Skip to content

২৭ মে, ১৯৭৭ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। বিশেষতঃ দলের অধিনায়কত্ব পালন করে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। পাশাপাশি, প্রাণান্তকর প্রয়াসে রান তোলার সবিশেষ দক্ষতার কারণে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের নয়ণমণি ছিলেন। বলকে সঠিক সময়ে অপূর্ব কৌশল প্রয়োগে আঘাত করতেন ও অপরিসীম ধৈর্য্যগুণের অধিকারী ছিলেন। পাশাপাশি, উভয় পদের সদ্ব্যবহার করতেন। বলকে চমৎকারভাবে কাট করতেন ও কাছাকাছি এলাকায় চটপটে ফিল্ডিং করতেন। শ্রীলঙ্কা দলের প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত হন। তাঁর এ ধরনের ভূমিকা গ্রহণের ফলে অগণিত শ্রীলঙ্কান তরুণকে আরও ভালোমানের ক্রিকেটারে রূপান্তরে উজ্জ্বীবনী শক্তিতে পরিণত করেছে।

খুব সহজেই তাঁকে তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সেরা, দর্শনীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। তবে, খেলোয়াড়ী জীবনে বিদেশের মাটিতে তেমন সফলতা পাননি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডে ৩৫-এরও কম গড়ে রান তুলেছেন। এর বিপরীতে স্বদেশে ৬০-এর অধিক গড়ে রান সংগ্রহে তৎপরতা দেখিয়েছেন। খেলোয়াড়ী জীবনের দ্বিতীয়ার্ধে অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে চিত্রিত করেন। খেলাকে বেশ ভালোভাবে দেখেছিলেন ও ঝুঁকি নিতে কৃপণতা প্রদর্শন করতেন না। তাঁর নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা দল তাঁদের সেরা খেলা প্রদর্শনে সোচ্চার হয়ে উঠে। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে জয় তুলে নেয়। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় দলকে উপনীত করাই তাঁর সর্বাধিক সাফল্য ছিল।

হাতের সাথে চোখের অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছেন। চমৎকার ব্যাটিং কৌশল অবলম্বনে উইকেটের চতুস্পার্শেই রান পেয়েছেন। কভার ড্রাইভেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। পায়ের কারুকাজ খুব কমই করেছেন। তবে, স্থান ও সময়ের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। লেগের দিকের বলগুলোকে কব্জির মোচরে ফ্লিক মারতেন। স্পিনারদের বল থেকে স্ট্যাম্পের পিছনে কাট মারায় সবিশেষ দক্ষ ছিলেন। এছাড়াও, দ্রুতগতির বলগুলোকেও কিছুটা দেরীতে ব্যাটে স্পর্শ করে সফলতা পেয়েছেন। নয়ন মনোহর ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি সর্বদাই বড় ধরনের রান তোলার দিকে দৃষ্টিপাত দিতেন। তিনি তাঁর সময়কালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। সকল স্তরের ক্রিকেটেই বিপুল সফলতা পেয়েছেন। অগণিত অর্জন সত্ত্বেও ক্রিকেটবিশ্বে সর্বাপেক্ষা অবমূল্যায়িত খেলোয়াড় হিসেবে রয়ে যান। তবে, শ্রীলঙ্কান সমর্থকদের কাছে আদর্শের পাত্র হিসেবে রয়ে যান।

১৯৯৫-৯৬ মৌসুম থেকে ২০১৪-১৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাব ও ওয়েয়াম্বা; নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টস এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেট ও সাসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এশিয়া একাদশ, অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব, জ্যামাইকা তল্লাজ, করাচী কিংস, কোচি তুস্কার্স কেরালা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো রেড স্টিল এবং মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন।

৫ ফুট ৭ ইঞ্চি (১.৭০ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। বিদ্যালয় পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৩ দলের অধিনায়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সচরাচর তিন নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নামতেন। বিস্ময়কর, স্বতঃস্ফূর্ত কৌশল গ্রহণ ও সহজাত দক্ষতায় বড় ধরনের রান সংগ্রহের কারণে অচিরেই বিদ্যালয় পর্যায়ের ক্রিকেটে অন্যতম উদীয়মান খেলোয়াড় হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে ১৯৯৫ সালে সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবের পক্ষে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে চারটি শতক হাঁকান। ফলশ্রুতিতে, শ্রীলঙ্কার জাতীয় ক্রিকেট দলের পক্ষে সম্মুখসারির খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন।

