| | |

মনিন্দার সিং

১৩ জুন, ১৯৬৫ তারিখে মহারাষ্ট্রের পুনায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, আম্পায়ার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লে লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

ভারতের বিখ্যাত বামহাতি স্পিনার। ১৯৮০-৮১ মৌসুম থেকে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, শ্রপশায়ারের পক্ষে খেলেছেন। ১৭ বছর বয়সে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে প্রথমবারের মতো আলোচনায় চলে আসেন। এক পর্যায়ে তাঁকে বিষেন সিং বেদী’র পরবর্তী উত্তরসূরী হিসেবে বিবেচিত করা হতো। তবে, এক দশক পরই তাঁকে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করতে হয়েছিল। সম্ভাব্য প্রতিশ্রুতিশীলতাকে পরবর্তীতে উঁচু স্তরের ক্রিকেটে মেলে ধরতে পারেননি। সকল ধরনের বোলিং কৌশল নিয়ে নিজেকে ভারত দলে বিলিয়ে দিতে তৎপরতা দেখান। পাশাপাশি, মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে বিদ্যুৎগতিতে ফিল্ডিং কর্মে অগ্রসর হতেন।

১৯৮২ থেকে ১৯৯৩ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৩৫ টেস্ট ও ৫৯টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ১৭ বছর ১৯৩ দিন বয়সে ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৮২ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরফলে, ভারতের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট অভিষেকধারী হন। পরবর্তীতে, শচীন তেন্ডুলকর তাঁর এ রেকর্ড ভঙ্গ করে নিজের করে নেন। প্রতিপক্ষীয় দলনায়ক ইমরানের খানের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৮৬ রানে জয় পেয়ে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। ০/৬৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান ও এলবিডব্লিউতে জোড়া শূন্য রানে বিদেয় নেন। একই সফরের ২১ জানুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে করাচীতে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।

১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে নিজ দেশে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে নাগপুরে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেন। চমৎকার খেলেছিলেন। ৩/৫৬ ও ৭/৫১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দিলীপ বেঙ্গসরকারের অনবদ্য ক্রীড়াশৈলীতে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১০৬ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। দিলীপ বেঙ্গসরকারের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

টেস্ট ক্রিকেটে পদার্পণের শুরুটা তেমন ভালো না হলেও ১৯৮৬ সালের গ্রীষ্মে ইংল্যান্ড সফরে প্রতিভা বিকাশে অপূর্ব বিচ্ছুরণ ঘটান। হেডিংলি টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বলে শূন্যে ভাসানোসহ বৈচিত্র্যমূখী বোলিং ও বলে স্পিন আনয়ণে অনেককেই বিমোহিত করেন।

ভারতে ফিরে বিখ্যাত মাদ্রাজ টেস্টে অংশ নেন। টাই হওয়া ঐ টেস্টের শেষ উইকেট পতনের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। তবে, খুব শীঘ্রই নাগপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো দশ উইকেটের সন্ধান পান। খ্যাতি পাওয়া ব্যাঙ্গালোর টেস্টে সফররত পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে অপূর্ব খেলেন। প্রথম দিনে মধ্যাহ্নভোজনের পূর্বে পাঁচ উইকেট পান ও ৭/২৭ নিয়ে ঐ ইনিংস শেষ করতে বিরাট ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৭ সালের রিলায়েন্স বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায়ও বেশ ভালো খেলেন।

তবে, তিন বছরে ৬ টেস্টে অংশ নিয়ে মাত্র ৪ উইকেটের সন্ধান পান। ১৯৯৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আরও ৪ উইকেট লাভ করেন। এরপর থেকেই তিনি ছন্দহীনতার কবলে পড়েন। সাধারণমানের ব্যাটিংয়ের উত্তরণ ঘটালেও তা দলে ফেরার পথ সুগম করেনি। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নিজ দেশে ডেভ হটনের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৩ মার্চ, ১৯৯৩ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ৩/৭৯ ও ৪/৬৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, বিনোদ কাম্বলি’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩ রানে জয় পায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। সব মিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে ৩৭ ঊর্ধ্ব গড়ে ৮৮ উইকেট দখল করেছিলেন। এ সময়ে তাঁর বয়স ছিল ২৭ বছর।

২০০৭ সালে ১.৫ গ্রাম কোকেইন বহনের দায়ে গ্রেফতার হন। একই বছর আবারও বিতর্কের সাথে জড়ান। কব্জীতে আঘাত পেলে তাঁকে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বন্ধু ও পরিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ আঘাত দূর্ঘটনার ফলে হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে, আত্মহত্যার প্রচেষ্টা হিসেবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর ধারাভাষ্যকর্মে জড়িয়ে পড়েন ও টেলিভিশনে ক্রিকেট বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এছাড়াও, আম্পায়ার ও কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। সংক্ষপ্ত সময়ের জন্যে দিল্লির কোচ হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। মহিলাদের একটি ওডিআই, একটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও পাঁচটি লিস্ট-এ ক্রিকেট পরিচালনা করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত।

Similar Posts

  • | |

    হার্বি কলিন্স

    ২১ জানুয়ারি, ১৮৮৮ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ডার্লিংহার্স্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর প্রদর্শন করেছেন। ১৯২০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘হর্সশো’ কিংবা ‘লাকি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। অ্যালবিওন স্ট্রিট সুপারিওর পাবলিক স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯০৯-১০…

  • | |

    হেনরি উড

    ১৪ ডিসেম্বর, ১৮৫৩ তারিখে কেন্টের ডার্টফোর্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও আম্পায়ার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতে পারতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্ট ও সারে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮৭৬ থেকে ১৯০০ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। তন্মধ্যে, সারে…

  • | |

    ফিল সিমন্স

    ১৮ এপ্রিল, ১৯৬৩ তারিখে ত্রিনিদাদের অ্যারিমা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা প্রদর্শন করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। কৈশোরে সকল ধরনের খেলায় পারদর্শী ছিলেন। তবে, পরবর্তীতে ক্রিকেটের দিকেই অধিক ঝুঁকে পড়েন। গর্ডন গ্রীনিজকে…

  • | |

    ক্রিস কেয়ার্নস

    ১৩ জুন, ১৯৭০ তারিখে মার্লবোরার পিকটনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে সবিশেষ পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেয়ার পাশাপাশি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে ডানহাতে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে বিপজ্জ্বনক মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। তাঁর…

  • | | | |

    এরিক ফ্রিম্যান

    ১৩ জুলাই, ১৯৪৪ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সেমাফোর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ, প্রশাসক ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে কার্যকর ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘ফ্রিটজ’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুম থেকে ১৯৭৩-৭৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…

  • | | |

    আগা সাদত আলী

    ১১ জুন, ১৯২৯ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও আম্পায়ার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৯৫০-এর দশকে পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ইমতিয়াজ আহমেদ, খান মোহাম্মদ ও পার্সি ক্রিকেটার রুসি দ্বিনশ’য়ের সাথে তাঁকে তুলনা করা হতো। পাকিস্তানের ক্রিকেটের শুরুর দিনগুলোয় প্রথম-শ্রেণীর…