কুমার সাঙ্গাকারা
২৭ অক্টোবর, ১৯৭৭ তারিখে মাতালে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেয়াসহ অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
বামহাতে যাদুকরী ইনিংস খেলতেন। ব্যতিক্রমধর্মী উইকেট-রক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণের পূর্ব-পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা দলের প্রধান চালিকাশক্তি ছিলেন। সন্দেহাতীতভাবেই শ্রীলঙ্কার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের মর্যাদা লাভ করেছেন। দলীয় সঙ্গীদের কাছে ‘সাঙ্গা’ ডাকনামে পরিচিত ছিলেন। মাঠে ও মাঠের বাইরে – উভয় ক্ষেত্রেই যথেষ্ট ব্যক্তিত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করে আসছেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে মহিমান্বিত করেছেন। ফাস্ট ও স্পিন বোলিংয়ের উভয়টিতেই সমান দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। দলের সঙ্কটময় মুহূর্তে নিজেকে প্রতিরোধের দেয়ালরূপে তুলে ধরেছেন। মনোযোগ সহকারে ব্যাটিং করার আদর্শ উপমা তিনি ও একবার শতরানে পৌঁছানোর পর বড় ধরনের রানের দিকে ধাবিত করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। বেশ কয়েকজন অধিনায়কের ছত্রচ্ছায়ায় খেলে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন। পরবর্তীতে দলকে পরিচালনা করে তরুণদের উজ্জ্বীবিত করে গেছেন। সাজঘরে বহুভাষায় দক্ষতা নিয়ে নিজেকে তুলে ধরেছেন।
তৎকালীন সময়ে সঠিকমানের আধুনিক ক্রিকেটার হিসেবে শচীন তেন্ডুলকরের পর দ্বিতীয় স্থানের জন্যে কুমার সাঙ্গাকারা’র স্থান নিশ্চিত ছিল। ১৫ বছরের বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবন থেকে বিদেয়কালীন আইসিসি র্যাঙ্কিং প্রথায় ওডিআইয়ে দ্বিতীয় ও টেস্টে পঞ্চম স্থানে ছিলেন। সম্ভবতঃ একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা কুশলী ব্যাটসম্যান ও চমৎকার উইকেট-রক্ষকের মর্যাদা লাভ করেছেন। চীরসবুজ খেলার ছন্দ ধরে রাখা ও হাল ছেড়ে না দেয়ার মনোভাবের কারণে বেশকিছু অর্জনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মূল্যবান অবদানে সমৃদ্ধ করেছেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে খেলার সুযোগ পান। তবে, পরবর্তীকালে উইকেট-রক্ষণের দিকেও ধাবিত হন।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে ২০১৭-১৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে সেন্ট্রাল প্রভিন্স, নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাব এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারে, ওয়ারউইকশায়ার ও ডারহামের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এশিয়া একাদশ, আইসিসি বিশ্ব একাদশ, জ্যামাইকা তল্লাজ, কন্দুরাতা, কন্দুরাতা ম্যারুন্স, কলম্বো ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব, মেরিলেবোনো ক্রিকেট ক্লাব, মুলতান সুলতান্স, কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ, ডেকান চার্জার্স ও হোবার্ট হারিকেন্সের পক্ষে খেলেছেন।
২০ বছর বয়সে নন্দেস্ক্রিপ্টসের পক্ষে ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। এরপর থেকেই ঘরোয়া আসরে নিয়মিতভাবে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন। তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে উজ্জ্বীবনী শক্তির অধিকারী ও দর্শনীয় ব্যাটিংশৈলীর অধিকারী হিসেবে উচ্চমানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের নজির গড়েন। সর্বদাই অবমূল্যায়িত খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতি পেলেও পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে এর ব্যতিক্রম ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বও কিছু ক্ষেত্রে বেশ নিচুমানের ছিল। সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নক-আউট পর্বে পৌঁছতে ব্যর্থ হয় তাঁর দল। সফরকারী ভারতের বিপক্ষে দল বিপর্যস্ত অবস্থায় নিপতিত হয়। টেস্টে ২-০ ও ওডিআইয়ে ৩-১ ব্যবধানে পরাজয়ের শিকার হয়।