১৯৯৭ থেকে ২০১৫ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ১৪৯ টেস্ট, ৪৪৮টি ওডিআই ও ৫৫টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে শচীন তেন্ডুলকরের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২০ বছর বয়সে ২ আগস্ট, ১৯৯৭ তারিখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফলতম অভিষেক ঘটে। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেয়ার মাধ্যমে বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটে। ঐ টেস্টে ৬ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৬ রান তুলেন। এ পর্যায়ে তাঁর দল ৯৫২/৬ তুলে বিশ্বরেকর্ড গড়ে। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

খুব বেশী দেরী করেননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে। প্রথম পাঁচ ইনিংস থেকে তিনটি অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছিলেন। বয়সের সাথে সাথে সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ পর্যায়ে প্রায়শঃই ক্রিজে উদ্ভাবনী শক্তির বহিঃপ্রকাশে কৌশলগতভাবে সৃজনশীলতার পরিচয় দিতেন। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৯৮ তারিখে কলম্বোর আরপিএসে সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। তবে, তিনি মাত্র একটি বল মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছিলেন ও দলের জয়সূচক রান তুলেন। ২১৩ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় তাঁর দল সফলতার সাথে পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই পৌঁছে যায়। দ্বিতীয় খেলায় চমৎকার ৭৪ রানের ইনিংস খেলেন।

গলেতে অনুষ্ঠিত নিজস্ব চতুর্থ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৭ রান তুলে নিজেকে সম্যক পরিচিতি ঘটান। ৬ জুন, ১৯৯৮ তারিখে গলের নড়বড়ে পিচে তাঁর এ সফলতায় দল ৩২৩ রান তুলতে সক্ষম হয়। ঐ খেলায় শ্রীলঙ্কা দল ইনিংস ও ১৬ রানে জয় পেয়ে সিরিজে সমতা আনে।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে নিজ দেশে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের দ্বিতীয় খেলায় অংশ নিতে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত ভারতের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্টে অংশ নেন। ২৪২ রান তুলে শ্রীলঙ্কা দলে স্বীয় স্থান পাকাপোক্ত করে তুলেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯ তারিখে এ সংগ্রহটি তাঁর প্রথম দ্বি-শতক ছিল। নিজস্ব সপ্তম টেস্টে এ সফলতা পান। তাঁর অসামান্য ক্রীড়া নৈপুণ্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

বছরের শেষদিকে দলের সহঃঅধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। তবে, মারভান আতাপাত্তু’র ব্যাটিং খড়ার কারণে অধিনায়ক হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। এরপর থেকে শ্রীলঙ্কা দলের পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে নিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন। পরবর্তী বছরগুলোয়ও খেলার এ ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন। এ পর্যায়ে লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ধ্রুপদীশৈলীর ১০৭ রান ও গলেতে দক্ষিণ আফ্রিকান বোলিং আক্রমণ প্রতিহত করে দ্বি-শতক হাঁকিয়েছিলেন।

২০০০ সালে নিজ দেশে শন পোলকের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২০ জুলাই, ২০০০ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। টেস্টের প্রথম দিনে দক্ষিণ আফ্রিকানদের বিপক্ষে দূর্দান্ত খেলেন। দ্বাদশ শ্রীলঙ্কান হিসেবে কোন দেশের বিপক্ষে প্রথম সাক্ষাতেই শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৬৭ রান তুলে সিরিজে নতুন রেকর্ড গড়েন। এ পর্যায়ে উভয় দলের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহে পরিণত হয়। এরফলে, সনথ জয়সুরিয়া’র গড়া ১৪৮ রানের ইনিংসের রেকর্ড ভেঙ্গে যায়। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৫ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ৬ আগস্ট, ২০০০ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৩৪ ও ১০১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০১ তারিখে জরিমানার সম্মুখীন হন। গলেতে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে এ ঘটনা ঘটে। অপ্রয়োজনীয় আবেদন ও উচ্ছ্বাস প্রদর্শনে আম্পায়ারের দিকে এগিয়ে আসায় আইসিসি’র বিধি-নিষেধমালার ১ ও ২ নম্বর অনুচ্ছেদ ভেঙ্গে ফেলায় ম্যাচ রেফারি প্রথমবারের মতো তাঁকে ম্যাচ ফি’র ২৫% জরিমানা করে।

একই বছর নিজ দেশে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২২ আগস্ট, ২০০১ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১০৪ ও ২৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় দলনায়কের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ২৯ আগস্ট, ২০০১ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৩৯ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ৭৭ রানে পরাজিত হলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

ডিসেম্বর, ২০০১ সালে দূর্বল দলের বিপক্ষে পুণরায় বড় ধরনের রান সংগ্রহে তৎপর হন। নিজ দেশে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজে একাধিপত্য বিস্তার করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯৬, অপরাজিত ১০৬ ও ৬৩ রান তুলেছিলেন তিনি।

একই বছর নিজ দেশে নাইমুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০১ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় খেলায় অংশ নেন। মারভান আতাপাত্তুকে নিয়ে অনন্য রেকর্ডের সাথে সম্পৃক্ত হন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ১৫৬১তম টেস্টে প্রথম দল হিসেবে শ্রীলঙ্কার সদস্যরূপে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। শ্রীলঙ্কার সংগৃহীত ৫৫৫/৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণাকালে মারভান আতাপাত্তু ২০১ ও মাহেলা জয়াবর্ধনে ১৫০ রান তুলেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালীধরনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩৭ রানে জয় পায়।

২০০২ সালে সনথ জয়সুরিয়া’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। পুরো সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ১৩ জুন, ২০০২ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ১৭ ও ২৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অ্যালেক্স টিউডরের বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। এ সিরিজে ২৭২ রান সংগ্রহ করে মার্ক বুচারের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৩ সালে খেলায় ছন্দ হারানোর খেসারত গুণেন ও ওডিআই দল থেকে বাদ পড়েন। ফলশ্রুতিতে, ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় তাঁকে শ্রীলঙ্কা দলের সদস্যরূপে রাখা হয়নি। এপ্রিল, ২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এ পর্যায়ে দ্বিতীয়সারির দলকে নেতৃত্ব দেন ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ওডিআইয়ে দলকে পরিচালনা করেছিলেন।

২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৪ আগস্ট, ২০০৪ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টে ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১৯৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২৩৭ ও ৫ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ দ্বি-শতক সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

৩ আগস্ট, ২০০৫ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অংশগ্রহণে ত্রি-দেশীয় ইন্ডিয়ান অয়েল কাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। ভারতের বিপক্ষে স্বাগতিক দলের সদস্যরূপে ৯৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে বিজয়ী করেন। ১০৪ বল মোকাবেলা করে ৯টি চার ও ১টি ছক্কার মারে ৪ উইকেটের ব্যবধানে শ্রীলঙ্কা দল জয়লাভ করে ও তাঁকে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

২০০৬ সালে টেস্ট ও ওডিআই দলের অধিনায়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। নিয়মিত অধিনায়ক মারভান আতাপাত্তু’র পিঠের আঘাতের কারণে বাংলাদেশ গমনার্থে দলকে পরিচালনা করেছিলেন। এরপর, একই বছরে তরুণদের নিয়ে গঠিত শ্রীলঙ্কান দলকে নিয়ে ইংল্যান্ড গমন করেন। ওডিআইয়ে ৫-০ ব্যবধানে স্বাগতিক দলকে ধবল ধোলাইয়ের পাশাপাশি টেস্ট সিরিজ ড্র করান। ১১ মে, ২০০৬ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৬১ ও ১১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসম্ভব ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

মাঠে কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে তাঁদের প্রকৃত বন্ধুত্বসূলভ আচরণের অপূর্ব দৃষ্টান্ত বিশেষতঃ ব্যাটিংকালে জুটি গড়ে তুলে ধরতেন। একই সাথে কে, কার আগে রান সংগ্রহ করতে পারবেন তা নিয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ্য করা যেতো। তদুপরি উভয়ে একই সময়ে খেলতে নামায় ব্যাটিং গড় বৃদ্ধিতেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখতো।

