৫ অক্টোবর, ১৯৩২ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৫০-এর দশকে ভারতের সদস্যরূপে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোটাতেন। খেলোয়াড়ী জীবনে তেমন কিছু করতে না পারলেও কেবলমাত্র ড. ডিবি দেওধর ও শচীন তেন্ডুলকরের সাথে একত্রে খেলে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। কিশোর বয়সে অধ্যাপক ডিবি দেওধরের সাথে খেলেন। সাড়ে তিন দশক পর পঞ্চাশের কোটায় এসে কিশোর শচীন তেন্ডুলকরের সাথে একযোগে খেলেছিলেন। ১৯৫১-৫২ মৌসুম থেকে ১৯৬৭-৬৮ মৌসুম পর্যন্ত ১৭ বছর প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন।
বোম্বের অভিজাত পরিবারে তাঁর জন্ম। বিদ্যালয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতা জাইলস শীল্ডে রবার্ট মানি হাই স্কুলের বিপক্ষে ১০/১০ লাভ করে প্রথমবারের মতো সংবাদ শিরোনামে পরিণত হন। বোলার হিসেবে তিনি বিনু মানকড়ের নজর কাড়েন। এলফিনস্টোন কলেজে অধ্যয়নকালীন ক্রিকেট কোচ হিসেবে বিনু মানকড়ের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বিনু মানকড় তাঁকে বোলিংয়ের আমন্ত্রণ জানান ও প্রথম বলেই গুগলিতে তাঁকে পরাস্ত করেছিলেন।
কিছুদিন পর তাঁকে ইনিংস উদ্বোধনের আমন্ত্রণ জানালে তিনি রাজী হন। তরুণ ব্যাটসম্যান ১৯৫০ সালের শেষদিকে রোহিতন বারিয়া প্রতিযোগিতায় বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় দলের সদস্যরূপে প্রথম অংশ নেন। বরোদা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে ঐ খেলায় শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে ৩১ ও ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন।
ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলা ও বোম্বে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অক্টোবর, ১৯৫১ সালে সফররত ইংরেজ একাদশের বিপক্ষে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় দলের সদস্যরূপে খেলার জন্যে মনোনীত হন। পঙ্কজ রায়ের সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে ২৭ রান তুলেন। এক মাস পর দিল্লিতে নিজের সর্বশেষ টেস্টে বিজয় মার্চেন্ট আঘাত পেলে রঞ্জী ট্রফিতে বোম্বে দলে যুক্ত হন। পরীক্ষামূলকভাবে সৌরাষ্ট্রের বিপক্ষে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার সুযোগ পান। বড় ধরনের জুতো নিয়ে মাঠে নামেন ও অভিষেকেই ১০৮ রান তুলেন। সঠিকমানের কৌশল অবলম্বনে তরুণ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিকেট জগতে স্বীয় প্রতিভা বিকাশে সচেষ্ট হন। এরপর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এক মাস পর রোহিতন বারিয়া কাপে বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যরূপে বরোদা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে শতক হাঁকান। রঞ্জী ট্রফিতেও রান সংগ্রহ অব্যাহত রাখেন। গুজরাত ও হোলকারের বিপক্ষে নব্বুই রানের জোড়া ইনিংস খেলেন।
বিস্ময়করভাবে ও তুলনান্তে ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে ৩৯ গড়ে ৩৩৩৬ রান তুলেছেন। তাসত্ত্বেও, বোম্বের তারকা খেলোয়াড় হিসেবে শীর্ষসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে লেগ-ব্রেক বোলার হিসেবে অংশ নেন। তবে, কলেজ জীবনে তাঁর কোচ ও তারকা ক্রিকেটার বিনু মানকড়ের উদ্দীপনায় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন। পরবর্তীকালে তিনি মন্তব্য করেন যে, ‘বোম্বের প্রত্যেক সকালে বিজয় মার্চেন্টের ব্যাটিং অনুশীলনী মুগ্ধচিত্তে অবলোকন করে খেলা শেখেন।’