শৈশবকাল থেকেই বহু-ক্রীড়ায় সিদ্ধহস্তের অধিকারী ছিলেন। জাতীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন ও টেনিসের শিরোপা জয় করেন। বেহালাবাদক ছিলেন। দ্য ট্রিনিটি লায়ন ও রাইড গোল্ড মেডেলের ন্যায় মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। ক্রিকেট জগতে তাঁর আবির্ভাব বেশ তাৎপর্য্যপূর্ণ ঘটনা ছিল। ২০০০ সালে জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে লিস্ট-এ খেলায় শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের সদস্যরূপে ১৫৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দূর্দান্ত কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন ও পাদপ্রদীপে চলে আসেন। এরফলে, জাতীয় দলে খেলার পথ সুগম হয়। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছেন। সব মিলিয়ে প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলো থেকে ২০৯১১ রান, ৩৭১ ক্যাচ ও ৩৩টি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছেন। শুরু থেকেই তাঁর কাছ থেকে বড় ধরনের প্রত্যাশা করা হতে থাকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অফুরন্ত প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ ওডিআই দলের সদস্যরূপে তাঁকে মনোনীত করা হয়।
২০০০ থেকে ২০১৫ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ১৩৪ টেস্ট, ৪০৪টি ওডিআই ও ৫৬টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২২ বছর বয়সে ৫ জুলাই, ২০০০ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত শন পোলকের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকার অংশগ্রহণে ত্রি-দেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে বর্ণাঢ্যময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে প্রবেশ করেন। এ পর্যায়ে তিনি আইন বিষয়ে অধ্যয়ন করছিলেন। নিজস্ব দ্বিতীয় খেলায় ৮৫ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলেন ও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। গলেতে অনুষ্ঠিত সিঙ্গার ট্রায়াঙ্গুলার সিরিজে দৃশ্যতঃ একাকী দলের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকান বোলিং আক্রমণ প্রতিহত করেন। এরপর থেকেই দলে স্বীয় স্থান পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হন। ঐ সিরিজ শেষে ৬৬.৩৩ গড়ে রান পান ও গ্লাভস হাতে নিয়ে সাতটি ডিসমিসালের সাথে নিজেকে জড়ান।
দলের প্রধান ভূমিকা পালনের পূর্বে শট খেলায় তাঁর সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়। তবে, এরপর থেকেই আকর্ষণীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভূতকালে প্রায় প্রতিটি শটেই দখল করেন। সর্বদাই পিছনের পায়ে ভর রেখে খেলতেন। কাট ও পুল শটে দক্ষতা দেখান। ব্যাটিংয়ের ধরন পরিবর্তন করেন ও পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী মনোভাব নিয়ে সামনের পায়ের উপর ভর রেখে খেলতে থাকেন। তাঁর কভার ড্রাইভগুলো অন্যতম দৃষ্টিনন্দন হলেও সর্বদাই শচীন তেন্ডুলকরের ন্যায় সোজা মারেও পারদর্শীতা দেখিয়েছেন।
সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ একই সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন। ২০ জুলাই, ২০০০ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। দলের একমাত্র ইনিংসে ২৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৫ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
ঐ সিরিজে স্ট্যাম্পের পিছনেও যথেষ্ট তৎপরতা দেখান। দুইবার ৯০-এর কোটায় স্নায়ুবৈকল্যের শিকারে পরিণত হবার পর অবশেষে ১৬ আগস্ট, ২০০১ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে নিজস্ব দশম টেস্টে প্রথম শতকের সন্ধান পান এবং মুত্তিয়া মুরালিধরন ও তাঁর সঙ্গীদের যোগ্য সঙ্গ দেন।
২০০০-০১ মৌসুমে সনথ জয়সুরিয়া’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ২০ জানুয়ারি, ২০০১ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৭৪ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৩ ও ৯৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। শন পোলকের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে ঐ খেলায় সফরকারীরা ইনিংস ও ৭ রানে পরাজয়বরণ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
টেস্ট ও ওডিআইয়ে কয়েকবার দূর্দান্ত অবদানের কারণে শ্রীলঙ্কার অন্যতম সেরা উইকেট-রক্ষক রমেশ কালুবিতরানা’র স্থানচ্যূতি ঘটে ও শ্রীলঙ্কা দলে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করে নেন। ২০০১-০২ মৌসুমে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের দ্বিতীয় আসরের চূড়ান্ত খেলায় বিস্ময়কর দ্বি-শতক হাঁকান ও দলের শিরোপা বিজয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন। নিজস্ব প্রথম এ দ্বি-শতকটি পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে সংগৃহীত ২৩৪ রানের চেয়ে মাত্র চার রান কম ছিল। ৩২৭ বল মোকাবেলা করেছিলেন।
একই মৌসুমে নিজ দেশে কার্ল হুপারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৩ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ১৪০ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
৪ এপ্রিল, ২০০৩ তারিখে দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর গণনার পর ৮৬তম ওডিআইয়ে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। পাকিস্তানের বিপক্ষে এ কৃতিত্বের দাবীদার হন। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। এরপর, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় চারটি অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছিলেন। তন্মধ্যে, বারমুডার বিপক্ষে ৭৬ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চূড়ান্ত খেলায় ৫৪ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।
দলীয় সঙ্গী মাহেলা জয়াবর্ধনে’র সাথে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় উইকেট জুটিতে সর্বাধিকসংখ্যক রান তুলে সবিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন তেন্ডুলকরের সংগৃহীত ৫৮২৬ রানের রেকর্ড ম্লান করে তাঁরা ৫৮৯০ রান তুলেন। গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁদের সংগ্রহকে অতিক্রম করেছিলেন। এছাড়াও এ দু’জন টেস্ট ক্রিকেটে যে-কোন জুটিতে সর্বাধিক রান সংগ্রহের দাবীদার। ২০০৪ সালে কলম্বোয় আরও একটি দ্বি-শতরানের ইনিংস খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ে অসামান্য অবদান রাখেন। পর্বতসম রান তোলার ক্ষেত্রেও স্বীয় যোগ্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান।
২০০৫ সালে নিজ দেশে শিবনারায়ণ চন্দরপলের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২২ জুলাই, ২০০৫ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৬ ও ১৫৭* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৪০ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
মাঠে কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে তাঁদের প্রকৃত বন্ধুত্বসূলভ আচরণের অপূর্ব দৃষ্টান্ত বিশেষতঃ ব্যাটিংকালে জুটি গড়ে তুলে ধরতেন। একই সাথে কে, কার পূর্বে রান সংগ্রহ করতে পারবেন তা নিয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ্য করা যেতো। তদুপরি উভয়ে একই সময়ে খেলতে নামায় ব্যাটিং গড় বৃদ্ধিতেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখতো। ২৭-২৯ জুলাই, ২০০৬ তারিখে কলম্বোর সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টেও তাঁদের মধ্যকার জুটি স্মরণীয় করে রেখেছে। দলীয় সংগ্রহ ৩.৩ ওভারে ১৪/২ থাকা অবস্থায় তাঁরা জুটি গড়েন। শুরুতে এক রান করে সংগ্রহ বৃদ্ধি করতে থাকেন। কিছু স্ট্রোক খেললেও বল আটকানোর দিকেই অধিক মনোনিবেশ ঘটান। তাঁদের মনোসংযোগের স্তর বেশ দৃষ্টান্তস্বরূপ ছিল। অধিনায়ক ও অন্তরঙ্গ বন্ধু মাহেলা জয়াবর্ধনে নিখুঁতমানের ইনিংসের দিকে অগ্রসর হন। শুরু থেকে সাঙ্গাকারা কিছুটা আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন ও জয়াবর্ধনে বল আটকাতে থাকেন। তৃতীয় দিনের শুরুতে তিনি মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৪৫৭ বল মোকাবেলা করে ৬২.৮০ স্ট্রাইক রেটে নিজস্ব চতুর্থ দ্বি-শতরানের ইনিংস খেলেন। ২৮৭ রান তুলে মাত্র ১৩ রানের জন্যে ত্রি-শতক করা থেকে বঞ্চিত হন। অপরদিকে, মাহেলা জয়াবর্ধনে ৫৭২ বল মোকাবেলা করে ৩৭৪ রান তুলে নিজস্ব ও শ্রীলঙ্কার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়েন।
সব মিলিয়ে এ দুজন ডেল স্টেইন ও মাখায়া এনটিনি’র ন্যায় বোলারদের রুখে দিয়ে ১৫৭ ওভার বল মোকাবেলা করে ৬২৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন ও অদ্যাবধি তা অক্ষত রয়েছে। বিশাল রানের জুটি গড়ে সকল ধরনের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন। এরফলে, ১৯৯৭ সালে কলম্বোয় ভারতের বিপক্ষে সনথ জয়সুরিয়া ও রোশন মহানামা’র সংগৃহীত ৫৭৬ রানে জুটির রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন। এছাড়াও, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে বিজয় হাজারে ও গুল মোহাম্মদের মধ্যকার ৫৭৭ রানের রেকর্ড ভেঙ্গে নিজেদের করে নেন। অদ্যাবধি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে যে-কোন উইকেট সর্বোচ্চ রানের কৃতিত্বের সাথে তাঁরা জড়িয়ে রয়েছেন। তাসত্ত্বেও শ্রীলঙ্কা দল খুব সহজে খেলায় জয় পায়নি। মুত্তিয়া মুরালিধরন টেস্টে তাঁর ২২তম দশ উইকেট লাভ করলে ইনিংস ও ১৫৩ রানে বিজয় লাভ করে। দ্বি-শতকগুলো বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ও দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হয়। ৩ নভেম্বর, ২০০৬ তারিখে আইসিসি ঘোষিত বর্ষসেরা বিশ্ব টেস্ট দলে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০০৬-০৭ মৌসুমে মাহেলা জয়াবর্ধনে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কা দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৭ ডিসেম্বর, ২০০৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৪ ও ১০০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, শেন বন্ডের অসাধারণ বোলিংয়ের কল্যাণে পাঁচ উইকেটে পরাজিত হয়। এরফলে, দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায়।
একই সফরের ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৬ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১০০ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ১৫৬* ও ৮ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়মিত উইকেট-রক্ষক প্রসন্ন জয়াবর্ধনে’র আঘাতের কারণে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হন ও তিনটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। তবে, চামারা সিলভা’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২১৭ রানে পরাজিত হলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
এক বছর পর ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোবার্টে ১৯২ রানের স্মরণীয় ইনিংস খেলেছিলেন। এ পর্যায়ে তাঁর দল ৫০৭ রানের অসম্ভব লক্ষ্যমাত্রার দিকে ধাবিত হয় ও ৯৬ রানে পরাজিত হয়। এবারও তিনি শ্রীলঙ্কান ব্যাটিং চালিকাশক্তিতে নিজেকে প্রমাণিত করেন। আধুনিক ক্রিকেটে উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর এ ব্যাপক সাফল্য লাভই দলের সফলতার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। এছাড়াও, বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলায় অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। বিশ্বমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে ২০০৭ সালের শেষদিকে আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে আরোহণ করেছিলেন ও রিকি পন্টিংয়ের স্থলাভিষিক্ত হন। ২০০৫ সালে আইসিসি বিশ্ব ওডিআই একাদশসহ ২০০৬ সালের বিশ্ব টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন।
২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ তারিখে ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেট খেলার উদ্দেশ্যে ওয়ারউইকশায়ারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। জুলাই, ২০০৭ সালে টেস্টে ক্রিকেটের ইতিহাসে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে উপর্যুপরী দুইটি দ্বি-শতক হাঁকানোর রেকর্ড গড়েন। নিজ দেশে সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজিত ২০০ ও অপরাজিত ২২২ রান তুলেছিলেন। এ পর্যায়ে ছয়টি দ্বি-শতরানের ইনিংস খেলে খুব সহজেই উইকেট-রক্ষকদের মধ্যে নিজেকে শীর্ষে নিয়ে যান।
২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে মাইকেল ভনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১ ডিসেম্বর, ২০০৭ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৯২ ও ১৫২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় স্বাগতিকরা ৮৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৮-০৯ মৌসুমে নিজ দেশে অনিল কুম্বলে’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ৮ আগস্ট, ২০০৮ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১৪৪ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংয়ের সুবাদে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৯ সালে মাহেলা জয়াবর্ধনেকে হটিয়ে তিন ধরনের ক্রিকেটেই শ্রীলঙ্কার অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। এ পর্যায়ে ৮০ টেস্ট ও ২৪৬টি ওডিআইয়ে অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ ছিলেন। নেতৃত্ব পাবার পর স্বীয় সক্ষমতাকে আরও বিস্তৃত করার প্রয়াস চালান। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজে চীরপ্রতিদ্বন্দ্বী এশীয় প্রতিপক্ষ ভারতকে পরাজিত করে শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেন। ঐ বছরের শেষদিকে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশকল্পে উইকেট-রক্ষণের দায়িত্বভার ছেড়ে দেন।
২০০৯ সালে নিজ দেশে ইউনুস খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২০ জুলাই, ২০০৯ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে চমৎকার ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৪৫ ও ১৩০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং সাফল্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয় পায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৯ সালে নিজ দেশে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৬ আগস্ট, ২০০৯ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ৫০ ও ১০৯ রান সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ মুঠোয় বন্দী করেছিলেন। তবে, মাহেলা জয়াবর্ধনে’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৯৬ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০১০ সালে নিজ দেশে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৬ জুলাই, ২০১০ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ২১৯ ও ৪২* রান সংগ্রহ করেন। তাঁর অনবদ্য ব্যাটিং সাফল্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।
২০১০-১১ মৌসুমে নিজ দেশে ড্যারেন স্যামি’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৩ নভেম্বর, ২০১০ তারিখে কলম্বোর আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১৫০ ও ১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
তবে, ২০১১ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার পরাজয়ের ফলে সকল স্তরের খেলা থেকে অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। ঐ প্রতিযোগিতায় ব্যাটসম্যান হিসেবে সবিশেষ সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। নয় খেলা থেকে ৪৬৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১১ রানের ইনিংস খেলেছেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থাকাকালীন ৮১টি আন্তর্জাতিক খেলায় অংশ নিয়ে ৪৪টিতে জয় ও ১১টি ফলাফলবিহীন অবস্থায় দলের ফলাফলে ভূমিকা রাখেন।
২০১১ সালে শ্রীলঙ্কান দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ইংল্যান্ড সফরে যান। ১৬ জুন, ২০১১ তারিখে সাউদাম্পটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কোচিত ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১ ও ১১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ক্রিস ট্রেমলেটের অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
২০১১-১২ মৌসুমে তিলকরত্নে দিলশানের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। এ সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়ানৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১৮ অক্টোবর, ২০১১ তারিখে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ২ ও ২১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।
একই সফরের ৩ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে শারজায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার খেলেছিলেন। ১৪৪ ও ৫১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীতে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয় পাকিস্তান দল। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। পাশাপাশি, ৫১৬ রান সংগ্রহ করে সাঈদ আজমলের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১২ সালে নিজ দেশে মোহাম্মদ হাফিজের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ খেলেন। ২২ জুন, ২০১২ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ঐ টেস্টে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি ১৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২০৯ রানে জয়লাভ করে ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।
