভূত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। একই সফরের ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে পার্লে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।
একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ডিন এলগারের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২* ও ১০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৯৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ম্যাট হেনরি’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়ানৈপুণ্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ২৭৬ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ টেস্ট শেষে ২০.৩৫ গড়ে ২৮ উইকেট পেয়েছেন।
২০২২-২৩ মৌসুমে ডিন এলগারের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৪৮ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৫৯ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৮৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ডেভিড ওয়ার্নারের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১৮২ রানে পরাভূত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
২০২৩-২৪ মৌসুমে নিজ দেশে রোহিত শর্মা’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখের বক্সিং ডেতে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৫৯ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৮৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৫২ ও ৩/৩৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ডিন এলগারের অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩২ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে ধনঞ্জয় ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে পিএন সিলভা’র প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে এমভিটি ফার্নান্দোকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/৩৫। খেলায় তিনি ৭/১৩ ও ৪/৭৩ লাভ করেন। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৩৩ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। ঐ টেস্টে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই মৌসুমে নিজ দেশে শান মাসুদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/৪৩ ও ৬/৫২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয়বারের মতো ও প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। এ পর্যায়ে ২০.৭৪ গড়ে ৭০ উইকেট দখল করেন। এছাড়াও, ২ ও ১৬* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এইডেন মার্করামের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২ উইকেটে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ৩ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৫৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৬২ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৩৬ ও ২/১০১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। রায়ান রিকলটনের দূর্দান্ত দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয়লাভের পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ৮০ রান সংগ্রহসহ ১০ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২৫-২৬ মৌসুমে তেম্বা বাভুমা’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের অন্যতম সদস্যরূপে ভারত সফরে যান। ২২ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৯৩ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৬/৪৮ ও ১/২৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৪০৮ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাভূত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
