২৪ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও আম্পায়ার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতা প্রদর্শনসহ ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
স্বল্পসংখ্যক ক্রিকেটারদের অন্যতম হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলায় রুখে দাঁড়ানোয় দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। কলম্বোভিত্তিক নালন্দা কলেজে অধ্যয়নকালে ক্রিকেট খেলার সাথে জড়িয়ে পড়েন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে ব্লুমফিল্ড ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিক ক্লাব, মোরাতুয়া স্পোর্টস ক্লাব এবং নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৯৩ থেকে ২০০৪ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ৩১ টেস্ট ও ১৪১টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নিজ দেশে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তবে, ঐ খেলায় উইকেট শূন্য অবস্থায় তাঁকে মাঠ ত্যাগ করতে হয়েছিল। ০/৯১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৫ ও ২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ব্রেট শ্যুলজের বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ২০৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৯৪ সালে নিজ দেশে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৯ আগস্ট, ১৯৯৪ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৬/৯৯ ও ২/৮৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১ ও ৩০ রান সংগ্রহ করেন। তবে, সাঈদ আনোয়ারের সুন্দর ব্যাটিং সাফল্যে সফরকারীরা ৩০১ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২৪ আগস্ট, ১৯৯৪ তারিখে কলম্বোর আরপিএসে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৯-০-৩৪-২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। সীমিত-ওভারের খেলায় সুনিয়ন্ত্রিত পন্থায় নিখুঁতমানের বোলিং করতেন। মাঝারিসারিতে নিচেরসারির ব্যাটসম্যান হিসেবেও বেশ কয়েকবার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার ওডিআই দলের নিয়মিত সদস্য হন।
২২ বছর বয়সে ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিজস্ব প্রথম সফরে যান। পোর্ট এলিজাবেথে চার উইকেট পান ও পাদপ্রদীপে চলে আসেন। শারজায়ও দলের জয়ে সবিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের ইতিহাসে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী শ্রীলঙ্কা দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে মুত্তিয়া মুরালিধরনের অফ-স্পিন বোলিংয়ের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে পারেননি।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১৪ মার্চ, ১৯৯৭ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২৭ ও ৩৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৩৯ ও ২/৭৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১২০ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে ভারত সফর করেন। ৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩/১৪৪ ও ৫/৫৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৪০ ও ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, সৌরভ গাঙ্গুলী’র অসামান্য ব্যাটিং সাফল্য সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে ঐ টেস্টসহ সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় শেষ হয়।
১৯৯৮ সালে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১০ জুন, ১৯৯৮ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১/৩৫ ও ১/১৪ লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে উভয় ইনিংসে ১১ রান করে সংগ্রহ করেছিলেন। রমেশ কালুবিতরানা’র ব্যাটিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা ১৬৪ রানে পরাজিত হলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। প্রসঙ্গতঃ টেস্টের ইতিহাসে পঞ্চম ঘটনা হিসেবে কোন দল প্রথম টেস্টে পরাজিত হলেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজ জয় করে নেয়। পূর্ববর্তী চার মৌসুমে এটি চতুর্থ ঘটনা ছিল ও প্রথম দল হিসেবে শ্রীলঙ্কা দুইবার এ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ড প্রথম দল হিসেবে প্রথম টেস্ট জয়ের পর তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে দুইবার পরাজয়বরণ করে।
ওভাল টেস্টের পর ১৯৯৮ সালে আইসিসি থেকে তাঁর বোলিং ভঙ্গীমার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে খেলোয়াড়ী জীবনে প্রথম ধাক্কা খান। জুলাই, ২০০০ সালে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড থেকে এ অভিযোগ থেকে মুক্তি পান। পুণরায় অল-রাউন্ডার হিসেবে ফিরে আসেন। নিজ দেশে ওডিআই দলে খেলার সুযোগ পেলেও টেস্টে কেবল মাঝে-মধ্যে খেলার সুযোগ পান। কিন্তু, টেস্ট দলে আর ফিরতে পারেননি।
২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৮ মার্চ, ২০০৪ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ২/৫২ ও ০/১০০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৬ ও ০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ম্যাথু হেইডেনের অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১৯৭ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
২০০৬ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলাকে বিদেয় জানান। ওডিআইয়ে সর্বাধিকসংখ্যক ৭২ খেলায় অংশ নিয়ে কোন শূন্য রান সংগ্রহ না করার সাথে নিজেকে যুক্ত রাখেন।
সবমিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে ৮৬৮ রান ও ৬৯ উইকেট দখল করেন। এছাড়াও, ওডিআইয়ে ১২২২ রান ও ১৩৮ উইকেট পেয়েছেন। নভেম্বর, ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা জানান ও আম্পায়ার হিসেবে খেলার সাথে যুক্ত থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
জানুয়ারি, ২০০৯ সালে ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কা বনাম ভারতের মধ্যকার ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে খেলা পরিচালনায় অগ্রসর হন। এরপর, নভেম্বর, ২০১০ সালে আহমেদাবাদে ভারত বনাম নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার অনুষ্ঠিত টেস্ট খেলাটি প্রথম পরিচালনা করেন।
শ্রীলঙ্কার সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক আম্পায়ারের মর্যাদা পান। বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় যৌথভাবে অনুষ্ঠিত ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ১৮জন নির্বাচিত আম্পায়ারের অন্যতম হিসেবে খেলা পরিচালনা করেছেন। মিরপুরে বাংলাদেশ বনাম ভারতের মধ্যকার খেলায় আম্পায়ারের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ২০১১ সালের শেষদিকে আইসিসি আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন ও ২০১২ সালে আইসিসি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বর্ষসেরা আম্পায়ার হিসেবে ডেভিড শেফার্ড ট্রফি লাভ করেন। আইসিসি প্রতিযোগিতায় নিয়মিতভাবে যুক্ত থাকতেন। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলা পরিচালনা করেছিলেন। বেশ কয়েকবার অনুপযোগী আম্পায়ারিংয়ের কারণে সমালোচিত হন। অক্টোবর, ২০১৬ সালে চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার খেলায় একই ইনিংসে মঈন আলী’র বিপক্ষে তিনটি আবেদনে সাড়া দিলেও প্রত্যেকবারই রক্ষা পান। ঐ টেস্টে ১৬টি সিদ্ধান্তের অর্ধেকই ভুল ছিল ও ডিআরএসে প্রত্যাখ্যাত হয়।