এরপর, একই সফরের ৮ জুলাই, ২০১২ তারিখে পল্লেকেলেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ০ ও ৭৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, আসাদ শফিকের ব্যাটিং দৃঢ়তায় টেস্টটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। এ সিরিজে ৪৯০ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১২ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে যৌথভাবে টেস্টে দ্রুততম ১০০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ২০১২-১৩ মৌসুমে নিজ দেশে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে বেশ ভালো খেলেন। ৮ মার্চ, ২০১৩ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ খেলেন। জোড়া শতক হাঁকান। ১৪২ ও ১০৫ রানের ইনিংস খেলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ১৬ মার্চ, ২০১৩ তারিখে কলম্বোর আরপিএসে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১৩৯ ও ৫৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, রঙ্গনা হেরাথের বোলিং দাপটে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। এ সিরিজে ৪৪১ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৪-১৫ মৌসুমে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন, রানের ফুলঝুড়ি ছোটানোসহ ক্রমাগত শতক হাঁকাতে থাকেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যাট হাতে অগ্নিমূর্তি ধারন করেন। যে-কোন ধরনের বল মোকাবেলা করে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। ৩১৯ রান তুলে ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। এটিই টেস্টে তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ হিসেবে রয়ে যায়।
২০১৪ সালের গ্রীষ্মে ইংল্যান্ড গমন করেন। লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে দুইটি শতরানের প্রথমটিতে ১১২ রান তুলেছিলেন। এরফলে একদিনের আন্তর্জাতিক তাঁর দল জয় পায়। তিন নম্বরে অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নেমে ১০৪ বলে ১৪টি চারের সহায়তায় এ সংগ্রহটি গড়েন। জেমস ট্রেডওয়েলের বলে জোস বাটলার স্ট্যাম্পিং করলে তিনি বিদেয় নেন ও শ্রীলঙ্কা দল নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩০০/৯ রান সংগ্রহ করে।
এরপর, টেস্টে ১৪৭ রান তুলে প্রথমবারের মতো লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সমর্থ হন। এর পূর্বে লর্ডসে তিনটি টেস্টে অংশ নিলেও কোনবারই শতরানের সন্ধান পাননি। ৩৬ বছর বয়সে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে এ সফলতা পেলে অন্তরঙ্গ বন্ধু মাহেলা জয়াবর্ধনে’র সাথে অনার্স বোর্ডে নাম লেখান। ২৫৮ বলে ১৬টি ছক্কা হাঁকান। অতঃপর, মঈন আলী’র বলে ম্যাট প্রায়রের হাতে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬১ রান তুলেন। তবে, পঞ্চম দিন শেষে মাত্র এক উইকেট হাতে রেখে সময় পেরিয়ে গেলে খেলা ড্রয়ের দিকে গড়ায়। সব মিলিয়ে ঐ বছর ২৮৬৮ রান তুলেন। এক পঞ্জিকাবর্ষে সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে এ সফলতা পেয়েছিলেন।
২০১৪-১৫ মৌসুমে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৩ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে ওয়েলিংটনে অনু্ষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ২০৩ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, কেন উইলিয়ামসনের অসাধারণ ব্যাটিং সাফল্যে সফরকারীরা ১৯৩ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৫ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা পর্যন্ত তাঁর চমৎকার খেলার ধারা বহমান ছিল। এ পর্যায়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চারটি শতক হাঁকানোর কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। কিন্তু, কোয়ার্টার-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁর রান কাজে লাগেনি ও দল শোচনীয়ভাবে পরাভূত হয়। ঐ প্রতিযোগিতায় পাঁচ শতাধিক রান সংগ্রহ করেছিলেন। এরপর, সীমিত-ওভারের ক্রিকেট থেকে নিজের অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।