বিজয় মার্চেন্টের ক্রমাগত আঘাতের কারণে ১৯৫১-৫২ মৌসুমে রঞ্জী ট্রফিতে বোম্বের প্রতিনিধিত্ব করেন ও অভিষেক খেলাতেই সৌরাষ্ট্রের বিপক্ষে শতক হাঁকান। ১৯৫৮-৫৯ ও ১৯৬১-৬২ মৌসুমে রঞ্জী ট্রফির শিরোপা বিজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। মাদ্রাজের বিপক্ষে রঞ্জী ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় ৪০ গড়ে রান পেয়েছেন। ভিভি কুমারের ন্যায় মানসম্পন্ন স্পিনারকে রুখে দিয়ে নিম্নমূখী রানের খেলায় প্রভূত্ব দেখিয়েছেন। ইনিংস উদ্বোধনে নেমে স্থানীয় ক্রিকেটে কিংবদন্তীতুল্য গুপ্তে ভ্রাতৃদ্বয় – সুভাষ গুপ্তে ও বালু গুপ্তের বিপক্ষে সঠিকমানের কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।
খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুটা লেগ-স্পিনার হিসেবে হয়েছিল। জাইলস শীল্ডের এক ইনিংসে ১০/১০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে বিপুল সাড়া জাগান। তবে, বিনু মানকড়ের ছত্রচ্ছায়ায় চলে আসেন ও রঞ্জী ট্রফিতে বিজয় মার্চেন্টের সাথে একযোগে অভিষেক ঘটে। তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে বিজয় মার্চেন্ট অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। দলে ঠাঁই না পাওয়ায় অভিজাত পরিবারের সন্তান হিসেবে তাঁর পিতা-মাতা তাঁকে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেন।
১৯৫২ সালের গ্রীষ্মে ইংল্যান্ড গমনার্থে ভারত দলের সদস্যরূপে গমন করেন। খেলার পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেন, গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষালাভ করেন ও অপেক্ষা করতে থাকেন। লর্ডসে স্কোরার বক্সে আসন পান ও বিনু মানকড়ের দৃষ্টিনন্দন শতরান উপভোগ করেন। ফ্রেডি ট্রুম্যানের তোপে পড়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা নাকানি-চুবানির শিকার হয়েছিলেন। ঐ বছরের শীতকালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরপর, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ গমন করেন। এভাবেই তাঁর আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। শুরুতেই তাঁর প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটতে থাকায় দল নির্বাচকমণ্ডলীর নজর কাড়েন।
১৯৫২ থেকে ১৯৫৩ সময়কালে ভারতের পক্ষে সাতটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। মাত্র ৫ মাসের ব্যবধানে টেস্টগুলো খেলেছিলেন। ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে টেস্টে অংশ নেয়ার জন্যে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। নিজস্ব দ্বিতীয় মৌসুমে ১৯৫২ সালের শেষদিকে পাকিস্তান দল তাঁদের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে উদ্বোধনী টেস্ট খেলতে ভারত সফরে আসে। ঐ মৌসুমে নিজ দেশে আব্দুল কারদারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৩ নভেম্বর, ১৯৫২ তারিখে বোম্বের বিএসে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। বাল দানি ও বিজয় রাজিন্দরনাথের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়।
ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেককালীন তাঁর বয়স ছিল ২০ বছর। কোচ মানকড়ের পরামর্শক্রমে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন। প্রথম উইকেটে ৫৫ রান যুক্ত করে মাহমুদ হোসেনের বলে ইমতিয়াজ আহমদের তালুবন্দী হবার পূর্বে ৩০ রান সংগ্রহ করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে জয়সূচক রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিক দল ১০ উইকেটে জয় পায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তী টেস্টে ৪২ রান তুলে নিশ্চিতরূপে ওয়েস্ট ইন্ডিজে পরবর্তী সফরে দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। ঐ টেস্টটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
১৯৫২-৫৩ মৌসুমে বিজয় হাজারে’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। সেখানে অপ্রত্যাশিত ভূমিকা রাখেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সিরিজের প্রথম তিন টেস্ট খেলে তিনটি অর্ধ-শতক হাঁকান। পোর্ট অব স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভালে ১৬৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন। পাঁচ টেস্টের সবকটিতে ইনিংসের গোড়াপত্তনে অগ্রসর হন। ৬২, ৫২, ৬৪, ৯, ০, অপরাজিত ১৬৩, ৩০, ৩০, ১৫ ও ৩৩ রান তুলেন। সবমিলিয়ে ৫১.১১ গড়ে ৪৬০ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
সিরিজে ৫১.১১ গড়ে রান তুলে ভারতের রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় নিজেকে দ্বিতীয় স্থানে নিয়ে যান। একটি শতক ও তিনটি অর্ধ-শতক সহযোগে ৪৬০ রান পেয়েছিলেন। রান সংগ্রহের দিক দিয়ে পলি উমরিগড়ের পর দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করেন এবং বিজয় হাজারে, বিনু মানকড়, পঙ্কজ রায় ও বিজয় মাঞ্জরেকারের চেয়ে এগিয়ে থাকেন। তন্মধ্যে শতরানের ইনিংসের কল্যাণে দল নিশ্চিত পরাজয় থেকে মুক্তি পায় ও ড্রয়ে পরিণত হয়। ঐ সিরিজে আর একটিমাত্র টেস্টে অংশ নেয়ার সুযোগ পান। তারপর আর কোন খেলায় তাঁকে অংশ নিতে দেখা যায়নি।
সিরিজের প্রথম টেস্টে সনি রামাদিন, আল্ফ ভ্যালেন্টাইন ও ফ্রাঙ্ক কিংয়ের ন্যায় বোলারদের রুখে দিয়ে ৬৪ ও ৫২ রান তুলেন। দ্বিতীয় টেস্টে আবারও ৬৪ রান তুলেন। এরপর, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩ তারিখে ত্রিনিদাদের কুইন্স পার্ক ওভালের তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে জেরি গোমেজ তাঁকে শূন্য রানে বিদেয় করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে স্ট্রাইকবিহীন অবস্থায় অল-রাউন্ডার পঙ্কজ রায়ের শূন্য রানে বিদায়ের দৃশ্য অবলোকন করেন। এ ইনিংসে ১৬৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ভারত দলের ড্রয়ে অবিশ্বাস্য ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটিতে স্বাগতিক দল ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। ছয়দিন নিয়ে গড়া ঐ টেস্টের চতুর্থ দিনে মাত্র ৩৬ রানের পিছিয়ে থেকে ভারত দল খেলতে নেমে এক পর্যায়ে দলের সংগ্রহ ১০/৩ দাঁড়ায়। ২০ বছর বয়সী মাধব আপ্তে’র সাথে পলি উমরিগড় যোগ দেন। দিন শেষে তিনি ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন ও দলের সংগ্রহকে ১১৮/৩-এ নিয়ে যান। আল্ফ ভ্যালেন্টাইনের বলে পলি উমরিগড় (৬৭) দলীয় ১৪৫ রানে বিদেয় নিলেও দলীয় অধিনায়ক বিজয় হাজারে’র সাথে দলের ভিত গড়তে এগিয়ে আসেন। ৯৯ রানে থাকা অবস্থায় জেরি গোমেজ বোলিংয়ে এগিয়ে আসেন। স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান ফ্রাঙ্ক ওরেল তাঁকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান ও ইনিংস শেষ না করতে বলেন। অতঃপর ধীরলয়ে খেলে শতক পূর্ণ করেন।
