| | | |

মনসুর আলী খান পতৌদি

৫ জানুয়ারি, ১৯৪১ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মধ্যপ্রদেশের ভোপালে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, প্রশাসক ও ম্যাচ রেফারি ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

মজা করে তাঁকে ‘ভোপালের নবাব’ হিসেবে ডাকা হতো। নীল রক্ত বহমান, অক্সফোর্ডের শিক্ষিত, দর্শনীয়, বুদ্ধিমান হিসেবে স্ব-মহিমায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেছিলেন। পতৌদি সিনিয়র ইফতিখার আলী খান পতৌদি ও সাজিদা সুলতান দম্পতির সন্তান ছিলেন। উইনচেস্টারে অধ্যয়ন করেছেন। ক্ষীপ্র মনোভাব ও আগ্রাসী ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি ‘টাইগার’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন।

৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (১.৬৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৭৫-৭৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লি ও হায়দ্রাবাদ এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৬ বছর বয়সে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনা ঘটে। ১৯৫৭ সালে সাসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেন। এক পর্যায়ে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দিল্লি দলের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। এরপূর্বে হায়দ্রাবাদ দলের সংরক্ষিত খেলোয়াড় ছিলেন। এছাড়াও, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৬১ সালে দূর্ঘটনায় ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। সমগ্র আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনই এক চোখ নিয়ে খেলেছেন। তাসত্ত্বেও, সঠিক সময় ও বলের সাথে সংযোগ ঘটাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল।

১৯৬১ থেকে ১৯৭৫ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৪৬ টেস্টে অংশ নিয়েছেন। চোখের দূর্ঘটনার ছয় মাস পর নিজ দেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। ১৯৬১-৬২ মৌসুমে টেড ডেক্সটারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৬১ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অভিষেক টেস্টে ১৩ ও ৬১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্টে নিয়ে গড়া সিরিজটি ০-০ ব্যবধানে এগুতে থাকে। মাদ্রাজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৩ রান তুলে দলের বিজয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন।

১৯৬২ সালে শক্তিধর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে তাঁকে সহঃঅধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়। তবে, অল্প কিছুদিন পরই নরি কন্ট্রাক্টর আঘাতের কবলে পড়লে তাঁকে দলের নেতৃত্বভার গ্রহণ করতে হয়। মাত্র ২১ বছর বয়সে ভারতের টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এরফলে, অদ্যাবধি ভারতের সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কের মর্যাদা লাভ করে আসছেন। অংশগ্রহণকৃত ৪৬ টেস্টের ৪০টিতেই ভারত দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯বার তাঁর দল পরাজয়ের কবলে পড়ে ও সমসংখ্যক খেলা ড্রয়ে পরিণত হয়। তাঁর অধিনায়কত্বে ভারত দল ৯ টেস্টে জয় পায়। তন্মধ্যে, প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত দল জয়লাভ করেছিল। ১৯৭০ সালে অজিত ওয়াড়েকরকে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়।

১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে নিজ দেশে জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৫ মার্চ, ১৯৬৫ তারিখে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৭৭ রানে পৌঁছানোকালে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ মুঠোয় পুড়েন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ডুনেডিনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২৪ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

সব মিলিয়ে ছয়টি শতরান সহযোগে ২৭৯৩ রান তুলেছেন। এক টেস্টে ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে সর্বাধিক ৫৫৪ বল মোকাবেলা করার রেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছেন। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে নিজ দেশে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৩ জানুয়ারি, ১৯৭৫ তারিখে বোম্বেতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। উভয় ইনিংসে ৯ রান করে সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ২০১ রানে জয় পায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে জয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

১৯৬৮ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর স্পোর্টসওয়ার্ল্ডের সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন। পরবর্তীতে, জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার, আইসিসি ম্যাচ রেফারি, প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আইপিএল পরিচালনা পর্ষদের সাথে যুক্ত হন। দুই টেস্ট ও ১০টি ওডিআইয়ে ম্যাচ রেফারি হিসেবে খেলা পরিচালনা করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। বিখ্যাত অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। সাঈফ আলী খান ও সোহা আলী খান নাম্নী দুই সন্তান অভিনয় জগতে এবং অপর সন্তান সাবা আলী খান অলঙ্কার নক্সাকার। ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১১ তারিখে ৭০ বছর ২৬০ দিন বয়সে দিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালে তাঁর দেহাবসান ঘটে। ২০১৩ সাল থেকে তাঁর স্মরণে বিসিসিআই বার্ষিক স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে। ইংল্যান্ডে খেলাকালীন ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের নামকরণ তাঁর নামানুসরণে রাখা হয়েছে।

Similar Posts

  • | |

    ক্রিস হ্যারিস

    ২০ নভেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। বামহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘লাগস’ ডাকনামে পরিচিতি পান। কিউই তারকা ব্যাটসম্যানের খ্যাতি অর্জন করেন। প্রথম নিউজিল্যান্ডীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওডিআইয়ে দুই সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন ও প্রথম…

  • | |

    ফ্রাঙ্ক ইরিডেল

    ১৯ জুন, ১৮৬৭ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের সারে হিলস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও সাংবাদিক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৮৯০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। জনৈক আয়রনমোঙ্গার ও আইরিশ বংশোদ্ভূত স্ত্রীর সন্তান ছিলেন। দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী। রক্ষণাত্মক ধাঁচ অবলম্বনসহ চমৎকার মারমুখী ব্যাটিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। সতেরো বছর বয়সে সফররত…

  • |

    লেন টাকেট

    ১৯ এপ্রিল, ১৮৮৫ তারিখে নাটালের ডারবানে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ১৯১০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে নাটাল ও অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯০৯-১০ মৌসুম থেকে ১৯২৯-৩০ মৌসুম পর্যন্ত…

  • |

    ইমরান তাহির

    ২৭ মার্চ, ১৯৭৯ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ২০১০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। রমজান তাহির ও আতিয়া তাহির দম্পতির সন্তান। তাঁর আরও দুই ভ্রাতা রয়েছে।…

  • | | |

    অজয় জাদেজা

    ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ তারিখে গুজরাতের জামনগর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুম থেকে ২০১৩-১৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লি, হরিয়ানা এবং জম্মু…

  • |

    মনোজ প্রভাকর

    ১৫ এপ্রিল, ১৯৬৩ তারিখে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮২-৮৩ মৌসুম থেকে ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লি ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডারহামের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮৪ থেকে…