|

কুলদীপ যাদব

১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। স্লো লেফট-আর্ম চায়নাম্যান বোলিং করেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে থাকেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

১.৬৮ মিটার উচ্চতার অধিকারী। রাম সিং ও ঊষা যাদব দম্পতির সন্তান তিনি। প্রিয়া যাদব নাম্নী জ্যেষ্ঠা ভগ্নী রয়েছে। পিতা ইট ভাটার মালিক। মেধাবী ছাত্র ছিলেন ও নিতান্ত শখের বশবর্তী হয়ে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। তবে, পিতার উদ্দীপনায় ক্রিকেটে খেলোয়াড়ী জীবন গড়ে তুলেন। কপিল পাণ্ডে’র কাছে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে ফাস্ট বোলার ছিলেন। তবে, শারীরিক গড়নের কারণে ও কোচের পরামর্শক্রমে বামহাতি স্পিনারে পরিণত হন। চায়নাম্যান বোলার হন ও প্রভূত্ব দেখাতে শুরু করেন।

খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুরদিনগুলোয় জহির খান ও ওয়াসিম আকরামের বোলিং অনুসরণে অগ্রসর হয়েছিলেন। এ পর্যায়ে তিনি ফাস্ট বোলার হতে চেয়েছিলেন। উত্তরপ্রদেশের অনূর্ধ্ব-১৫ দলে খেলার সুযোগ না পেলেও ২০১৪ সালে রাজ্য দলের সদস্য হন।

১৭ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। তবে, বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় তাঁকে রাখা হয়নি। তাসত্ত্বেও আশা ত্যাগ করেননি। একনিষ্ঠভাবে খেলতে থাকেন। এক পর্যায়ে ২০১৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। ঐ প্রতিযোগিতায় যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন।

২০১৪-১৫ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মধ্যাঞ্চল ও উত্তরপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, কলকাতা নাইট রাইডার্স ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পক্ষে খেলেছেন। ২২ অক্টোবর, ২০১৪ তারিখে মোহালিতে অনুষ্ঠিত মধ্যাঞ্চল বনাম উত্তরাঞ্চলের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।

২০১২ সালে আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলের সদস্য হন। ২০১৪ সালে কলকাতায় চলে আসেন। পুরো মৌসুম অলসভাবে কাটানোর পর অবশেষে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে তাঁর অভিষেক ঘটে। সুনীল নারায়ণের প্রতিচিত্র হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন ও মিতব্যয়ী বোলিংয়ে সকলকে বিমোহিত করেন। একই বছরে নিজস্ব প্রথম প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও লিস্ট-এ ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন। নিজ দেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে জাতীয় দলে প্রথমবারের মতো আমন্ত্রিত হন। দূর্ভাগ্যবশতঃ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান খেলোয়াড় ও বোর্ডের মধ্যকার আর্থিক মতবিরোধের জের ধরে ঐ সফরটি বাতিল করা হয়। প্রায় তিন বছর অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে অবশেষে ভারত দলের পক্ষে দীর্ঘ সংস্করণের খেলার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো অংশ নেন।

২০১৭ সাল থেকে ভারতের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৫ মার্চ, ২০১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরফলে, প্রথম ভারতীয় বামহাতি রিস্ট স্পিন বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের গৌরব অর্জন করেন। প্রথম ইনিংসে ৪/৬৮ লাভ করেছিলেন। তবে, রবীন্দ্র জাদেজা’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিক দল ৮ উইকেটে জয়লাভ করে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় তুলে নেয়।

এরপর, ২০১৭ সালে দলের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ২৩ জুন, ২০১৭ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করেন। একই সফরের ৯ জুলাই, ২০১৭ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত টি২০আইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। একই বছর ওডিআইয়ে হ্যাট্রিক করার গৌরব অর্জন করেন। ২০১৮ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্স ₹৫.৮ কোটি রূপীর বিনিময়ে তাঁর সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার পূর্বে যাজবেন্দ্র চাহালের সাথে বোলিং জুটি গড়েন। এপ্রিল, ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় খেলার জন্যে মনোনীত হন।

ভুবনেশ্বর কুমারের পর দ্বিতীয় ভারতীয় বোলার হিসেবে তিন স্তরের ক্রিকেটের সবকটিতে পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্বের অধিকারী হন। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম বামহাতি রিস্ট স্পিন বোলার হিসেবে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে ১০-০-২৫-৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। যে-কোন বামহাতি স্পিনারের মধ্যে এটিই সেরা বোলিং।

২০২৩-২৪ মৌসুমে নিজ দেশে বেন স্টোকসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ৭ মার্চ, ২০২৪ তারিখে ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে দারুণ খেলেন। খেলায় তিনি ৫/৭২ ও ২/৪০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের দূর্দান্ত বোলিংশৈলীর কারণে ঐ টেস্টে তাঁর দল ইনিংস ও ৬৪ রানে জয়লাভসহ ৪-১ ব্যবধানে সিরিজে জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে টম ল্যাথামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ২ ও ৬* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, ৩/৯৯ ও ০/২৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। রচিন রবীন্দ্রের অনবদ্য ব্যাটিং কৃতিত্বে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

Similar Posts

  • |

    দিলীপ দোশী

    ২২ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে গুজরাতের রাজকোটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৬৮-৬৯ মৌসুম থেকে ১৯৮৬ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলা ও সৌরাষ্ট্র এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ার…

  • | | |

    রবি শাস্ত্রী

    ২৭ মে, ১৯৬২ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ভারত দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। যেখানে ক্রিকেট ও ক্রিকেটবিষয়ক আলোচনা রয়েছে সেখানেই তাঁর নিত্য অবস্থান। টেলিভিশনের পর্দায় তাঁর চেহারা ও কণ্ঠস্বরকে ঘিরে গণমাধ্যমে…

  • |

    ফিলিপ হিউজ

    ৩০ নভেম্বর, ১৯৮৮ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ম্যাক্সভিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতে পারতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি (১.৭০ মিটার) উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। গ্রেগ হিউজ ও ভার্জিন হিউজ দম্পতির সন্তান…

  • |

    চার্লি স্মিথ

    ২৫ ডিসেম্বর, ১৮৭২ তারিখে কেপ কলোনির গ্যামটুস রিভার এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, কার্যকর বোলিং করতেন। ১৯০০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮৯৩-৯৪ মৌসুম থেকে ১৯০৪-০৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন…

  • | | | |

    সন্দীপ পাতিল

    ১৮ আগস্ট, ১৯৫৬ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, রেফারি, প্রশাসক ও কোচ। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুম থেকে ১৯৯২-৯৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মধ্যপ্রদেশ…

  • | |

    অমল সিলভা

    ১২ ডিসেম্বর, ১৯৬০ তারিখে মোরাতুয়ায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮২-৮৩ মৌসুম থেকে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে মোরাতুয়া স্পোর্টস ক্লাব ও নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট…