|

কাইল অ্যাবট

১৮ জুন, ১৯৮৭ তারিখে কোয়াজুলু-নাটালের এম্পাঙ্গেনি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামেন। ২০১০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

কিয়ার্সনি কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। দীর্ঘদেহী ও শক্ত মজবুত গড়নের অধিকারী ছিলেন। পেস ও বলে গতি সঞ্চারণে বেশ সক্ষম ছিলেন ও তা যথেষ্ট দর্শনীয় ছিল। ২০০৮-০৯ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ডলফিন্স, ওয়ারিয়র্স ও কোয়াজুলু-নাটাল এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার, মিডলসেক্স ও ওরচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, চেন্নাই সুপার কিংস, জাফনা স্ট্যালিয়ন্স, কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব, পুনে ওয়ারিয়র্স ও লাহোর কালান্দার্সের পক্ষে খেলেছেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ তারিখে ডারবানে প্রাদেশিক দল কোয়াজুলু-নাটালের সদস্যরূপে গটেংয়ের বিপক্ষে অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। এর পরপরই বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দল ডলফিন্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে লিস্ট-এ খেলাগুলোয় অংশ নেয়ার মাধ্যমে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক স্বীকৃতি পান। অবশ্য, ২০১২ সাল পর্যন্ত নজরের বাইরে থাকেন। এ সময়ে তাকে আবারও শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৫০-ওভারের খেলায় অংশগ্রহণের জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

গ্রীষ্মে ডলফিন্সের কোচ হিসেবে ল্যান্স ক্লুজনারের দায়িত্ব লাভের পর থেকে দীর্ঘ সময়ের খেলায় উত্তরণ ঘটতে থাকে। ২০১২-১৩ মৌসুমের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৫.৩৬ গড়ে ৪৯টি উইকেট লাভ করেন। ফলশ্রুতিতে, দক্ষিণ আফ্রিকায় সফররত পাকিস্তানী একাদশের বিপক্ষে খেলার জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকা আমন্ত্রিত একাদশের সদস্য হন। এরফলে টেস্ট অভিষেকের পথ সুগম হয়।

২০১৩ থেকে ২০১৭ সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ১১ টেস্ট, ২৮টি ওডিআই ও ২১টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ২০১২-১৩ মৌসুমে নিজ দেশে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত হন। পায়ের আঘাতের কারণে জ্যাক ক্যালিসকে দলের বাইরে রাখা হলে টেস্টে প্রথম খেলার সুযোগ পান। ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। প্রতিপক্ষীয় দলের ব্যাটসম্যানদের কাছে যথেষ্ট সমীহের পাত্রে পরিণত হন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করে অভিষেক পর্বকে স্মরণীয় করে রাখেন। খেলায় ৬৮ রান খরচায় নয় উইকেট দখল করেন। অভিষেক খেলায় টেস্টে দ্বিতীয় সেরা সফল দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারের মর্যাদা লাভ করেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে টেস্টে প্রথমবারের মতো পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। প্রথম ইনিংসে ৭/২৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছেন তিনি। ঐ ইনিংসে দূরন্ত গতি ও সুইংয়ের অপূর্ব কারুকাজ প্রদর্শন করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২/৩৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ১৩ রান সংগ্রহ করেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কারণে খেলায় সফরকারীরা ইনিংস ও ১৮ রানে পরাভূত হলে স্বাগতিকরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ৩ মার্চ, ২০১৩ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত টি২০আইয়ে ও ১০ মার্চ, ২০১৩ তারিখে ব্লোমফন্তেইনে অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। তবে, নিয়মিতভাবে টেস্ট দলে জায়গা করে নিতে যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হন। ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল ও ভার্নন ফিল্যান্ডারের দাপটে সীমিত-ওভারের খেলায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। এ পর্যায়ে খেলার শেষদিকে বোলিংয়ের ন্যায় গুরুদায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ছিলেন। তাসত্ত্বেও তাঁকে নিয়মিতভাবে দলে খেলানো হয়নি।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান। ভার্নন ফিল্যান্ডারের পায়ে টান পড়ায় বোলিংয়ে প্রধান দায়িত্ব কাঁধে নিতে হয়। গ্রুপ পর্বের ছয়টি খেলার অর্ধেক খেলায় অংশগ্রহণসহ কোয়ার্টার-ফাইনালে অংশ নেন। স্ট্রাইক-রেট ও মিতব্যয়ী বোলিংয়ে দলের সফলতম বোলার হলেও সুস্থ হয়ে ফিরে আসা ভার্নন ফিল্যান্ডারকে সেমি-ফাইনালে অগ্রাধিকার দেয়া হলে মাঠের বাইরে রাখা হয়। পরবর্তীতে এ সিদ্ধান্তটি অনেকটা রাজনৈতিকভাবে করা হয়েছিল বলে জানা যায়। ওডিআই ও টি২০আই খেলায় অধিক মনোনিবেশ ঘটাতে দেখা যায়। ২০১৬ সালের বিশ্ব টি২০ খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সদস্য ছিলেন।