দলীয় ২০৯ রানে বিজয় হাজারে, ফ্রাঙ্ক ওরেলের বলে লেগ বিফোর উইকেটের শিকারে পরিণত হন ও অল্প কিছুক্ষণ পরই অভিষেকধারী জয়সিংহরাও গৌরপদে রান আউট হলে তাঁর প্রাণান্তঃকর প্রয়াস চালানো সত্ত্বেও ভারত দলকে আবারও পরাজয়ের দিকে চলে আসতে দেখা যায়। এ পর্যায়ে বিখ্যাত তারকা বিনু মানকড় তাঁর সাথে যুক্ত হন। তিনি তাঁকে বেশ জানতেন। কিংবদন্তীতুল্য অল-রাউন্ডার এলফিনস্টোন কলেজে কোচের দায়িত্বে ছিলেন ও মাধব আপ্তে সেখানে অধ্যয়ন করেছিলেন। কয়েক মাস পূর্বে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে তাঁর সাথে ইনিংস উদ্বোধনে নামতেন। এখন তিনি গুজরাতি ভাষায় বলেন যে, ‘তুমি কেবল বল ঠেকিয়ে যাও ও আমাকে রান সংগ্রহ করতে দাও।’ তিনি ঠিক তাই করলেন। চূড়ান্ত দিন মধ্যাহ্নভোজনের পর বিনু মানকড় ৯৬ রানে রান-আউটের শিকারে পরিণত হবার পর ৩৬২/৭ তুলে ইনিংস ঘোষণা করা হয়। তিনি তখনও ১৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন ও খেলাকে রক্ষা করেন।
২৮ মার্চ, ১৯৫৩ তারিখে কিংস্টনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্ট খেলেন। ১৫ ও ৩৩ রান সংগ্রহের পাশাপাশি একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, পঙ্কজ রায়ের অসম্ভব দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়া। অবশ্য স্বাগতিক দল ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করেছিল। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষে টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল।
দেশে ফিরে তাঁর গুরুত্বতা বেশ বৃদ্ধি পায়। তবে, এ সফরে চমৎকার সফলতা ও প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখলেও অজানা কারণে তাঁকে দলের বাইরে থাকার বিষয়টি দেশের ক্রিকেটপ্রেমী সমর্থকদের মাঝে বেশ বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কোন ধরনের আঘাত কিংবা অসুস্থতা ছিল না, শিক্ষায় কোন ব্যাঘাতের কারণ না হয়ে দাঁড়ালেও তাঁকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর ১৯৫৪ সালে ভারত দলের কোন টেস্ট সময়সূচী ছিল না। এ বছর সিলভার জুবিলি কমনওয়েলথ একাদশের সদস্য ছিলেন। বিসিসিআইয়ের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভারতের সদস্যরূপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেন। কিন্তু, ভারতের পরবর্তী টেস্ট খেলায় তিনি তাঁর সেরা ছন্দে ছিলেন না ও উপেক্ষার শিকার হন। এরপর আর তাঁকে ভারতের পক্ষে খেলতে দেখা যায়নি।
১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে বেন বার্নেটের নেতৃত্বাধীন এসজেওস দল ভারত সফরে আসে। ফ্রাঙ্ক ওরেল, জ্যাক আইভারসন, পিটার লোডার, স্যাম লক্সটন, রেজি সিম্পসন, রয় মার্শাল, সনি রামাদিন, জ্যাক ক্রাপের ন্যায় তারকাসমৃদ্ধ দলটির বিপক্ষে একবার খেলায় অংশ নিলেও আর তাঁকে কোন আনুষ্ঠানিক টেস্ট খেলতে দেখা যায়নি। দিল্লিতে প্রথম অনানুষ্ঠানিক টেস্টে পঙ্কজ রায়ের সাথে ইনিংস উদ্বোধনে নেমেছিলেন। একমাত্র ইনিংসটিতে ৩০ রান করেন এবং সুভাষ গুপ্তে ও গুলাম আহমেদের দূর্দান্ত বোলিংয়ে সফরকারী দলটি ইনিংস ব্যবধানে পরাভূত হয়েছিল। এরপর জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলী থেকে উপেক্ষিত হলে দল থেকে বাদ পড়েন।
পারিবারিক ব্যবসায় জড়িত হলেও বোম্বে দলে অনেকগুলো বছর প্রতিনিধিত্ব করতে থাকেন। জাতীয় দল থেকে আকস্মিক অন্তর্ধান ঘটলেও বেশ কয়েকবছর বোম্বে দলের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। আরও দেড় দশক প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জীবন চলমান রাখেন। কেবলমাত্র রান সংগ্রহেই ক্ষান্ত ছিলেন না। ১৯৫৯ সালের শুরুতে ত্রিনিদাদে সার্ভিসেসের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৬৩ রান সংগ্রহ করেন। দীর্ঘদিন দলে পুণরায় খেলার প্রত্যাশা করেছিলেন। দলে ফেরার সম্ভাবনার পথ রুদ্ধ হলেও খেলার প্রতি তাঁর আসক্তি শেষ হয়ে যায়নি। ব্যাটসম্যান ও মাঝে-মধ্যে অধিনায়কের দায়িত্ব পালনসহ খেলার প্রতি তাঁর নিবিড় টান লক্ষ্য করা যায়। রঞ্জী ট্রফিতে ৩৯.৮০ গড়ে ২০৭০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাসত্ত্বেও আর তাঁকে ভারতে দলে ফিরিয়ে আনা হয়নি। এভাবেই পাঁচ মাসের ব্যবধানে তাঁর আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ষাটের বয়সের কাছাকাছি সময়েও খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন।
ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ সালে সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন তিনি। সব মিলিয়ে ১৭ বছরের খেলোয়াড়ী জীবনে ৬৭টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। ৩৮.৭৯ গড়ে ছয় শতক সহযোগে ৩৩৩৬ রান তুলেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর চাকুরী করতে মালয়েশিয়ায় চলে যান। তাসত্ত্বেও, বোম্বেভিত্তিক কঙ্গা লীগে জলি ক্রিকেটার্সের পক্ষে খেলতে থাকেন। ৫০ বছর ধরে কঙ্গা লীগে খেলেছেন। ৭০ বছর বয়সেও কঙ্গা লীগে অংশ নিয়েছেন। ১৯৪৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত এ লীগে অংশ নিয়ে পাঁচ সহস্রাধিক রান তুলেন। সিসিআই নিয়ম পরিবর্তনে অগ্রসর হন ও ১৪ বছর বয়সী কিশোর শচীন তেন্ডুলকরকে ক্লাবের সদস্য করেন। ৭১ বছর বয়সে সর্বশেষ খেলেন। ষাটের বছরে অর্ধ-বয়সী অবে কুরুবিল্লা’র সাথে খেলেন। সচরাচর স্টুয়ার্ট সারিজ ব্যাট হাতে নিয়ে মাঠে নামতেন। এছাড়াও, এমসিসি’র সদস্য হবার পর থেকে হার্লেকুইন ক্যাপ পরিধান করতেন।
দেশের বাইরে অবস্থান করলেও খেলার কথা শুনে কুয়ালালামপুর কিংবা সিঙ্গাপুর থেকে এসে জোলি ক্রিকেটার্স ক্লাবের পক্ষে অংশ নিতেন। যদি তিনি জানতে পারতেন যে, আবহাওয়া ভালো রয়েছে তাহলে খেলায় অংশগ্রহণকল্পে ৫০ বছর বয়সে এসেও বিমানে আরোহণ করতেন। যদি প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হতো ও খেলা আয়োজন করা সম্ভব হতো না তাহলে সিঙ্গাপুরে ফিরে যেতেন। অর্থ নিয়ে কোন চিন্তে করেননি ও খেলার প্রতি তাঁর সুগভীর অনুরাগ লক্ষ্য করা যায়।
১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে ৫৫ বছর বয়সে শিবাজী পার্ক জিমখানায় পুরুষোত্তম শীল্ডে ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়ার পক্ষে খেলেন। প্রতিপক্ষীয় দলে ১৪ বছর বয়সী শচীন তেন্ডুলকরের বিপক্ষে খেলেন। ১৯৮৯ সালে বোম্বেভিত্তিক দেশের অন্যতম প্রাচীন ক্লাব ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি হন। পরবর্তীতে, সাজঘর ব্যবহারের নিয়মের পরিবর্তনসহ ১৫ বছর বয়সী শচীন তেন্ডুলকরকে ক্লাবের পক্ষে খেলার সুযোগ দিয়ে স্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। ঐ সময়ে তেন্ডুলকরের প্রতিভা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি মন্তব্য করেন যে, ‘১৪, ১৬ বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখা মন্দ কিছু নয়। খুব কমই এ ধরনের প্রতিভা ভবিষ্যতে যে বিকশিত হবে তা কে জানে। ঐ সময়ে সাজঘরে থেকে আমি বলেছিলাম যদি এ বালক তাঁর মাথা কাঁধের উপর রাখতে পারে তাহলে আজ হউক কিংবা কাল সে অবশ্যই ভারতের পক্ষে খেলবে। কিন্তু, ঈশ্বর তা হতে দেননি। সে শততম শতক হাঁকিয়েছে।’
