Skip to content

২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪ তারিখে ব্রিটিশ গায়ানার কুইন্সটাউনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

ডেমেরারা সিসি’র পক্ষে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। শুরুতে লেগ-ব্রেক বোলিং করতেন। গুগলিতে পারদর্শী ছিলেন না। তবে, মাঝে-মধ্যে অফ-স্পিন বোলিংয়ে বৈচিত্র্যতা আনয়ণকালে বেশ হিমশিম খেতেন। এরফলে, অধিনায়কদের ফিল্ডিং সাজাতে বেশ কঠিততর হয়ে পড়তো। অফ-ব্রেক বোলিংয়ে নিখুঁততা আনয়ণের পর তিনি অর্থোডক্স স্পিনের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

ফাস্ট বোলারদের উৎপত্তিস্থলরূপে পরিচিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ও পরবর্তীকালে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা স্পিনারের মর্যাদা লাভ করেন। মুত্তিয়া মুরালিধরনের আবির্ভাবের পূর্ব-পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে সর্বশ্রেষ্ঠ অফ-স্পিনার হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। খেলোয়াড়ী জীবনের অধিকাংশ সময়ই সহায়ক ভূমিকার স্বাক্ষর রেখেছেন। তবে, খেলোয়াড়ী জীবন শেষে ঠিকই টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড স্থাপন করে গেছেন।

ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে ব্রিটিশ গায়ানা, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়া এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওয়ারউইকশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৫৩-৫৪ মৌসুম থেকে ১৯৭৪-৭৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ১৯ বছর বয়সে ব্রিটিশ গায়ানার সদস্যরূপে সফররত এমসিসি দলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। ডেনিস কম্পটনকে ১৮ ও রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি’র সহায়তায় টম গ্রেভনিকে ২৩১ রানে সাজঘরে ফেরৎ পাঠান। তিনি ২/১২৬ লাভ করেন। পরের কয়েক মৌসুম কয়েকটি খেলায় দূর্দান্ত খেলেছিলেন।

১৯৫৮ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ৭৯ টেস্ট ও তিনটিমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫৮ সালের শুরুতে নিজ দেশে আবদুল কারদারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৮ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ইস্টন ম্যাকমরিস ও ইভান মাদ্রে’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এ পর্যায়ে তিনি মাত্র পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ১১ উইকেট পেয়েছিলেন। মূলতঃ চতুর্দলীয় প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় বার্বাডোসের বিপক্ষে ৪ উইকেট লাভের সুবাদে তাঁকে টেস্ট দলে ঠাঁই দেয়া হয়েছিল। অভিষেক টেস্টে সফরকারী দলের বিপক্ষে বেশ ভূমিকা রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসের শেষদিকে তিন উইকেট লাভ করেছিলেন। খেলায় তিনি ১/৩৮ ও ৩/৩২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২ ও ২২ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে নাসিম-উল-গণির শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ১২০ রানে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

নিজ শহর জর্জটাউনে সিরিজের চতুর্থ টেস্ট খেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৮০ পেয়েছিলেন। এ সিরিজে ১৭ উইকেট দখলের ফলে ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে ভারত ও পাকিস্তান গমনার্থে তাঁকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাকিস্তানে বাজে আম্পায়ারিংয়ের কবলে পড়েন। তিন-টেস্টের সবকটিতেই তাঁর অংশগ্রহণ ছিল ও নিজেকে সর্বাপেক্ষা দূর্বোধ্য বোলার হিসেবে চিত্রিত করেন। টেস্টগুলো থেকে মাত্র ৮ উইকেট পেলেও ২২.৫০ গড়ে রান দিয়েছিলেন। এছাড়াও, ওভারপ্রতি মাত্র ১.৯১ রান খরচ করেন।

১৯৬০-৬১ মৌসুমে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে মাত্র ৩ টেস্ট খেললেও বেশ সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। ওয়েস হলের (২১) চেয়ে মাত্র দুইটি কম উইকেট পেলেও ১৯ উইকেট দখল করেছিলেন। উইকেটপ্রতি ২০.৭৮ রান খরচ করেছিলেন। এরফলে, বোলিং গড়ে শীর্ষে থাকেন ও দলে স্থায়ীভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। খ্যাতনামা টাই টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি। প্রথম দুই টেস্টে দলের বাইরে থাকেন। সিডনি টেস্টে চার বল থেকে তিন উইকেট এবং অ্যাডিলেডে হ্যাট্রিক লাভ করেন। টেস্ট ক্রিকেট থেকে জিম লেকারের অবসর গ্রহণ ও পূর্ববর্তী গ্রীষ্মে হিউ টেফিল্ড সর্বশেষ টেস্ট খেলার পর খুব সহজেই নিজেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অফ-স্পিনারে পরিণত করেন।

১৯৬০-এর দশকের শুরুতে নিজের স্বর্ণালী সময়ে অবস্থান করেছিলেন। মার্চ, ১৯৬২ সালে বার্বাডোসের কেনসিংটন ওভালে অসাধারণ খেলেন। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩.৩-৩৭-৩৮-৮ লাভ করেছিলেন। এ সাফল্যের পিছনে ফ্রাঙ্ক ওরেলের নেতৃত্বকে সাধুবাদজ্ঞাপন করেছিলেন। ত্রিশের অধিক ওভার বোলিং করে কোন উইকেট না পেলেও পরবর্তী ১৫ ওভারের ১৪টিতে মেইডেনসহ ছয় রান খরচায় আট উইকেট পান।

১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩/৯৬ ও ১/৬৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে শূন্য রানে অপরাজিত থাকার পাশাপাশি দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ৫ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৩১ জানুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের ষষ্ঠ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৪১ বছর বয়সে বয়োজ্যেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ৩০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে তিনি প্রথম অফ-স্পিনার ও দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এ সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। খেলায় তিনি ২/৬৮ ও ০/৬২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২ ও ০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। স্বাগতিকরা ১৬৫ রানে জয় পেলে ৫-১ ব্যবধানে সিরিজ করায়ত্ত্ব করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

সব মিলিয়ে ৩০৮ উইকেট দখল করেছিলেন। ২৭১১৫ বল থেকে আঠারোবার পাঁচ-উইকেট লাভ করেন ও ওভারপ্রতি মাত্র ১.৯৮ খরচ করেছিলেন। ৬০ টেস্টে তাঁর বোলিং থেকে জিএস সোবার্স সর্বাধিক ক্যাচ নেয়ায় যে-কোন বোলারের নির্দিষ্ট ফিল্ডারের সহায়তায় সর্বাধিক ক্যাচ নেয়ার রেকর্ড গড়েন। পরবর্তীতে, ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে ব্রিসবেন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার মার্ক টেলর ৫৭ টেস্টে শেন ওয়ার্নের বোলিং থেকে ৪০তম ক্যাচ মুঠোয় পুড়ে রেকর্ডটি নিজেদের করে নেন।

১৯৭২ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। পরিবহণ প্রতিষ্ঠান লাপার্কানে কাজ করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ১৯৬৩ সালে জয় নাম্নী এক রমণীকে বিয়ে করেন।