২৯ জুলাই, ২০০৬ তারিখে কলম্বোর সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টেও তাঁদের মধ্যকার তৃতীয় উইকেটে জুটি স্মরণীয় করে রেখেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩৭৪ রান তুলেন ও টেস্টে শ্রীলঙ্কার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন। সনথ জয়সুরিয়া’র পর দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কান হিসেবে ত্রি-শতকের সন্ধান পান। এ সংগ্রহটি সর্বকালের তালিকায় চতুর্থ সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ হিসেবে টিকে রয়েছে। দলীয় সংগ্রহ ৩.৩ ওভারে ১৪/২ থাকা অবস্থায় তাঁরা জুটি গড়েন। শুরুতে এক রান করে সংগ্রহ বৃদ্ধি করতে থাকেন। কিছু স্ট্রোক খেললেও বল আটকানোর দিকেই অধিক মনোনিবেশ ঘটান। তাঁদের মনোসংযোগের স্তর বেশ দৃষ্টান্তস্বরূপ ছিল।

মাহেলা জয়াবর্ধনে নিখুঁতমানের ইনিংসের দিকে অগ্রসর হন। শুরু থেকে সাঙ্গাকারা কিছুটা আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন ও তিনি বল আটকাতে থাকেন। তৃতীয় দিনের শুরুতে সাঙ্গাকারা মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৪৫৭ বল মোকাবেলা করে ৬২.৮০ স্ট্রাইক রেটে ২৮৭ রান তুলে মাত্র ১৩ রানের জন্যে ত্রি-শতক করা থেকে বঞ্চিত হন। সব মিলিয়ে এ দুজন ১৫৭ ওভার বল মোকাবেলা করে সর্বোচ্চ ৬২৪ রানের যে-কোন উইকেটে বিশ্বরেকর্ডের জুটি গড়েন ও অদ্যাবধি তা অক্ষত রয়েছে। এরফলে, ১৯৯৭ সালে কলম্বোয় ভারতের বিপক্ষে সনথ জয়সুরিয়া ও রোশন মহানামা’র সংগৃহীত ৫৭৬ রানের জুটির রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন। এছাড়াও, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে বিজয় হাজারে ও গুল মোহাম্মদের মধ্যকার ৫৭৭ রানের রেকর্ড ভেঙ্গে নিজেদের করে নেন।

জুটি ভেঙ্গে গেলে তিলকরত্নে দিলশানের সাথে জুটি গড়েন। অপরদিকে মাহেলা জয়াবর্ধনে ৫৭২ বল মোকাবেলা করে ৪৩ বাউন্ডারি সহযোগে ৩৭৪ রান তুলে নিজস্ব ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়েন। আন্দ্রে নেলের বিপজ্জ্বনক নিচুমুখী বল স্ট্যাম্প আঘাত করে। এরফলে, ব্রায়ান লারা’র রেকর্ডসংখ্যক অপরাজিত ৪০০ রান অতিক্রমের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। তাসত্ত্বেও শ্রীলঙ্কা দল খুব সহজে খেলায় জয় পায়নি। মুত্তিয়া মুরালিধরন টেস্টে তাঁর ২২তম দশ উইকেট লাভ করলে চূড়ান্ত দিনের মধ্যাহ্নভোজনের পর ইনিংস ও ১৫৩ রানে বিজয় লাভ করে। এছাড়াও, নিয়মিতভাবে টেস্টে দ্বি-শতরানের ইনিংস খেলেছেন।

তাঁর অধিনায়কত্বে শ্রীলঙ্কা দল ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত ২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় অংশ নেয়। এপ্রিল, ২০০৭ সালে জ্যামাইকায় প্রথম সেমি-ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুখোমুখি হয় তাঁর দল। ১০৯ বলে অপরাজিত ১১৫ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস উপহার দেন। শুরুতে বেশ সতর্কতার সাথে অগ্রসর হয়েছিলেন। ৪৭ বলে মাত্র ১৭ রান তোলার পর সমসংখ্যক বলে ২৩ রান তুলেন। এরপর, ৩০ বলে ৬০ রান তুলে তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শ করেন। প্রতিটি শটের উপরই তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিল।

