| | |

লাসিথ মালিঙ্গা

২৮ আগস্ট, ১৯৮৩ তারিখে গল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। মাঝে-মধ্যে ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়েও পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

সেপারমাডু মিল্টন ও স্বর্ণা থিনুয়ারা দম্পতির সন্তান। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি (১.৭৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। সীমিত-ওভারের খেলায় অন্যতম সেরা বোলার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। দলে মূলতঃ ফাস্ট বোলিং করে থাকেন এবং শেষেরদিকের ওভারগুলোয় বিরাটভাবে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। কৈশোরে গলের উত্তরাঞ্চলীয় রথগামার উপকূলীয় এলাকায় সফট-বল ক্রিকেট খেলতেন। অনানুষ্ঠানিকভাবে চম্পকা রামানায়েকে’র কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। খেলোয়াড়ী জীবনে প্রবেশের পূর্বে ইয়র্কারে তাঁর সহায়তা লাভ করেন। পপিং ক্রিজের সামনে এক জোড়া জুতো রাখতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বোলিং অনুশীলন করতেন।

জাতীয় পর্যায়ে খেলার পূর্বে ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে ধ্বংসাত্মক ফাস্ট বোলার হিসেবে নিজের পরিচিতি ঘটান। ১৮ বছর বয়সে ২০০১-০২ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। এরপর থেকে ৮৪টি খেলায় অংশ নিয়েছেন। ২৫৭ উইকেট দখল করেন। সাতবার পাঁচ-উইকেট লাভ করেছেন। এছাড়াও, ২৯০টি লিস্ট-এ খেলায় ৪৪৬ উইকেট পেয়েছেন।

২০০১-০২ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে বাসনাহিরা, রুহুনা, রুহুনা রেডস, রুহুনা রয়্যালস, সাউদার্ন এক্সপ্রেস, সাউদার্ন প্রভিন্স, শ্রীলঙ্কা মাস্টার্স, ক্যান্ডি, গল ক্রিকেট ক্লাব ও নন্দেস্ক্রিপ্টস এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, মার্থা অ্যারাবিয়ান্স, মন্ট্রিল টাইগার্স, প্যালেস ডায়মন্ডস, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, মেলবোর্ন স্টার্স, গল গ্ল্যাডিয়েটর্স, জ্যামাইকা তল্লাজ, গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স, সেন্ট লুসিয়া জুকস, সাউদার্ন এক্সপ্রেস, রংপুর রাইডার্স ও খুলনা টাইটান্সের পক্ষে খেলেছেন।

২০০৪ সাল থেকে শ্রীলঙ্কার পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০০৪ সালে মারভান আতাপাত্তু’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। প্রস্তুতিমূলক খেলায় ৬/৯০ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। এরফলে, টেস্টে অংশগ্রহণের পথ সুগম হয়। ২১ বছর বয়সে ১ জুলাই, ২০০৪ তারিখে ডারউইনে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ঐ টেস্টে ছয় উইকেট দখল করেছিলেন। একই ওভারে ড্যারেন লেহম্যান ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে বিদেয় করেছিলেন। ২/৫০ ও ৪/৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, গ্লেন ম্যাকগ্রা’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৪৯ রানে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

পরের খেলায় আরও চার উইকেট নিয়ে সফলতম সফর শেষ করেন। পরের বছর নিউজিল্যান্ড সফরেও সফল হন। তাঁর নিচুমূখী বোলিং ভঙ্গীমার কারণে নিউজিল্যান্ডীয় ব্যাটসম্যান আম্পায়ারকে তাঁদের পোশাকের রঙ পরিবর্তনের কথা জানান।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েই বোলিং ভঙ্গীমার কারণে প্রথম সকলের দৃষ্টিতে পড়েন। ক্ষীপ্রগতিতে দর্শনীয় বোলিং ভঙ্গীমা নিয়ে প্রতিপক্ষীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে ভীতিদায়ক বোলারে পরিণত হন। তবে, বেশ কয়েকজন বোলার তাঁদের অপ্রচলিত বোলিং ভঙ্গীমা নিয়ে ক্রিকেট জগতে প্রবেশ করলেও বেশীদিন টিকে থাকতে পারেননি ও ক্রিকেট জগৎ তাঁদেরকে পুরোপুরি বিস্মৃতির অন্তরালে নিয়ে যায়। কিন্তু, লাসিথ মালিঙ্গা তাঁদের ব্যতিক্রম। স্বীয় প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে ক্রিকেটবোদ্ধাদের মন জয় করতে পেরেছেন। নিখুঁততার সাথে ক্রমাগত ইয়র্কার ফেলে উপর্যুপরী উইকেট লাভের কারণে ‘ইয়র্কারের রাজা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। ইয়র্কারগুলো ধীরগতিসম্পন্ন ছিল। শারীরিক ভারসাম্য বজায় রেখে চমকপ্রদ বাউন্স ছুঁড়তেন ও বোলিং ভঙ্গীমায় তাঁর বলগুলো মোকাবেলা করা বেশ দুরূহ বিষয় ছিল। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে ফিল্ডিংয়ে পরিবর্তন ঘটাতেন ও ব্যাটসম্যানদেরকে ভ্যাবাচেকা খাইয়ে বিস্ময়কর সাফল্য পেতেন।