ঐ বছরের শেষদিকে দলে খেলার নিশ্চয়তার বিষয়ে মনক্ষুন্ন চিত্তে ২০১৭ সালকে ঘিরে হ্যাম্পশায়ার দলের সাথে তিন-বছর মেয়াদী কোলপ্যাক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। নিউল্যান্ডসে নববর্ষের টেস্টে তার অংশগ্রহণের সংবাদের পূর্ব পর্যন্ত ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা কিংবা দলীয় সঙ্গীদের কাছে এ তথ্য প্রকাশ করেননি।

কাইল অ্যাবট ও তাঁর প্রতিনিধির সাথে জরুরীভিত্তিতে সিএসএ আলোচনা করলেও স্বীয় মত পরিবর্তন করেননি। এ খেলার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা নিশ্চিত করেন। ফলশ্রুতিতে সিএসএ চুক্তি স্থগিত করে ও তৃতীয় টেস্টের জন্যে তাঁকে দলের বাইরে রাখা হয়। হ্যাম্পশায়ার দল আন্তর্জাতিকমানের ফাস্ট বোলারের অন্তর্ভুক্তিতে দলের বোলিং বিভাগের শক্তি বৃদ্ধি করে। প্রথম মৌসুমেই ১৮.২০ গড়ে ৬০টি চ্যাম্পিয়নশীপ উইকেট লাভ করেন।

এরপর থেকেই ডেল স্টেইন ও মরনে মরকেলের আঘাতের কারণে টেস্ট দলে অগ্রাধিকারভিত্তিতে রাখা হয়। উপর্যুপরী চার খেলায় অংশ নেন। এছাড়াও, একদিনের দলেও অগ্রাধিকার দেয়া হতো। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিযোগিতায় বোলিং উদ্বোধনে নামেন।

২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৯ ও ০/৪৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, কাগিসো রাবাদা’র বোলিং দাপটে স্বাগতিকরা ২৮২ রানে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

৬ জানুয়ারি, ২০২১ তারিখে কোলপ্যাক অধ্যায়ের সমাপণান্তে টাইটান্সের সাথে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।

Similar Posts

  • | | |

    বব উইলিস

    ৩০ মে, ১৯৪৯ তারিখে কো ডারহামের সান্ডারল্যান্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। জন্মসনদে তাঁকে রবার্ট জর্জ উইলিস নামে পরিচিতি ঘটানো হয়েছেন। ‘গুস’, ‘ডাইল্যান’, ‘হ্যারল্ড’ কিংবা ‘সোর্ডফিশ’ ডাকনামে ভূষিত বব উইলিস ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি…

  • |

    নাসির জামশেদ

    ৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। পাকিস্তানের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বামহাতি ধ্রুপদীশৈলীর অধিকারী আগ্রাসী উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের অবস্থান সুদৃঢ়করণে দীর্ঘদিনের আশাবাদ পূরণে প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। সাঈদ আনোয়ার ও ম্যাথু হেইডেনকে পছন্দের তালিকার শীর্ষে রেখেছেন। ব্যাটিংয়ের ধরন অনেকাংশেই তাঁদের…

  • |

    শহীদ মাহমুদ

    ১৭ মার্চ, ১৯৩৯ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন ও বামহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বামহাতে ব্যাটিং উদ্বোধন করতেন ও কার্যকর মিডিয়াম-পেস বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুম থেকে ১৯৬৯-৭০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন।…

  • | | |

    ব্রুস এডগার

    ২৩ নভেম্বর, ১৯৫৬ তারিখে ওয়েলিংটনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন। বামহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে বোলিং করতে পারতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ধ্রুপদীশৈলীর ব্যাটিংয়ের অধিকারী ছিলেন ও ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে দারুণ খেলতেন। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুম থেকে ১৯৮৯-৯০ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে…

  • |

    ম্যাথু হামফ্রেস

    ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০০২ তারিখে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে থাকেন। আয়ারল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ২০২২-২৩ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। নর্দার্ন নাইটসের পক্ষে লিস্ট-এ ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ঘরোয়া আসরে কোন প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে জাতীয় দলে…

  • |

    চার্লি গ্রিফিথ

    ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৩৮ তারিখে বার্বাডোসের পাই কর্নার এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। ১৯৬০-এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। দীর্ঘকায় গড়ন, পেশীবহুল ও অপরিসীম শক্তিমত্তার অধিকারী হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলারদের প্রতিমূর্তি ছিলেন। পা বরাবর ইয়র্কার কিংবা…