২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে মাইকেল ভনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে চমৎকার খেলেছিলেন। ১৮ ডিসেম্বর, ২০০৭ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপনায় সচেষ্ট ছিলেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ২১৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এ সিরিজে ৪৭৪ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

২০০৮-০৯ মৌসুমে শ্রীলঙ্কান দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে বাংলাদেশ গমন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০০৮ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৩ ও ১৬৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, সাকিব আল হাসানের প্রাণান্তঃকর প্রয়াস চালানো সত্ত্বেও সফরকারীরা ১০৭ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই মৌসুমে শ্রীলঙ্কান দলকে নেতৃত্ব দিয়ে পাকিস্তান সফরে যান। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কোচিত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ২৪০ ও ২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৪১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ইউনুস খানের (৩১৩) মনোরম ত্রি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

৩ জানুয়ারি, ২০০৯ তারিখে স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে শততম টেস্ট খেলেন। এরফলে, চতুর্থ শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার হিসেবে এ গৌরব অর্জন করেন। ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সালে ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার পর অধিনায়কত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হলে ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ ঘটানোর সুযোগ পান।

২০০৯ সালে নিজ দেশে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৬ আগস্ট, ২০০৯ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৯২ ও ৯৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, তিনটি ক্যাচ মুঠোয় বন্দী করেছিলেন। তাঁর অসামান্য ব্যাটিং সাফল্যের কারণে সফরকারীরা ৯৬ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০১০ সালে নিজ দেশে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৬ জুলাই, ২০১০ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১৭৪ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, কুমার সাঙ্গাকারা’র অনবদ্য ব্যাটিং সাফল্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

দুইজন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানের অন্যতম হিসেবে টি২০আইয়ে ১০০ রানের একমাত্র শতক হাঁকানোর কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। মে, ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ সাফল্য পান। ২০১১ সালের আইসিসি ৫০-ওভারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় ভারতের বিপক্ষে অসাধারণ শতক হাঁকান। তবে, তাঁর এ অর্জনটুকু বিফলে যায় ও উপর্যুপরী চূড়ান্ত খেলায় পরাজয়বরণ করে। ৮৮ বলে ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন।

২০১১-১২ মৌসুমে তিলকরত্নে দিলশানের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ৩১ ও ১৪ রান সংগ্রহসহ পাঁচটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রঙ্গনা হেরাথের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২০৮ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে দ্বিতীয় মেয়াদে অধিনায়কের দায়িত্ব ভার তাঁর উপর অর্পণ করা হয় ও তিলকরত্নে দিলশানের স্থলাভিষিক্ত হন। এ পর্যায়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮০ রানের নিজস্ব একবিংশতিতম টেস্ট শতক হাঁকান। তবে, এক বছর পর পুণরায় অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করেন ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে এ দায়িত্ব পালনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ২০১২ সালের বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতার শ্রীলঙ্কা দলকে প্রথম শিরোপা লাভের যথাসাধ্য চেষ্টা চালালেও রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এ বিপর্যয়ের পর টি২০আই দলের অধিনায়কত্ব থেকে তাঁকে প্রত্যাহার করে নেয়া তবে, টেস্ট ও ওডিআইয়ে দলকে পরিচালনা করতে থাকেন। অবশেষে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ শেষে ২০১৩ সালে সকল স্তরের ক্রিকেট দল থেকে দায়িত্ব ভার ফেরৎ নেয়া হয়।

বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে বিভিন্ন দলের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আইপিএলে নিয়মিতভাবে খেলেছেন। ২০১০ সালে কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব, ২০১১ সালে কোচি তুস্কার্স কেরালা ও ২০১২ সালের আইপিএলের পঞ্চম আসরে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের পক্ষে খেলেছিলেন। তন্মধ্যে, ২০১০ সালে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। এ পর্যায়ে ১৩ খেলায় অংশ নিয়ে ৪৩.৯০ গড়ে ৪৪৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৫০-এর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেট ছিল।

নভেম্বর, ২০০৬ সালে মাসের প্রথম সপ্তাহে চমৎকার খেলা উপহার দেয়ার কারণে মুম্বইয়ে আইসিসি’র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বর্ষসেরা অধিনায়ক হিসেবে ও বর্ষসেরা বিশ্ব ওডিআই দলের অধিনায়কের পুরস্কারের জন্যে প্রথমবারের মতো নামাঙ্কিত হন। পরবর্তীতে, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতাকে ঘিরে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁকে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করে।

