|

কীর্তি আজাদ

২ জানুয়ারি, ১৯৫৯ তারিখে বিহারের পুর্ণিয়া এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৮০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

১৯৭৬-৭৭ মৌসুম থেকে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি বোম্বে ও কর্ণাটকের ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রভাববিস্তারকারী বিষেন সিং বেদী’র নেতৃত্বাধীন দিল্লি দলের সদস্য ছিলেন। বিষেন সিং বেদী’র কাছ থেকে মদন লাল, অমরনাথ ভ্রাতৃদ্বয় ও সুরিন্দর খান্না দায়িত্বভার গ্রহণের পর অজয় শর্মা ও কীর্তি আজাদের কাছে অধিনায়কের দায়িত্বভার অর্পিত হয়।

১৯৭৯-৮০ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় তিনি ৫০ গড়ে ৪৯৭ রান ও ২০ গড়ে ১৪ উইকেট পান। ইরানী কাপের চূড়ান্ত খেলায় ১০২, ৩/৫৫, ৩৩ ও ৩/৬৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে দলের শিরোপা বিজয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন।

১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সময়কালে ভারতের পক্ষে সাতটিমাত্র টেস্ট ও ২৫টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮০-৮১ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফর করেন। সেখানেই তাঁর টেস্ট ও ওডিআই অভিষেক ঘটে। ৬ ডিসেম্বর, ১৯৮০ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে প্রবেশ করেন।

একই সফরের ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে যোগরাজ সিং ও রবি শাস্ত্রী’র সাথে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। কিন্তু, তেমন সফলতার সন্ধান পাননি। ২০ ও ১৬ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, সন্দীপ পাতিলের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও স্বাগতিক দল ৬২ রানে জয়লাভ করে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। এরপর, একই মৌসুমে নিজ দেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আরও ৩ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন।

ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী ভারত দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ঐ প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনালে তাঁর অবিস্মরণীয় ভূমিকা গ্রহণের কারণে ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। সোজা-সাপ্টা ও ধীরলয়ে বোলিং করে ইয়ান বোথামকে বোল্ড করেন। ঐ খেলায় তিনি ১২-১-২৮-১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এরফলে, ইংল্যান্ড দলের ইনিংস ২১৩ রানে গুটিয়ে যায়। এরপর, চূড়ান্ত খেলায় শূন্য রান করেন ও উইকেট শূন্য অবস্থায় মাঠ ছাড়লেও ইতিহাসের পর্দায় নিজেকে ঠাঁই করে নেন।

ঐ বছরের শেষদিকে দিল্লিতে দাতব্য তহবিল গঠনের খেলায় পাকিস্তান দল নির্ধারিত ৫০ ওভারে ১৯৭/৩ তুললে এর জবাবে এক পর্যায়ে ভারতের সংগ্রহ ৮০/৬ দাঁড়ায়। স্থানীয় অধিবাসী হিসেবে তিনি ৬টি চার ও ৪টি ছক্কা সহযোগে ৭১ রান তুলেন। তবে, এ খেলাটি প্রথম-শ্রেণীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ছিল না।

সব মিলিয়ে ওডিআইগুলো থেকে ১৪ গড়ে ২৬৯ রান সংগ্রহের পাশাপাশি ৩৯ গড়ে ৭ উইকেট দখল করেন। তবে টেস্টে রান সংখ্যায় আরও নিচেরদিকে অবস্থান করেন। অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলো থেকে ১১ গড়ে ১৩৫ রান ও ১২৪ গড়ে ৩ উইকেট দখল করেছিলেন। রান সংগ্রহ সাধারণমানের থাকলেও স্ট্রোকপ্লের অপূর্ব নিদর্শন ছিল তাঁর ব্যাটিং। নিখুঁতমানের অফ-ব্রেক বোলিংয়ে ঐ সময়ের ওডিআইয়ে অনেকাংশে তারকা খেলোয়াড় ছিলেন।

১৯৮১ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৮২ সালে ইংল্যান্ড সফরে তাঁকে রাখা হয়নি। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে নিজ দেশে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১২ নভেম্বর, ১৯৮৩ তারিখে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। সফরকারীরা ১৩৮ রানে জয় পায় ও ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ০ ও ৩ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল।