২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট পর্যন্ত খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখার সিদ্ধান্ত নেন। ২০ আগস্ট, ২০১৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া কলম্বোর পিএসএসে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেয়াকালীন ভারতীয় ক্রিকেটারগণ ব্যাট উঁচিয়ে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। ১৪ আগস্ট, ২০১৫ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত খেলায় শ্রীলঙ্কা দল ভারতকে ৬৩ রানে পরাজিত করলে তাঁর বিদায় যথার্থরূপে বিবেচিত হতে পারতো। তবে, তাঁর শেষ টেস্টের বিদায়পর্বটি কিংবদন্তী হিসেবে যথার্থ হয়নি। প্রথম ইনিংসে ৩২ রান তুলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে বিদেয় নেন। ৪৩২ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রায় নেমে স্বাগতিক দল প্রায় চারটি অধিবেশন খেলে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখে। নিজস্ব শেষ টেস্ট ইনিংসে ১৮ রান করেন ও দল ১৩৪ রান গুটিয়ে যায়। এ ইনিংসেও রবিচন্দ্রন অশ্বিন তাঁকে বিদেয় করেছিলেন। কেএল রাহুলের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীতে সফরকারীরা ২৭৮ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের মহাত্মা চতুষ্টয় হিসেবে অর্জুনা রানাতুঙ্গা যদি স্রষ্টা হন, সনথ জয়সুরিয়া যদি বিনাশকারী হন, তাহলে কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনেকে অবশ্যই রক্ষাকর্তা হিসেবে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। শুরুতে অবশ্য তাঁর গ্লাভস কর্মে তেমন দক্ষতা ছিল না। কিন্তু, তাঁর ব্যাটিংয়ের মানে সন্দেহাতীতভাবেই তাঁকে একাদশে ঠাঁই করে নিতে দ্বিধাবোধ করতে হয়নি। ব্যাটসম্যান হিসেবে ধীরে ধীরে পরিপক্কতা আনয়ণে সক্ষম হন।
ওডিআই ও টেস্ট ক্রিকেট – উভয় স্তরের ক্রিকেটেই নিয়মিতভাবে রান তুলতে তৎপরতা দেখিয়েছেন। তন্মধ্যে, টেস্ট ক্রিকেটে ৩৮টি শতরানের ইনিংস সহযোগে ৫৭.৪০ গড়ে ১২৪০০ রান সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও, ৫০-ওভারের খেলায় ১৪২৩৪ রান পেয়েছেন। দর্শনীয় ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনের পাশাপাশি বেশকিছু দৃষ্টিনন্দন মারকুটে ভঙ্গীমায় রানগুলো সংগ্রহ করেছিলেন। সব মিলিয়ে খেলোয়াড়ী জীবনে ডন ব্র্যাডম্যানের ১২টি দ্বি-শতরানের পর একটিমাত্র কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন।
নেতৃত্বের গুণাবলী, কৌশলগতভাবে ব্যাটিংয়ে দক্ষতা ও গ্লাভস হাতে দর্শনীয় ভূমিকা পালনের কারণে প্রত্যেক লীগেই সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। আইপিএলে ২০০৮ সালে কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব $৭০০,০০০ মার্কিন ডলার ও ২০১১-১২ মৌসুমে ডেকান চার্জার্স $৩০০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ করে। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লীগে বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত কন্দুরাতা ওয়ারিয়র্সের প্রতীকি খেলোয়াড় ও অধিনায়ক ছিলেন। তবে, আঘাতের কারণে স্বীয় নাম প্রত্যাহার করে নেন। ২০১৭ সালের পাকিস্তান সুপার লীগে করাচী কিংসকে নেতৃত্ব দেন।
২০১১ ও ২০১৩ সালে আইসিসি বর্ষসেরা ওডিআই খেলোয়াড়ের সম্মাননা লাভের পর ২০১২ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটাররূপে মনোনীত হন। ২০১২ ও ২০১৫ সালে উইজডেন শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটাররূপে বিবেচিত হন। ২০১১ ও ২০১২ সালে পরপর এলজি পিপলস চয়েজ পুরস্কার, ২০১২ ও ২০১৩ সালে উপর্যুপরী আইসিসি বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার ও ২০১২ সালে আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা পান। এছাড়াও, ২০১৫ সালে সিয়াট বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হয়েছেন। ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ তারিখে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, মন্টি নোবেল, অব্রে ফকনার, লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইন, স্ট্যান ম্যাককাবে, বিনু মানকড়, টেড ডেক্সটার, বব উইলিস ও ডেসমন্ড হেইন্সের সাথে একযোগে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ৭ মার্চ, ২০১৬ তারিখে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের নির্বাচক হিসেবে মনোনীত হন।