| |

ল্যান্স ক্লুজনার

৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে নাটালের ডারবানে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা পালন করেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

জুলু ও খোসা ভাষায় সহজাত দক্ষতা থাকায় তিনি ‘জুলু’ ডাকনামে ভূষিত হন। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম থেকে ২০০৮-০৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে কোয়াজুলু-নাটাল, জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে মাউন্টেনিয়ার্স এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্স, নর্দাম্পটনশায়ার ও নটিংহ্যামশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বহিঃবিশ্ব একাদশ, ডলফিন্স, কলকাতা টাইগার্স ও নাটাল কান্ট্রি ডিস্ট্রিক্টসের পক্ষে খেলেছেন।

২০০২ সালে স্বল্পমেয়াদী চুক্তিতে ট্রেন্ট ব্রিজে চলে আসেন। এ পর্যায়ে আন্তর্জাতিক তারকা খ্যাতি লাভসহ নিজ নামের পার্শ্বে একটি প্রথম-শ্রেণীর দ্বি-শতরানের ইনিংস লিখিয়েছেন। বিশেষতঃ সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে বেশ পরিচিতি লাভ করেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ারের ৫৬৪ নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।

১৯৯৬ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ৪৯ টেস্ট ও ১৬১টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯ জানুয়ারি, ১৯৯৬ তারিখে ইস্ট লন্ডনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে প্রবেশ করেন।

১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে হান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ২৭ নভেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। হার্শেল গিবসের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক ঘটে। অভিষেক পর্বকে বেশ স্বার্থক করে তোলেন ও ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথমবারের মতো টেস্টে পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ০/৭৫ ও ৮/৬৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঘটনাবহুল এ টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম ইনিংসে ৬১তম ওভারে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন তাঁর বল থেকে উপর্যুপরী পাঁচটি চারের মার মেরেছিলেন। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, গ্যারি কার্স্টেনের অসাধারণ জোড়া শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩২৯ রানে পরাভূত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের নাটকীয় সেমি-ফাইনালের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখেন। ২১৫ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অ্যালান ডোনাল্ডের সাথে জুটি গড়েন। শেষ ওভারের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ২০৫/৯ থাকাকালে ড্যামিয়েন ফ্লেমিংয়ের প্রথম দুই বল থেকে উপর্যুপরী চার রান তুলেন। চার বল থেকে ১ রানের জয়সূচক রান সংগ্রহকালে তিনি স্ট্রাইক করছিলেন। তবে, ঝুঁকিপূর্ণ রান সংগ্রহকালে অ্যালান ডোনাল্ড সাড়া দিতে ব্যর্থ হওয়ায় খেলাটি টাইয়ে গড়ায়। প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী গ্রুপ পর্বে একই দলের বিপক্ষে জয় পাওয়ায় অস্ট্রেলিয়া দল চূড়ান্ত খেলায় অবতীর্ণ হয়। এ ঘটনায় তাঁর পুরো খেলোয়াড়ী জীবনের সাফল্য ম্লান হয়ে পড়ে। তবে, তিনি ঐ প্রতিযোগিতার প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।

২০০০ সালে শন পোলকের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ৬ আগস্ট, ২০০০ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৯৫* ও ৩৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৩৬ ও ১/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

২০০৪-০৫ মৌসুমে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ৪ আগস্ট, ২০০৪ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০/৬৯ ও ২/৪০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। মাহেলা জয়াবর্ধনে’র অসাধারণ দ্বি-শতক সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রত্যাবর্তনের পর প্রধান ও উজ্জ্বলতম তারকা হিসেবে মারকুটে ব্যাটসম্যান ও ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে তাঁকে চিত্রিত করা হয়। ব্যাট ও বল হাতে নিয়ে কার্যকর প্রভাব ফেলতেন এবং খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূক মনোভাব প্রকাশ করতেন।

২০০৭ সালের শেষদিকে অনুমোদনবিহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে কলকাতা টাইগার্স দলের সাথে খেলেন। পর্যাপ্ত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ২০০৯ সালে আইসিএল ত্যাগ করেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। বাংলাদেশের বোলিং হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সময়কালে ডলফিন্সের প্রধান কোচের দায়িত্বে ছিলেন। এক পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কোচিং কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ২৫ জুলাই, ২০২২ তারিখে ডারবানভিত্তিক বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দলকে সিএসএ টি২০ লীগের কোচ হিসেবে মনোনীত করা হয়। ৭ মার্চ, ২০২২ তারিখে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং কোচ হিসেবে পুণরায় নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের প্রধান কোচ হিসেবে মনোনীত হন। ডিসেম্বর, ২০২১ সালে আফগানিস্তানের প্রধান কোচ হিসেবে চুক্তি নবায়ণ না করার কথা ঘোষণা করেন।

২০০০ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন।

Similar Posts

  • |

    আর্নি জোন্স

    ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৮৬৯ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার অবার্ন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাথরখোঁদাইকারক যোসেফ জোন্স ও মেরি দম্পতির পুত্র ছিলেন। স্থানীয় বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন পিতার সাথে চিত্রকর ও রাজমিস্ত্রী হিসেবে কুর্ন ও ব্রোকেন হিল এলাকায় সরকারী কাজে…

  • |

    টম ম্যাককিবিন

    ১০ ডিসেম্বর, ১৮৭০ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের র‍্যাগল্যান এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৮৯৪-৯৫ মৌসুম থেকে ১৮৯৮-৯৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ…

  • | | |

    টনি হাওয়ার্ড

    ২৭ আগস্ট, ১৯৪৬ তারিখে বার্বাডোসের লোয়ার কলিমোর রক এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৭০-এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। বেশ মজবুত আকৃতি ও ছোটখাটো গড়নের অধিকারী। স্পার্টান ক্রিকেট ক্লাবের মাধ্যমে ক্রিকেট খেলায় সূত্রপাত ঘটান। ঘরোয়া আসরের…

  • |

    আর্থার মেইলি

    ৩ জানুয়ারি, ১৮৮৬ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের জেটল্যান্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, ব্যাঙ্গচিত্রবিদ ও সাংবাদিক ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯২০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। জন হ্যাম্বলটন মেইলি ও জেন শার্লত দম্পতির তৃতীয় পুত্র ছিলেন। ১৩ বছর বয়সে ওয়াটারলু পাবলিক স্কুল থেকে চলে…

  • | |

    এডগার মেইন

    ২ জুলাই, ১৮৮২ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার জেমসটাউনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে বোলিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। জন্ম সনদে তিনি ‘রিচার্ড এডগার মেইন’ নামে পরিচিতি পান। দীর্ঘদেহী ও সুদর্শন প্রকৃতির ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। কাট ও ড্রাইভের দিকেই অধিক মনোনিবেশ ঘটাতেন। তবে,…

  • | | |

    বব ওয়াট

    ২ মে, ১৯০১ তারিখে সারের মিলফোর্ড হিদ হাউজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী শৌখিন ও বিখ্যাত ক্রিকেটার এবং প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কভেন্ট্রিভিত্তিক রাজা অষ্টম হেনরি স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন রয়্যাল এয়ার ফোর্সের পাইলট অফিসার হিসেবে…