Skip to content

৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ তারিখে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করেন। বাংলাদেশ দলের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

নিজ শহর ময়মনসিংহে ক্রিকেট খেলা শিখেন। সনথ জয়সুরিয়া, কেভিন পিটারসন, শোয়েব মালিক, স্টিভ স্মিথ প্রমূখের ন্যায় খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করেছিলেন বোলার হিসেবে। ব্যাটসম্যানে রূপান্তর হবার পাশাপাশি অফ-ব্রেক বোলিংয়ে দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে ৩/৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। অল-রাউন্ডার হিসেবে আটোসাঁটো অফ-স্পিন বোলিং করেন ও মাঝারিসারিতে ব্যাটিং করে থাকেন।

২০০০ সালের এসিসি অনূর্ধ্ব-১৫ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ঢাকায় আসেন। ২০০৪ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। পরবর্তীতে, ১৯ বছর বয়সে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন। জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৫৫ ও ৪২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলায় ২ উইকেট লাভসহ ৩৬ রান তুলেন। তবে, অল্পের জন্যে জয় পায়নি বাংলাদেশ দল। এরফলে, বছরের শেষদিকে কেনিয়া সফর ও পরবর্তীতে টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় তাঁর অংশগ্রহণের পথ সুগম হয়।

‘রিয়াদ’ ডাকনামে পরিচিতি পান। ২০০৪-০৫ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে মধ্যাঞ্চল ও ঢাকা বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বরিশাল বুলস, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, চিটাগং কিংস, জেমকন খুলনা, জ্যামাইকা তল্লাজ, খুলনা টাইটান্স, কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স এবং সেন্ট কিটস ও নেভিসের পক্ষে খেলেছেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ তারিখে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দল বনাম বাংলাদেশ ‘এ’ দলের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। ২০০৫ সাল থেকে ঢাকা বিভাগের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। ২০০৮-০৯ মৌসুমে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের মর্যাদা পান। ৫৪.৬১ গড়ে ৭১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে অংশ নিয়েছেন। চিটাগং কিংস কর্তৃপক্ষ $১১০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে তাঁকে দলে ভিড়ায়। এরপর, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। ২০১৭ সালের পাকিস্তান সুপার লীগে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের সাথে খেলেন।

২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত চারদেশীয় প্রতিযোগিতায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে টি২০আইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে, নিউজিল্যান্ড গমনার্থে ওডিআই দল থেকে বাদ পড়েন ও তাঁর পরিবর্তে নাজমুল ইসলামকে দলে নেয়া হয়। এছাড়াও, ঐ বছরে এমসিসি ইয়ং ক্রিকেটার্সের সদস্য ছিলেন।

২৫ জুলাই, ২০০৭ তারিখে কলম্বোর আরপিএসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অভিষেক ঘটে। বেশ ভালো খেলেন। কয়েকটি উইকেট পান ও ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। তবে, ঐ খেলায় বাংলাদেশ দল পরাজিত হয়েছিল। এরপর, পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে নিজস্ব প্রথম অর্ধ-শতরান করে। এরফলে, দলে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করে নেন। ক্ষণিকের জন্যে সীমিত-ওভারের খেলায় পারদর্শীতা প্রদর্শন করেন। ১ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ তারিখে নাইরোবির জিমখানায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক কেনিয়ার বিপক্ষে টি২০আইয়ে প্রথম খেলেন।

এরপর, ২০০৮ সালে স্বল্পকালের জন্যে দলের বাইরে থাকেন। তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ পুণরায় দলে ফিরে আসতে সক্ষম হন। ২০০৯ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজা’র নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ৯ জুলাই, ২০০৯ তারিখে কিংসটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রুবেল হোসেনের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। সাদা-বলের খেলায় দূর্দান্ত সূচনা করেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ব্যর্থ হলেও অভিষেক সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ঐ খেলায় আট উইকেট পান। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ-উইকেট লাভ করেছিলেন। তামিম ইকবালের ১২৮ রানের বদান্যতায় সফরকারী দল ৯৫ রানে জয়লাভ করে। এরফলে, প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ দল বিজয়ী হয় ও খেলায় সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।

ঐ বছরের শেষদিকে ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে গড়া ত্রি-দেশীয় সিরিজে ব্যাট হাতে ১৯৩ গড়ে রান পেয়েছিলেন। এ সিরিজ জয়ের পর দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় ব্যাট হাতে নিয়ে ছন্দ ফিরে পান। উপর্যুপরী পাঁচ খেলায় অংশ নিয়ে পাঁচবার অর্ধ-শতক হাঁকান।

২০০৯-১০ মৌসুমে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৯৬ রানে পৌঁছানোকালে পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শতক হাঁকান। ফাস্ট বোলারদের রুখে দিয়ে কভার অঞ্চলের দিকে প্রেরিত ড্রাইভগুলো বেশ দৃষ্টিনন্দন ছিল ও দর্শকদের মন জয় করে। এ পর্যায়ে ভারতের ভিভিএস লক্ষ্মণের ব্যাটিংশৈলীর সাথে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেললেও দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁকে শীর্ষসারিতে নিয়ে যাননি মূলতঃ ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে দূর্বলতার কারণে। অথচ, চার নম্বর অবস্থানের জন্যে স্থায়ীভাবে কাউকে রাখাও হয়নি। খেলায় তিনি ১১৫ ও ৪২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/২১ ও ২/৮৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, মার্টিন গাপটিলের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১২১ রানে পরাজিত হয়েছিল।

ওডিআইয়ে অবশ্য সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন। প্রচুর রান পেয়েছেন। স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলীয় সদস্য হন। শফিউল ইসলামের সাথে গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের বিজয়ে বিরাট ভূমিকা পালন করেন। বিশ্বকাপ শেষে তামিম ইকবালের পরিবর্তে বাংলাদেশের সহঃঅধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন।

অক্টোবরে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। তবে, জ্বরের কারণে সবগুলো খেলাতেই অনুপস্থিত ছিলেন। আরোগ্যলাভের পর দলে পুণরায় যুক্ত হন ও নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনটি ওডিআইয়ে অংশ নেন। সবমিলিয়ে মাত্র ৫৬ রান তুলেন ও এক খেলায় বোলিংয়ে অগ্রসর হন। সাত বল থেকে তিন উইকেট লাভ করেছিলেন।

২০১২ সালের শেষদিকে বাংলাদেশে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআই সিরিজ বিজয়ে নেতৃত্ব দিয়ে তারকা বনে যান। ঐ সিরিজে ১৫৯ রান পেয়েছিলেন। ইনিংসে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দলের বিজয়ের লক্ষ্যে অগ্রসর হন। পরবর্তী দুই বছর দূর্বলমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের পর দলে অবস্থানের বিষয়টি ক্রমাগত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে থাকে। তাসত্ত্বেও ২০১৪ সালের শীতকালে জিম্বাবুয়ের যুঁৎসই খেলা প্রদর্শন করেন। সেখানে অবশ্য ক্ষাণিকটা দূর্বলমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন।

ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সালে নিজ দেশে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রান সংগ্রহে তৎপরতা দেখাতে পারেননি। ২০১৪ সালের এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতায়ও নিয়মিতভাবে উইকেট লাভ করতে পারেননি। ২০১৪ সালের বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায়ও খেলার এ ধারা অব্যাহত থাকে। ঐ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দল সুপার-টেন পর্বের কোন খেলায়ই জয়লাভে সক্ষম হয়নি। তবে, পাঁচ মাস পর নিজের সেরা ছন্দে ফিরে আসেন ও দলে স্বীয় স্থান ফিরে পান। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সুন্দর খেলা উপহারের মাধ্যমে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দলে স্থান নিশ্চিত করেন।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় তৃতীয়বারের মতো অংশ নেন। বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিগণিত হন। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রথম শতক করার গৌরব অর্জন করেন। অ্যাডিলেড ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন ও বাউন্ডারি মেরে জয়সূচক রান তোলার মাধ্যমে ইংল্যান্ড দলকে প্রতিযোগিতা থেকে বিদেয় করেন। এরপর, ১৩ মার্চ, ২০১৫ তারিখে সহঃআয়োজক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৮ রানের ইনিংস খেললেও দল ৩ উইকেটের পরাজয়ের কবলে পড়ে। সবমিলিয়ে সাত খেলায় ৩৬৫ রান তুলে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যান ও ভারতের কাছে পরাজিত হলে প্রতিযোগিতা থেকে বিদেয় নেয় বাংলাদেশ দল।

এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার মাধ্যমেই নিজের স্বর্ণালী সময় উদযাপিত করেন। আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর তিনি কয়েকটি খেলায় ভালোমানের রান তুলেছিলেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিচেরসারির মাঝামাঝি অবস্থানে থেকে করেছেন ও বাংলাদেশের ইনিংস শেষ করার দায়িত্বে থেকেছেন। ব্যাটিংয়ে অতিরিক্ত সময় দেয়ার গুণাবলী রয়েছে। টেস্টে কিছুটা ছন্দহীন থাকলেও বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছেন। সহঃঅধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০১৭-১৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ তারিখে পচেফস্ট্রুমে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬৬ ও ৯ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/২৪ ও ০/২১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ডিন এলগারের অনবদ্য ব্যাটিং কৃতিত্বে সফরকারীরা ৩৩৩ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

২০১৮-১৯ মৌসুমে দলের সাথে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের প্রথমটিতে দারুণ খেলেন। এ পর্যায়ে দল ফলো-অনের কবলে পড়লেও ৫ম উইকেটে সৌম্য সরকারের (১৪৯) সাথে ২৩৫ রান সংগ্রহ করেন। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে নিজে করেন ১৪৬ রান ও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ দাঁড় করান। ঐ খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ৫২ রানে পরাজিত হয়।

জাতীয় দলের অপর ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম সম্পর্কে তাঁর শ্যালক।