ওডিআইয়ে একই ধারা নিয়ে সূচনা করতে পারেননি। প্রথম আটটি ওডিআইয়ে মাত্র ৭ উইকেট পেয়েছিলেন। ১৭ জুলাই, ২০০৪ তারিখে ডাম্বুলায় অনুষ্ঠিত সফররত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অভিষেক ঘটে। একটিমাত্র উইকেট লাভ করেন। ২০০৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে আরও সেরা বোলিং করতে থাকেন। এ পর্যায়ে নিজেকে ক্ষুদ্রতর সংস্করণের উপযোগী হিসেবে আবির্ভুত করেন।

২০০৪-০৫ মৌসুমে মারভান আতাপাত্তু’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৪ এপ্রিল, ২০০৫ তারিখে নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৪/১৩০ ও ৫/১৮০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। জেমস ফ্রাঙ্কলিনের বলে শূন্য রানে বিদেয় নেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিং স্বত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৬-০৭ মৌসুমে মাহেলা জয়াবর্ধনে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৬ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে নিয়ে সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পূর্বতন ৫/৮০ বোলিং সাফল্য ম্লান হয়ে যায়। ৫/৬৮ ও ২/৬২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করালেও ব্যাট হাতে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। উভয় ইনিংসেই ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। তবে, চামারা সিলভা’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২১৭ রানে পরাজিত হলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

শ্রীলঙ্কা দলে স্বীয় স্থান পাকাপোক্ত করার পর ২৪ বছর বয়সে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অসাধারণ খেলা উপহার দেন। ঐ প্রতিযোগিতায় ১৮ উইকেট পেয়েছিলেন। তন্মধ্যে, ৩/১০, ৩/২৭ ও ৪/৫৪ বোলিং পরিসংখ্যান অন্যতম। এ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম হ্যাট্রিক করেন। প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে চার বলে চার উইকেট তুলে নেন।

২৮ বছর বয়সে ২০১১ সালে নিজস্ব দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তুলনামূলকভাবে পূর্বেকার প্রতিযোগিতার চেয়ে ভালো খেলেন। এ প্রতিযোগিতা চলাকালীন কেনিয়ার বিপক্ষে নিজস্ব তিনটি হ্যাট্রিকের দ্বিতীয়টি সম্পন্ন করেন। এরপর, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও হ্যাট্রিক করেছিলেন। খুব দ্রুত নিজেকে শ্রীলঙ্কার সীমিত-ওভারের খেলায় ভীতিদায়ক বোলারে পরিণত করেন। মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারাতিলকরত্নে দিলশান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও সন্দেহাতীতভাবেই ২০০৭ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাসমূহ শ্রীলঙ্কাকে পরিচিতি ঘটাতে তিনি প্রায় একাকী ভূমিকা রেখেছিলেন।

সাদা-বল নিয়ে অন্যতম সেরা বোলারে পরিণত হন। ২৮.৮৭ গড়ে ৩৩৮ উইকেট ৩২.৩০ স্ট্রাইক রেটে ও ওভারপ্রতি ৫.৩৫ রান খরচ করে পেয়েছেন। ওডিআইয়ে আটবার পাঁচ-উইকেট ও এগারোবার চার-উইকেটের সন্ধান পেয়েছেন। বেশ কয়েকবার উপর্যুপরি উইকেট লাভে তৎপরতা দেখিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ওডিআইয়ে তিনবার ও টি২০ ক্রিকেটে দুইবার হ্যাট্রিক করেছেন। এছাড়াও, পরপর চার বলে চার উইকেট লাভের ন্যায় ডাবল হ্যাট্রিক করেছেন দুইবার।