এরপর, ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে লোয়ারহাউজের পক্ষে চমৎকার সময় অতিবাহিত করেন। লোয়ারহাউজ ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সময়কালে খেলেছিলেন। বিশ্বকাপে তাঁকে খেলানো হলেও ঐ বছরের শীতকালে টেস্ট দলের বাইরে ছিলেন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তাঁর ওডিআই খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। এরপরও তিনি দিল্লি ও লোয়ারহাউজের পক্ষে খেলতে থাকেন।

তবে, ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে তাঁর অবদান অন্য গল্প তৈরি করেছে। ৩৯ গড়ে ৬৬৩৪ রান ও ৩১ গড়ে ২৩৪ উইকেট পেয়েছেন। কেবলমাত্র রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় ৪৭ গড়ে ৪৮৬৯ রান ও ২৯ গড়ে ১৬২ উইকেট দখল করেছেন। এছাড়াও, দুইবার দিল্লি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে রঞ্জী ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান।

পিতার ন্যায় তিনিও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৩ সালে রঞ্জী ট্রফিতে খেলোয়াড় হিসেবে সক্রিয় থাকা অবস্থায় এমএলএ হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালে লোকসভার সদস্যরূপে বিজয়ী হন ও ২০০৯ সালে পুণরায় নির্বাচিত হন। বিজেপির প্রতিনিধিত্ব করে বিহারের দ্বারভাঙ্গা নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনবার নির্বাচিত হন। এর পূর্বে দিল্লির গোল মার্কেট নির্বাচনী এলাকা থেকে এমএলএ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সালে কংগ্রেস দলে যোগদান করেন। ডিডিসিএ’র সদস্য হিসেবে সংগঠনের বিভিন্ন কেলেঙ্কারীর বিপক্ষে সরব ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তিনি। সূর্য্যবর্ধন ও সৌম্যবর্ধন নামীয় সন্তানদ্বয় দিল্লি দলের পক্ষে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছে।

Similar Posts

  • |

    ইএম গ্রেস

    ২৮ নভেম্বর, ১৮৪১ তারিখে ব্রিস্টলের ডাউনএন্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। ১৮৮০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘দ্য করোনার’ ডাকনামে পরিচিত ই. এম. গ্রেস ১৮৬০-এর দশকে ইংল্যান্ডের সেরা ক্রিকেটারদের অন্যতম হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন। ক্রিকেটপ্রিয় পরিবারের সন্তান ছিলেন। ড. হেনরি মিলস গ্রেস ও…

  • | |

    রঙ্গনা হেরাথ

    ১৯ মার্চ, ১৯৭৮ তারিখে কুরুনেগালায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণসহ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে কুরুনেগালা ইয়ুথ ক্রিকেট ক্লাব, মুরস স্পোর্টস…

  • |

    কুলদীপ যাদব

    ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। স্লো লেফট-আর্ম চায়নাম্যান বোলিং করেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে থাকেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১.৬৮ মিটার উচ্চতার অধিকারী। রাম সিং ও ঊষা যাদব দম্পতির সন্তান তিনি। প্রিয়া যাদব নাম্নী জ্যেষ্ঠা ভগ্নী রয়েছে। পিতা ইট ভাটার মালিক।…

  • |

    ক্রিস এমপফু

    ২৭ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে মাতাবেলেল্যান্ডের প্লামট্রি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ২০০৩-০৪ মৌসুম থেকে ২০২০-২১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে ম্যাশোনাল্যান্ড, মাতাবেলেল্যান্ড, মাতাবেলেল্যান্ড তুস্কার্স ও ওয়েস্টার্নসের…

  • | |

    গর্ডন লেগাট

    ২৭ মে, ১৯২৬ তারিখে ওয়েলিংটনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৯৫০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৪৪-৪৫ মৌসুম থেকে ১৯৫৫-৫৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। ১৯৫২-৫৩…

  • | |

    ইকবাল কাসিম

    ৬ আগস্ট, ১৯৫৩ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ধারাবাহিকভাবে আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে আম্পায়ার ও স্ট্যাম্পের মাঝখান দিয়ে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। আলতোভাবে বলকে পিচে ফেলতেন। মিতব্যয়ী বোলিং করলেও সূক্ষ্মতার সাথে…