মার্চ, ২০০৭ সালে উইজডেন কর্তৃক পাঁচজন বর্ষসেরা ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে মনোনীত করে। এ পর্যায়ে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি ২০০৬ সালে টেস্টে ৯৮৩ রান ও ওডিআইয়ে ১,১৮৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এরপর, ২০১৩ সালে আইসিসি স্পিরিট অব ক্রিকেট পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৪ সালে দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যাচ তালুবন্দী করার চেষ্টাকালে গুরুতর আহত হন। ফলে, খেলায় তাঁর ব্যাটিংয়ে বিরূপ প্রভাব ফেলে; কভার ড্রাইভ ও সুইপ শট খেলতে পারেননি। কিন্তু, ইনিংসের ভিত গড়তে দারুণ ও সাহসী ভূমিকা রাখেন। ১২৯ রান তুলে দলকে চালকের আসনে নিয়ে যান। আঘাত নিয়ে খেলা সত্ত্বেও ১৫টি বাউন্ডারি হাঁকান। খেলায় তিনি ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন ও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

ঢাকায় শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে কুশল পেরেরা ও লাহিরু থিরিমানে তাঁকে কাঁধে নিয়ে চড়াকালে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হলেও আশ্চর্য্যের কিছুই ছিল না। এ পর্যায়ে ২০১৪ সালের আইসিসি বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় ভারতের বিপক্ষে ৬ উইকেট জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা দল। শ্রীলঙ্কান খেলোয়াড়েরা ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা দুই জন তারকা খেলোয়াড় মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারাকে তাঁদের সম্ভাব্য সেরা বিদায় অনুষ্ঠানের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছিল।

আগস্ট, ২০১৪ সালে টেস্ট ও ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় কোয়ার্টার-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৯ উইকেটে পরাজয়বরণের পর ওডিআই থেকে অবসর গ্রহণ করেন। মাত্র একটি টেস্ট কম খেলায় প্রথম শ্রীলঙ্কান হিসেবে ১৫০ টেস্ট খেলার কৃতিত্ব থেকে বঞ্চিত হন।

২০১৩-১৪ মৌসুমে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের অন্যতম সদস্যরূপে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। ৮ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ১২৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর দূর্দান্ত ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে শ্রীলঙ্কান দল ৯ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৪ সালে নিজ দেশে হাশিম আমলা’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৪ জুলাই, ২০১৪ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১৬৫ ও ০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

একই বছর নিজ দেশে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৪ আগস্ট, ২০১৪ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৪ ও ৫৪ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রঙ্গনা হেরাথের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০৫ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ওডিআই ও টেস্ট – উভয় ধরনের ক্রিকেটে দশ হাজারের অধিক রান পেয়েছেন। তন্মধ্যে, প্রথম শ্রীলঙ্কান হিসেবে টেস্টে দশ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। টেস্টে কুমার সাঙ্গাকারা’র ১২৪০০ রানের পর ৪৯.৮৪ গড়ে ১১৮১৪ রান তুলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। পাশাপাশি, কুমার সাঙ্গাকারা ও সনথ জয়সুরিয়া’র পর ১২৬৫০ রান তুলে ওডিআইয়ে শ্রীলঙ্কার তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হয়েছেন।

১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। আগস্ট, ২০১৫ সালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড জাতীয় দলের ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে তাঁর সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ড দলের কোচিং বিভাগের সদস্য ছিলেন। ২০১৭ সালে আইপিএলের দশম আসরে বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কোচের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে দলটি ২০১৭ সালে তৃতীয় ও ২০১৯ সালে চতুর্থবারের মতো শিরোপা জয় করে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত খুলনা টাইগার্সের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।

শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের মহাত্মা চতুষ্টয় হিসেবে অর্জুনা রানাতুঙ্গা যদি স্রষ্টা হন, সনথ জয়সুরিয়া যদি বিনাশকারী হন, তাহলে কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনেকে অবশ্যই রক্ষাকর্তা হিসেবে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ক্রিস্টিনা মল্লিকা সিরিসেনা নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।