এছাড়াও, বোম্বের শেরিফ হিসেবে তিনি নামাঙ্কিত হন। চুরাশি বছর বয়সে এসেও ব্যাডমিন্টন ও স্কোয়াশ খেলেছেন। পনেরোবারের জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন নান্দু নাটেকরের সাথে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা অরবিন্দ আপ্তে ১৯৫৯ সালে ভারতের পক্ষে একটিমাত্র টেস্টে অংশ নিয়েছেন।
কয়েক দশক পর স্বীয় আত্মজীবনী ‘অ্যাজ লাক উড হ্যাভ ইট – আনপ্লাগড আনকাট’ নামীয় গ্রন্থে তৎকালীন দল নির্বাচকমণ্ডলী লালা অমরনাথ কোনরূপ কারণ ছাড়াই টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্বীয় মেধাগুণে খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নেন, এতে রাজনীতির গন্ধ পান ও ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, কিংবদন্তীতুল্য তারকা খেলোয়াড় লালা অমরনাথের কারণে তাঁকে ঐ সময়ে দলের বাইরে রাখা হয়েছিল।
টেস্টে ৪৯.২৭ গড়ে ৫৪২ রান তুলেন। বিদেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ টেস্টে ৫১ গড়ে রান পেয়েছেন। ১১বার আউট হয়েছেন। তন্মধ্যে, আটবার ত্রিশোর্ধ্ব রান সংগ্রহ করলেও আর তাঁকে ভারত দলে রাখা হয়নি। সংগৃহীত ৫৪২ রানের ৪৬০ রানই ওয়েস্ট ইন্ডিজে করেছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ঘটনা হিসেবে তাঁর বাদ পড়ার বিষয়টি চিত্রিত হয়ে থাকবে।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। বমন আপ্তে নামীয় সন্তান ভারতের পক্ষে স্কোয়াশ খেলায় অংশগ্রহণসহ বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ৮৬ বছর ৩৫৩ দিন বয়সে ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখে মুম্বইভিত্তিক ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে তাঁর দেহাবসান ঘটে। মৃত্যুকালীন ডিকে গায়কোয়াড়, সিডি গোপীনাথ ও চন্দ্রকান্ত পাটনকরের পর ভারতের চতুর্থ জীবিত বয়োজ্যেষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটারের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। চান্দু বোর্দে তাঁর প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন যে, ‘তিনি প্রাণবন্ত ব্যক্তিসত্ত্বার অধিকারী ছিলেন ও মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার ভিত্তি আনয়ণে জোড়ালো ভূমিকা রাখেন। তিনি বয়সে বড় হলেও আমরা মাঠের বাইরে – সভা কিংবা অনুষ্ঠানে একত্রিত হতাম। তবে, মুম্বইয়ের ক্রিকেট জগতে বেশ মূল্যবান ভূমিকা রেখেছিলেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন ও চমৎকার ফিল্ডিং করতেন। শুধুমাত্র ক্রিকেটই নয়, তিনি যে-কোন ধরনের খেলাধূলাই ভালোবাসতেন। স্কোয়াশ ও ব্যাডমিন্টনে তাঁর দারুণ সখ্যতা ছিল।’
তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শচীন তেন্ডুলকর মন্তব্য করেন যে, ‘শিবাজী পার্কে ১৪ বছর বয়সে তাঁর বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাই। স্পষ্ট মনে আছে যে, সিসিআইয়ের পক্ষে খেলার জন্যে তিনি ও দুঙ্গারপুর স্যার আমাকে খেলার সুযোগ দিয়েছিলেন। তিনি সর্বদাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন ও শুভাকাঙ্খী ছিলেন।’ ভারতের সাবেক তারকা ও মুম্বইয়ের ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার এক বার্তায় মন্তব্য করেন যে, ‘‘শ্রী মাধবরাও আপ্তে’র দেহাবসানে অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। তিনি খেলার প্রতি আমাদের মাঝে বিশ্বাসবোধ এনেছিলেন।’’
