ল্যান্স কেয়ার্নস

১০ অক্টোবর, ১৯৪৯ তারিখে মার্লবোরার পিকটনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে এগিয়ে আসতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম মারকুটে ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পেয়েছেন। সুইং বোলারদের বিপক্ষে খেলতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। বড় ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও পর্যাপ্ত সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৭ বছর বয়সে বধিরতা ধরা পড়ে এবং বিশের কোটায় শ্রবণশক্তি ধ্বসে পড়ে। এক পর্যায়ে তাঁকে ফোন, আলাপ-আলোচনায় অংশগ্রহণ ও সঙ্গীত শোনা থেকে বিরত থাকতে হয়। ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে অস্ত্রোপচারের পর ৩০ বছরের অধিক সময় পর স্পষ্ট শুনতে পান।

১৯৭৪ থেকে ১৯৮৫ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সব মিলিয়ে ৪৩ টেস্ট ও ৭৮টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। টেস্টে ৩২.৯২ গড়ে ১৩০ উইকেট দখল করেন। অপরদিকে, ওডিআই থেকে ৩০.৫২ গড়ে ৮৯ উইকেট লাভ করেন এবং ৯৮৭ রান সংগ্রহ করতে মাত্র ৯৪১ বল মোকাবেলা করেছিলেন।

১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে বেভান কংডনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ২৬ জানুয়ারি, ১৯৭৪ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ২/৭৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৪* ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৫৭ রানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে নিজ দেশে বিষেন বেদী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৪০ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/৫৭ ও ০/৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ইনিংস ও ৩৩ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ করতে সক্ষম হয়েছিল।

১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে গ্লেন টার্নারের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ২৬ নভেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। ভারতের প্রথম ইনিংসে মহিন্দর অমরনাথের উইকেট লাভ করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা সাফল্য ছিল ২/৫৭। পাশাপাশি, ভারতের প্রথম ইনিংসে প্রথমবারের মতো পাঁচ-উইকেট লাভ করেছিলেন। খেলায় তিনি ৫/৫৫ ও ০/৪৯ লাভ করেন। এছাড়া, ব্যাট হাতে নিয়ে দলের ৫ ও ৮* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ২১৬ রানে পরাজিত পেলে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

১৯৭৯-৮০ মৌসুমে নিজ দেশে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে জোয়েল গার্নারের উইকেট লাভ করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা সাফল্য ছিল ৫/৫৫। খেলায় তিনি ৬/৮৫ ও ০/১০৭ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, কলিন ক্রফ্ট ও আম্পায়ার ফ্রেড গুডলের টেস্ট নামে পরিচিতি পাওয়া তিক্ততাপূর্ণ খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা পিছিয়ে পড়ে।

১৯৮০-৮১ মৌসুমে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদসরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ২৮ নভেম্বর, ১৯৮০ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে উভয় ইনিংসে শূন্য রানে বিদেয় নেন। বল হাতে নিয়ে অবশ্য ৫/৮৭ ও ০/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। গ্রায়েম উডের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা ১০ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই মৌসুমে নিজ দেশে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১ তারিখে ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৫/৩৩ ও ২/৩০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৩ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, দলীয় অধিনায়ক জিওফ হাওয়ার্থের অসাধারণ ব্যাটিং সাফল্যে সফরকারীরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৮১-৮২ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রেগ চ্যাপেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১১ রানে পৌঁছানোকালে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলার একমাত্র ইনিংসে তিনি ১৯* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/২০ লাভ করেন। তবে, ব্রুস এডগারের অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। বেনসন এন্ড হেজেস বিশ্ব সিরিজ কাপের দ্বিতীয় চূড়ান্ত খেলায় অস্ট্রেলিয়া দলের ৩০২ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমে নিউজিল্যান্ড দল অগ্রসর হয়। ৪৪/৬ সংগ্রহ করলে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখোমুখি থাকা অবস্থায় নিজ ব্যাট ‘এক্সকালিবার’ নিয়ে মাঠে নামেন। শুরুতেই ডেনিস লিলি’র বলে মাথায় আঘাত পান।

এরপর, কেন ম্যাকলি’র তিন বল থেকে সুইপে দুই ছক্কা হাঁকান। পরবর্তীতে, রডনি হগের উপর একচোট নেন। উপর্যুপরী দুই বল লং-অন দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠান। ডেনিস লিলি পুণরায় বোলিংয়ে আসলে ফাইন-লেগে বাউন্ডারি হাঁকানোর পর মিড-অফ দিয়ে ছক্কা হাঁকান। দর্শক ও ধারাভাষ্যকারেরা তাজ্জ্বব বনে যান। জিওফ লসনের ফুল টসে সোজা কভার অঞ্চল দিয়ে বাইরে ফেলেন। মাত্র ২৫ বলে একটি চার ও ছয়টি ছক্কা সহযোগে ৫২ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস উপহার দেন। ঐ খেলায় নিউজিল্যান্ড দল ১৪৯ রানের বড় ব্যবধানে পরাভূত হলেও তিনি নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছিলেন।

এর দুই সপ্তাহ পূর্বে অ্যাডিলেডে প্রতিযোগিতার একাদশ খেলায় ইংল্যান্ড দল ২৯৬ রানের রেকর্ড গড়ে। এ খেলায় তিনি পাঁচ নম্বর অবস্থানে থেকে মাঠে নামেন। ২৪ বলে ক্ষীপ্রগতিতে ৪৯ রান তুলেন। তন্মধ্যে, ভিক মার্কস ও ফিল এডমন্ডসের কাছ থেকে তিনটি ছক্কা আদায় করে নেন। এরপর, রিচার্ড হ্যাডলি সাত বল বাকী থাকতেই কিউইদেরকে জয় এনে দেন।

এ প্রতিযোগিতার পরপরই ইংল্যান্ড দল তিনটি ওডিআই খেলতে নিউজিল্যান্ড গমন করে। প্রত্যেক খেলায় তাঁকে শুরুতে পাঠানো হয়। ১১ বলে ২ ছক্কায় ১৯, ৩১ বলে ২ ছক্কায় ৪৪ এবং ১৭ বলে ২ ছক্কায় ২১ রান তুলেন ও প্রত্যেক খেলায় দল জয়লাভ করেছিল। ১৯৮৪ সালের শুরুতে দেশ ও বিদেশে ইংরেজদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ বিজয়ে অন্যতম পরিচালনা শক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। কদাচিৎ আট নম্বর অবস্থানের পূর্বে ব্যাটিংয়ে নামতেন। প্রায়শঃই দশ নম্বরে মাঠে যেতেন।

১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে নিজ দেশে জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৫ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ৬ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, খেলার পঞ্চম দিনে দলের সংগ্রহ ২১৭/৭ থাকা অবস্থায় মাথার খুলিতে গুরুতর চোট পেলে তাঁকে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছিল। এছাড়াও, বল হাতে ০/৭৭ ও ২/৪১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ওয়াসিম আকরামের প্রাণবন্তঃ বোলিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও স্বাগতিকরা ২ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।

একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট খেলেন। জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ২৯ মার্চ, ১৯৮৫ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ০/৯৩ ও ২/৭০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ৩০ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে ওয়াকায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে শূন্য রানে বিদেয় নেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে অনেকগুলো রান খরচ করলেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। খেলায় তিনি ০/৫০ ও ০/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, রিচার্ড হ্যাডলি’র অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৬ উইকেটে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Scroll to Top