টেস্ট ক্রিকেটে দূর্দান্ত সূচনা করলেও তেমন সফলতার দেখা পাননি। এছাড়াও, নিজেকে কখনো টেস্ট ক্রিকেটের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলেননি। তাসত্ত্বেও, শ্রীলঙ্কার তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। হাঁটুর আঘাতের কারণে ২০০৮ সালের পর পরবর্তী দুই বছর টেস্টের বাইরে অবস্থান করেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের বিদায়ী সিরিজে পুণরায় তাঁকে নেয়া হয়। আবারও কয়েকমাস আঘাতের কারণে দূরে থাকেন।

২০১০ সালে নিজ দেশে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ৩ আগস্ট, ২০১০ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৪ ও ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/১১৯ ও ০/৪৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ভিভিএস লক্ষ্মণের অনবদ্য ব্যাটিং সাফল্যে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে পরাজিত হলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

অতঃপর ২৭ বছর বয়সে এপ্রিল, ২০১১ সালে মাত্র ৩০ টেস্টে অংশ নেয়ার পর ক্রিকেটের দীর্ঘ সংস্করণের খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য হন। এ পর্যায়ে ৩৩.১৫ গড়ে ১০১ উইকেট দখল করেন। ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ৫/৫০। তন্মধ্যে, তিনবার ইনিংসে পাঁচ-উইকেট পেয়েছেন। ক্রমাগত হাঁটুর আঘাতে জর্জড়িত থাকার কারণেই অবসর নিয়েছিলেন। এরফলে, সাদা-বলের ক্রিকেটে নিজেকে জড়িয়ে রাখার সুযোগ পান ও সফলতার স্বাক্ষর রাখতে থাকেন।

আগস্ট, ২০১১ সালে ওডিআইয়ের ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে হিসেবে তিনটি হ্যাট্রিক লাভের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। ৩১ বছর বয়সে ২০১৪ সালের টি২০আই বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা দলের শিরোপা বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে, ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শেষে নিজ দেশে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার পর ওডিআই থেকে অবসর নেন।

২০১৪ সালের আইসিসি বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন ও স্বর্ণালী মুহূর্ত উদযাপন করেন। নিয়মিত অধিনায়ক দিনেশ চণ্ডীমালকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে তিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। অতঃপর, দলের শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। ভারতের বিপক্ষে শেষবারের মতো বোলিংয়ে এসে মাঝারিসারিতে ধ্বস নামান। এরপূর্বে শারীরিক সুস্থতার প্রশ্নে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন হুমকির মুখে পড়েছিল। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে ওডিআইয়ে দলকে পরিচালনা করলেও কখনো নিয়মিত অধিনায়কের মর্যাদা পাননি। ২০১৬ সালের বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতাকে ঘিরে টি২০ অধিনায়কত্ব থেকে তাঁকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

২০১৪ সালের শেষদিকে দীর্ঘস্থায়ী গোড়ালীর সমস্যার কারণে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা থেকে পরবর্তী বছরগুলোয় খেলার মান ক্রমশঃ নিচেরদিকে চলে যেতে থাকে। পাশাপাশি ওজনগত সমস্যাতো ছিলই।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। বেশ কয়েকবছর ধরে বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দলটির সদস্যরূপে বেশ ভালোমানের ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপন করেছেন। ফলশ্রুতিতে, আইপিএলের ২০২০ সালের আসরেও বোলার হিসেবে তাঁকে দলে রাখা হয়। আইপিএলের এক মৌসুমে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বোলিং পরামর্শকের দায়িত্ব পালনের ফলে অধিকাংশ ক্রিকেট বিশ্লেষকের ধারনা ছিল যে, হয়তোবা তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে। তাঁর শারীরিক গড়ন ও পেস বোলিং দৃশ্যতঃ বিশ্বব্যাপী শীর্ষ লীগগুলোর উপযোগী ছিল না। আর, ৫০-ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উপযোগীতো নয়ই।

তাসত্ত্বেও তিনি নিজেকে শীর্ষ খেলোয়াড় হিসেবে আইপিএলে ফিরিয়ে আনেন। এছাড়াও, ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিজেকে শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণের চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত করেন। এমনকি নিজ দেশে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজস্ব শেষ ওডিআইয়ে শ্রীলঙ্কার সফলতম বোলারে পরিণত করেছিলেন। ওভারপ্রতি চার রানের কমে তিন উইকেট লাভ করেন। দর্শকদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পান ও ৫০-ওভারের ক্রিকেটকে বিদেয় জানান। ২২৬ খেলা থেকে ৩৩৮ উইকেট পান। তন্মধ্যে, আটবার ওডিআইয়ে পাঁচ-উইকেটের সন্ধান পেয়েছেন।

