| |

লিন্ডসে টাকেট

৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৯ তারিখে নাটালের ডারবানে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। ১৯৪০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ফাস্ট বোলিং তারকার মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে নিজের সেরা সময়টুকু হারিয়ে ফেলেন। তাসত্ত্বেও, টেস্টে খেলার সুযোগ পেলে নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হন। এ পর্যায়ে দৃশ্যতঃ তাঁকে সহায়তাকারীর ভূমিকায় তেমন কাউকে অগ্রসর হতে দেখা যায়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিং আক্রমণের প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৩৪-৩৫ মৌসুম থেকে ১৯৫৪-৫৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

পিতা লেন টাকেট দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী ছিলেন। ষোড়শ জন্মদিন উদযাপনের দুই মাসেরও কম সময় নিয়ে দলটিতে প্রথম খেলতে নামেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর ক্রিকেট খেলা পুণরায় শুরু হলে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম শীর্ষ বোলার ছিলেন।

১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে নয়টিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে অ্যালান মেলভিলের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে ইংল্যান্ড সফর করেন। ৭ জুলাই, ১৯৪৭ তারিখে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অ্যাথল রোয়ান, জনি লিন্ডসে, টাফ্টি মান, অসি ডসন, টনি হ্যারিস ও ইয়ান স্মিথের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। দূর্দান্ত বোলিং করেন। খেলায় তিনি প্রথম ইনিংসে ৩৭ ওভার বোলিং করে ৫/৬৮ লাভ করেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ১/১২৭ পান। পাশাপাশি, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে এরিক হোলিসের বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

ঐ সিরিজ থেকে ১৫ উইকেট দখল করেছিলেন। লর্ডস টেস্টে অপূর্ব খেলেন। ৫/১১৫ লাভ করে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে ঠাঁই করে নেন। তবে, ডেনিস কম্পটন (২০৮) ও বিল এডরিচ (১৮৯) তৃতীয় উইকেটে ৩৭০ রান তুলে নতুন বিশ্বরেকর্ড দাঁড় করান। স্বাগতিক দল ৫৫৪/৮ তুলে ইনিংস ঘোষণা করলে তাঁর দল ১০ উইকেটে পরাজিত হয়েছিল।

এরপর, ৫ জুন, ১৯৪৭ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৩ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ১৩ ও ১৭ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে বিল এডরিচের শিকারে পরিণত হন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/১৪৮ ও ০/২৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ৭ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ১৬ আগস্ট, ১৯৪৭ তারিখে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৭ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ০* ও ৪০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৮২ ও ০/৩৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে পরাজিত হয়।

১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জর্জ মানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১ ও ৩* রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৩৬ ও ১/৩৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ২ উইকেটে পরাজিত হলে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ৫ মার্চ, ১৯৪৯ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/২২ ও ০/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে পরাভূত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

সব মিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে দুইবার পাঁচ-উইকেটসহ ১৯ উইকেটের সন্ধান পেয়েছিলেন। প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলো থেকে ২২৫ উইকেট পেয়েছিলেন। তন্মধ্যে, ১৯৫১-৫২ মৌসুমে ১৭.৫৯ গড়ে ৩২ উইকেট লাভ করেছিলেন।

ফ্রি স্টেট ক্রিকেটের সম্মানসূচক আজীবন সদস্যের মর্যাদা পান। গত ১০০ বছর ফ্রি স্টেটের সেরা একাদশের অন্যতম হিসেবে মনোনীত হন। ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে ব্লোমফন্তেইনে ৯৭ বছর ২১২ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। ১০৩ বছর বয়সী নরম্যান গর্ডনের দেহাবসানের ফলে মৃত্যু পূর্বকালীন বিশ্বের বয়োজ্যেষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটারের মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। লিন্ডসে টাকেটের মৃত্যুর ফলে ৯৩ বছর বয়সী জন ওয়াটকিন্স দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবীণতম জীবিত টেস্ট ক্রিকেটার মর্যাদা পাচ্ছেন।

Similar Posts

  • |

    কুলদীপ যাদব

    ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। স্লো লেফট-আর্ম চায়নাম্যান বোলিং করেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে থাকেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১.৬৮ মিটার উচ্চতার অধিকারী। রাম সিং ও ঊষা যাদব দম্পতির সন্তান তিনি। প্রিয়া যাদব নাম্নী জ্যেষ্ঠা ভগ্নী রয়েছে। পিতা ইট ভাটার মালিক।…

  • |

    ফ্রাঙ্ক অ্যালান

    ২ ডিসেম্বর, ১৮৪৯ তারিখে ভিক্টোরিয়ার অ্যালান্সফোর্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন তিনি। ১৮৭০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘ক্যাঙ্গারু’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ১৮৬৭-৬৮ মৌসুম থেকে ১৮৮২-৮৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮ বছর বয়সে মেলবোর্নে নিউ…

  • |

    ধীরাজ পারসানা

    ২ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে গুজরাতের রাজকোটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট কিংবা স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৭০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৪০ একর ভূমির মালিক, ধনী কৃষকের সন্তান ছিলেন। ১৯৬৫-৬৬ মৌসুম থেকে ১৯৮২-৮৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান…

  • |

    ট্রেন্ট বোল্ট

    ২২ জুলাই, ১৯৮৯ তারিখে রোতোরুয়ায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। দলে তিনি মূলতঃ বোলারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করে থাকেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পর্যাপ্ত পেস সহযোগে সুইং বোলিংয়ে দক্ষতা প্রদর্শনসহ শেষেরদিকের ওভারগুলো পেস ও নিশানা বরাবর বল ফেলে চাতুর্য্যতার পরিচয় দিয়েছেন। ওয়াসিম আকরামের সাফল্যে উজ্জ্বীবিত…

  • |

    সিস পার্কিন

    ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮৬ তারিখে কো ডারহামের ঈগলসক্লিফ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯২০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পিতা রেলওয়েতে চাকুরী করতেন। নর্টন থেকে টিসাইডে তাঁর পরিবারের সাথে চলে যান। এ পর্যায়ে পার্কিন সিনিয়র স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করতেন। বারো…

  • | |

    এনামুল হক, ১৯৬৬

    ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ তারিখে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও আম্পায়ার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, কার্যকর স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিয়ে পারদর্শী ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘মণি’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুম থেকে ২০০২-০৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিনিধিত্ব…