টি২০আইয়ে খেলা চালিয়ে যাবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরবর্তী টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শেষে সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার কথা জানান। কিন্তু, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা স্থগিত হয়ে যায়। সব মিলিয়ে ৭৯টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়ে ১০৬ উইকেট পেয়েছেন। দুইবার পাঁচ-উইকেট লাভ করেছেন। এছাড়াও, দুইবার হ্যাট্রিক পেয়েছেন।

একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে একাধারে চার বলে ৪ উইকেট দুইবার দুই ধরনের খেলায় লাভ করেন। ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ সফলতা পান। প্রথম বোলার হিসেবে তিন ধরনের খেলায় ১০০ উইকেট পেয়েছেন। প্রথম বোলার হিসেবে টি২০আইয়ে ১০০ উইকেট লাভ করেন। একমাত্র বোলার হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিকে তিনবার হ্যাট্রিক পেয়েছেন। ২০০৭ ও ২০১১ সালের দুইটি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দুইবার হ্যাট্রিক করে রেকর্ড গড়েন। একমাত্র বোলার হিসেবে পাঁচবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হ্যাট্রিক পেয়েছেন। ওডিআইয়ে দ্রুততম ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। ওডিআইয়ে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের সাথে নবম উইকেট জুটিতে ১৩২ রান তুলে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। শ্রীলঙ্কার একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে দশ নম্বরে ব্যাটিং করে অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছেন।

২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাতবার ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট কর্তৃক সেরা টি২০আই বোলার হিসেবে নামাঙ্কিত হন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তানিয়া পেরেরা নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেছেন। এ দম্পতির ডুভিন মালিঙ্গা নামীয় এক পুত্র সন্তান রয়েছে।

Similar Posts

  • | |

    ক্রেগ ব্রাদওয়েট

    ১ ডিসেম্বর, ১৯৯২ তারিখে বার্বাডোসের ব্ল্যাক রক এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ইনিংস উদ্বোধন করে থাকেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘বোবো’ ডাকনামে ভূষিত ক্রেগ ব্রাদওয়েট কম্বারমেয়ার স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। পপ তারকা রিহান্না’র সাথে একই বিদ্যালয়ে পড়তেন ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে…

  • |

    রবিন সিং

    ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩ তারিখে ত্রিনিদাদের প্রিন্সেস টাউন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে অল-রাউন্ডার হিসেবে ভারত দলে খেলেছেন। ১৯৯০-এর দশকে ওডিআইয়ে একাধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। সচরাচর মাঝারিসারিতে ব্যাট হাতে মাঠে নামতেন ও শেষদিকের…

  • |

    জেমস ক্রান্সটন

    ৯ জানুয়ারি, ১৮৫৯ তারিখে ওয়ারউইকশায়ারের বোর্ডস্লে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। এছাড়াও, বামহাতে বোলিং করতেন। ১৮৯০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। টানটন কলেজে পড়াশুনো করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ ক্রিকেটে গ্লুচেস্টারশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সতেরো বছর বয়সে দলটির সাথে প্রথম যুক্ত হন।…

  • | | |

    জেফ ক্রো

    ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৮ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রেফারি। মূলতঃ ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। মার্টিন ক্রো’র চার বছরের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা তিনি। কনিষ্ঠের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশের এক বছর পর তিনি খেলার সুযোগ পান। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে প্রাদেশিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরেন। এরপরই…

  • | |

    এডো ব্রান্ডেস

    ৫ মার্চ, ১৯৬৩ তারিখে নাটালের পোর্ট শেপস্টোন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘চিকেন জর্জ’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। প্রিন্স এডওয়ার্ড স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ২০০০-০১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী…

  • | |

    কার্লি পেজ

    ৮ মে, ১৯০২ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চের লিটলটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে স্লো বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাশাপাশি, স্লিপ কিংবা গালি অঞ্চলে ফিল্ডিং করতেন। ১৯৩০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় অধিনায়কের মর্যাদা লাভ করেন। খেলাধূলায় বেশ ভালো ফলাফল করেন। ক্রিকেট ও…